চাঁচড়া রাজবাড়ির দশমহাবিদ্যার মন্দির

বাংলায় মধ্যযুগীয় সভ্যতা-সংস্কৃতি ও পুরাকীর্তির অন্যতম নিদর্শন হল যশোর চাঁচড়ার দশমহাবিদ্যা বাড়ির মন্দির। যশোরের রাজা শুকদেব রায়ের রাজত্বকালে তার আনুকূল্যে চাঁচড়া রজিবাড়ি সংলগ্ন জমিতে ১৭২৯ সালে দুর্গানন্দ ব্রহ্মচারী নামে এক রাঢ়ীয় ব্রাহ্মণ কর্তৃক দশমহাবিদ্যা মন্দির নির্মিত হয়।মন্দিরে মূলত কালী, তারা, ষোড়শী, ভূবনেশ্বরী, ভৈরবী, ছিন্নমস্তা, ধূমাবতী, বগলা, মাতঙ্গী এবং কমলাত্নিকা এই দশটি মূর্ত্তি দশমহাবিদ্যা রূপে প্রতিষ্ঠিত থাকলেও তারসঙ্গে অন্যান্য দেব মূর্ত্তিও বিদ্যমান ছিল। পশ্চিমের মন্দিরে ছিল কৃষ্ণ, রাধিকা, রাম, সীতা, লক্ষণ হনুমান ও শীতলার বিগ্রহ। মন্দিরের পূর্বদিকে ভোগগৃহ ও দক্ষিণ দিকে নহবৎখানা ছিল। নহবৎখানার নীচ দিয়ে মন্দির প্রাঙ্গনে যাওয়ার জন্য় সদর দ্বার ছিল। পরবর্তীকালে রাজা শ্রীকন্ঠ রায় দশমহাবিদ্যার সেবা ও অতিথি সৎকারের জন্য আট হাজার টাকা আয়ের ভূসম্পত্তি দেবোত্তর করে দেন। কথিত আছে চাঁচড়া গ্রামের বাসিন্দা ভরদ্বাজগোত্রীয় ব্রাহ্মণ দুর্গারাম মুখোপাধ্যায়, ব্রহ্মচারী হলে তার নাম হয় দুর্গানন্দ। ধার্মিক দুর্গানন্দ ভারতবর্ষের বিভিন্ন জায়গায় তীর্থ ভ্রমণ করেছিলেন। কিন্তু কোথাও দেবী ভগবতী ও দশবিধ মহামূর্তির একত্র সমাবেশ দেখতে পান নি। তাই তিনি নিজে মহাবিদ্যার মূর্তি প্রতিষ্ঠা করার জন্য সংকল্পবদ্ধ হন। এ ব্যাপারে তিনি চাঁচড়ার রাজা শুকদেবের অনুগ্রহ লাভ করেন। রাজা শুকদেব নিজে যাবতীয় ব্যায়ভার বহন করতে চাইলেন। দুর্গানন্দ ব্রহ্মচারী উপযুক্ত সূত্রধর জোগাড় করে নিজের বসত বাড়ীর এক প্রকান্ড নিম বৃক্ষ থেকে বিগ্রহগুলি প্রস্তুত করিয়েছিলেন।

দশ মহাবিদ্যা মন্দিরের বর্ণনা সম্পাদনা

মন্দিরের ছাদ সমতল। এই মন্দির গনেশ, সরস্বতী, কমলা, ভূবনেশ্বরী, জগদ্বাত্রী, ষোড়শী, মহাদেব, কালী, তারা, ভৌরবী, ছিন্নমস্তা, মাতঙ্গী , ভৈরব ও ধূমাবতী প্রভৃতি ষোলটি বিগ্রহ দশমহাবিদ্যা মন্দিরে ছিল।