খসড়া:মাওলানা নুরুদ্দীন ফতেহপুরী রহঃ

মাওলানা নুরুদ্দীন ফতেহপুরী রহঃ সম্পাদনা

আলেমে দ্বীন, শিলালিপি গবেষক ওস্তাদে আলম হজরত মাওলানা নুরুদ্দিন ফতেহপুরী ১৯৪৮ সালে গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার মুক্তারপুর ইউনিয়নের পোটাল (ফতেহপুর) গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মোসলেহউদ্দিন প্রধান ও মা রহিমা খাতুন। মাইশাইর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়া শেষে গ্রামের মেহতাহুল মাদরাসা ও পুরান ঢাকার বড় কাটারা মাদরাসায় পড়াশোনা করেন। ১৯৬৬ সালে তিনি করাচির জামেয়া ইসলামিয়ায় হাদিস বিষয়ে এবং ১৯৬৭ সালে লাহোরের জামেয়া আলরাফিয়ায় হাদিস ও এলমে কেরাত বিষয়ে উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণ করেন। বিগত শতকের ষাটের দশকে তরুণ বয়সে বড় কাটারা মাদরাসায় শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন এবং পুরান ঢাকার ঐতিহাসিক বড় ভাট মসজিদের ইমামের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। আরো একটি মহিলা মাদরাসায়ও তিনি শিক্ষক ছিলেন। ১৬৮৮ খ্রিষ্টাব্দে স্থাপিত বড় ভাট মসজিদের ইমাম ও খতিব ছিলেন দীর্ঘ ৫৪ বছরেরও বেশি সময়। অর্থাৎ ষাট দশকের প্রথম ভাগ থেকে শুরু করে ২০১৯ সাল পর্যন্ত। ইমামের দায়িত্ব নেয়ার পরপরই বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। মসজিদ কমিটির লোকজন তাকে স্নেহপ্রবণ দৃষ্টিতে দেখতেন। তার বিবাহকর্মে সর্বাত্মক সহযোগিতা ও পারিবারিক দ্বীনে এলেম শিক্ষার পাশাপাশি উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণ করে নিজ কর্মক্ষেত্রে অবদান রেখে চলেছেন।

আশির দশকে তিনি গ্রামগঞ্জ ঘুরে ঘুরে প্রাচীন আমলের মসজিদ, মাজার, কাটারা, ইমামবাড়ী ইত্যাদি শিলালিপি পাঠ সংগ্রহ শুরু করেন। একসময় শিক্ষাবিদ অধ্যাপক আ.আ.ম.স আরেফিন সিদ্দিকের নেতৃত্বে ঢাকার স্থাপত্য বিষয়ক গ্রন্থ প্রণয়ন কমিটিতে স্বেচ্ছাশ্রম ভিত্তিতে যোগদান করেন এবং এই কমিটির অন্যতম সম্পাদক ছিলেন। ২০১০ সালে তিনি শিলালিপি গ্রন্থনার কাজে সর্বাত্মকভাবে যুক্ত হন। কমিটির শিলালিপি পাঠ উদ্ধার, উচ্চারণ, অনুবাদ, গবেষণা ও তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন। তার পাণ্ডিত্য ভাষা জ্ঞান সবাইকে বিমোহিত করে এবং তিনি উপমহাদেশের প্রচলিত সনাতন ফার্সি বিশারদ ও অনুরাগী। যেখানে অন্যরা ছিলেন বর্তমান ইরানের ফার্সি উচ্চারণের সমর্থক। শেখ সাদী রহ:-এর বিখ্যাত গ্রন্থ ‘কারিমা’ তিনিই প্রথম বাংলায় অনুবাদ করেন। তাছাড়া ফার্সি সুফি কবিতা-‘জজবায়ে মারেফত’, উর্দু ভাষায় রচনা করেন সৃজনশীল গ্রন্থ- ‘কুণ্ডুলা আদরী’। বিন্দু বিশিষ্ট বর্ণের ব্যবহার ছাড়া রচনা করেন- ‘বিন্দুবিহীন বর্ণে মহানবী সা:, ‘বাঙালি ও বাংলাদেশ’ শীর্ষক দু’টি গ্রন্থ। এ ছাড়া বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি, সাক্ষাৎকার ও কুরআনের তাফসির ও বয়ানের সুমধুর কণ্ঠের অধিকারী ছিলেন বিশেষ করে ঢাকার মুঘল আমলের ইতিহাস, ঢাকার প্রতি তার একটা দরদ ও দুর্বলতা ছিল। জ্ঞান চর্চা, জ্ঞানের সম্প্রসারণ ও জ্ঞান বিতরণে তিনি ছিলেন আত্মনিবেদিত প্রাণ। নিষ্ঠাভাষী, সদালাপী, মিশুক মনের মানুষ ছিলেন তিনি। প্রচারবিমুখ, নিষ্ঠাবান এমন মানুষ এখন একান্তই বিরল।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

[১] [২]


  1. https://www.dailynayadiganta.com/post-editorial/85
  2. https://bangla.thedailystar.net/literature/history-tradition/tradition/news-431866