জন জর্জ বার্থোলুমিউ

স্কটিশ মানচিত্রাঙ্কনবিদ ও ভূগোলবিদ

জন জর্জ বার্থোলুমিউ এফআরএসই এফআরজিএস (২২ মার্চ ১৮৬০ — ১৪ এপ্রিল ১৯২০) ছিলেন একজন স্কটিশ মানচিত্রাঙ্কনবিদ (কার্টোগ্রাফার) এবং ভূগোলবিদ। রাজকীয় বরণপত্রের ধারক হিসাবে তিনি "কার্টোগ্রাফার টু দ্য কিং" উপাধি ব্যবহার করতেন; এই কারণে তিনি মাঝেমধ্যেই "মানচিত্রাঙ্কনবিদ্যার বরপুত্র" (দ্য প্রিন্স অব কার্টোগ্রাফি) বলে পরিচিতি পেতেন।[১]

জন জর্জ বার্থোলুমিউ

এফআরএসই এফআরজিএস
জন্ম(১৮৬০-০৩-২২)২২ মার্চ ১৮৬০
মৃত্যু১৪ এপ্রিল ১৯২০(1920-04-14) (বয়স ৬০)
পেশামানচিত্রাঙ্কনবিদ ও ভূগোলবিদ
পুরস্কারভিক্টোরিয়া পদক (১৯০৫)
ডিন কবরস্থান জে জি বার্থোলুমিউয়ের স্মৃতিস্তম্ভ

বার্থোলুমিউর স্মৃতি বহনকারী দীর্ঘস্থায়ী স্মারকটি হলো অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশের নামটি।[২] ১৮৯৯ সালে তিনি সর্বপ্রথম অ্যান্টার্কটিকা শব্দটি ব্যবহার করেন। মহাদেশের নাম হিসেবে এই শব্দটি ব্যবহার করার আগ পর্যন্ত সম্পদের অভাব এবং কঠোর আবহাওয়ার কারণে অ্যান্টার্কটিকা ব্যাপকভাবে উপেক্ষিত হয়েছিলো।

জীবনীক্রম সম্পাদনা

বার্থোলুমিউ একটি প্রসিদ্ধ মানচিত্র তৈরিকারক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি ছিলেন অ্যানি ম্যাকগ্রেগর (মৃত্যু. ১৮৭২) ও জন বার্থোলুমিউ জুনিয়রের ছেলে এবং জন বার্থোলুমিউ অ্যান্ড সন লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতার নাতি। তিনি পড়াশোনা করেছিলেন এডিন রয়েল হাই স্কুলে।

তার পরিচালনায় তাদের মানচিত্র তৈরির পারিবারিক ব্যবসাটি এই ক্ষেত্রের অন্যতম শীর্ষে ওঠে এসেছিলো। বার্থোলুমিউ কেবল একজন উৎপাদন বিশেষজ্ঞই ছিলেন না, তিনি একজন প্রতিভাবান ভূগোলবিদ এবং মানচিত্রাঙ্কনবিদও ছিলেন। তিনিই প্রথম রঙিন সীমারেখা (কনট্যুর) স্তর মানচিত্রের ব্যবহার শুরু করেছিলেন; এছাড়াও তিনি বড় বড় শহরগুলির রাস্তার মানচিত্র, সাইক্লিং মানচিত্র, রেলপথের সময়সূচির মানচিত্র এবং অটোমোবাইলের জন্য রাস্তার মানচিত্র প্রকাশ করে উনিশ শতকের শেষ এবং বিশ শতকের প্রথম দিকের ভ্রমণকারীদের প্রয়োজনীয় চাহিদার পূর্বাভাস দিয়েছিলেন।

তিনি তার সময়ের বড় বড় বৈজ্ঞানিক ব্যক্তিত্ব এবং ভ্রমণকারীদের সাথে তাদের সমীক্ষা সংশ্লিষ্ট প্রকল্পগুলোতে সহযোগিতা করেছিলেন। জন জর্জ ভূগোলবিদ এবং লেখক জন ফ্রাঙ্কন উইলিয়ামসের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। স্কটল্যান্ডের জাতীয় গ্রন্থাগারের বার্থলোমিউ আর্কাইভে দুই বন্ধুর মধ্যে বিনিময়কৃত চিঠিপত্রও সংগৃহীত রয়েছে। [৩] উইলিয়ামস আমেরিকা, যুক্তরাজ্য এবং বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলে বার্থোলুমিউয়ের সাহিত্য প্রতিনিধি হিসাবেও কাজ করেছিলেন।[৪]

১৮৮৯ সালে তিনি জ্যানেট ম্যাকডোনাল্ডের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন। [৫]

মৃত্যুর আগে তিনি তার ছেলে জন ইয়ান বার্থোলুমিউর (১৮৯০-১৯৬৩) হাতে পারিবারিক ব্যবসার দায়দায়িত্ব অর্পণ করেছিলেন।

এডিনবরার ডিন কবরস্থানে উত্তর প্রাচীরে ২০তম শতাব্দীর জন্য সংযোজিত অংশটিতে পিল্কিংটন জ্যাকসন দ্বারা নির্মিত বার্থোলুমিউয়ের একটি স্মৃতিসৌধ রয়েছে। তার স্ত্রী জেনি, ছেল হিউ বার্থোলুমিউ, ইয়ান বার্থোলুমিউ এবং নাতি জন ক্রিস্টোফার বার্থোলুমিউকে এই স্মৃতিসৌধেই সমাধিস্থ করা হয়েছে।

তার কন্যা মার্গারেট স্যার ফিলিপ জেমস হ্যামিল্টন-গিয়ারসনের নাতি ফিলিপ ফ্রান্সিস হ্যামিল্টন-গ্রিয়ারসনকে বিয়ে করেছিলেন।

বার্থোলুমিউয়ের মৃত্যু শতবার্ষিকীতে (২০২০ সালের ১৪ এপ্রিল) স্কটল্যান্ড রাষ্ট্রীয় ভাবে শ্রদ্ধা জানিয়েছিল এবং তাকে 'মানচিত্রে এডিনবরা'কে উপস্থাপনে সহায়তাকরী প্রকাশক হিসেবে উল্লেখ করেছিলো।[৬]

কালানুক্রম সম্পাদনা

  • ১৮৬০: ২২ মার্চ এডিনবরায় জন্মগ্রহণ করেন
  • ১৮৮০: মানচিত্র তৈরির পারিবারিক ব্যবসায় তার বাবার হয়ে কাজ শুরু করেন
  • ১৮৮৪: রয়েল স্কটিশ ভূগোল সমিতির সহ-প্রতিষ্ঠাতা
  • ১৮৮৪-১৯২০: সম্মানসূচক সচিব, রয়েল স্কটিশ ভূগোল সমিতি
  • ১৮৮৭: রয়েল সোসাইটি অব এডিনবরার সদস্য নির্বাচিত
  • ১৮৮৮: পিতার কাছ থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে পারিবারিক ব্যবসায় হাল ধরেন
  • ১৮৮৮: রয়েল ভূগোল সমিতির সদস্য নির্বাচিত হন
  • ১৮৯২: সচিব, ই (E) শাখা, ব্রিটিশ বিজ্ঞান উন্নয়ন সঙ্ঘ (অ্যাসোসিয়েশন অব অ্যাডভান্সমেন্ট অব সায়েন্স)
  • ১৮৯৫: তার স্কটল্যান্ডের জরিপ মানচিত্রাবলী (অ্যাটলাস অব স্কটল্যান্ড) প্রকাশিত হয়
  • ১৮৯৯: তার আবহাওয়াবিজ্ঞান মানচিত্রাবলী (অ্যাটলাস অব মিটিওরোলজি) প্রকাশিত হয়
  • ১৯০৩: তার ইংল্যান্ড এবং ওয়েলসের জরিপ মানচিত্রাবলী (অ্যাটলাস অব ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েল্স) প্রকাশিত হয়
  • ১৯০৫: রয়েল ভূগোল সমিতি থেকে ভিক্টোরিয়া গবেষণা স্বর্ণপদক (ভিক্টোরিয়া রিসার্চ গোল্ড মেডেল) প্রাপ্তি
  • ১৯০৯-১৯১২: পরিষদ সদস্য, রয়েল সোসাইটি অব এডিনবরা
  • ১৯১০: রাজা পঞ্চম জর্জ কর্তৃক কার্টোগ্রাফার রয়েল হিসেবে নিযুক্ত হন
  • ১৯১১: তার অ্যাটলাস অব জু-জিওগ্রাফি বা প্রাণিবৈজ্ঞানিক ভূগোলের মানচিত্রাবলী প্রকাশিত হয়
  • ১৯১৮: শিকাগোর ভূগোল সমিতি থেকে হেলেন কার্ভার পদক প্রাপ্তি
  • ১৯২০: ১৪ এপ্রিল পর্তুগালের সিন্ট্রা শহরে মৃত্যুবরণ করেন
  • ১৯২২: মরণোত্তর প্রকাশিত হয় টাইমস সার্ভে অ্যাটলাস অব দ্য ওয়ার্ল্ড বা টাইমস বিশ্বজরিপ মানচিত্রাবলীর প্রথম সংস্করণ

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Leslie Gardiner (১৯৭৬)। Bartholomew 150 Years। John Bartholomew & Son Ltd। আইএসবিএন 0-85152-791-4 
  2. "John George Bartholomew and the naming of Antarctica, CAIRT Issue 13"। National Library of Scotland। ২০০৮। আইএসএসএন 1477-4186। ১১ ডিসেম্বর ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২০ , and also "The Bartholomew Archive" 
  3. "Bartholomew Archive"National Library of Scotland। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০১-২২ 
  4. Bartholomew Archive, Inventory No. 975 - Williams, J.F. 1898-1900, 1906-7:https://www.nls.uk/catalogues/online/cnmi/inventories/acc10222.pdf ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ তারিখে
  5. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি" (পিডিএফ)। ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২০ 
  6. Edinburgh Evening News, 14 April 2020 – World-Famous Bartholomew Cartography Empire Helped Put Edinburgh On The Map: https://www.edinburghnews.scotsman.com/heritage-and-retro/retro/world-famous-bartholomew-cartography-empire-put-edinburgh-map-2538658 John George Bartholomew centenary tribute

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা