গোষ্ঠীভিত্তিক গবেষণা

অনুদৈর্ঘ্য গবেষণার ধরন

গোষ্ঠীভিত্তিক গবেষণা হল অনুদৈর্ঘ্য গবেষণার একটি বিশেষ রূপ যেখানে কোনও নির্দিষ্ট গোষ্ঠী (একদল ব্যক্তি যারা সবাই কোনও সংজ্ঞানিরূপক চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের অধিকারী এবং যারা সবাই সাধারণত কোনও নির্বাচিত সময়ের পরিসরে একই রকম কোনও ঘটনার অভিজ্ঞতা লাভ করে, যেমন জন্ম বা শিক্ষাক্রম শেষ করা) থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। সাধারণত কিছু সময় পর পর একটি উপাত্ত প্রস্থচ্ছেদ সম্পাদন করা হয়।

গোষ্ঠীভিত্তিক গবেষণা রোগবিস্তারবিজ্ঞানের গবেষণার একটি অন্যতম মৌলিক নকশা, যে নকশাগুলিকে চিকিৎসাবিজ্ঞান, ঔষধ প্রস্তুতি ও ব্যবহার বিজ্ঞান, শুশ্রূষাবিজ্ঞান, মনোবিজ্ঞান, সামাজিক বিজ্ঞানসহ সাক্ষ্যপ্রমাণের (পরিসংখ্যান) উপরে ভিত্তি করে "উত্তরে পৌঁছানো দুরূহ" এমন যেকোনও ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

নিয়ন্ত্রিত পরীক্ষণের সাথে তুলনা সম্পাদনা

রোগীভিত্তিক পরীক্ষণের সাথে গোষ্ঠীভিত্তিক গবেষণার পার্থক্য হল এই যে গোষ্ঠীভিত্তিক গবেষণার নকশায় কোনও হস্তক্ষেপমূলক কাজ, চিকিৎসা বা রোগের সংস্পর্শে আসা সম্পাদন করা হয় না এবং কোনও নিয়ন্ত্রণমূলক দল সংজ্ঞায়িত করা হয় না। বরং গোষ্ঠীভিত্তিক গবেষণা মূলক কোনও জনসমষ্টির খণ্ডাংশবিশেষের ও সেই খণ্ডাংশ গঠনকারী একক ব্যক্তিসমূহের জীবন ইতিহাসের সাথে সম্পর্কিত।[১][২] রোগের সংস্পর্শে আসা বা সুরক্ষামূলক নিয়ামক (যেমন চিকিৎসা) অংশগ্রহণকারীদের পূর্ব-থেকে-বিদ্যমান বৈশিষ্ট্য হিসেবে শনাক্ত করা হয়। পরিসংখ্যানিক বিশ্লেষণে গোষ্ঠীটির অন্যান্য সাধারণ বৈশিষ্ট্যগুলিকে অন্তর্ভুতক করে গবেষণাটিকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। সংস্পর্শ/চিকিৎসা ও নিয়ন্ত্রণমূলক চলকগুলি - উভয়কেই ভূমিরেখায় পরিমাপ করা হয়। এরপর সময়ের সাথে সাথে অংশগ্রহণকারীদেরকে অনুসরণ করা হয় ও রোগ কিংবা অনুসন্ধানাধীন ফলাফলের আপতন হার পর্যবেক্ষণ করা হয়। অতঃপর নির্ভরণ বিশ্লেষণ ব্যবহার করে মূল্যায়ন করা যায় সংস্পর্শ বা চিকিৎসা চলকটি কতটুকু ব্যাপ্তিতে রোগের আপতনে অবদান রাখে, এবং একই সাথে ক্রিয়াশীল অন্যান্য চলকগুলিকেও গণনায় ধরা হয়।

দ্বৈত-অজ্ঞাত দৈবকৃত নিয়ন্ত্রিত পরীক্ষণকে (Double-blind randomized controlled trial) সাধারণত চিকিৎসার সাক্ষ্যপ্রমাণের মর্যাদাক্রমে (hierarchy of evidence) অপেক্ষাকৃত উন্নততর পদ্ধতি হিসেবে গণ্য করা হয়, কেননা এটি ফলাফলের উপর প্রভাব ফেলতে পারে, এমন অন্যান্য চলকগুলির উপর সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রণের সুযোগ প্রদান করে এবং দৈবচয়ন ও অজ্ঞাতকরণ প্রক্রিয়াগুলি গবেষণার নকশাতে পক্ষপাতের পরিমাণ হ্রাস করে। ফলে ফলাফলগুলির বিভ্রান্তিকর চলকসমূহের দ্বারা, বিশেষ করে অজ্ঞাত চলক দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার সুযোগ সর্বনিম্ন হয়। তবে পূর্ববর্তী গবেষণা ও পটভূমিক জ্ঞানের উপর ভিত্তি করে নির্মিত পরিশীলিত অনুকল্প ব্যবহার করে গোষ্ঠীভিত্তিক গবেষণার জন্য নির্ভরণ প্রতিমানে অন্তর্ভুক্ত চলকগুলি নির্বাচন করা হয়। এছাড়া এই চলকগুলি থেকে সম্ভাব্য বিভ্রান্তি সৃষ্টিকারকগুলিকে শনাক্ত করা ও হিসাবে নেওয়ার জন্য পরিসংখ্যানিক পদ্ধতি ব্যবহার করা হতে পারে। গোষ্ঠী জন্য অংশগ্রহণকারীদের নির্বাচন করার সময়েও পক্ষপাত লাঘব করা যেতে পারে। এখানে আরও লক্ষ্যণীয় যে দৈবকৃত নিয়ন্ত্রিত পরীক্ষণগুলি সব ধরনের ঘটনার জন্য উপযুক্ত না-ও হতে পারে। যেমন যখন ফলাফল কোনও নেতিবাচক স্বাস্থ্যগত পরিণাম হয় এবং সংস্পর্শ যদি ফলাফলের জন্য একটি ঝুঁকিসৃষ্টিকারক হিসেবে অনুকল্পিত হয়। নৈতিক আদর্শ ও নৈতিকতা ঐসব দৈবকৃত নিয়ন্ত্রিত পরীক্ষণে ঝুঁকি সৃষ্টিকারকসমূহের ব্যবহার প্রতিরোধ করবে। ঐসব ঝুঁকি সৃষ্টিকারকের সাথে স্বাভাবিক, প্রাকৃতিক বা আপতনমূলক সংস্পর্শ (যেমন সূর্যের আলোয় সময় কাটানো) বা স্ব-প্রযুক্ত সংস্পর্শ (যেমন ধূমপান) পরিমাপ করা সম্ভব এবং এভাবে অংশগ্রহণকারীদের ব্যক্তিগত জীবনচর্যা, অভ্যাস ও পছন্দের বাইরে গিয়ে ঝুঁকি সৃষ্টিকারকের সংস্পর্শে আসতে বাধ্য করা এড়ানো যায়।

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Cohort Studies"। Web Center for Social Research Methods। ২০১১-০৯-০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  2. Porta, Miquel, সম্পাদক (২০০৮)। A Dictionary of Epidemiology (5th সংস্করণ)। New York: Oxford University Press। 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা