ক্ষোদক বা চূর্ণকারক এক প্রকার যন্ত্র, যা বিভিন্ন প্রকার যন্ত্রাংশ চূর্ণ করতে ব্যবহৃত হয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, কয়লা উৎপাদন কারখানার বাষ্প সৃষ্টিকারী চুল্লির দহনের জন্য কয়লাকে চূর্ণ করতে "পুরিচ" নামক বিশেষ এক ধরনের ক্ষোদক ব্যবহৃত হয়।

একটি বৃহৎ ক্ষোদক

কয়লা ক্ষোদকের প্রকারভেদ সম্পাদনা

কয়লা ক্ষোদক গতির ভিত্তিতে বিভিন্ন প্রকার হতে পারে। যেমন-[১]

(১)নিম্ন গতির কয়লা ক্ষোদক

(২)মধ্যম গতির কয়লা ক্ষোদক

(৩) উচ্চ গতির কয়লা ক্ষোদক

নিম্ন গতির ক্ষোদক সম্পাদনা

বল ও টিউব মিল সম্পাদনা

বল মিল এক ধরনের ক্ষোদক, যার মধ্যে তিনটি প্রান্তীয়ভাবে ঘূর্ণনশীল সিলিন্ডার বিদ্যমান। এদের দৈর্ঘ্য সর্বোচ্চ ৩ ডায়ামিটার পর্যন্ত হতে পারে। গড়িয়ে যাওয়া ইস্পাতের বল, নুড়ি বা দণ্ড ব্যবহার করে বল মিল চালনা করা হয়।

টিউব মিল চক্রাকারে ঘূর্ণনশীল ক্ষোদকের সমন্বয়ে গঠিত। এর দৈর্ঘ্য সর্বোচ্চ পাঁচ ডায়ামিটার পর্যন্ত হতে পারে। আকরিক, শিলা ইত্যাকার বস্তু চূর্ণ করার জন্য এটি ব্যবহৃত হয়। যে বস্তুটি চূর্ণ করা হবে , সেটি পানির সাথে মিশিয়ে মিলের প্রকোষ্ঠের এক প্রান্ত দিয়ে প্রবেশ করানো হয় এবং অন্য প্রান্ত দিয়ে চূর্ণকৃত আকারে এটি নির্গত হয়।

উভয় ধরনের মিলেই লাইনার থাকে, যার ফলে সিলিন্ডারটি কোনো কারণে জীর্ণ বা ক্ষয়প্রাপ্ত হয় না। তবে বল এবং লাইনার নিজেরাই জীর্ণ বা ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে যেতে পারে। ক্ষয় প্রক্রিয়ার ফলে বলগুলো ক্ষয়ে শেষ হয়ে যায়, যার ফলে তাদের প্রতিস্থাপন করতে হয়। আবার, লাইনারগুলোকেও একটি নির্দিষ্ট সময় পরপর প্রতিস্থাপিত করা জরুরি।

টিউব মিলের নামকরণের মূল কারণ হলো এর নলের মত গঠন ; অপরপক্ষে বল মিলের নামকরণের মূল কারণ হলো বস্তু চূর্ণকরণে ইস্পাতের বলের ব্যবহার। দুটি বৈশিষ্ট্যই বিদ্যমান এমন মিলকে বল টিউব মিল বলে।

মিলের নামকরণ পদ্ধতি একটি উদাহরণের সাহায্যে ব্যাখ্যা করা হলো। ধরা যাক, একটি মিলের নাম বিবিডি ৪৭৭২। এক্ষেত্রে, ১ম বি দ্বারা ব্রয়ার (আবিষ্কারকের নাম), ২য় বি দ্বারা ব্যুলে (বলের ফ্রেঞ্চ প্রতিশব্দ), ডি দ্বারা বুঝায় ডাইরেক্ট ফায়ারিং বা সরাসরি চূর্ণকরণ,৪৭ দ্বারা বুঝায় ডেসিমিটার এককে শেলের ব্যাস (৪৭ ডেসিমিটার বা ৪.৭ মিটার) এবং ৭২ দ্বারা বুঝায় ডেসিমিটার এককে শেলের দৈর্ঘ্য (৭২ ডেসিমিটার বা ৭.২ মিটার)।

শেলের আয়তনের অর্ধেক বা এক-তৃতীয়াংশই বল দখল করে রাখে। এটি তিন টুকরায় বিভক্ত; এবং এর সম্পূর্ণ দৈর্ঘ্য ৭.২ মিটার। দশটি ভিন্ন ভিন্ন ধরনের লাইনার ব্যবহার করা হয়, যাদের মোট ভর ৬০.২৬ টন।

মধ্যম গতির ক্ষোদক সম্পাদনা

রিং অ্যান্ড বল মিল সম্পাদনা

রিং অ্যান্ড বল মিলে দুই ধরনের রিং বা আংটিসদৃশ গঠন পরিলক্ষিত হয়। নিচের দিকের রিং বা আংটি ঘুরতে থাকে; অপরপক্ষে উপরের দিকের রিংটি বলের দিকে বস্তুটি চেপে ধরে।

ভার্টিকেল স্পিন্ডল রোলার মিল সম্পাদনা

ভার্টিকেল স্পিন্ডল রোলার মিল কয়লা চূর্ণ করতে বড় টায়ার ব্যবহার করে। কাঁচা কয়লা মাধ্যাকর্ষণ শক্তি ব্যবহার করে চূর্ণকরণ টেবিলে নলের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত করা হয়। এক্ষেত্রে বায়ুর উল্লেখযোগ্য ব্যবহার রয়েছে।

১৯৫৪ সালে ভার্টিকেল বা উলম্ব ক্ষোদকের অনুরূপ জেট ক্ষোদক আবিষ্কার করা হয়। এটিও টায়ার ব্যবহার করে, তবে এতে উচ্চগতির বায়ুপ্রবাহের প্রয়োজন পড়ে। [২]

বোল মিল সম্পাদনা

বোল মিল বিশেষ এক ধরনের ক্ষোদক, যা দুই ভাগে বিভক্ত। এগুলো হলো- গভীর বোল মিল ও অগভীর বোল মিল।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Coal Pulverising Mill Types, by Glenn Schumacher, 2010
  2. Magazines, Hearst (28 এপ্রিল, 1954)। "Popular Mechanics"। Hearst Magazines – Google Books-এর মাধ্যমে।  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)