জোয়ান বায়েজ

মার্কিন গায়িকা

জোয়ান বায়েজ (জন্মঃ ৯ জানুয়ারি, ১৯৪১) একজন মার্কিন ফোক গায়িকা ও সমাজকর্মী। তিনি বোস্টন এবং কেমব্রিজের কফিহাউজগুলোতে গান গেয়ে সংগীতজীবন শুরু করেন। ১৯৫৯ সালে নিউ পোর্ট ফোক উৎসবে অংশগ্রহণের পর তিনি খ্যাতি লাভ করেন। তিনি যুদ্ধ এবং সমাজের বিভিন্ন অসংগতি নিয়ে গান গেয়েছেন।

জোয়ান বায়েজ,২০০৩

জন্ম এবং বাল্যকাল সম্পাদনা

জোয়ান বায়েজ ১৯৪১ সালে নিউইয়র্কের স্ট্যাটেন আইল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা আলবার্ট বায়েজ ১৯১২ সালে মেক্সিকোতে জন্মগ্রহণ করেন এবং ২০০৯ সালের ২০ মার্চ মৃত্যুবরণ করেন। বায়েজের দাদা রেভারেন্ড অালবার্টো বায়েজ ক্যাথোলিক ধর্ম ত্যাগ করেন এবং যুক্তরাষ্ট্রে চলে আসেন যখন আলবার্টের বয়স ছিলো দুই।

জোয়ান বায়েজের মা "জোয়ান সিনিয়র" বা "বিগ জোয়ান" নামে পরিচিত, তিনি স্কটল্যান্ডের এডিনবার্গে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন চান্দসের ডিউকের বংশধর। জোয়ান সিনিয়র এবং আলবার্ট নিউ জার্সির মেডিসনে একটি নাচের স্কুলে পরিচিত হন এবং সম্পর্কে আবদ্ধ হন। বিয়ের পর তারা ক্যালিফোর্নিয়াতে চলে যান।

বায়েজের দুই বোন, বড় জনের নাম পলিন এবং ছোটো জনের নাম মিমি। মিমি ২০০১ সালে ক্যালিফোর্নিয়াতে ক্যান্সারে মারা যান।

জোয়ানের বাবা ইউনেস্কোর সাথে কাজ করার জন্য তার পরিবারকে অনেকবার বিভিন্ন জায়গায় যেতে হয়, যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহর ছাড়াও জোয়ানের পরিবারকে বিভিন্ন সময় ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, সুইজারল্যান্ড, স্পেন, কানাডা, মধ্যপ্রাচ্যে যেতে হয়। মানবাধিকার এবং সমাজসবায় জোয়ান ক্যারিয়ারের শুরুতেই জড়িয়ে পড়েন। আমেরিকান মাস্টার্স নামক পিবিএস এর সিরিজে তিনি বলেন যে সমাজ সেবাই তার জীবনের ব্রত, গানের থেকে এটা বড়।[১]

গায়ক জীবন সম্পাদনা

জোয়ানের বাবার এক বন্ধু তাকে একটি উকেলেলে(ukulele) গীটার উপহার দেন। তিনি ৪টি কর্ড বাজাতে শেখেন যা দিয়ে তিনি রিদম এবং ব্লুজ বাজাতে পারতেন। তার বাবা মা ভয় পেতেন যে সংগীত তাকে মাদকাসক্তির দিকে নিয়ে যেতে পারে।[২] ৮ বছর বয়সে তিনি ফোক গায়ক পিট সীগারের কনসার্ট দেখে মুগ্ধ হন।[২] কিছুদিনের মধ্যে তিনি জনসম্মুক্ষে গান গাওয়া শুরু করেন। ১৯৫৭ সালে তিনি তার প্রথম গিবসন অ্যাকুয়াস্টিক গিটার কিনেন।

প্রথম অ্যালবাম সম্পাদনা

জোয়ান বায়েজের সত্যিকারে পেশাদার সংগীতজীবন শুরু হয় ১৯৫৯ সালে নিউপোর্ট ফোক ফেস্টিভালে। তার রেকর্ডিং ক্যারিয়ার শুরু হয় ১৯৬০ সালে। তার প্রথম তিনটি অ্যালবামে নাম "জোয়ান বায়েজ", "জোয়ান বায়েজ ভলিউম ২", "জোয়ান বায়েজ ইন কনসার্ট", সবগুলো 'গোল্ড রেকর্ড' মর্যাদাপ্রাপ্ত হয় ও বিভিন্ন চার্টে দুই বছর স্থান ধরে রাখে।[৩]

 
জোয়ান বায়েজ ১৯৬৩ সালে ওয়াশিংটনে

তিনি ইংরেজির পাশাপাশি স্প্যানিশেও দক্ষ। এ দুই ভাষার পাশাপাশি আরো অন্ততঃ ছয়টি ভাষায় গান রেকর্ডিং করেছেন তিনি। ৫৩ বছর ধরে তিনি ৩০টির বেশি অ্যালবাম প্রকাশ করেন।

সামাজিক এবং রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড সম্পাদনা

যুদ্ধবিরোধী আন্দোলন সম্পাদনা

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ সম্পাদনা

১৯৭১ সালে মেডিসন স্কয়ার গার্ডেনে কনসার্ট ফর বাংলাদেশ নামক বিখ্যাত কনসার্টে "স্টোরি অফ বাংলাদেশ" গানটি পরিবেশন করেন। গানটিতে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ, পাকিস্তানের গণহত্যা, বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্ত্রহীন ছাত্রদের হত্যার কথা উঠে আসে।[৪] পরে চান্দস মিউজিক থেকে ১৯৭২ সালে "সং অফ বাংলাদেশ" নামে গানটি প্রকাশ করেন। [৫] পুরো গানটিতে ২২ বার বাংলাদেশ শব্দটি উচ্চারিত হয়েছে।

ইরাক যুদ্ধ সম্পাদনা

১৯৯১ সালে জোয়ান বায়েজ গাল্ফ যুদ্ধের বিরুদ্ধে কনসার্ট করেন। ২০০৩ সালে ৬২বছর বয়সে তিনি সানফ্রান্সিস্কোতে প্রচুর দর্শকের সামনে ২টি কনসার্ট করেন ইরাক যুদ্ধের অবসান চেয়ে। ২০০৫ সালের আগস্টে তিনি টেক্সাসে সিন্ডি শিহানের শুরু করা যুদ্ধবিরোধী আন্দোলনে যোগ দেন।

ভিয়েতনাম যুদ্ধ সম্পাদনা

ভিয়েতনামের যুদ্ধের প্রতিবাদ করতে গিয়ে তিনি ১৯৬৭ সালে ২বার গ্রেপ্তার হন। [৬] মার্কিন সরকারকে ট্যাক্স দিতে অস্বীকার করে রেভেনিউ সার্ভিসের কাছে পাঠানো চিঠিতে তিনি বলেন, "আমি যুদ্ধে বিশ্বাসী নয়,আমি যুদ্ধের অস্ত্রে বিশ্বাসী নই,আমি আমার বছরের আয়করের ৬০% অস্ত্রের জন্য খরচ হতে দিবো না"।

রাজনৈতিক আন্দোলন সম্পাদনা

১৯৮৯ সালে বেইজিং এ টিয়ানম্যান গণহত্যার বায়েজ "চায়না" নামক একটি গান লিখেন যেখানে তিনি চীনের কমিউনিস্ট দলের নিন্দা করেন যারা গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন কারো হাজার হাজার ছাত্রকে হত্যা করে।

সমকামীদের অধিকার সম্পাদনা

জোয়ান বায়েজ সমকামীদের অধিকারের আন্দোলনের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। ১৯৭৮ সালে তিনি অনেকগুলো কনসার্ট করেন ব্রিগসে উদ্যোগকে পরাজিত করার জন্য যেখানে বলা হয়েছিলো ক্যালিফোর্নিয়াতে কোনো সমকামী শিক্ষক স্কুলে পড়াতে পারবে না।

১৯৭০ সালে যুক্তরাষ্ট্রে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল প্রতিষ্ঠায় তিনি অবদান রাখেন এবং তখন থেকেই তিনি প্রতিষ্ঠানটিকে সহায়তা করছেন।

 
জোয়ান বায়েজ, বব ডিলান এর সাথে

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Joan Baez: How Sweet The Sound" American Masters. October 14, 2009. PBS. Retrieved 2009-12-17.
  2. Democracy Now, May 4, 2009 (transcript). Interview with Joan Baez, by Amy Goodman at Pete Seeger's 90th birthday celebration.
  3. Ruhlemann, William (May 6, 2009). "Joan Baez – Biography". allmusic.com. Rovi Corporation. Retrieved 2009-12-13.
  4. "Words and Music by Joan Baez, Song of Bangladesh, lyrics joanbaez.com."। ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ মে ২০১২ 
  5. "http://mukto-mona.net/Articles/avijit/joan_baez260306.htm"। ১৪ জুন ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ মে ২০১২  |title= এ বহিঃসংযোগ দেয়া (সাহায্য)
  6. http://news.bbc.co.uk/onthisday/hi/dates/stories/october/16/newsid_2535000/2535301.stm

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা

আরো পড়ুন সম্পাদনা

  • Baez, Joan. 1968. Daybreak — An Intimate Journal. New York City, New York: Dial Press.
  • Baez, Joan, 1987. And a Voice to Sing With: A Memoir. New York City, New York: Summit Books. আইএসবিএন ০-৬৭১-৪০০৬২-২
  • Baez, Joan. 1988. And a Voice to Sing With: A Memoir. Century Hutchinson, London, U.K. আইএসবিএন ০-৭১২৬-১৮২৭-৯
  • Fuss, Charles J., 1996. Joan Baez: A Bio-Bibliography (Bio-Bibliographies in the Performing Arts Series). Westport, Connecticut: Greenwood Press.
  • Garza, Hedda, 1999. Joan Baez (Hispanics of Achievement). Chelsea House Publications.
  • Hajdu, David. 2001. Positively 4th Street. The Lives and Times of Joan Baez, Bob Dylan, Mimi Baez Fariña And Richard Fariña. New York City, New York: Farrar, Straus and Giroux. আইএসবিএন ০-৮৬৫৪৭-৬৪২-X
  • Heller, Jeffrey, 1991. Joan Baez: Singer With a Cause (People of Distinction Series), Children's Press.
  • Jaeger, Markus. 2006. Joan Baez and the Issue of Vietnam. ibidem-Verlag, Austria. (book is in English)
  • Romero, Maritza, 1998. Joan Baez: Folk Singer for Peace (Great Hispanics of Our Time Series). Powerkids Books.