জোয়ানা সিপ্রিয়ানো হত্যাকাণ্ড
জোয়ানা ইসাবেল সিপ্রিয়ানো (জন্ম ৩১ মে ১৯৯৬) ২০০৪ সালের ১২ আগস্ট পর্তুগালের আলগারভে অঞ্চলের পোর্টিমাও-এর নিকটবর্তী ফিগুয়েরা গ্রাম থেকে নিখোঁজ হন। পর্তুগালের অপরাধী পুলিশ পলিসিয়া জুডিশিয়ারিয়া একটি তদন্ত করে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয় যে তাকে তার মা লিওনর সিপ্রিয়ানো এবং তার চাচা জোয়াও সিপ্রিয়ানোর অজাচারের সাথে জড়িত থাকার সাক্ষী থাকায় তাকে হত্যা করা হয়েছে। এর সমর্থনে কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি এবং অভিযোগ আছে তার কাছ থেকে পর্তুগিজ পুলিশ মারধর করে মিথ্যা স্বীকারোক্তি নিয়েছিল। তার মৃতদেহ কখনই পাওয়া যায়নি। সে মারা গেছে এমন কোনও বাস্তব প্রমাণ নেই।[১]
মা ও চাচা ২০০৪ সালের অক্টোবরে পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তি দেন; চাচা বলেছিলেন যে তিনি মেয়েটির দেহটিকে টুকরো টুকরো করে ফেলেছিলেন এটিকে কাছাকাছি একটি শুকরের পালের মধ্যে ফেলে দেওয়া হয়।[২] জোয়ানার মা স্বাক্ষর করার পরের দিন তার স্বীকারোক্তি প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন। অভিযোগ করেন যে ৪৮ ঘন্টা ধরে জিজ্ঞাসাবাদের সময় তাকে মারধর করা হয়েছিল। পুলিশ কর্মকর্তারা বলেছিলেন আত্মহত্যার প্রচেষ্টায় জোয়ানার মা থানার সিঁড়ি থেকে পড়ে গিয়েছিলেন এবং তার ফলে মায়ের মুখ এবং শরীরে আঘাত লেগেছিল। মা ও কাকা উভয়কেই হত্যার দায়ে দোষী সাব্যস্ত করা হয় এবং ষোল বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।[৩] এটি পর্তুগিজ আইনী ইতিহাসে প্রথম হত্যার বিচার ছিল যা কোনও মৃতদেহ আবিষ্কার ছাড়াই সংঘটিত হয়েছিল।[৪]
হামলার অভিযোগের ফলে পাঁচ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের অপরাধের অভিযোগ আনা হয়; তিনজনকে বেকসুর খালাস করা হয়েছে।[৩] দোষী সাব্যস্ত দুই কর্মকর্তার মধ্যে একজন, চিফ ইন্সপেক্টর গনকালো আমারাল, ২০০৭ সালের মে মাসে প্রাইয়া দা লুজের নিকটবর্তী রিসোর্ট থেকে নিখোঁজ হওয়া ব্রিটিশ মেয়ে ম্যাডেলিন ম্যাকক্যানের নিখোঁজ হওয়ার তদন্তের নেতৃত্ব দেন। আমারাল কথিত হামলার সময় উপস্থিত ছিলেন না, কিন্তু অন্যান্য কর্মকর্তাদের জন্য গা ঢাকা দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছিল; তিনি এই মামলায় পুলিশের মিথ্যা নথি থাকার জন্য দোষী সাব্যস্ত হন এবং আঠারো মাসের জন্য বহিষ্কারাদেশ পান।[৫]
এই মামলার মধ্যে বেশ কয়েকটি মিল আছে—উভয় মেয়েই ১১ কিলোমিটারের (৭ মাইল) মধ্যে থেকেই এবং একে অপরের তিন বছরেরও কম সময় ধরে কোন চিহ্ন না রেখেই নিখোঁজ হয়ে যায়, উভয় ক্ষেত্রেই কর্মকর্তারা অপরাধের স্থল সুরক্ষিত করতে ব্যর্থ হন, উভয় মা তাদের মেয়েদের খুঁজে বের করার জন্য প্রচারণা চালান এবং উভয় মহিলার বিরুদ্ধে জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়—জোয়ানার পরিবারকে ২০০৮ সালে পুলিশের কাছে আবেদন করতে উদ্বুদ্ধ করে যে নিখোঁজ হওয়ার মধ্যে কোন যোগসূত্র আছে কিনা।[৪]
অন্তর্ধান
সম্পাদনাসেই সময় আট বছর বয়সী জোয়ানা কিপারিয়ানকে শেষবার রাত ৮টার দিকে দেখা গিয়েছিল। স্থানীয় দোকান থেকে দুধ এবং এক টিন টুনা কিনতে পাঠানোর পর সে নিখোঁজ হয়ে যায়। একজন প্রতিবেশী তাকে তার বাড়ি থেকে প্রায় ২০০ মিটার দূরে দোকান থেকে ফিরে যেতে দেখেছিল। তার মা লিওনর কিপারিয়ানো তার মেয়েকে খুঁজে বের করার জন্য স্থানীয় প্রচারণা শুরু করেন এবং আশেপাশের পোস্টার বিতরণ করেন।[৪]
অভিশংসক যুক্তি দেখিয়েছিল যে জোয়ানাকে হত্যা করা হয়েছিল কারণ সে তার মা এবং তার মায়ের ভাই জোয়াও কিপারিয়ানকে যৌন মিলন করতে দেখেছিল। প্রায় ৪৮ ঘন্টা টানা জিজ্ঞাসাবাদের পরে লিওনর তার মেয়েকে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন। তার ভাই জোয়ানাকে লাঞ্ছিত করার কথা স্বীকার করে এবং বলে যে সে তার দেহটি ছোট ছোট টুকরো করে কেটে একটি রেফ্রিজারেটরের ভিতরে রেখেছিল। তারপর নিকটবর্তী শূকরের খোঁয়াড়ের মধ্যে ফেলে দেয়। যখন তাকে জিজ্ঞাসা করা হয় যে সে জোয়ানাকে যৌন নির্যাতন করেছে কিনা, তখন সে বলে, "আমি তার ক্ষতি করিনি - আমি কেবল তাকে হত্যা করেছি।"[৬]
২০১৯ সালে লিওনর কিপারিয়ানো তার পাঁচ ষষ্ঠাংশ সাজা ভোগ করার পর কারাগার থেকে মুক্তি পান।[৭]
মন্তব্য
সম্পাদনা
- ↑ Hamilos, Paul; de Beer, Brendan (৩ অক্টোবর ২০০৭)। "Detective leading hunt for Madeleine sacked after blast at UK police"। The Guardian। London। সংগ্রহের তারিখ ১৪ অক্টোবর ২০১৭।
- ↑ "Prosecution unveils horror of girl's death"। The Portugal News। ১৪ মে ২০০৫। ১৪ অক্টোবর ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ অক্টোবর ২০১৭।
- ↑ ক খ Govan, Fiona (২৮ মে ২০০৭)। "The detectives working as the world watches"। The Daily Telegraph। London। সংগ্রহের তারিখ ১৪ অক্টোবর ২০১৭।
- ↑ ক খ গ Watts, Alex (১২ মে ২০০৮)। "'Disturbing Similarities' With Madeleine"। Sky News (ইংরেজি ভাষায়)। London। ৩ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ অক্টোবর ১৪, ২০১৭ – Internet Archive Wayback Machine-এর মাধ্যমে।
- ↑ "'McCann detective guilty of perjury"। The Guardian (ইংরেজি ভাষায়)। London। Press Association। ২২ মে ২০০৯। ১১ জুন ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ অক্টোবর ১৪, ২০১৭ – Truth be Told-এর মাধ্যমে।
- ↑ Marques, Sara (৫ সেপ্টেম্বর ২০০৭)। "'Eu não lhe fiz mal, só a matei'"। IOLDiário (পর্তুগিজ ভাষায়)। Lisbon। ৯ মে ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ অক্টোবর ২০১৭ – Arquivo da Web Portuguesa-এর মাধ্যমে।
- ↑ "Mother jailed for killing 'tragic Joana' released "to get on with life""। Portugal Resident। Lisbon। ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯। ১ আগস্ট ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ আগস্ট ২০১৯।