জালালিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসা

জালালিয়া সিনিয়র ফাজিল ডিগ্রি মাদ্রাসা[ক] বাংলাদেশের সিলেট জেলার দক্ষিণ সুরমা উপজেলার জালালপুর বাজারের মালঞ্চ নামক স্থানে অবস্থিত একটি অতি প্রাচীন মাদ্রাসা।[৩] এটি ১৮৮৮ সালে মঈজা বানু নামের এক ধার্মিক মহিলা কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো। মাদ্রাসাটি স্থানীয়ভাবে জালালপুর মাদ্রাসা নামেও পরিচিত। মাদ্রাসাটি বর্তমানে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত মাদ্রাসা।[৪] এবং দাখিল ও আলিম স্তর পরিচালনার জন্য বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডের নিয়ন্ত্রাধীন। মাদ্রাসাটির সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের একটি ছাত্র সংসদ রয়েছে।

জালালিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসা
মাদ্রাসার লোগো
ধরনএমপিও ভুক্ত
স্থাপিত১ জানুয়ারি ১৮৮৮; ১৩৬ বছর আগে (1888-01-01)
প্রতিষ্ঠাতামঈজা বানু
প্রাতিষ্ঠানিক অধিভুক্তি
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া (২০০৬- ২০১৬)
ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় (২০১৬- বর্তমান)
মাধ্যমিক অন্তর্ভুক্তিবাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড
শিক্ষায়তনিক ব্যক্তিবর্গ
২০
শিক্ষার্থীআনু. ৬০০
ঠিকানা
মালঞ্চ, জালালপুর বাজার
, , ,
শিক্ষাঙ্গনশহুরে
EIIN সংখ্যা১৩০৪৪১
ক্রীড়াক্রিকেট, ফুটবল, ভলিবল, ব্যাটমিন্টন
এমপিও সংখ্যা১৫১০১৪২৩০১
ওয়েবসাইটhttp://130441.ebmeb.gov.bd/

ইতিহাস সম্পাদনা

মঈজা বানু সিলেট অঞ্চলের একজন ধার্মিক দানশীলা নারী ছিলেন, তিনি ইসলামি শিক্ষাক্ষেত্রে অবদান রাখতেন। সেই হিসেবে ১৮৮৮ সালে তিনি জালালপুর পূর্বভাগের খোজাদিঘীর দক্ষিণ পারে এই মাদ্রাসাটি স্থাপন করেন। এটি একটি জুনিয়র মাদ্রাসা হিসেবে কার্যক্রম শুরু করেছিলো, মাদ্রাসার প্রথম পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন পাতারিয়ার মৌলভি আব্দুল মান্নান চৌধুরী। কথিত রয়েছে, মোছা. মঈজা বানুর প্রচুর ধন-সম্পত্তি ছিল কিন্তু কোন সন্তানাদি ছিল না, এইজন্য তার সম্পত্তি তিনি নানা উন্নয়নমূলক কাজে ব্যয় করতেন।

আব্দুল মান্নান চৌধুরী মৃত্যুবরণ করলে মাদ্রাসার দায়িত্বে আসেন ক্বারী শরাফত আলী। মঈজা বানু অসুস্থ হয়ে পরলে মাদ্রাসা পরিচালনার জন্য তার জমি-জমা শরাফত আলীকে বুঝিয়ে দেন। কিন্তু মঈজা বানুর মৃত্যুর পরে শরাফত আলী পরিচালনার সময় মাদ্রাসার জমি-জমা হাতছাড়া হয়ে যায়। মাদ্রাসা একসময় অর্থাভাবে বন্ধ হয়ে যায়, দীর্ঘদিন মাদ্রাসাটি বন্ধ অবস্থায় ছিলো।

এরপরে মঈজা বানুর পরিবারের খলিলুর রহমান চৌধুরী পুনরায় মাদ্রাসাটি চালু করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তার নেতৃত্বে এলাকার সবাই নিয়ে একটা ৭ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়, মূলত এই কমিটিই মাদ্রাসাটি পুনর্জীবিত করে। কমিটির সদস্যগণ হলো:

মাদ্রাসা পুনর্গঠন কমিটি
নাম গ্রাম পদবি
মো. খলিলুর রহমান পূর্বভাগ সেক্রেটারি
মো. মনসীব আলী চৌধুরী সবদুলপুর সদস্য
মো. মদরীস আলী খতিরা সদস্য
শাহ মো. আজফর আলী রায়খাইল সদস্য
মুনসী আব্দুল লতিফ শেখপাড়া সদস্য
সৈয়দ মোবারক আলী মিরারগাঁও সদস্য
মুনসী ছৈয়দ মিয়া কাদিপুর সদস্য
মো. আম্বর আলী শিকদার রায়খাইল সদস্য

এই কমিটির উদ্যোগে সাধারণ সভার মাধ্যমে বর্তমানের স্থানে জালালপুর বাজারের বড়ভাগা নদীর নিকটে ঘর নির্মাণ করেন। তখন সর্বসম্মতিক্রমে সিলেটের ধর্মপ্রচারক হজরত শাহজালালের নামে মাদ্রাসার নামকরণ করা হয় "জালালিয়া সিনিয়র মাদরাসা"।

স্থানান্তর সম্পাদনা

মইজা বানু ১৮৮৮ সালে তিনি জালালপুর পূর্বভাগের খোজাদিঘীর দক্ষিণ পারে এই মাদ্রাসাটি স্থাপন করেন। কিন্তু মঈজা বানুর মৃত্যুর পরে মাদ্রাসাটি খোজাদিঘীর দক্ষিণ পারে অযত্নে অরক্ষিত হয়ে পরে। তাই স্থানীয় ব্যক্তিদের উদ্যোগে মাদ্রাসাটি এই স্থানে থেকে বড়ভাগা নদীর দক্ষিণ তীরে কর্মকার নামক এক ব্যক্তির তত্ত্বাবধায়নে তার বাড়ির পাশে স্থাপন করা হয়, এইস্থানে মাদ্রাসার অবকাঠামো অবস্থা দুর্বল ছিলো। একদিন ব্রিটিশ সরকার থেকে মাদ্রাসা পরিদর্শনে এসে মাদ্রাসার তত্ত্বাবধায়ককে না পেয়ে নেতিবাচক রিপোর্ট জমা দেন। ফলে মাদ্রাসাটি পুনরায় হুমকির মুখে পরে যায়। তৎকালীন সময়ে মাদ্রাসা বোর্ডের কিছু উচ্চ কর্মকর্তাদের পরামর্শে মাদ্রাসাটি বড় ভাগার দক্ষিণ পার থেকে বর্তমানের স্থানে স্থানান্তরিত করা হয়।

মাদ্রাসাটি কার্যক্রমের প্রথম দিকে ভারতের শিলং শিক্ষা বোর্ডের অধীনে পরিচালিত হতো। এরপরে ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাজনের পরে ১৯৫৬ সালে আলিম জামাতের স্বীকৃতি লাভ করে এবং ১৯৯৩ সালে বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড কর্তৃক ফাজিল স্তর চালুর সুযোগ পায় এবং ১৯৯৫ সালে বোর্ড কর্তৃক স্বীকৃতি লাভ করে। ২০০২ সালে ফাজিল ক্লাস এমপিও ভুক্তি লাভ করে।[৫]

মাদ্রাসার প্রধানের তালিকা সম্পাদনা

মাদ্রাসাটি অত্যন্ত প্রাচীন একটি মাদ্রাসা, একাধিকবার মাদ্রাসার প্রশাসনিক কার্যক্রম স্থানান্তর করার প্রয়োজন পরেছে, তাই মাদ্রাসা পরিচালক বা অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালনের সাল-তারিখ হুবহু জানা যায়নি। তবে তাদের অনেকের নাম পাওয়া গিয়েছে।

পূর্বভাগে থাকার সময় দায়িত্ব পালনকারী পরিচালক অধ্যক্ষ,

  • আব্দুল মান্নান চৌধুরী - তিনি মাদ্রাসার প্রথম পরিচালক ছিলেন।
  • ক্বারী শরাফত আলী - প্রথম পরিচালকের মৃত্যুর পরে তিনি দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তার সময়ে মাদ্রাসা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে বন্ধ হয়ে যায়।

পূর্বভাগ থেকে জালালপুর বাজারে স্থানান্তর করার পর দায়িত্ব পালনকারী পরিচালক অধ্যক্ষ,

  • মৌলভী হারিছ আহমদ - তিনি দীর্ঘ ৪০ বছর দায়িত্ব পালন করেন, তার সময়ে মাদ্রাসার জনপ্রিয়তা ছিলো।
  • মৌলভী আব্দুল মুকিত - হারিছ আহমদের পরে মাত্র ১ বছর দায়িত্ব পালন করেন, তার সময়ে মাদ্রাসা পাকিস্তান সরকার কর্তৃক জুনিয়র মাদ্রাসা থেকে একটি সিনিয়র মাদ্রাসায় রুপান্তরিত হয়।
  • মাওলানা আব্দুল আজিজ - মুকিতের পরে তিনি ১৭ বছর দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বাদেশপুরের বাসিন্দা ছিলেন।
  • মাওলানা আব্দুল জলিল - আজিজের পরে তিনি দায়িত্ব পালন করেন এবং তার পরে বেশ কয়েক দায়িত্ব পালন করেন। তবে তাদের নাম জানা যায়নি।
  • মাওলানা হুসাইন আহমদ - তিনি ৫ বছর দায়িত্ব পালন করেন। এক সভার মাধ্যমে তাকে মাদ্রাসার পরিচালক পদে নিয়োগ দেওয়া হয়।
  • মাওলানা আব্দুল কাদির - হুসাইনের বার্ধক্যের কারণে তিনি দায়িত্ব গ্রহণ করেন।[খ]
  • আল্লামা জফর উদ্দীন আব্দুল মুনঈম - ২০১৮ সালে মৃত্যুবরণ করেন।

টীকা সম্পাদনা

  1. কিছুটা একই নামে সিলেট বিভাগের মৌলভিবাজারের একটি মাদ্রাসা রয়েছে, নাম শ্রীপুর জালালিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসা, যার ইআইআইএনএন নাম্বার ১২৯৬৬৫।[১] অনুরূপভাবে সুনামগঞ্জে একটি মাদ্রাসা রয়েছে, নাম ছাতক জালালিয়া ফাজিল মাদ্রাসা, যার ইআইআইএনএন নাম্বার ১২৯৮৪৩।[২]
  2. ১৯৭৭ সালের ২৩ অক্টোবর মাদ্রাসার পক্ষ থেকে একটা সাধারণ সভার আহবান করা হয়। একটা যুবসমাজ গঠন করা হয়, নাম দেওয়া হয় "জালালপুর আনজুমানে ইসলামী খেদমতগার"। এই সংগঠনের উদ্যোগে মাদ্রাসা পরিচালনার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটি তাদের অবদানের জন্য বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, কমিটির অন্যতম সদস্য ছিলেন: (১) সভাপতি, মো. নুর মিয়া (দাউদপুর) (২) সহ-সভাপতি, ফজলুর রহমান (খতিরা) (৩) সহ-সভাপতি, মো. মঈনুল ইসলাম (শেখপাড়া) (৪) সহ-সভাপতি, মো. মোতাহির আলী (শেখপাড়া) (৫) সাধারণ সম্পাদক, কয়েছ আহমদ (মিরারগাঁও) (৬) সহ-সাধারণ সম্পাদক, মোঃ হারুনুল ইসলাম (শেখপাড়া) (৭) সাংগঠনিক সম্পাদক, শাহ মো. আনসার আলী (রায়খাইল) (৮) অর্থ সম্পাদক, মৌলভি আব্দুল ওয়াহিদ (সিলেট) (৯) সহ-অর্থ সম্পাদক, আব্দুল বারী (রায়খাইল) (১০) প্রচার সম্পাদক, আজিজুর রহমান (মহিষপুর) (১১) তথ্য সম্পাদক, মাহবুব আলম (বাদেশপুর)

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. EIIN Number: 129665। "Sreepur Jalalia Senior Fazil Madrasha - Sohopathi - সহপাঠী" (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৭-২৩ 
  2. EIIN Number: 129843। "ছাতক জালালিয়া আলিম মাদরাসা, স্থাপিত- ১৯২১"সরকারি ওয়েবসাইট। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৭-২৩ 
  3. "Jalalia Sinior Fazil Madrasah - Sohopathi - সহপাঠী" (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৭-২৩ 
  4. "গভর্নিং বডি – সিলেট – Islamic Arabic University"iau.edu.bd। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৭-২৩ 
  5. "About Us - Jalalia Senior Fazil (Degree) Madrasah"www.jsfdm.edu.bd। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৭-২৩ 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা