জাপানি সম্মানসূচক প্রত্যয়

জাপানি ভাষায় কোন সংলাপে কারও প্রতি ইঙ্গিত করতে সম্মানসূচক প্রত্যয় বা বিভক্তি ব্যবহার করা হয়। এ প্রত্যয়গুলো নামের শেষে যোগ করা হয়, এবং সাধারণত লীঙ্গ দ্বারা প্রভাবিত হয় না। এ ধরনের সম্মানসূচক প্রত্যয়গুলো বক্তার পর্যায় ও ব্যক্তিবিশেষের সাথে তার সম্পর্ককে ইঙ্গিত করে। এগুলো জাপানি অন্যান্য সম্মানসূচক ব্যকরণের সাথে একত্রে ব্যবহার করা হয়।

ব্যবহার সম্পাদনা

জাপানি ব্যকরণে সম্মানসূচক শব্দসমূহের ব্যবহার একেবারে বাধ্যতামূলক না হলেও, এগুলো সমাজভাষাবিজ্ঞানের একটি অপরিহার্য অংশ এবং একটি আদর্শ বক্তব্যে বা সংলাপে তাদের অপরিহার্য বলেই ধরে নেয়া হয়।

নাম বা উপাধি, দুটোর সাথেই শব্দগুলো যোগ করা যায়। যেসব ক্ষেত্রে নাম এবং উপাধি দুটো অংশই বলা হয়, সেক্ষেত্র শেষ অংশের সাথে শব্দগুলো যোগ করা হয়। জাপানি নামে সাধারণত উপাধি প্রথমে বলা হয়।

তৃতীয় পক্ষ বা দ্বিতীয় পুরুষের সাথে সম্পর্ক বিবেচনা করেই সাধারণত সম্মানসূচক শব্দ ব্যবহার করা হয়। তবে যখন উচ্চপদস্থ কেউ অধীনস্থ একটা দলের সাথে কথা বলেন এবং প্রাতিষ্ঠানিক লেখাতে এর ব্যবহার করা হয় না। কোন ব্যক্তিকে ইঙ্গিত করতে, নাটকীয় আবহ আনতে বা কিছু ব্যতিক্রম ক্ষেত্রেও এর ব্যবহার পরিহার করা হয়।

অনুবাদ সম্পাদনা

সম্মানসূচক প্রত্যয়সমূহ ইংরেজি বা বাংলাতে অনুবাদ করার সময়, একই রকম আলাদা সর্বনাম বা বিশেষণ ব্যবহার করা হয়। কিছু প্রত্যয় যেমন -সান তাদের লিঙ্গবিশিষ্টতা না থাকায় এবং অনির্দিষ্ট ক্ষেত্রে সম্মান দেখাতে অনেক বেশি ব্যবহৃত হয়, কিন্তু আরও কিছু যেমন -চ্যান, অথবা -কুন আরও বেশি সুনির্দিষ্ট, যেগুলোর জন্যে বাংলায় সেরকম বিশেষণ ও বিশেষণসূচক শব্দগুচ্ছ ব্যবহারের প্রয়োজন পড়ে।

সাধারণসম্মানসূচক প্রত্যয়সমূহ সম্পাদনা

সান সম্পাদনা

 
মাহমুদ-সান তানজোবি ওমেদাতো (শুভ জন্মদিন, জনাব মাহমুদ)

সান (さん) ‌সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত সম্মানসূচক প্রত্যয়, এবং সম্মানের জন্য যেকোন বয়স ও লিঙ্গের জন্য এটি ব্যবহার করা হয়। যদিও বাংলায় এর সবচেয়ে নিকট শব্দ হিশেবে "জনাব", "সম্মানিত", "হুজুর" অথবা "-সান" ব্যবহার করা হয়। সাধারণ বিশেষ্যকে নাম বিশেষ্যে পরিণত করতেও "-সান" প্রত্যয় ব্যবহার করা হয়।

কর্মক্ষেত্রের বিশেষ্যের সাথে সান প্রত্যয় যোগও করা যায়, যেমন একজন দোকানদারকে বলা হতে পারে "দোকান" + সান এবং একজন কশাইকে "কসাইখানা" + সান

কিছু কিছু ক্ষেত্রে কোম্পানির নামের সাথেও সান ব্যবহার করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, "মেসার্স করিম সাইকেল স্টোর"-কে তার পাশের দোকানদার "মেসার্স করিম সাইকেল স্টোর" -সান বলে ডাকতে পারে। জাপানে ছোট মানচিত্র, ফোনবুক, বিজনেস কার্ডে, আশপাশের কোম্পানিগুলোর নামের সাথে -সান ব্যবহার করা হয়। বিবাহিত মানুষ তাদের জীবনসঙ্গীনিকে কোথাও উল্লেখ করতে গেলে -সান ব্যবহার করে। যেহেতু -সান লিঙ্গ-নির্ভর নয়, কোন আগন্তুককে ইঙ্গিত করতেও এর ব্যবহার হয়।

সামা সম্পাদনা

 
ওকিয়াকু-সামা

সামা (様【さま】) উচ্চপদস্থ মানুষজন, অতিথি ও অনেকসময় ক্রেতাকে সম্মান দেখাতে ব্যবহার করা প্রত্যয়। কেউ যখন নিজের জন্য -সামা ব্যবহার করা এটি খুব বেশি অহংকার ও গর্বের প্রতি ইঙ্গিত করে। কিছু শব্দগুচ্ছের ক্ষেত্র সামা ব্যবহার করা হয়, যেমন, ওমাচিডো সামা ("অপেক্ষার জন্য ধন্যবাদ"), গোচিশো সামা ("খাবারের জন্য ধন্যবাদ"), অথবা ওতসুকারে সামা ("ভালো চাকরির জন্য ধন্যবাদ")

কুন সম্পাদনা

কুন (君【くん】) ছেলেবন্ধু, কিশোর বা পুরুষ যেকেউ, ছোট কেউ, বা নিচু পদের কাওকে ইঙ্গিত করতে ব্যবহার করা হয়। কর্মক্ষেত্রে বা প্রতিষ্ঠানে ছোট কেউ বড় কাওকে বুঝাতেও কুন ব্যবহার করে, যদিও এটি সেসব ক্ষেত্রে অভদ্রতা জ্ঞান করা হতে পারে।

-কুন ছেলেদের জন্য ব্যবহার করা হলেও, এরকম কোন বাধাধরা নিয়ম নেই। উদাহরণস্বরূপ, যেকোন লিঙ্গের কাছের পরিবারের সদস্য ও কাছের বন্ধুকে নির্দেশ করতে -কুন ব্যবহার করা হতে পারে। ব্যবসায়ক্ষেত্রে তুলনামূলক কম বয়সের মহিলা কর্মীদের বয়সে বড় পুরুষ কর্মীরা -কুন বলে ডাকতে পারে। ‌ ছাত্রীদের ইঙ্গিত করতে পুরুষ শিক্ষকরা -কুন ব্যবহার করে থাকে। [১]

ভিন্নভিন্ন ক্ষেত্রে কুন ভিন্ন ভিন্ন অর্থ বহন করে। মেয়েদের জন্য কুন চ্যান-এর চেয়ে বেশি সম্মান বহন করে, চ্যান বরং বাচ্চার মত সৌন্দর্যকে ইঙ্গিত করে। বন্ধুদের ডাকতেও -কুন ব্যবহার করা হয়। মেয়েদের ক্ষেত্রে কুন ব্যবহার খুব স্বাভাবিক না হলেও, কুন ব্যবহার করলে বেশি সম্মান ইঙ্গিত করে। আবার একই নামের দুবোন হলে, যেমন দুবোনের নাম শাওন হলে, একজনকে ইঙ্গিত করতে "শাওন"+চ্যান, আরেকজনকে "শাওন"+কুন ডাকা হতে পারে।

চ্যান সম্পাদনা

 
চ্যান
 
ট্যান

চ্যান (ちゃん) প্রত্যয়টি ব্যবহার করা হয় কাছের মানুষের জন্য। -সান শব্দের কিউট রূপ হিশেবে -চ্যান এসেছে বলা ধরা হয়। সাধারণভাবে, -চ্যান শব্দটি বাচ্চাকাচ্চা, কাছের বন্ধু, দাদা-দাদি ও কিশোরীদের ইঙ্গিত করতে ব্যবহার করা হয়। কিউট প্রাণীর জন্য জন্য, প্রেমিক বা প্রেমি বা সুন্দর নারীর জন্যও এটা ব্যবহার করা হতে পারে। উপরের কারও নামের সাথে -চ্যান ব্যবহার করা বেআদবী হিশেবে ধরা হয়।

বো সম্পাদনা

বো (坊【ぼう】)-এর ব্যবহার -চ্যান-এর মতই। তবে এর ব্যবহার শুধুমাত্র ছেলেদের জন্য নির্দিষ্ট।

সেনপাই এবং কোহাই সম্পাদনা

সেনপাই (先輩【せんぱい】) ইস্কুলে কর্মক্ষেত্রে কারও সিনিয়র কেউ বা বয়সে বড় কাওকে ইঙ্গিত করতে ব্যবহার করা হয়। শিক্ষকদের জন্য অবশ্য -সেনপাই ব্যবহার করা হয় না। ব্যবসায় ক্ষেত্রে বেশি অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কাওকে বুঝাতে -সেনপাই ব্যবহার করা হয়।

সেনসেই এবং হাকাসে সম্পাদনা

সেনসেই (先生【せんせい】, মানে "অগ্রজ") শিক্ষক, ডাক্তার, রাজনীতিবিদ, আইনজীবিদের ইঙ্গিত করতে ব্যবহার করা হয়। কোন বিষয়ে দক্ষ কাওকে বুঝাতেই এর বেশি ব্যবহার করা হয়। যেমন, ভালো লেখক, দক্ষ শিল্পী ও মার্শাল আর্টিস্ট ইত্যাদি। কোন ডোজোর প্রধানকে ইঙ্গিত করতে সেনসেই শব্দটি ব্যবহার করা হয়।

শি সম্পাদনা

 

শি (氏【し】) ফরমাল লেখায় বেশি ব্যবহার করা হয়। কোন অপরিচিত ব্যক্তি, যার সাথে লেখক বা বক্তা আগে কখনও দেখা করেনি,তার জন্য -শি ব্যবহার করা হয়। আইনি নথি, একাডেমিক জার্নাল এবং সংবাদপত্রের প্রতিবেদনে -শি এর ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. মোগি, নোরি (১০ জুন ২০০২)। "মানুষকে পরিচয় দেওয়ার জাপানি উপায়"Investigationes Linguisticae। পোল্যান্ড: Investigationes Linguisticae। পৃষ্ঠা ১৪। ডিওআই:10.14746/il.2002.8.3। সংগ্রহের তারিখ ১৪ ডিসেম্বর ২০১৯ 
  • আকামাতসু, সুতোমো। "অনারফিক পার্টিকেলস ইন জাপানিজ এন্ড পার্সোনাল মোনেমেস"। Cairn.Info ৪৭ (২০১১)
  • হিজিরিদা, কিয়োকো, এবং হো-মিন সোহন। "ক্রস-কালচারাল প্যাটার্নস অব অনারফিকস এন্ড সোশিওলিঙ্গুইস্টিক সেন্সিটিভিটি টু অনারফিক ভ্যারিয়েবলস: এভিডেন্স ফ্রম ইংলিশ, জাপানিজ এন্ড কোরিয়ান"। ফ্রানচিজ এন্ড টেলর অনলাইন ১৯.৩ (১৯৮৬)
  • নাকাজাতো, য়্যুজি. "অ্যান অনারফিক ইন্ডেক্স ফর জাপানিজ"। প্রোকোয়েস্ট (১৯৯৭)
  • ওবানা, ইয়াসুকু। "এ কম্পারিজন অব অনারফকস ইন জাপানিজ এন্ড ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজেস"। ফ্রানচিজ এন্ড টেলর অনলাইন ১১.৩ (১৯৯১)
  • শিবামতো-স্মিথ, জ্যানেট। "অনারফিকস, পোলাইটনেস, এন্ড পাওয়ার ইন জাপানিজ পলিটিকেল ডিবেট"। সায়েন্সডিরেক্ট ৪৩.১৫ (২০১১)

আরও পড়ুন সম্পাদনা

  • পোজার, উইলিয়াম জে. (১৯৯০). "এভিডেন্স ফর ফুট স্ট্রাকচার ইন জাপানিজ"। ভাষা ৬৬.১.৭৮–১০৫। নাতসুকু সুজিমারু(সংস্করণ)। জাপানিজ লিঙ্গুইস্টিকস: ক্রিটিকেল কনসেপটস ইন লিঙ্গুইস্টিকস। অক্সফোর্ড: রুটলেজ, ২০০৫, পৃ ১৫৯–১৯০।

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা