ঘণ্টানির্মাণ বা ঘণ্টাঢালাই বলতে ধাতু ঢালাইখানাতে ছাঁচে ঢেলে ও সুর বেঁধে বৃহৎ ব্রোঞ্জের তৈরি ঘণ্টা তৈরির কারিগরি কলাটিকে নির্দেশ করা হয়, যে ঘণ্টাগুলিকে গির্জা, ঘণ্টাঘর ও সরকারি ভবনগুলিতে সময় নির্দেশ করতে, কোনও বিশেষ ঘটনা নির্দেশ করতে বা কোনও সুরেলা ঘণ্টাস্তবক (বাদ্যযন্ত্র) বা সুরেলা ঘণ্টাগুচ্ছের অংশ হিসেবে নির্মাণ করা হয়। এই কারখানাগুলিকে ঘণ্টা ঢালাইখানা (Bell foundry) বলে। বড় ঘণ্টাগুলিকে ঘণ্টার ধাতুকে নির্দিষ্ট ছাঁচে ঢেলে বানানো হয়, যে ছাঁচগুলি একটি নির্দিষ্ট স্বরের ঘণ্টা বানানোর জন্য বিশেষভাবে নকশা করা হয়। এরপর কুঁদকল বা লেদমেশিন দিয়ে ঘণ্টা থেকে ধাতু চেঁছে ফেলে ঘণ্টাগুলিকে আরও সূক্ষ্ম সুরে বাঁধা (ফাইন টিউন) হয়, যাতে প্রতিটি ঘণ্টা সঠিক পূর্ণগুণিত উপস্বরগুলিসহ (হার্মনিকস) একটি একান্তই স্বতন্ত্র ধ্বনি উৎপাদন করে।

নেদারল্যান্ডসের আস্টেন শহরের রাজকীয় আইসবাউটস ঘণ্টা ঢালাইখানাতে সুরেলা ঘণ্টাস্তবকের জন্য একটি ঘণ্টা ছাঁচে ঢালাই করা হচ্ছে।

পূর্ব এশিয়াতে ঘণ্টানির্মাণ খ্রিস্টপূর্ব ২য় সহস্রাব্দ থেকেই প্রচলিত।[] ইউরোপ মহাদেশে ৪র্থ বা ৫ম শতকে এর প্রচলন হয়। যুক্তরাজ্যে প্রত্নতাত্ত্বিক খননকার্যে ধাতুনির্মিত চুল্লীর অবশিষ্টাংশ পাওয়া গেছে, যেটি নির্দেশ করে যে গির্জার ভেতরে বা গির্জার প্রাঙ্গনে গর্ত করে ধাতু ঢালাই করে ঘণ্টা নির্মাণ করা হত। রেলপথের উদ্ভাবনের পর ঘণ্টা পরিবহন সহজ হয়ে যাওয়ার ফলে নির্দিষ্ট লোকালয়ে কেন্দ্রীভূত ঘণ্টা ঢালাইখানাগুলি বেশি সাধারণ হয়ে ওঠে। ইংল্যান্ডে হোয়াইটচ্যাপেল বেল ফাউন্ড্রি ও লাফবরা শহরের জন টেইলর অ্যান্ড কো দুইটি গুরুত্বপূর্ণ ও আধিপত্য বিস্তারকারী ঘণ্টা ঢালাইখানা ছিল।

বিশ্বের অন্যত্র বেশ কিছু ঘণ্টা ঢালাইখানা আজও সচল। কোনওটিতে ঐতিহ্যবাহী পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়, কোনওটিতে সবচেয়ে সাম্প্রতিক ঢালাইয়ের কৌশল ব্যবহার করা হয়। আধুনিক ঘণ্টা ঢালাইখানাগুলিতে ১৯শ শতকের শেষভাগে প্রতিষ্ঠিত নীতি অনুসরণ করে সুরে বাঁধা ঘণ্টা উৎপাদন করা হয়। কিছু কিছু ঘণ্টায় অনেক কারুকার্য করা থাকতে পারে।

আরও দেখুন

সম্পাদনা
  • বেঞ্জামিন হ্যাংকস (১৭৫৫–১৮২৪), স্বর্ণকার ও বাদ্যযন্ত্র নির্মাতা

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. Lothar Von Falkenhausen (১৯৯৩)। Suspended Music: Chime Bells in the Culture of Bronze Age China। University of California Press। পৃষ্ঠা 132। আইএসবিএন 978-0-520-07378-4। সংগ্রহের তারিখ ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৩China seems to have produced the earliest bells anywhere in the world... the earliest metal bells may have been derived from pottery prototypes, which seem to go back to the late stage of the Yang-Shao culture (early third millennium BCE)  Appendix I pp. 329, 342.

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা