জোনাকী (ম্যাগাজিন)
জোনাকী অসমীয়া ম্যাগাজিন (আলোচনী) সাহিত্যর পথপ্ৰদৰ্শক। ১৮৮৯ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি সর্বপ্ৰথম এই ম্যাগাজিন(আলোচনী) চন্দ্র কুমার আগরওয়ালার সম্পাদনায় কলকতা থেকে প্ৰকাশ করা হয়[১][২][৩][৪]। 'জোনাকী'র মাধ্যমেই সর্ব-প্ৰথমবারের মতো পশ্চিমীয় সাহিত্যের পাশাপাশি অসমীয়া সাহিত্যের বিভিন্ন দিক উন্মোচিত হয়ে উঠে৷ জোনাকী ছিল ‘অসমীয়া ভাষা উন্নতি সাধনী সভা’ মূখপত্ৰ। এটার দ্বিতীয় সম্পাদক ছিলেন হেমচন্দ্র গোস্বামী। পরে সত্যনাথ বরা এবং কনকলাল বরুয়ার সম্পাদনায় গুয়াহাটিতে জোনাকী প্ৰকাশ হয়। জোনাকীর পাতাতে চন্দ্রকুমার আগরওয়ালার প্ৰথম রোমাণ্টিক কবিতা ‘বন কুঁবরী’, হেমচন্দ্ৰ গোস্বামীর প্ৰথম অসমীয়া সনেট ‘প্ৰিয়তমার চিঠি’ প্ৰকাশ হয়। লক্ষ্মীনাথ বেজবরুয়ার 'লিতিকাই' প্ৰহসন-র মাধ্যমে প্ৰথম সাহিত্য সৃষ্টি করেন এবং ‘কৃপাবর বরুয়ার কাকতর টোপোলা’ শিতান আরম্ভ করেছিল। অসমীয়া ভাষা-সাহিত্যের বিকাশে জোনাকীর অবদান অনস্বীকাৰ্য৷ এই ম্যাগাজিন(আলোচনী) টি ১৮৮৯ সাল থেকে ১৯০৩ সাল পর্যন্ত চলছিল, এই যুগ কে অসমীয়া সাহিত্যের জোনাকী যুগ বলা হয়ে থাকে[১][২]।
সাবেক সম্পাদক | পূৰ্বের সম্পাদক |
---|---|
সহ-লেখক | ষ্টাফ লেখক |
বিভাগ | সাহিত্য |
প্রকাশনা সময়-দূরত্ব | মাসিক |
প্রকাশক | চন্দ্র কুমার আগরওয়ালা |
প্রথম প্রকাশ | ফেব্রুয়ারি ৯, ১৮৮৯ |
সর্বশেষ প্রকাশ | ১৯০৩ |
কোম্পানি | অসমীয়া ভাষা উন্নতি সাধিনী সভা |
দেশ | ভারত |
ভিত্তি | কলকাতা |
ভাষা | অসমীয়া |
ইতিহাস
সম্পাদনা১৮৮৮ সালে অসমীয়া ভাষা উন্নতি সাধিনী সভা গঠন হওয়ার পিছনে তাদের মাসিক অসমীয়া আলোচনীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। কিন্তু সভার সকল সদস্য ছাত্ৰ হওয়ায় আৰ্থিক সমস্যা দেখা দেয়। তা দেখে ধনী ব্যবসায়ী পরিবারের ছেলে চন্দ্রকুমার আগরওয়ালা টাকাপয়সা দিয়ে সহায়তা করবেন বলে এগিয়ে আসেন এবং ম্যাগাজিন(আলোচনী) টার "জোনাকী" নাম দেয়া হয়[৫]। আগরওয়ালা সংগঠনটির সদস্য হওয়ার সময় প্ৰেসিডেন্সী কলেজের এফ. এ. ছাত্ৰ ছিলেন। তাদের ম্যাগাজিন(আলোচনী) র ছাপা এবং সম্পাদনার জন্যে দুটা শৰ্ত দেয়া হয়:
- প্ৰতি সদস্যকেই "জোনাকী"র দায়িত্ব নিতে হবে;
- প্ৰতি সদস্যকেই "জোনাকী"র জন্য একটা করে লেখা দেওয়া লাগবে।
এই দুটা শৰ্ত পূরণ না করলে সদস্যক ১৫ টাকা জরিমানা দিতে হবে। সবাই শৰ্ত দুটা মেনে নেয়া সাপেক্ষে ম্যাগাজিন(আলোচনী) টার প্ৰথম সংখ্যা প্ৰকাশ পায়। প্ৰকাশের প্ৰকৃত তারিখ জানা যায়নি কারণ ম্যাগাজিন(আলোচনী) তে কেবল অসমীয়া মাস 'মাঘ' এবং ১৮৮৯ সন বলে উল্লেখ করা হইছিল। কিন্তু তারিখটা ৯ ফেব্রুয়ারি, ১৮৮৯ সন বলে ভাবা হয়। ম্যাগাজিন(আলোচনী) টি ১৮৯৮ সাল থেকে প্ৰকাশ হতে থাকে।[৩] তারপর ১৯০১ সালের পর গুয়াহাটিতে ম্যাগাজিন(আলোচনী) টি প্ৰকাশ পায় এবং ১৯০৩ সাল পর্যন্ত চলতে থাকে।[৩][৬] গুয়াহাটি সংস্করণের সম্পাদক ছিলেন সত্যনাথ বরা এবং কনকলাল বরুয়া।
লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য
সম্পাদনাম্যাগাজিন(আলোচনী) টির একটা বিশেষত্ব ছিল যে এটা কোনো সম্পাদকীয় প্ৰকাশ ছিলনা। তার মধ্যে "আত্মকথা" নামের একটা নিয়মিত কলাম ছিল যা ম্যাগাজিন(আলোচনী) তথা সমাজের দিকে লক্ষ্য ছিল।[৩] ম্যাগাজিন(আলোচনী)র প্ৰথম সংখ্যায় সেই শিক্ষা প্ৰকাশ পাওয়ার লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য ছিল
"জোনাকী" যুগ
সম্পাদনা"জোনাকী" ম্যাগাজিন(আলোচনী) অসমীয়া সাহিত্যে রোমাণ্টিকতাবাদের সূচনা করে। চন্দ্ৰকুমার আগরওয়ালার লেখা প্ৰথম অসমীয়া রোমাণ্টিক কবিতা "বন কুঁবরী" এবং হেমচন্দ্ৰ গোস্বামীর প্ৰথম অসমীয়া সনেট "প্ৰিয়তমার চিঠি" জোনাকীতে প্ৰকাশ পাইছিল। হেমচন্দ্ৰ গোস্বামীর "কাকো এবং হিয়া নিবিলাওঁ"র অন্য ধরনের কবিতা ছিল। লক্ষ্মীনাথ বেজবরুয়ার লেখা "কৃপাবর বরুয়ার কাকতর টোপোলা" নামের সচেতনতামূলক রচনাও নিয়মিতভাবে প্ৰকাশ পাচ্ছিল। কমলাকান্ত ভট্টাচাৰ্য্যের "পাহরণি" এবং চন্দ্ৰকুমার আগরওয়ালার "নিয়র" ছিল প্ৰথম সংখ্যায় প্ৰকাশ পাওয়া অন্য দুটা উল্লেখযোগ্য অসমীয়া কবিতা। তাদের সম্মিলিত প্ৰচেষ্টায় অসমীয়া সাহিত্যে "জোনাকী যুগ" বলে একটা নতুন যুগের সৃষ্টি হয়। অরুণোদইর লেখকরা প্ৰধানত গদ্যের আশ্ৰয় নিছিলেন, কিন্তু "জোনাকী"র কবি এবং তাদের সমসাময়িক কবিদের চেষ্টায় অসমীয়া সাহিত্যে কবিতার গুরুত্ব বেড়ে যায়।[৪]
ম্যাগাজিন(আলোচনী)র সাথে জড়িত লোক
সম্পাদনাম্যাগাজিন(আলোচনী)টির সাথে জড়িত উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিরা হলেন:[৪]
- লক্ষ্মীনাথ বেজবরুয়া (১৮৬৪-১৯৩৮)
- চন্দ্রকুমার আগরওয়ালা (১৮৬৭-১৯৩৭)
- দেবকান্ত বরুয়া
- কমলাকান্ত ভট্টাচার্য্য
- হেমচন্দ্র গোস্বামী (১৮৭২-১৯২৮)
- পদ্মনাথ গোহাঞিবরুয়া (১৮৭১-১৯৪৬)
- সত্যনাথ বরস (১৮৬০-১৯২৫)
- কনকলাল বরুয়া (১৮৭২-১৯৪০)
- আনন্দ চন্দ্র আগরওয়ালা (১৮৭৪-১৯৪০)
- ধর্মেশ্বরী দেবী বরুয়ানী (১৮৯২-১৯৬০)
- নলিনীবালা দেবী (১৮৯৮-১৯৭৭)
- রঘুনাথ চৌধারী (১৮৭৯-১৯৬৮)
- অম্বিকাগিরি রায়চৌধুরী (১৮৮৫-১৯৬৭)
- যতীন্দ্র নাথ দুবরা (১৮৯২-১৯৬৪)
সংখ্যা
সম্পাদনা১৮৮৯-১৮৯৮ সালের মধ্যে "জোনাকী"র প্ৰকাশ হওয়া সংখ্যা ছিল ৬৯ টি।[১][৩]
- প্ৰথম বছর: ১১টা সংখ্যা
- দ্বিতীয় বছর: ১২টা সংখ্যা
- তৃতীয় বছর: ১০টা সংখ্যা
- চতুৰ্থ বছর: ১১টা সংখ্যা
- পঞ্চম বছর: ৭টা সংখ্যা
- ষষ্ঠ বছর: ১১টা সংখ্যা
- সপ্তম বছট: ৬টা সংখ্যা
- অষ্টম বছর: ১টা সংখ্যা
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ গ "First Assamese monthly magazine - Jonaki" (ইংরেজি ভাষায়)। assamspider.com। মে ১৫, ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০১৩।
- ↑ ক খ Amaresh Datta (১৯৮৮)। Encyclopaedia of Indian Literature: devraj to jyoti (ইংরেজি ভাষায়)। Sahitya Akademi। পৃষ্ঠা 1870–। আইএসবিএন 978-81-260-1194-0। সংগ্রহের তারিখ ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৩।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ Dutta, Uddipan। "The Growth of Print Nationalism and Assamese Identity in Two Early Assamese Magazines" (ইংরেজি ভাষায়)। Sarai। পৃষ্ঠা 6। ৯ নভেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৬ এপ্রিল ২০১০।
- ↑ ক খ গ Goswami, Geeta (জানু–ফেব্রু ২০০৮)। "Axamiyā Poetry: Inception to Romanticism"। Muse India (ইংরেজি ভাষায়) (17)। মার্চ ৫, ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০১৩।
- ↑ "The growth of print nationalism and assamese identity in two early assamese magazines" (ইংরেজি ভাষায়)। sarai.net। ৯ নভেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০১৩।
- ↑ "Axomiā Bhāxā Unnati Xādhini Xabhār Karjya Biboroni"। Jonaki (ইংরেজি ভাষায়)। 5 (7)।