ঝাং হেং
বিশ্বকোষীয় পর্যায়ে যেতে এই নিবন্ধে আরো বেশি অন্য নিবন্ধের সাথে সংযোগ করা প্রয়োজন। |
ঝাং হেং (Chinese: 張衡; জন্ম ৭৮ - মৃত্যু ১৩৯ খ্রিষ্টাব্দ), আগে রোমানীকরণ করে লেখা হতো চ্যাং হেং, ছিলেন হান সম্রাজ্যের সময়কালে ন্যানইয়াং অঞ্চলের হান-চাইনিজ জাতির একজন বহুবিদ্যাবিশারদ। লাউইয়াং এবং চ্যাংগান এর মূল প্রশাসনিক শহরে তিনি বিদ্যালাভ করেন এবং পরবর্তীতে একজন জোতির্বিজ্ঞানী, গণিতবিদ, বিজ্ঞানী, প্রকৌশলী, আবিষ্কারক, ভূ-গোলবিদ, মানচিত্রাঙ্কনবিদ, শিল্পী, কবি, রাজনীতিবিদ এবং সাহিত্য বিশারদ হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন।
ঝাং হেং তার চাকুরীজীবন শুরু করেন নানইয়াং-এ ছোটখাট একটি সরকারী পদে। পরবর্তীতে প্রধান জোতির্বিজ্ঞানী, প্রিফেক্ট অফ দি মেজরস ফর অফিসিয়াল ক্যারেজস্ এবং ইম্পেরিয়াল কোর্টের প্যালেস এটেনডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ইতিহাস এবং দিনপঞ্জিকা বিষয়ক তার অনমনীয় মনোভাব তাকে বিতর্কিত ব্যক্তিত্বে পরিনত করে যার ফলে তিনি প্রধান ইতিহাসবিদ পদে উন্নীত হতে পারেননি। সম্রাট শুনের শাসনামলে (১২৪-১৪৪ খ্রিঃ) রাজদরবারের ইউনিকদের সাথে তার রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্ধিতার ফলে তিনি সিদ্ধান্ত নেন রাজদরবার থেকে অবসর গ্রহণ করে হেবেই অঞ্চলে হেজিয়ান এর প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালনের। ১৩৮ খ্রিঃ রাজধানীতে আরেকবার কাজ করবার জন্য ডাক পাবার আগে তিনি অল্প কিছুদিনের জন্য নানইয়াং এ নিজ বাড়িতে বসবাস করেন। এক বছর পর ১৩৯ খ্রিষ্টাব্দে তিনি এখানেই মৃত্যুবরণ করেন।
ঝাং যন্ত্রবিজ্ঞান এবং গিয়ারের উপর তার গভীর জ্ঞান কাজে লাগিয়ে বেশ কিছু জিনিস আবিষ্কার করেন। তিনি মহাকাশ পর্যবেক্ষণে সহায়ক পৃথিবীর প্রথম জল-চালিত আর্মিলারি গোলক (একধরনের মহাকাশের মডেল যা জোতির্বিজ্ঞানের হিসাবে সহায়তা করে) আবিষ্কার করেন , আরেকটি ট্যাঙ্ক (জলাধার) লাগানোর মাধ্যমে ইনফ্লো ওয়াটার ক্লক (জল ঘড়ি) উন্নত করেন, এবং পৃথিবীর প্রথম সিসমোস্কোপ (ভূকম্পমাপক) আবিষ্কার করেন, যা ৫০০ কি.মি (৩০০ মাইল) দূরের ভূমিক্মম্পের দিক নির্দেশ করতে সক্ষম। তিনি পাই এর মান নির্ধারণে পূর্বে ব্যবহৃত চীনা পদ্ধতিকে আরও উন্নত করেন। তার সুবিশাল নক্ষত্র তালিকায় ২৫০০ নক্ষত্রের বর্ণনা লিপিবদ্ধ করার পাশাপাশি তিনি চাঁদ এবং সূর্যের সাথে এর সম্পর্কের ধরন নিয়ে তত্ত্ব প্রদান করেন, বিশেষ করে চাদের গোলক আকৃতি এবং সূর্যের আলোর প্রতিফলনের কারণে তার একপাশে আলো এবং অন্য পাশে অন্ধকার বৈশিষ্ট্য এবং চাঁদ ও সূর্য গ্রহণের বৈশিষ্ট্য নিয়ে তত্ত্ব প্রদান করেন। তার রচিত ফু এবং শি ধরনের কবিতা তার জীবনকালেই বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করে এবং পরবর্তী প্রজন্মের চীনা লেখকেরা তার সাহিত্য নিয়ে গবেষণা করেন। ঝাং তার জ্ঞান এবং সৃষ্টিশীলতার কারণে মরোনত্তর অনেক সম্মোনে ভূষিত হন, বর্তমানকালের অনেক গবেষক জোর্তিবিজ্ঞান সংক্রান্ত ঝাং-এর কাজ গ্রীকো-রোমান জোর্তিবিজ্ঞানী টলেমি’র (৮৬-১৬১ খ্রিঃ) কাজের সাথে তুলনীয় বলে মনে করেন।