চার্লস ব্যাবেজ (ইংরেজি: Charles Babbage) (২৬শে ডিসেম্বর, ১৭৯১-১৮ই অক্টোবর, ১৮৭১) একজন ইংরেজ যন্ত্র প্রকৌশলী, গণিতবিদ, আবিষ্কারক ও দার্শনিক।[১]

চার্লস ব্যাবেজ

চার্লস ব্যাবেজ
জন্ম(১৭৯১-১২-২৬)২৬ ডিসেম্বর ১৭৯১
মৃত্যু১৮ অক্টোবর ১৮৭১(1871-10-18) (বয়স ৭৯)
মাতৃশিক্ষায়তনপিটারহাউস, ক্যামব্রিজ
পরিচিতির কারণডিফারেন্স ইঞ্জিন
বৈজ্ঞানিক কর্মজীবন
কর্মক্ষেত্রগণিত, প্রকৌশল, রাজনৈতিক অর্থনীতি, কম্পিউটার বিজ্ঞান
প্রতিষ্ঠানসমূহট্রিনিটি কলেজ, ক্যামব্রিজ
যাদের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেনরবার্ট উডহাউস,গেসপার্ড মঞ্জি, জন হার্শেল
যাদেরকে প্রভাবিত করেছেনকার্ল মার্কস, জন স্টুয়ার্ট মিল, অ্যাডা লাভলেস
স্বাক্ষর
চার্লস্‌ ব্যাবেজের ছবি

তাকে আধুনিক কম্পিউটারের জনক মনে করা করা হয়।[২][২][৩][৪] তিনি ডিফারেন্স ইঞ্জিন ও অ্যানালিটিক্যাল ইঞ্জিন নামে দুইটি যান্ত্রিক কম্পিউটার তৈরি করেছিলেন। তার তৈরি অ্যানালিটিকাল ইঞ্জিন যান্ত্রিকভাবে গাণিতিক কাজ সম্পাদন করতে পারত এবং এই ইঞ্জিনের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য আজকের কম্পিউটারের ডিজাইনে এখনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়৷ অর্থায়নের অভাবে ব্যাবেজ তার এই প্রকল্পটি সম্পূর্ণ করতে পারেননি।

শৈশব সম্পাদনা

চার্লসের জন্মস্থান নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে, অক্সফোর্ড ডিকশনারি অফ বায়োগ্রাফির তথ্য অনুযায়ী, তিনি সম্ভবত ৪৪ ক্রসবি রো, ওয়ালওয়ার্থ রোড,লন্ডন,ইংল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করেন।[৫] লারকম স্ট্রিট এবং ওয়ালওয়ার্থ রোডের জংশনে একটি নীল ফলক এই ঘটনা স্মরণ করায়।

তার জন্ম তারিখটি ‘দ্যা টাইমসে, মৃত্যুর সংবাদে ২৬ ডিসেম্বর ১৭৯২ সাল দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারপর তার ভাইপো জানান যে, এক বছর আগে অর্থাৎ চার্লস ১৭৯১ সালে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। সেন্ট ম্যারি নিউইংটন, লন্ডনের প্যারিস রেজিস্টারে দেখানো হয়েছে যে, চার্লস ৬ জানুয়ারি ১৭৯১ সালে জন্মগ্রহণ করেন।[৬][৭][৮]

বেঞ্জামিন ব্যাবেজ এবং বেটসি প্লামলি টিপের চার সন্তানের মধ্যে চার্লস ছিলেন একজন।তার স্বাস্থ্যের কারণে তিনি বেশীরভাগ সময় ব্যক্তিগত মাস্টারমশাই এর কাছে পড়াশুনে করতে হয় এবং তা উচ্চ পর্যায়ের স্তরে পৌঁছান যা কিনা ক্যামব্রিজ কর্তৃক গ্রহণযোগ্য ছিল।১৮১০ সালে,অক্টোবর তিনি টকেমব্রিজের ট্রিনিটি কলেজে পরতে আসেন।[৯] তিনি ইতিমধ্যে সমসাময়িক গণিতের কিছু অংশে স্ব-শিক্ষিত ছিলেন;[১০] তিনি রবার্ট উডহাউস,জোসেফ লউইস লেগারজন এবং মারিয়া এগনেসি লেখা পড়েছিলেন।ফলস্বরূপ,বিশ্ববিদ্যালয়ে উপলব্ধ মান গাণিতিক নির্দেশনায় তিনি হতাশ হন।[৫] 2004 সালে চার্লস,জন হার্শেল,জর্জ পিকক এবং আরও কয়েকজন বন্ধু আনালিটিকাল সোসাইটি গঠন করেন;তিনি এডওয়ার্ড র‍য়ানের কাছের ব্যক্তি ছিলেন।১৮১২ সালে চার্লস পিটারহাউস,কেমব্রিজে স্থানান্তরিত হন।তিনি সেখানে শীর্ষ গণিতবিদ ছিলেন,কিন্তু সম্মানসূচক সংখ্যা দিয়ে স্নাতক হয়নি।১৮১৪ সালে পরীক্ষা ছাড়াই তিনি স্নাতক হন।

পরিবার সম্পাদনা

২৫ জুলাই ১৮১৪, চার্লস জর্জিয়া হোয়াইটমোরের সাথে সেন্ট মাইকেল চার্চ টিনব্রিজ,ডেভুনে বিয়ে করেন।[১১] তাদের আটটি সন্তান ছিল [১২] কিন্তু মাত্র চারটি - বেঞ্জামিন হার্সেল, জর্জিয়ানা হোয়াইটমোর, ডগল্ড ব্রোমহেড এবং হেনরি প্রিভোস্ট - শৈশবে বেঁচে ছিলেন। তার স্ত্রী জর্জিয়া ১ সেপ্টেম্বর ১৮২৫ সালে, ওয়ারসেস্টারে, একই বছর তার পিতা, দ্বিতীয় পুত্র (চার্লস নামেও পরিচিত) এবং তার নবজাত পুত্র আলেকজান্ডার মারা যান।

  • বেঞ্জামিন হারশেল ব্যাবেজ (১৮১৫-১৮৭৮)
  • চার্লস ভাইটমোর ব্যাবেজ (১৮১৭-১৮২৭)
  • জর্জিয়ানা হোয়াইটমোর ব্যাবেজ (১৮১৮- ??)
  • এডওয়ার্ড স্টুয়ার্ট ব্যাবেজ (১৮১৯-১৮২১)
  • ফ্রান্সিস মুর ব্যাবেজ (১৮২১- ??)
  • ডগল্ড ব্রোমহেড (ব্রোমহেল্ড?)ব্যাবেজ (১৮২৩-১৯০১)
  • (মেজ-জেন) হেনরি প্রিভস্ট ব্যাবেজ (১৮২৪-১৯১৮)
  • আলেকজান্ডার ফোর্বস ব্যাবেজ (১৮২৭-১৮২৭)

কর্মজীবন সম্পাদনা

১৮২৮ সালে তিনি লুকাসিয়ান প্রফেসর হিসেবে নিযুক্ত হন এবং ১৮৩৯ সাল পর্যন্ত এ পদে আসীন ছিলেন।তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করতে পছন্দ করতেন না ,তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাকে আরও সংহত দেখতে চেয়েছিলেন,বিশেষ করে গবেষণা ও বৃহত্তর পাঠ্যক্রম আরও বেশি করে নজর দেওয়া।ছয় বছর ধরে রিচার্ড জোনসের সাথে তার এই নিয়ে বিতর্ক চলে। তিনি কখনও অধ্যাপনা করেনি।এই সময়ের তিনি রাজনীতিতে প্রবেশ করার চেষ্টা করেছিলেন।তিনি বেরা অফ ফিনসবারীর প্রার্থী হিসেবে দুবার সংসদে দাঁড়িয়েছিলেন। ১৮৩২ সালে পাঁচজন প্রার্থীর মধ্যে তিনি তৃতীয় স্থান পান।১৮৩৪ সালে তিনি চারজনের মধ্যে চতুর্থ স্থান অর্জন করেন।১৮৩৯ সালের শেষে তিনি লুকাসিয়ান অধ্যাপক হিসাবে পদত্যাগ করেন।ভ্যাভেলের সাথে কেমব্রিজের সংগ্রাম থেকেও দূরে চলে যান।গণিত ও গুনতি এবং আন্তর্জাতিক পরিচিতিগুলির উপর তিনি আরও মনোযোগী হয়ে ওঠেন।তিনি ১৮২২ সালে ডিফারেন্স ইঞ্জিন আবিষ্কার করেন এবং তৈরির বর্ণনা লিখে রেখেছিলেন। পরবর্তীতে ১৯৯১ সালে তার বর্ণনা অনুসারে একটি ইঞ্জিন তৈরি করা হয় এবং দেখা যায় সেটি সঠিকভাবে কাজ করছে।

অন্তকাল সম্পাদনা

 
চার্লস চার্লস ব্যাবেজের মস্তিষ্ক প্রদর্শন করা হয় দ্যা সায়েন্স মিউজিয়ামে (লন্ডন)।

১,ডরসেট স্ট্রিট, মারলেবনে, তিনি ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে কাজ করেন এবং থাকতেন;১৮ অক্টোবর ১৮৭১ সালে,৭৯ বছর বয়সে এখানেই চার্লস মারা যান।তাকে লন্ডনের কেন্সাল গ্রিন কবরস্থানে সমাহিত করা হয়েছিল।তিনি নাইটহুড এবং ব্যারনেটের খেতাব উভয়ই প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।[১৩]

আরও পড়ুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Copeland, B. Jack (ডিসে ১৮, ২০০০)। "The Modern History of Computing (Stanford Encyclopedia of Philosophy)"Stanford Encyclopedia of Philosophy। ৩ মার্চ ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ মার্চ ২০১৭ 
  2. Swade, Doron (২০০২)। The Difference Engine: Charles Babbage and the Quest to Build the First Computer.। Penguin। 
  3. Halacy, Daniel Stephen (১৯৭০)। Charles Babbage, Father of the Computer। Crowell-Collier Press। আইএসবিএন 0-02-741370-5 
  4. "Charles Babbage Institute: Who Was Charles Babbage?"www.cbi.umn.edu। ৯ জানুয়ারি ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ 
  5. Swade, Doron। "Babbage, Charles"। অক্সফোর্ড ডিকশনারি অব ন্যাশনাল বায়োগ্রাফি (অনলাইন সংস্করণ)। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস। ডিওআই:10.1093/ref:odnb/962  (সাবস্ক্রিপশন বা যুক্তরাজ্যের গণগ্রন্থাগারের সদস্যপদ প্রয়োজন।)
  6. Hyman 1982, পৃ. 5
  7. Moseley, Maboth (১৯৬৪)। Irascible Genius, The Life of Charles Babbage। Chicago: Henry Regnery। পৃষ্ঠা 29। ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ 
  8. "The Late Mr. Charles Babbage, F.R.S"। The Times। UK। 
  9. "Babbage, Charles (BBG810C)"A Cambridge Alumni Databaseকেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় 
  10. E. S. Leedham-Green (২৬ সেপ্টেম্বর ১৯৯৬)। A Concise History of the University of Cambridge। Cambridge University Press। পৃষ্ঠা 142–। আইএসবিএন 978-0-521-43978-7। ৫ জানুয়ারি ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ এপ্রিল ২০১৩ 
  11. Wilkes (2002) p.355
  12. Valerie Bavidge-Richardson। "Babbage Family Tree 2005"। ১৩ অক্টোবর ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ 
    Also see "Charles Babbage entry"। ClanBarker। ২০ মে ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ 
  13. Ioan James (২০১০)। Remarkable Engineers: From Riquet to Shannon। Cambridge University Press। পৃষ্ঠা 50। আইএসবিএন 9781139486255। ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০