জুলিয়াস ফুচিক (২৩ ফেব্রুয়ারি ১৯০৩ - ৮ সেপ্টেম্বর, ১৯৪৩) একজন চেকোস্লোভাকিয়ান সাম্যবাদী বিপ্লবী, সাংবাদিক ও শহীদ।

জুলিয়াস ফুচিক
জন্ম২৩ ফেব্রুয়ারি, ১৯০৩
মৃত্যু৮ সেপ্টেম্বর, ১৯৪৩
জাতীয়তাচেক
পেশাসাংবাদিকতা
প্রতিষ্ঠানচেকোস্লোভাকিয়ান কমিউনিস্ট পার্টি
আন্দোলনচেকোস্লোভাকিয়া সাম্যবাদী, ফ্যাসীবিরোধী আন্দোলন

প্রারম্ভিক জীবন সম্পাদনা

চেকোস্লোভাকিয়াপ্রাগ শহরে এক শ্রমিক পরিবারে ১৯০৩ সালে জন্মগ্রহণ করেন জুলিয়াস ফুচিক। পিতা ছিলেন ইস্পাত কারখানার শ্রমিক। ছাত্রাবস্থা থেকে রাজনীতি, সংগীত ও সাহিত্যের প্রতি ঝোঁক ছিল। মাত্র বারো বছর বয়েসেই পত্রিকা প্রকাশ করার চিন্তাভাবনা তার মাথায় আসে। পত্রিকাটির নাম রেখেছিলেন 'স্লোভান'। এছাড়া সখের থিয়েটারেও অভিনয় করতেন।

রাজনীতি ও সাংবাদিকতা সম্পাদনা

১৯২০ সালে কলেজে পড়ার সময় চেকোস্লোভাকিয়া সামাজিক গণতান্ত্রিক শ্রমিক দলে যোগদান করেন। বামপন্থী রাজনীতিতে আগ্রহ ছিল। ১৯২১ সালে চেকোস্লোভাকিয়া কমিউনিস্ট পার্টি গঠিত হলে তার সক্রিয় সদস্য হয়ে পড়েন তিনি। পার্টির রাজনৈতিক মুখপত্রে সাংস্কৃতিক বিষয়ের ওপর তখন থেকে লেখালিখি ও সাংবাদিকতার কাজে যুক্ত হয়ে যান। ১৯২৯ সালে 'ভোরবা' (সৃষ্টি) পত্রিকার প্রধান সম্পাদক এবং কমিউনিস্ট পার্টির মুখপত্র 'রুদে প্রাভো'তে (লাল আইন) নিয়মিত লেখা তাকে সাংবাদিক হিসেবে প্রতিষ্ঠা দেয়। একাধিকবার রাজনৈতিক লেখার জন্যে গ্রেপ্তার হতে হয়েছে তাকে। ১৯৩০ সালে প্রথমবার সোভিয়েত ইউনিয়ন যান চার মাসের জন্যে এবং সমাজতান্ত্রিক দেশ সম্পর্কে তার সেই অভিজ্ঞতার কথা বই আকারে বের হয়। ১৯৩৪ সালে দ্বিতীয় বার সেদেশে গিয়ে দুই বছর অতিবাহিত করেন এবং তার পাঠানো তথ্য, সংবাদ ইত্যাদি পার্টির মুখপত্রে প্রকাশিত হয়। আন্ত: পার্টি বিতর্কে তিনি দৃঢ়ভাবে স্তালিনপন্থী অবস্থান নেন। ১৯৩৮ সালে তিনি বিবাহ করেন অগাস্তিনা ফুচিকোভা কে। নাৎসী আক্রমনের আগেই ১৯৩৮ সালে দেশজুড়ে কমিউনিস্ট পার্টি নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়। ১৯৩৯ সাল নাগাদ হিটলারের নাজি বাহিনী চেকোস্লোভাকিয়া দখল করে। নির্ভীক সাংবাদিক ফুচিক গোপন আস্তানা থেকে পত্রিকা, হ্যান্ডবিল ইত্যাদি প্রকাশ ও প্রচার করতে থাকেন ঝুঁকি নিয়েও। নাৎসি পার্টির গোয়েন্দা বাহিনী ১৯৪০ সাল থেকে তাকে খুঁজতে শুরু করে। ততদিনে তিনি কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও নামকরা সাংবাদিক হিসেবে দেশজোড়া পরিচিতি পেয়েছেন। ১৯৪২ খৃষ্টাব্দের ২৪ এপ্রিল গোপন আস্তানায় হানা দিয়ে গেস্টাপো বাহিনী আরো ছয়জন কমিউনিস্ট কর্মীর সাথে তাকে গ্রেপ্তার করে। জানা যায় গ্রেপ্তারি এড়াতে কমরেডদের পরামর্শ দিয়েছিলেন তাকে গুলি করতে কিন্তু সে আদেশ তার সাথীরা অমান্য করেন।[১]

সাহিত্যকর্ম সম্পাদনা

জুলিয়াস ফুচিকের শ্রেষ্ঠ সাহিত্যকীর্তি 'লেটার ফ্রম গ্যালো' বা 'ফাঁসির মঞ্চ থেকে' সারা পৃথিবী জুড়ে প্রায় ৯০ টি ভাষায় অনূদিত ও প্রকাশিত হয়েছে। জেল জীবনে তিনি দিনলিপি হিসেবে গোপনে সিগারেটের কাগজে লেখেন এবং কোলিনস্কি নামক একজন সহানুভূতিশীল কারারক্ষীর মাধ্যমে বাইরে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন লেখাগুলি। এই কারাজীবনের কাহিনী পরবর্তীতে বিশ্বসাহিত্যের অমূল্য সম্পদ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। এছাড়াও তিনি বহু রিপোর্ট, ফিচার, রাজনৈতিক প্রবন্ধ, সমালোচনা ইত্যাদি লিখেছিলেন তার দীর্ঘ সাংবাদিক জীবনে। তার বিদ্রুপাত্মক সমালোচনামূলক বই 'ত্রানাভেসেক' এবং অন্যতম প্রবন্ধ 'লেনিনের হাসি'।[২][৩]

বিচার ও মৃত্যু সম্পাদনা

১৯৪৩ সালে তাকে নাৎসি জার্মানিতে পাঠানো হয়েছিল। বার্লিন সহ বিভিন্ন জেলে রাখে এবং ধারাবাহিক নির্যাতনের পর নিষিদ্ধ রাজনৈতিক কার্যকলাপ ও গভীর ষড়যন্ত্রের অভিযোগে, বিচারের প্রহসনান্তে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। ৮ সেপ্টেম্বর ১৯৪৩ সালে তাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করে নাজী কর্তৃপক্ষ। তার স্ত্রী অগাস্টিনা ফুচিকোভা'কেও কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে পাঠানো হয়েছিল।[১]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. জুলিয়াস ফুচিক (২০০৬)। ফাঁসির মঞ্চ থেকে। কলকাতা: ন্যাশনাল বুক এজেন্সি প্রাইভেট লিমিটেড। পৃষ্ঠা ভূমিকা। 
  2. জয়ন্ত ঘোষাল (১৪ জুলাই,২০১৪)। "জনমত উপেক্ষা করে তেতো দাওয়াই দেওয়া কঠিন"। আনন্দবাজার পত্রিকা। সংগ্রহের তারিখ ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)
  3. জুলিয়াস ফুচিক, অনুবাদ: নীহাররঞ্জন বাগ (২০১১)। লেনিনের হাসি ও অন্যান্য রচনা। কলকাতা: সেতু প্রকাশনী। আইএসবিএন 978-93-80677-09-5