চটকা
চট্কা গান উত্তরবঙ্গে প্রচলিত এক ধরনের লোকগীতি যা আসলে ভাটিয়ালি না ভাওয়াইয়া গানের অধপতিত বা অপভ্রংস রূপ।[১] ভারতের কোচবিহার জেলা ও বাংলাদেশের রংপুর জেলায় এই গানের জন্ম।[২] চট্কা মূলত তাল প্রধান সুরে রচিত। হালকা তাল ও ছন্দে পরিবেশন করা হয়। এই গানে লঘু তাল এবং জলদ লয় ব্যবহার করা হয়।[৩] সেই কারণে দরিয়া গানের মতো প্রলম্বিত সুরের বিন্যাসের ধীরস্থির ভাব পাওয়া যায় না।[৩] চটকা ভাওয়াইয়াতে বিশেষ ঢং-এর দোতরার বাদনশৈলী পাওয়া যায়। দৈনন্দিন জীবনের নিতান্ত সাধারণ বিষয় এই গানের উপজীব্য।[১] এই গানের বিশেষ বৈশিষ্ট্যগত কারণে সাধারণত উত্তর বাংলার শিল্পী ছাড়া এ গানের সুরসংযোজনা সম্ভব হয় না।[৪]
নামকরণ
সম্পাদনাগ্রাম্য কথায় চট শব্দের অর্থ তাড়াতাড়ি। এই চট শব্দটির স্ত্রীলিঙ্গান্তর করে ‘চটকা’ শব্দের উৎপত্তি হয়েছে।[২]
চটকা ও ভাটিয়ালি
সম্পাদনাভাওয়াইয়া গান দুই প্রকারের[২] হয়ে থাকে।
- দীর্ঘ সুরবিশিষ্ট
- চটকা সুরবিশিষ্ট
দীর্ঘ সুর বিশিষ্ঠ গানে নর-নারীর, বিশেষত নবযৌবনাদের অনুরাগ, প্রেমপ্রীতি ও ভালোবাসার আবেদনই মূল উপজীব্য।[২] অন্যদিকে চটকা এক প্রকার রঙ্গগীতি।[২] এই গান চটুল ও দ্রুত তালের হয়ে থাকে। এই শ্রেণীর গানে যথেষ্ট হাস্যরসের উপাদান থাকে।[২]
চটকা গানের উপজীব্য
সম্পাদনাচটকা গানের সংগীত রচনাকারেরা এই গানের মধ্য দিয়ে সাংসারিক জীবনে স্বামী-স্ত্রীর আশা-আকাঙ্ক্ষা, মনোমালিন্য, সন্তান-সন্ততি কামনা, সংসার জীবনের ঘাত-প্রতিঘাত ইত্যাদি বিষয় ব্যক্ত করেন।[২]
প্রকারভেদ
সম্পাদনামূলত এই গান দোতারা ভিত্তিক তাল অর্থাৎ বদন শৈলীকে বাজানো হয়। একে বিশুদ্ধ চটকা বলা হয়ে থাকে।[৩] এছাড়াও আরো দুই ভাবে চটকা পরিবেশিত হয়।[৩]
- খ্যামটা অঙ্গের চটকা: এই অঙ্গের চটকা গানে নাগরিক গান অর্থাৎ জনজীবনের সাধারণ বিষয়ই হলো মূল উপজীব্য। অনেক সময় শাস্ত্রীয় ত্রিতাল ব্যবহার করা হয়।[৩] এই গানের চটুল দুলুনী অনুভব করা যায়, যার সাথে খ্যামটা গানের মিল পাওয়া যায়।[৩]
“ | বাপুই চ্যাঙেরারে গাচোত চড়িয়া দুইটা জলপই পাড়িয়া দে। |
” |
- ঝুমুর চটকা: দ্রুত ঝুমুর তালও অনেক সময় চটকায় ব্যবহার করা হয়। যেহুতু ঝুমুরটির প্রকৃতি দ্রুত দাদরার মতো। তাই এই ধরনের চটকা অতি দ্রুত তালে গাওয়া হয়। এই ধরনের গানের বাণীও চটুল।[৩]
ক্ষীরোল গান
সম্পাদনাদীর্ঘ সুর ও চটকা সুরের মিশ্রণে অপর এক শ্রেণীর গানও প্রচলিত, এটি ক্ষীরোল গান নামে পরিচিত।[২]
জনপ্রিয় চটকা
সম্পাদনা- ওরে পতিধন বাড়ি ছাড়িয়া না যান
- পানিয়া মরা মোক মারিলু রে
- ওরে কাইনের ম্যায়ার ঠসক বেশি
ব্যাড়ায় শালী টাড়ি টাড়ি
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ ভট্টাচার্য, আশুতোষ (১৯৫৪)। বাংলার লোক সাহিত্য়|তৃতীয় খণ্ড। কলকাতা: ক্যালকাটা বুক হাউস। পৃষ্ঠা ২৮১।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ ছ জ "ভাওয়াইয়া - বাংলাপিডিয়া"। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০১-০৫।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ ছ "ভাওয়াইয়া গান"। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০১-০৫।
- ↑ "কোচবিহারের লোকসাহিত্য ও সংস্কৃতি" (পিডিএফ)। ir.nbu.ac.in। সংগ্রহের তারিখ ১৬ জুন ২০২৩।