জরায়ুর ক্যান্সার যা গর্ভাশয় ক্যান্সার নামেও পরিচিত। জরায়ু কলা থেকে উদ্ভূত যেকোন ধরনের ক্যান্সারই জরায়ুর ক্যান্সারের অন্তর্ভুক্ত। বেশ কয়েক ধরনের ক্যান্সার এই শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত, যার মাঝে বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে পরিচিত সার্ভিকাল ক্যান্সারও (সাধারণত জরায়ুর নিচের সরু অংশ থেকে উদ্ভূত) রয়েছে। উন্নয়নশীল দেশগুলোর মহিলাদের মধ্যে যে ক্যান্সার অধিক পরিমাণে দেখা যায় তার মধ্যে এটি দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে।[১] বাংলাদেশের ক্যান্সার আক্রান্ত নারীদের শতকরা ৩০ ভাগই হচ্ছেন জরায়ু মুখের ক্যান্সারের শিকার।[২] এন্ডোমেট্রিয়াল ক্যান্সার (বা জরায়ুর ভিতরের আবরণের ক্যান্সার) দ্বিতীয় সর্বাধিক প্রচলিত ক্যান্সার, এবং উন্নত দেশগুলির নারীদের মধ্যে এই ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার আধিক্য বেশি হওয়ায় এটি বিশ্বব্যাপী এটি চতুর্থ স্থানে রয়েছে।[১]

জরায়ুর ক্যান্সার
বিশেষত্বওনকোলজি

নির্দিষ্ট কিছু উপাদান জরাযুর ক্যান্সারের কারণ হলেও, স্থূলতা, বৃদ্ধ বয়স, এবং মানব প্যাপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি-১৬, ১৮) সংক্রমণ জরাযুর ক্যান্সারের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে।[৩][৪] প্রথম দিকে এই ক্যান্সারে আক্রান্ত হলে কোন লক্ষণ বা উপসর্গ নাও দেখা দিতে পারে, কিন্তু অনিয়মিত মাসিকের রাস্তা দিয়ে রক্তপাত, গ্যাস, বদহজম, কোষ্ঠকাঠিন্য অথবা হালকা খাবারের পর পেট ভর্তি লাগা, পেটে অস্বস্তি লাগা, ইত্যাদি খুব বেশি হলে তা জরায়ু ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে।[৩][৪] প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়লে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অস্ত্রোপচার বা ঔষধ সেবনের মধ্যে দিয়ে অধিকাংশ ধরনের গর্ভাশয় ক্যান্সার নিরাময় করা সম্ভব। কিন্তু ক্যান্সার যদি জরায়ু কলা অতিক্রম করে ছড়িয়ে পরে, তখন কেমোথেরাপি, বিকিরণ থেরাপির সমন্বয়ে, অথবা অস্ত্রোপচারের মত আরও উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে।[৩][৪]

কারণসমূহ সম্পাদনা

জরায়ুর ক্যান্সারের কারণগুলো এখনও নিশ্চিতভাবে জানা যায় নি, তবে হরমোনের ভারসাম্যহীনতা এর একটি অন্যতম কারণ হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে. এই ক্যান্সারের কোষগুলোয় এস্ট্রোজেন রিসেপ্টর রয়েছে বলে জানা যায়, যা হরমোনের সাথে বিক্রিয়া ঘটিয়ে কোষের বৃদ্ধি ঘটায়, যা পরবর্তীতে ক্যান্সারে রূপান্তরিত হয়. তবে ঠিক কি ভাবে এই বিক্রিয়া ঘটে তা এখনও অজানা রয়েছে.[৫]

প্রকারভেদ সম্পাদনা

জরায়ুর ক্যান্সার যা গর্ভাশয় ক্যান্সার বলতে জরায়ু কলা থেকে উদ্ভূত সকল ধরনের ক্যান্সারকেই বোঝায়।

  • এন্ডোমেট্রিয়াম (জরায়ুর ভেতরের আবরণ) গ্রন্থিগুলোর কোষ থেকে এন্ডোমেট্রিয়াল কার্সিনোমাসের সৃষ্টি হয়। যার মাঝে সহজে চিকিৎসাযোগ্য এন্ডোমেট্রোয়েড এডেনোকার্সিনোমা, ছাড়াও ইউটেরিন প্যাপিলারি সেরোস কার্সিনোমা এবং ইউটেরিন ক্লিয়ার-সেল কার্সিনোমার মত ভয়াবহ ক্যান্সার অন্তর্ভুক্ত।'
  • এন্ডোমেট্রিয়াল স্ট্রোমাল সারকোমার উৎপত্তি এন্ডোমেট্রিয়াম (জরায়ুর ভেতরের আবরণ) সংযোজক কলা থেকে, তবে এন্ডোমেট্রিয়াল কার্সিনোমাসের তুলনায় এর বিস্তার অনেক কম।'
  • ম্যালিগন্যান্ট মিক্সড মুলেরিয়ান টিউমার অত্যন্ত বিরল এন্ডোমেট্রিয়াল টিউমার যেখানে গ্ল্যান্ডুলার (কার্সিনোমাটাস) এবং স্ট্রোমাল (সার্কোম্যাটাস) উভয় বিভাজন লক্ষ্য করা যায় - কার্সিনোসারকোমা উচ্চতর কার্সিনোমার মতো আচরণ করে।'
  • সার্ভিকাল ক্যান্সার: জরায়ুর নিচের অংশের সাথে যোনির উপরের অংশের সাথে সংযোগ সৃষ্টিকারি জরায়ুমুখের ক্যান্সার।
  • ইউটেরিন সারকোমা: মায়োমেট্রিয়ামের সারকোমা, বা জরায়ুর পেশী স্তর, সাধারণত লেইওমায়োসারকোমাস।
  • গর্ভকালীন ট্রফোব্লাস্ট রোগ: গর্ভাবস্থার কলা থেকে উদ্ভূত নিউপ্লাস্টিক প্রক্রিয়াগুলির সাথে সম্পর্কিত যা প্রায়শই জরায়ুতে অবস্থিত।

বিস্তৃতি সম্পাদনা

 
২০০৪ সালে প্রতি ১,০০,০০০ জনে একজনের মৃত্যু হয়েছে জরায়ু ক্যান্সার থেকে।[৬]
  কোন তথ্য নেই
  ০.৫ এর কম
  ০.৫-১
  ১-১.৫
  ১.৫-২
  ২-২.৫
  ২.৫-৩
  ৩-৩.৫
  ৩.৫-৪
  ৪-৪.৫
  ৪.৫-৫
  ৫-৮
  ৮ এর বেশি

ইউটেরিন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ২০১০ সালে বিশ্বজুড়ে ৫৮,০০০ মৃত্যু ঘটে। ১৯৯০ সালে যার পরিমাণ ছিল ৪৫,০০০।[৭]

জরায়ুর ক্যান্সার যুক্তরাজ্যের (২০১১ সালে প্রায় ৮,৫০০ মহিলাদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয় করা হয়) মহিলাদের চতুর্থ সর্বাধিক ক্যান্সার, এবং এটা নারীদের ক্যান্সারে মৃত্যুর দশম সর্বাধিক কারণ (২,০০০ মানুষের ২০১২ সালে মারা যান)।[৮]

বাংলাদেশে প্রতি বছর সার্ভিকাল ক্যান্সারে ৬৫৮২ জন মারা যায়।[৯] প্রতি বছর ১১,৯৫৬ জন এই রোগে চিহ্নিত হন। প্রায় ৫৮.৭ মিলিয়ন নারী (১৫ বা তার বেশি বয়সের) যেকোন সময় এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বহন করছেন বলে ধারণা করা হয়।[১০]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Jemal, A; Bray, F; Center, MM; Ferlay, J; Ward, E; Forman, D (২০১১)। "Global cancer statistics."। CA: A Cancer Journal for Clinicians61 (2): 69–90। ডিওআই:10.3322/caac.20107পিএমআইডি 21296855 
  2. "জরায়ু ক্যান্সারের কারণ ও লক্ষণগুলো কি কি? কীভাবে এর চিকিৎসা ও প্রতিরোধ করা যায় ?" [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  3. Hoffman, Barbara (২০১১)। "Chapter 33. Endometrial Cancer"। Williams gynecology (2nd সংস্করণ)। New York: McGraw-Hill Medical। আইএসবিএন 978-0-07-171672-7 
  4. Hoffman, Barbara L. (২০১১)। "Chapter 30. Cervical Cancer"। Williams gynecology (2nd সংস্করণ)। New York: McGraw-Hill Medical। আইএসবিএন 978-0-07-171672-7 
  5. Causes, Risk Factors, and Prevention TOPICS ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১০ ডিসেম্বর ২০১৬ তারিখে - Do we know what causes endometrial cancer? - cancer.org - American Cancer Society - Retrieved 5 January 2015.
  6. "WHO Disease and injury country estimates"World Health Organization। ২০০৯। সংগ্রহের তারিখ নভে ১১, ২০০৯ 
  7. Lozano, R (ডিসে ১৫, ২০১২)। "Global and regional mortality from 235 causes of death for 20 age groups in 1990 and 2010: a systematic analysis for the Global Burden of Disease Study 2010."। Lancet380 (9859): 2095–128। ডিওআই:10.1016/S0140-6736(12)61728-0পিএমআইডি 23245604 
  8. "Uterine cancer statistics"Cancer Research UK। সংগ্রহের তারিখ ২৮ অক্টোবর ২০১৪ 
  9. "6,582 die of cervical cancer in Bangladesh each year" 
  10. "Cervical cancer: Don't cure. Prevent" 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা