চৌরাস্তা (দার্জিলিং)
চৌরাস্তা (অর্থাৎ, যে জায়গায় চারদিক থেকে চারটে রাস্তা এসে মিলে যায়) হল ভারতের পশ্চিমবঙ্গ অঙ্গরাজ্যের দার্জিলিং শৈল শহরের ভিক্টোরীয় যুগের একটা ঐতিহাসিক প্রকাশ্য চৌমাথা। এটা শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত আঠারো শতক থেকে স্থানীয় অধিবাসী এবং পরিদর্শকদের কাছে কেতাদুরস্ত মিলিত হওয়ার জায়গা। দার্জিলিংয়ের চৌরাস্তাটা এক শৈলশিরার মাঝে অধিষ্ঠিত; সেজন্যে এই জায়গাটা বর্তমানে পর্যটক আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু এবং স্থানীয় অধিবাসীদের মিলিত হওয়া, অবসর যাপন অথবা শুধুমাত্র পাহাড়ি অঞ্চলের যে অংশটা প্রশান্তিতে পদচারণা করার জন্য এক অতি জনপ্রিয় স্থান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।[১][২]
পূর্ব নাম | ব্যান্ড স্ট্যান্ড |
---|---|
রক্ষণাবেক্ষণকারী | দার্জিলিং পুরসভা |
অবস্থান | দার্জিলিং, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত |
ডাক কোড | ৭৩৪১০১ |
উত্তর | সিকিম |
পূর্ব | কালিম্পং, ভুটান |
দক্ষিণ | কার্সিয়াং |
পশ্চিম | নেপাল |
নির্মাণ | |
নির্মাণ সম্পন্ন | আনু. অষ্টাদশ শতকের মধ্যভাগ |
ভূ-প্রকৃতি সম্পাদনা
চৌরাস্তা ২,১৩৪ মিটার (৭,০০১ ফু) উচ্চতায় অবস্থিত এবং এক পরিষ্কার সূর্যকরোজ্জ্বল দিনে পৃথিবীর তৃতীয় সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘাকে এবং যেগুলো ২০,০০০ ফুট (৬,১০০ মি)-এর ওপরে অবস্থান করছে এরকম হিমালয় পর্বতমালার বারোটা অন্যান্য শৃঙ্গও এখান থেকে দেখা যায়। আঠারোোোো শতকের মধ্যবর্তী সময়কালে অর্থাৎ ভিক্টোরীয় যুগে দার্জিলিংয়ের ঠাণ্ডা আবহাওয়ার কারণে এই অঞ্চল অস্তিত্বে এসেছিল, যে আবহাওয়া লন্ডনের সঙ্গে সমান ছিল, ব্রিটিশরা সেখানে তাদের আধিকারিকদের জন্যে একটা হিল স্টেশন প্রতিষ্ঠা করেছিল।
চৌমাথা একাধারে রেখাঙ্কিত হয়ে আছে: পশ্চিম দিকে ঐতিহ্যবাহী দোকান (প্রাচীনতম অক্সফোর্ড বুক অ্যান্ড স্টেশনারি) এবং পূর্ব দিকে রয়েছে ঘূর্ণায়মান পাহাড়ের বীথি, বরফে আবৃত চূড়া এবং ছায়াঘন এক উপত্যকার মহল; সকল অংশই ঘন নীল আকাশের নিচে আর খুব পুরোনো পাইন গাছ দিয়ে ঘেরা ।
জনগণের বসা এবং 'চলমান জীবন' চাক্ষুষ করার জন্যে চৌরাস্তার বিহার ভূমির চারিদিকে অসংখ্য সারিবদ্ধ বেঞ্চ রয়েছে (ভারতে ব্রিটিশ শাসনকালে এই বেঞ্চগুলিতে স্থানীয় অথবা দেশীয় অধিবাসীদের বসতে দেওয়া হতো না)। যদিও এখানে সবরকম যানবাহনের প্রবেশ নিষেধ, তবুও চৌরাস্তা দার্জিলিং শহরের সঙ্গে সাবলীলভাবে যুক্ত এবং দার্জিলিং পাহাড়ি রেঞ্জের সকল অংশ থেকেই সহজ নৈকট্য বজায় আছে।[৩] শহরের দুই প্রধান সড়কপথের যোগাযোগ, নেহরু রোড এবং ডা. জাকির হুসেন রোড চৌরাস্তায় এসে শেষ হয় এবং ম্যাল রোডের দুই কিনারা যেগুলো অবজারভেটরি হিল এবং মহাকাল মন্দিরের চতুর্দিকে মিলে যায়। ম্যাল রোডের উভয় কিনারা উত্তর দিক দিয়ে চৌরাস্তায় এসে মিলিত হয়। আরো কয়েকটা সংকীর্ণ রাস্তা ও ফুটপাত ওখানে আছে যেগুলো চৌরাস্তায় শেষ হয় এবং শুরু হয়।[২][৪]
সামাজিক ও ভ্রমণ বৈশিষ্ট্য সম্পাদনা
চৌরাস্তাকে দার্জিলিংয়ের হৃদয় বলা যায়, যে জায়গা বছরভর সামাজিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষা বিষয়ক এবং রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সাক্ষী হয়ে থাকে। এর চারিদিকে ব্যাঙের ছাতার মতো কফি শপ ও রেস্তোরাঁ গজিয়ে উঠেছে এবং চৌমাথায় চলমান বিক্রেতারা পায়ে হেঁটে চা ও জলখাবার বিক্রি করেন। পর্যটন ঋতুতে যেকোনো ব্যক্তি ব্যস্ততাহীনভাবে ম্যাল রোডের ওপর টাট্টু ঘোড়ায় চাপা উপভোগ করতে পারেন।[৫]
মূর্তি, স্মৃতিস্তম্ভ এবং উন্নয়নসমূহ সম্পাদনা
ভানু ভক্তের মূর্তি সম্পাদনা
চৌমাথার অনেকটা উত্তরে নেপালি কবি শ্রী ভানুভক্ত আচার্যের দাঁড়ানো অবস্থার সোনালি কংক্রিটের প্রমাণ সাইজের মূর্তি আছে যেটা বাদামি গ্রানাইট পাথরের স্তম্ভের ওপর এমনভাবে আটকানো যে, যারা ওখানে পরিদর্শনে আসে তাদের মন ছুঁয়ে যায়। প্রথমে আচার্যের একটা আবক্ষ মূর্তি ১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ জুন স্থাপন করা হয়েছিল এবং ১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দের ১৩ জুলাই নেপালি সাহিত্য সম্মেলনের অনুমোদনে তার একটা পূর্ণাবয়ব মূর্তি পুনর্প্রতিষ্ঠিত হয়।
২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে মূর্তির পিছনে অর্থাৎ উত্তর দিকের নবায়ন করে ধাপে ধাপে সর্বজনীন কার্যক্রমে এক কংক্রিটের প্ল্যাটফর্মে পরিণত করা হয়।[৬]
জলের ফোয়ারা ও হাওয়া ঘর সম্পাদনা
চৌরাস্তার দক্ষিণ প্রান্তে নেহরু রোডে প্রবেশের মুখেই সোনালি রঙের আলংকারিক মাছ (সম্ভবত কইমাছ) এবং পেলিকানসহ এক জলের ফোয়ারা আছে, যদিও দার্জিলিংয়ে জলের দুষ্প্রাপ্যতার জন্যে অনেকদিন থেকে ফোয়ারা চালানো স্থগিত এবং জল সরবরাহ বন্ধ করা হয়েছে।
হাওয়া ঘর হল চৌরাস্তার পূর্ব প্রান্তে একটা স্থায়ী কংক্রিটের মঞ্চের মতো কাঠামো যেখানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, প্রদর্শন এবং সময় বিশেষে রাজনৈতিক বক্তৃতাসমূহ চলে (ঐতিহাসিকভাবে স্থানীয় রাজনৈতিক বক্তৃতাগুলো শহরের একটু কম আকর্ষক জায়গা চকবাজারে সীমাবদ্ধ থাকে)।[৬]
পায়রার ঝাঁক সম্পাদনা
অন্যান্য শহরের চৌমাথার মতো চৌরাস্তাতেও একঝাঁক পায়রার আনাগোনা আছে এবং বয়স্ক মানুষ ও পর্যটকদের পায়রাকে দানা খাওয়ানো এক জনপ্রিয় কাজের মধ্যে পড়ে। তাদের বিষ্ঠা ভানুভক্ত এবং অন্যান্য পাথরের মূর্তিকে মলিন করে দেয়, যদিও এই পাখিরা স্বাস্থ্য ও জনতার বিপত্তির কারণ ঘটায় না।[৭]
আরো দেখুন সম্পাদনা
ছবির গ্যালারি সম্পাদনা
তথ্যসূত্র সম্পাদনা
- ↑ "Return of the queen"। ২০০৭-০৯-২৬। ২০০৭-০৯-২৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৮-১৭।
- ↑ ক খ win7। "Darjeeling Mall, Chowrasta"। www.darjeeling-tourism.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৮-১৬।
- ↑ "chowrasta and the mall - ixigo trip planner!"। www.ixigo.com। ২০১৮-০৮-১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৮-১৫।
- ↑ "Darjeeling, Hill Station Darjeeling, hill stations in India, Hill Stations in West Bengal, scenic places, tourism"। tourism.webindia123.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৮-১৭।
- ↑ Guides, Bluworlds; Das, Joydip। Darjeeling Pocket Travel Guide (ইংরেজি ভাষায়)। Bluworlds Guides।
- ↑ ক খ উদ্ধৃতি ত্রুটি:
<ref>
ট্যাগ বৈধ নয়;darjeeling tourism2
নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি - ↑ উদ্ধৃতি ত্রুটি:
<ref>
ট্যাগ বৈধ নয়;darjeeling tourism3
নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি