গলমাছি
গলমাছি বা নলিমাছিকে ধান ফসলের সাধারণ ও গুরুত্বপূর্ণ ক্ষতিকর পোকা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এ পোকার আক্রামণের ফলে ধান গাছের মাঝখানের পাতাটা পিঁয়াজ পাতার মত নলাকার হয়ে যায়। এ জন্য এ পোকার ক্ষতির নমুনাকে ‘পিঁয়াজ পাতা গল’ বা ‘নল’ বলা হয়ে থাকে। এ গলের বা নলের প্রথমাবস্থায় রং হালকা উজ্জ্বল সাদা বলে একে ‘সিলভার শুট’ বা ‘রূপালি পাতা’ বলা হয়।[১]
গলমাছি | |
---|---|
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস | |
জগৎ: | Animalia |
পর্ব: | Arthropoda |
শ্রেণী: | Insecta |
বর্গ: | Diptera |
উপবর্গ: | Nematocera |
অধোবর্গ: | Bibionomorpha |
মহাপরিবার: | Sciaroidea |
পরিবার: | Cecidomyiidae |
Subfamilies | |
প্রতিশব্দ | |
|
আকার আকৃতি
সম্পাদনাপেঁয়াজ পাতা গল বড় বা ছোট হতে পারে। ছোট হলে শনাক্ত করতে অনেক সময় অসুবিধা হয়। গল হলে সে গাছে আর শীষ বের হয় না। তবে গাছে কাইচ থোড় এসে গেলে গলমাছি আর গল সৃষ্টি করতে পারেনা। পূর্ণ বয়স্ক গলমাছি দেখতে একটা মশার মত। স্ত্রী গলমাছির পেটটা উজ্জল লাল রঙের হয়। এরা লম্বায় ২-৩ মি.মি. তবে বেশিরভাগই ১ মি.মি. এর চেয়ে বেশি লম্বা হয় না। [২]
স্বভাব
সম্পাদনাএরা রাতে আলোতে আসে, কিন্তু দিনের বেলায় বের হয় না।
জীবনবৃত্তান্ত
সম্পাদনাস্ত্রী গলমাছি সাধারণতঃ পাতার নিচের পাশে ডিম পাড়ে, তবে মাঝে মধ্যে পাতার খোলের উপরও ডিম পাড়ে। গলমাছির বাৎসরিক বংশবৃদ্ধি মৌসুমী আবহাওয়ার ওপর নির্ভর করে। শুষ্ক মৌসুমে গলমাছি নির্জীব থাকে এবং ঝরা ধান বা ঘাসের মধ্যে পুত্তলী অবস্থায় বেঁচে থাকে। বর্ষা মৌসুম শুরু হলেই পূর্ণ বয়স্ক গলমাছি তৎপর হয়ে ওঠে এবং ঘাস জাতীয় বিকল্প গাছের খাদ্য খেয়ে এক বা একাধিক বংশ অতিক্রম করে। ঘাস জাতীয় গাছে গলমাছির এক একটি জীবনচক্র সম্পূর্ণ হতে ৯-১৪ দিন এবং ধানের ওপর ৯-২৪ দিন সময় লাগে।
ক্ষতির প্রকৃতি
সম্পাদনাধানের চারা অবস্থা থেকে যদি আক্রমণ শুরু হয় তাহলে কাইচ থোড় অবস্থা আসা পর্যন্ত সময়ে এ পোকা কয়েকবার জীবনচক্র সম্পূর্ণ করতে পারে। যে সমস্ত অঞ্চলে শুধু শুষ্ক ও বর্ষা মৌসুম বিদ্যমান, সে সব অঞ্চলে বর্ষা মৌসুমের আগাম ধান ক্ষতি এড়িয়ে যেতে পারে। বর্ষা মৌসুমের শেষের দিকে রোপণ করলে সমূহ ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে। বর্ষা মৌসুমে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকলে শুষ্ক মৌসুমে সেচের আওতাভুক্ত ধানক্ষেত আক্রান্ত হতে পারে।
দমন ব্যবস্থাপনা
সম্পাদনাআলোক ফাঁদের সাহায্যে পূর্ণবয়স্ক গলমাছি ধরে ধ্বংস করা যেতে পারে। শতকরা ৫ ভাগ পিঁয়াজ পাতার মতো হয়ে গেলে অনুমোদিত কীটনাশক ব্যবহার করে গলমাছি দমন করা হয়।
আরও দেখুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ বিশ্বাস, বিবেকানন্দ (জুন ২০১৪)। "কৃষি কীটতত্ত্ব"। ওয়াহাব, আবদুল। আধুনিক কীটতত্ত্ব। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলা একাডেমী। পৃষ্ঠা ৪৯৫। আইএসবিএন 984-07-5355-X।
- ↑ Raymond J Gagné , ২০০৪ A catalog of the Cecidomyiidae (Diptera) of the world Entomological Society of Washington, ইস্যু-২৫