জেরিকোর লড়াই হল যিহোশূয়ের পুস্তকে উল্লেখিত একটি লড়াই যেখানে বনি ইসরাইল কেনান অভিযানের অংশ হিসেবে জেরিকো আক্রমণ করে। যিহোশূয়ের পুস্তক ৬:১ অনুযায়ী, জেরিকোর দিকে ছয়দিন একবার এবং সপ্তমদিন সাতবার করে পদযাত্রার পরে শিঙ্গা বাজানোর সাথে সাথে এর প্রাচীর ধ্বসে যায়। যদিও তেল এস-সুলতান নগরী খনন পরবর্তী প্রাপ্ত প্রমাণাদি বাইবেলের এই কাহিনী প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে,[২] যা মূলত ইস্রায়েল রাজ্য দাবি করতে যিহূদা রাজ্যর পরবর্তী রাজাদের করা অপপ্রচার ছিল।[৩] প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণের অভাব এবং বাইবেলের গল্পটির ধর্মীয় উদ্দেশ্য থেকে উইলিয়াম জি. ডেনভারের মতন প্রত্নতত্ত্ববিদগণ জেরিকোর পতনকে "সম্পূর্ণভাবে নিজস্ব উদ্ভাবিত" বলে চিহ্নিত করেছেন।[৪]

জেরিকোর লড়াই (বাইবেলীয়)

জুলিয়াস স্নুর ভন ক্যারলসফেল্ড (১৭৯৪–১৮৭২) দ্বারা অঙ্কিত জেরিকো যুদ্ধের চিত্রকর্ম
অবস্থান
তেল এস-সুলতান (বাইবেলীয় জেরিকো)
ফলাফল ইব্রীয়দের বিজয়
বিবাদমান পক্ষ
ইস্রায়েলীয় কেনানীয়
সেনাধিপতি ও নেতৃত্ব প্রদানকারী
যিহোশূয় জেরিকোর রাজা
শক্তি
৪০,০০০[১] অজ্ঞাত
হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতি
শূন্য সকল অধিবাসী গণহত্যা (রাহাব ও পরিবার ব্যতীত)।

বাইবেলীয় বর্ণনা সম্পাদনা

বনি ইসরায়েলের কেনান জয়ের কাহিনীর বর্ণনা যিহোশূয়ের পুস্তকে পাওয়া যায়। ইস্রায়েলীয়দের নেতা যিহোশূয় জেরিকোতে দুজন গুপ্তচর পাঠান যা প্রথম শহর হিসেবে তারা জয় করার সিদ্ধান্ত নেয়, জানা যায় যে জেরিকোর লোকজন তাদের ও তাদের ঈশ্বরের ভয়ে রয়েছে। চুক্তিসিন্দুক সমেত ইহুদি কোহেন সহ ইস্রায়েলীয়রা ছয়দিনে প্রতিদিন একবার করে জেরিকোর দিকে পদযাত্রায় অংশ নেয়। সপ্তম দিনে তারা সাতবার করে প্রাচীরের দিকে ধাবিত হয়, তারপর কোহেনরা তাদের ভেড়ার শিং এর তৈরি শিঙ্গা বাজায়, ইস্রায়েলীয়রা বিরাট চিৎকার করে এবং তারপরই শহরের প্রাচীর ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। ঈশ্বরের আইন মেনে জেরিকোর সকল বয়সের নারী ও পুরুষ, ষাঁড়, ভেড়া, গাধাদের হত্যা করা হয়। একমাত্র ইস্রায়েলীয় গুপ্তচরদের সাহায্যকারী রাহাব নামক কেনানীয় পতিতা, তার পরিবারকে তাদের সম্বল সমেত ছেড়ে দেওয়া হয়। এরপর যিহোশূয় যারা জেরিকোর প্রাচীর ও শহর পুনর্নির্মাণ করবে তাদের এবং তাদের প্রথম ও শেষ পুত্রদের মৃত্যুর অভিশাপ দেন। পরবর্তীতে শহরটি রাজা আহাবের অধীনে বেথেলীয় হিয়েল নির্মাণ করেন এবং ঘটনাক্রমে যিহোশূয়ের অভিশাপের শিকার হোন।

উৎপত্তি ও ঐতিহাসিকতা সম্পাদনা

 
জিন ফুকেট (আনু. ১৪১৫–১৪২০) এর আঁকা যুদ্ধের চিত্রকর্ম

১৮৬৮ সাল৩ চার্লস ওয়ারেন তেল এস-সুলতানকে বাইবেলের জেরিকো হিসেবে চিহ্নিত করেন।[৫] ১৯৩০–১৯৩৬ সালে জন গারস্ট্যাং সেখানে খননকার্য পরিচালনা করে পতিত প্রাচীর খুঁজে পান যার তারিখ ১৪০০ খ্রিস্টপূর্ব নির্ধারণ করা হয়। ক্যাথলিন কেনিয়ন ১৯৫২–১৯৫৮ তে আবার সেখানে খননকাজ চালিয়ে খুঁজে পান যে প্রাচীরের ঘটনাটি পূর্ববর্তী সময়ে ঘটেছে বলে নির্দেশ করেন যা হিকসোসদের বিরুদ্ধে মিশরীয়দের পরিচালিত অভিযানের ফলস্বরূপ ঘটেছিলো এবং তারপর খ্রিস্টপূর্ব ত্রয়োদশ শতাব্দীর দিকে জেরিকো পরিত্যাগ করা হয় যা যিহোশূয়ের যুদ্ধের সময়কাল হিসেবে খ্যাত।[৬] বিভিন্ন সূত্র কেনিয়নের ঘটনাটি বিভিন্ন সময় নির্ধারিত করেন; হয় আনুমানিক ১৫০০ খ্রিস্টপূর্ব[৬] অথবা আনুমানিক ১৫৮০ খ্রিস্টপূর্ব।[৭] কেনিয়নের নির্দেশিত ঘটনাটি ১৯৯৫ সালে রেডিওকার্বন পরীক্ষার মাধ্যমে খ্রিস্টপূর্ব সপ্তদশ বা ষষ্ঠদশ শতাব্দী নিশ্চিত করা হয়।[৭] একটি ছোট প্রাচীরবিহীন খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চদশ শতাব্দীতে গড়ে উঠার প্রমাণ পাওয়া গেলেও টিলার বসতিগুলো খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চদশ শতাব্দীর শেষের দিক থেকে খ্রিস্টপূর্ব দশম/নবম শতাব্দী পর্যন্ত জনশূন্য ছিলো।[২]

গবেষকগণ প্রায় সর্বসম্মতিক্রমে একমত যে যিহোশূয়ের পুস্তকের সামান্য ঐতিহাসিক মূল্য রয়েছে।[৮] এর উৎপত্তি এর প্রদর্শিত সময় থেকে বেশ দূরে,[৯] এবং এর উদ্দেশ্য প্রাথমিকভাবে ধর্মীয় যা দ্বিতীয় বিবরণ-এ নির্ধারণ করা শিক্ষা ও আইন দ্বারা দেখা ইসরায়েলকে বিচার করার সাথে সম্পর্কিত।[১০] জেরিকো ও এর পরবর্তী অভিযানের গল্প যিহূদা রাজ্যের জাতীয়তাবাদী অপপ্রচার ৭২২ খ্রিস্টপূর্ব-এর পর তাদের ইসরায়েল রাজ্যের উপর অধিকারের দাবি প্রতিনিধিত্ব করে;[৩] এই অধ্যায়গুলো পরবর্তী সময় যিহোশূয়ের গল্প হিসেবে রাজা যোশিয়ের আমলে (৬৪০–৬০৯ খ্রিস্টপূর্ব) যুক্ত করা হয়, এবং ব্যাবিলনের হাতে ৫৮৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দে জেরুসালেমের পতন থেকে ব্যাবিলনীয় বন্দিদশা থেকে ৫৩৮ খ্রিস্টপূর্বে ফিরে আসার সময়ের মধ্যে সংশোধিত এবং সম্পন্ন করা হয়।[১১]

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. যিহোশূয়ের পুস্তক ৪:১৩
  2. Jacobs 2000, পৃ. 691।
  3. Coote 2000, পৃ. 275।
  4. Dever 2006, পৃ. 47।
  5. Wagemakers 2014, পৃ. 122ff।
  6. Dever 2006, পৃ. 45–46।
  7. Bruins ও van der Plicht 1995, পৃ. 213।
  8. Killebrew 2005, পৃ. 152।
  9. Creach 2003, পৃ. 9–10।
  10. Laffey 2007, পৃ. 337।
  11. Creach 2003, পৃ. 10–11।

গ্রন্থপঞ্জি সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা