কেইম্যান দ্বীপপুঞ্জের ইতিহাস

কেইম্যান দ্বীপপুঞ্জ ক্যারিবিয়ান দ্বীপরাষ্ট্রের অন্তর্গত এক ব্রিটিশ শাসিত অঞ্চল যা ইংল্যান্ডের মূল ভূখণ্ড থেকে আটলান্টিক মহাসাগর দ্বারা বিচ্ছিন্ন৷ক্রিস্টোফার কলম্বাস ১৫০৩ সালের ১০ ই মে তারিখে এই দ্বীপের সন্ধান পান৷কথিত আছে যে এই দ্বীপের চারধারে সমুদ্রের জলে প্রচুর সামদ্রিক কচ্ছপ সাঁতার কাটছিল যা এই দ্বীপের প্রতি অভিযাত্রীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এবং সেইকারনে কলম্বাস এই দ্বীপের নামকরণ করেছিলেন লস টর্টগাস৷তিনি কেম্যান ব্র্যাক এবং লিটল কেম্যান নামক দুই যুগ্ম দ্বীপসমষ্টির খোঁজ করেন যার নাম একত্রে রাখা হয় লস টর্টগাস৷অভিযাত্রীরা এই দ্বীপপুঞ্জ আবিষ্কারের পর থেকে একাধিক ইউরোপীয় শক্তি পৃথক পৃথক সময়কালে এই ভূখণ্ড শাসন করে আসছে৷

অগণিত কচ্ছপ সমুদ্রগামী জাহাজ এবং যাত্রীদের দ্বীপটির প্রতি আকর্ষণ করেছিল

১৫২৩ সালের "তুরিনের মানচিত্রে" এই ভূখণ্ডকে লস লাগার্তোস হিসাবে উল্লেখ করেছে, যার অর্থ "এলিগেটর" বা কুমির[১]৷১৫৩০ সালের মধ্যে এই দ্বীপপুঞ্জের নাম "কেইম্যান" রাখা হয়, ক্যারিবিয়ান শব্দমালায় যার অর্থ সামুদ্রিক কুমির৷কথিত আছে যে এই ভূখণ্ডে বসবাসকারী আমেরিকান বা কিউবার কুমির, "ক্রোকোডিলাস অ্যাকুটাস" বা "সি রম্বিফার"-এর জন্য এরূপ নামকরণ করা হয়৷সাম্প্রতিক উপ-জীবাশ্মের অনুসন্ধানে দেখা গেছে যে, বিশ শতক অবধি অলবণাক্ত জলে বসবাসকারী সি রম্বিফার প্রজাতির এই ভূখণ্ডে বসবাস ছিল।

বসতি স্থাপন সম্পাদনা

প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণায় ষোড়শ শতাব্দীর আগে কেইম্যান দ্বীপপুঞ্জে মনুষ্য বসবাসের কোনও চিহ্ন পাওয়া যায়নি[২]৷ইতিহাসের প্রামাণ্য দলিল অনুযায়ী ১৫৮৬ সালে স্যার ফ্রান্সিস ড্রেক কেইম্যান দ্বীপপুঞ্জে পদার্পণকারী প্রথম ইংরেজ অভিযাত্রী৷তার বিবরণ অনুযায়ী এই দ্বীপে বসবাসকারী "কেইম্যান" বা কুমির ভোজনের উপযুক্ত, যদিও তাদের মূল উদ্দেশ ছিল এই দ্বীপে বসবাসকারী সামুদ্রিক কচ্ছপের তাজা মাংস সংগ্রহ করা যা জাহাজের খালাসি ও অন্যান্যদের উদরপূর্তি করবে৷অতিরিক্ত শিকারের ফলে এই অঞ্চলের সামুদ্রিক কচ্ছপ প্রায় বিলুপ্ত হয়ে পরে৷কচ্ছপগুলি ছিল এই দ্বীপপুঞ্জের অর্থনীতির মূল উৎস৷১৭৮৭ সালে, এইচএমএস ক্যামিলার ক্যাপ্টেন হুল অনুমান করেছিলেন যে প্রতি বছর জ্যামাইকার সমুদ্রবন্দরগুলিতে ১২০০ থেকে ১৪০০ কচ্ছপ ধরা হয় এবং বিক্রি হয়।ঐতিহাসিক এডওয়ার্ড লং-এর মতে "গ্রান্ড কেইম্যান"-এর অধিবাসীদের প্রধান জীবিকা ছিল কচ্ছপ ও মৎস্য শিকার, যখন এই অঞ্চলে সামুদ্রিক কচ্ছপের সহ্য হ্রাস পে, অধিবাসীরা ধীরে ধীরে এই স্থান ত্যাগ করে এবং মূল ভূখণ্ডে বসতি স্থাপন করে[৩]

কেম্যানিয়ান লোককাহিনী অনুযায়ী দ্বীপের প্রথম বাসিন্দারা হলেন ওয়াল্টার্স (বা ওয়াটলার) নামে একজন ওয়েলসের বাসিন্দা এবং বাওডেন (বা বোডডেন) নামে তাঁর সহযোগী যিনি জামাইকায় অলিভার ক্রমওয়েলের সেনাবাহিনীতে চাকরি করতেন।তারা ১৬৫৮ সালে এই দ্বীপে প্রথম পদার্পণ করেন[৪]৷কেইম্যান দ্বীপপুঞ্জের প্রথম নথিভুক্ত স্থায়ী বাসিন্দা ছিলেন আইজাক বোডডেন যিনি ১৭০০ সালের কাছাকাছি সময়ে গ্র্যান্ড কেম্যানে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি ছিলেন বোডডেন নামক দ্বীপের আদি বাসিন্দার নাতি।

কেইম্যান দ্বীপপুঞ্জে প্রাথমিকভাবে বসতি স্থাপনকারী বেশিরভাগ অধিবাসীরা ছিলেন বহিরাগত এবং সমাজের প্রান্তিক মানুষজন।এ কারণেই বোধহয় কেইম্যান দ্বীপপুঞ্জকে প্রায়শই "সম্পূর্ণ ঔপনিবেশিক বসতি" হিসাবে চিহ্নিত করা হয়।প্রাথমিক বসতি স্থাপনকালে কেইম্যান সমাজ ছিল আইন-কানুন বিহীন৷বিংশ শতাব্দী অবধি কেইম্যান দ্বীপপুঞ্জ ও তার অধিবাসীরা এক প্রান্তিক সমাজ হিসাবে পরিচিত ছিল[৫]।মোটামুটি ১৭৩৪ সালে গ্র্যান্ড কেম্যানে স্থায়ী বন্দোবস্তের শুরু হয়। কেম্যান ব্র্যাক এবং লিটল কেম্যান -এ ১৮৩৩ সাল পর্যন্ত কোনো স্থায়ী বসতি গড়ে ওঠেনি[৬]।এই দ্বীপে জলদস্যু, স্প্যানিশ অনুসন্ধানের শরণার্থী, জাহাজডুবি থেকে উদ্ধারপ্রাপ্ত নাবিক এবং ক্রীতদাস সহ সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ বস্বতী স্থাপন করেছিল। বেশিরভাগ কেম্যানিয়ান ভিন্ন ভিন্ন মিশ্র জাতির, যেমন, আফ্রিকান, ওয়েলশ, স্কটিশ বা ইংরেজ বংশোদ্ভূত[৭]

প্রাথমিক বছরগুলিতে, গ্র্যান্ড কেইম্যানের উত্তর এবং পশ্চিম দিকের বসতিগুলি প্রায়শই কিউবা থেকে আগত স্পেনীয় বাহিনীর অভিযানের শিকার হত[৮]।১৬ এপ্রিল ১৬৬৯-এ স্প্যানিশ প্রিভেটিয়ার(শত্রু-জাহাজ আক্রমণ ও লুণ্ঠনের অধিকারপ্রাপ্ত বেসরকারী জাহাজ) "রিভারো পারদল" লিটল কেইম্যান গ্রামে আক্রমণ করে। অভিযানের প্রক্রিয়া চলাকালীন আক্রমণকারীরা প্রায় কুড়িটি বাসস্থান পুড়িয়ে দেয়[৬]

কেইম্যান দ্বীপের অধিবাসীরা প্রায়শই জাহাজ লুটপাটে অংশ নিত।এই অঞ্চলের আশপাশ দিয়ে সমুদ্রগামী জাহাজের পথে বাধা সৃষ্টি করতে বা তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে তারা বিভিন্ন কৌশলের আশ্রয় নিত।কেইম্যানরা খচর বা গাধার পিঠে জ্বলন্ত হারিকেন বেঁধে তাদের সমুদ্রের তীর বরাবর হাঁটার জন্য ছেড়ে দিত অথবা সমুদ্রের তীরে আগুন জ্বালিয়ে রেখে দিত।দূরগামী জাহাজের অনভিজ্ঞ নাবিকরা প্রায়শই সেই ফাঁদে পা দিয়ে দ্বীপবাসীদের সঙ্গে যোগাযোগ করার আশায় জাহাজ নিয়ে আগুনের নিশানা লক্ষ্য করে ভূখণ্ডের দিকে এগিয়ে আসত এবং এর ফলে তাদের জাহাজ জলের তলায় লুক্কায়িত প্রবাল প্রাচীরে আটকা পরত।তখন দ্বীপের অধিবাসীরা জাহাজের যাত্রীদের সাহায্য করার অছিলায় ছোট ডিঙি নৌকা নিয়ে জাহাজে এসে উঠত এবং লুঠপাট চালাত[৯]

ব্রিটিশ আধিপত্য সম্পাদনা

 
গ্রান্ড কেইম্যান দ্বীপে পেদ্রো সেন্ট জেমসের প্রাসাদ (পুনঃনির্মিত)

১৬৬১-১৬৭১ সালের মধ্যে জ্যামাইকা থেকে লিটল কেইম্যান এবং কেইম্যান ব্র্যাক-এ বসতি স্থাপন করার পর ইংরেজরা ১৬৭০ সালে "মাদ্রিদ চুক্তি"-র অধীনে, আনুষ্ঠানিকভাবে জ্যামাইকা সহ কেইম্যান দ্বীপপুঞ্জের দখল নেয়[১০]৷জানা যায় যে স্প্যানিশ প্রিভেটিয়াররা বারবার আক্রমণ করার ফলে এই প্রথম দিকের বসতিগুলি পরিত্যক্ত হয়ে পরে৷তবে শুধু স্প্যানিশ নয়,ইংরেজ প্রিভেটিয়াররাও প্রায়শই কেইম্যান দ্বীপপুঞ্জকে ঘাঁটি হিসাবে ব্যবহার করত এবং ১৭১৩ সালে প্রিভেটিরিং-এর বৈধ সমাপ্তির পরেও ১৮ শতকে এই ভূখণ্ড জলদস্যুদের একটি ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয় আস্তানায় পরিণত হয়েছিল।বেশ কয়েকবার ব্যর্থ প্রচেষ্টার পরে অবশেষে ১৭৩০ এর দশকে এই দ্বীপগুলিতে ধীরে ধীরে স্থায়ী বসতি গড়ে ওঠে৷

কেইম্যান দ্বীপপুঞ্জ ঐতিহাসিক "শুল্কবিহীন স্বর্গ" নামেও বিখ্যাত৷কথিত আছে যে,ফেব্রুয়ারি ৮, ১৭৯৪ সালের ভোরবেলায় এইচ.এম. এস কনভার্ট দ্বারা রক্ষিত এক নৌবহরের ১০ টি ছোট জাহাজ গ্র্যান্ড কেইম্যানর পুর্বপ্রান্তরে, 'গান' উপকূলের কাছে সমুদ্রের তলদেশ স্থিত প্রবাল প্রাচীরে বিধস্ত হয়৷সমুদ্রের জলে তখনও অন্ধকার ঘন এবং প্রাচীরের কাছে প্রবল জলোচ্ছাস বর্তমান৷কিন্তু এসব প্রতিকূলতা সত্ত্বেও দ্বীপের স্থানীয় অধিবাসীরা জাহাজের খালাসি এবং যাত্রীদের উদ্ধার করতে উদ্যোগী হন৷তৎকালীন পরস্পরবিরোধী প্রতিবেদন থেকে যেটুকু জানা যায় তা অনুযায়ী সেই রাত্রে ছয় থেকে আটজনের প্রাণহানি হয় যার মধ্যে "ব্রিটানিয়া" নামক জাহাজের ক্যাপ্টেনও ছিলেন৷তবে দ্বীপবাসীদের সাহসিক প্রচেষ্টা ও উদ্যোগের ফলে ৪৫০ জনেরও বেশি লোককে উদ্ধার করা সম্ভব হয়৷ঘটনাটি এখন "রেক অব দ্য টেন সেল"(১০ জাহাজ ধ্বংসের কাহিনী) হিসাবে স্মরণ করা হয়।জনশ্রুতি আছে যে দুর্ঘটনাপ্রাপ্ত নৌবহরটির মধ্যে ব্রিটিশ রাজপরিবারের এক সদস্য ছিলেন।জনশ্রুতি আছে যে দুর্ঘটনাপ্রাপ্ত নৌবহরটির মধ্যে ব্রিটিশ রাজপরিবারের এক সদস্য(প্রচলিত মত অনুযায়ী,রাজা তৃতীয় জর্জের ভাগ্নে)ছিলেন।দ্বীপের স্থানীয় বাসিন্দাদের সাহসিকতার প্রতিদান হিসাবে, রাজা তৃতীয় জর্জ তৎকালীন একটি আদেশ জারি করেছিলেন যে কেমানিয়ানদের কখনই যুদ্ধের কাজে নিযুক্ত করা যাবেনা এবং কখনই তাদের কোনোপ্রকার শুল্কের আওতায় পড়তে হবে না।তবে এই আদেশপত্র সম্পর্কিত কোনও সরকারি দলিল পাওয়া যায়নি।দ্বীপবাসীদের "করমুক্ত" মর্যাদা প্রাপ্তির পিছনে যত কাহিনী আছে সমস্তই বেশ কৌতুকপূর্ণ এবং তার কোনোটিই যুক্তিসম্মত নয়৷তা সত্ত্বেও কেইম্যান দ্বীপপুঞ্জ এবং তার অধিবাসীদের আজও "শুল্কবিহীন" মর্যাদা দেওয়া হয়৷

১৬৭০ সাল থেকে কেইম্যান দ্বীপপুঞ্জ সরকারি এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে জামাইকার কার্যকর নির্ভরশীলতা ছিল যদিও কিছু ক্ষেত্রে স্বায়ত্তশাসন কায়েম ছিল।১৮৩১ সালের ৫ ডিসেম্বর পেদ্রো সেন্ট জেমস প্রাসাদে একটি সভা আয়োজন করা হয় এবং সেখানে সর্বসম্মতভাবে, আইনসভা প্রতিষ্ঠা করার উদ্যোগ হয়৷১০ ডিসেম্বর প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং নবনির্বাচিত আইনসভা তার প্রথম বিশেষ স্থানীয় আইন পাস করে ৩১ ডিসেম্বর ১৮৩১ সালে।এরপর জামাইকার গভর্নর তাদের কর্তৃক নিযুক্ত আট ম্যাজিস্ট্রেট এবং ১০ জন (পরবর্তীকালে ২ জন) নির্বাচিত প্রতিনিধির সমন্বয়ে গঠিত একটি আইনসভা অনুমোদন করেছিলেন।ফেডারেশন অফ ওয়েস্ট ইন্ডিজের পতন ইঙ্গভাষী ক্যারিবিয়ানে উপনিবেশ উৎখাতের সূচনা করে[১১]।নির্ভরশীল ছটি অঞ্চলের মধ্যে কেইম্যান দ্বীপপুঞ্জের অধিবাসীরা স্বায়ত্তশাসনের সর্বাধিক বিরোধী ছিল কারণ তাদের প্রাকৃতিক সম্পদের অভাব ছিল৷কেইম্যান অধিবাসীদের অনেকেই আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে কাজের সন্ধানে পরিভ্রমণ করতেন এবং জাহাজে ও অন্যান্য কর্মক্ষেত্রে জীবিকা অর্জন করে জীবনধারণ করতেন৷তাই তাদের আশঙ্কা ছিল যে স্বাধীনতা লাভ তাদের আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার 'ভিসা' বা ছাড়পত্র পেতে বাঁধার সৃষ্টি করবে৷[১২] দেশের স্বাধীনতা জনগণকে তাদের ভবিষ্যৎ অর্থনীতি নিয়ে উদ্বিগ্ন করে তুলেছিল৷কেইম্যান দ্বীপপুঞ্জের মতো এরকম বহু ব্রিটিশ শাসিত ক্ষুদ্র অঞ্চল স্বাধীনতা অর্জনে অনীহা প্রকাশ করে।তখন যুক্তরাজ্য কর্তৃপক্ষ স্বাধীনতা লাভে অনিচ্ছুক অঞ্চলগুলির জন্য একটি নতুন শাসক গঠনতন্ত্র কাঠামো স্থাপন করে।ফেডারেশন অফ ওয়েস্ট ইন্ডিজের জায়গায়, একটি সংবিধান তৈরি করা হয় যা লন্ডনের সাথে তাদের প্রথাগত সম্পর্ক চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেয়।ফেডারেশন অফ ওয়েস্ট ইন্ডিজের জায়গায়, একটি সংবিধান তৈরি করা হয় যা লন্ডনের সাথে তাদের আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেয় এবং সেই অনুযায়ী কেইম্যান দ্বীপপুঞ্জে ব্রিটিশ আধিপত্য বজায় থাকে শুধুমাত্র এই শর্তে যে নিযুক্ত গভর্নর দ্বীপপুঞ্জের সমস্ত প্রশাসনিক কার্যকলাপ সম্পর্কে ব্রিটিশ প্রশাসনকে অবহিত রাখবে৷[১৩]

দাসত্ব সম্পাদনা

গ্র্যান্ড কেইম্যান ছিল কেইম্যান দ্বীপপুঞ্জের প্রধান দ্বীপ যাতে দাসত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়।দাসত্ব প্রতিষ্ঠা করা হলেও গ্র্যান্ড কেইম্যান কখনো সহিংস দাস বিদ্রোহের সাক্ষী হয়নি।যদিও বিদ্বানরা এই ব্যাপারে একমত যে একটি দাস সমাজ গ্র্যান্ড কেম্যানে বিদ্যমান ছিল, তবুও তাদের মধ্যে বিতর্ক রয়েছে যে সামগ্রিকভাবে সমাজের জন্য দাসত্ব কতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল।[১৪] ১৭৩৪ থেকে ১৮৩৪ সালের মধ্যে কেইম্যান দ্বীপপুঞ্জে দাসত্বপ্রথা চালু ছিল।১৭৭৪ সালে, জর্জ গল্ড অনুমান করেছিলেন যে গ্র্যান্ড কেম্যানে প্রায় চার শতাধিক লোক বাস করেন যার অর্ধেক বাসিন্দা স্বনির্ভর ও স্বাধীন এবং জনসংখ্যার বাকি অর্ধেক ক্রীতদাস।১৮০২ সালে এই পরিসংখ্যান গিয়ে দাঁড়ায় ৯৩৩ জন বসবাসকারীতে যার মধ্যে ৫৪৫ জনই দাস৷১৮৩৪ সালের এপ্রিলের আদমশুমারি অনুসারে দ্বীপের ১,৮০০ জনসংখ্যার মধ্যে শুধুমাত্র ৪৬ শতাংশ স্বাধীন কেম্যানিয়ান অধিবাসী বর্তমান ছিল।স্বাধীনতাপ্রাপ্তির সময় আসার পূর্বেই গ্রান্ড কেইম্যান এ দাসদের সংখ্যা মুক্ত কেইম্যান অধিবাসীদের সংখ্যাকে ছাড়িয়ে যায়৷[১৫] ১৮৩৫ সালে, গভর্নর স্লিগো জামাইকা থেকে কেইম্যানে আসেন এবং ১৮৩৩ এর "মুক্তি আইন" অনুসারে সমস্ত দাসকে মুক্ত ঘোষণা করেন।কেইম্যানিয়ান বসবাসকারীরা জ্যামাইকার সাথে তাদের প্রশাসনিক যোগাযোগে অসন্তোষ প্রকাশ করে এবং তাদের কর্তৃপক্ষকে হতাশ করে৷স্বাধীনতা প্রাপ্তির সময়কালে এই সমস্যা শীর্ষে পৌঁছায়৷কেমনিয়ান দাসমালিকরা ১৮১৭-এর "দাস নথিভুক্তকরন আইন"-কে অমান্য করে তাদের দাসদের মুক্তি দিতে অস্বীকার করে।১৮০৩ সালের 'অবলোপকরণ' আইন, ১৮১৭ সালের 'দাস নথিভুক্তকরন' এবং ১৮৩৪ সালের মুক্তি আইনের প্রতিক্রিয়া হিসাবে দাস মালিকদের সংগঠন জ্যামাইকার কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করেছিল।[১৬] কেইম্যান দ্বীপপুঞ্জের স্থানীয় বাসিন্দারা ওয়েস্ট ইন্ডিয়া সেনাদলের সৈন্য স্থাপনে প্রতিরোধ করেছিলেন।শত্রুতা চরমে পৌঁছায় যখন এই কথা প্রচার হয় যে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সেনাদল শুধুমাত্র কৃষ্ণাঙ্গ লোকদের তাদের দলে ভর্তির জন্য তালিকাভুক্ত করেছে৷শ্বেতাঙ্গরা এতে বিরক্তি প্রকাশ করেছিল।কৃষ্ণাঙ্গ সৈন্যরা তাদের বসতি রক্ষা করবে-এতে তারা অপমানিত বোধ করেছিল৷[১৭]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Roger C. Smith, The maritime heritage of the Cayman Islands, 2000 p.26
  2. Stokes, Anne V.; Keegan, William F. (এপ্রিল ১৯৯৩)। "A SETTLEMENT SURVEY FOR PREHISTORIC ARCHAEOLOGICAL SITES ON GRAND CAYMAN"। Florida Museum of Natural History, Gainesville। সংগ্রহের তারিখ ৫ জানুয়ারি ২০১৩ 
  3. Williams, Christopher (২০১১)। "Did Slavery Really Matter in the Cayman Islands?"। The Journal of Caribbean History45: 165। 
  4. National Trust for the Cayman Islands (২৯ নভে ২০১১)। "Watler Cemetery"National Trust for the Cayman Islands। ২৮ আগস্ট ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ মে ২০১২ 
  5. Bodden, J. A. Roy (২০০৭)। The Cayman Islands in Transition: The Politics, History, and Sociology of a Changing Society। Kingston: Ian Randle Publishers। পৃষ্ঠা 3, 7, 6। 
  6. Williams, Christopher (২০১১)। "Did Slavery Really Matter in the Cayman Islands?"। The Journal of Caribbean History45: 160। 
  7. "Cayman History | Grand Cayman, Cayman Brac, Little Cayman | Cayman Islands"Caymanislands.ky। ২০১৬-১২-০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০১-২১ 
  8. Bodden, J. A. Roy (২০০৭)। The Cayman Islands in Transition: The Politics, History, and Sociology of a Changing Society। Kingston: Ian Randle Publishers। পৃষ্ঠা 3। 
  9. Bodden, J. A. Roy (২০০৭)। The Cayman Islands in Transition: The Politics, History, and Sociology of a Changing Society। Kingston: Ian Randle Publishers। পৃষ্ঠা 5। 
  10. Neville Williams (১৯৭০)। A history of the Cayman Islands। Government of the Cayman Islands। পৃষ্ঠা 10। আইএসবিএন 978-976-8104-13-7 
  11. Foote, Nicola (২০১৩)। The Caribbean History Reader। New York: Routledge। পৃষ্ঠা 313। 
  12. Ramos Aaron Gamaliel, Rivera Angel Israel (২০০১)। Islands at the Crossroads: Politics in the Non-Independent Caribbean। Kingston: Ian Randle Publishers। পৃষ্ঠা 120। 
  13. Foote, Nicola (২০১৩)। The Caribbean History Reader। New York: Routledge। পৃষ্ঠা 309, 313, 314। 
  14. Williams, Christopher A. (Winter ২০১৩)। "Premature Abolition, Ethnocentrism, and Bold Blackness: Race Relations in the Cayman Islands"। The Historian75: 785, 786। 
  15. Williams, Christopher (২০১১)। "Did Slavery Really Matter in the Cayman Islands?"। The Journal of Caribbean History45: 160–162। 
  16. Bodden, J. A. Roy (২০০৭)। The Cayman Islands in Transition: The Politics, History, and Sociology of a Changing Society। Kingston: Ian Randle Publishers। পৃষ্ঠা 8। 
  17. Bodden, J. A. Roy (২০০৭)। The Cayman Islands in Transition: The Politics, History, and Sociology of a Changing Society। Kingston: Ian Randle Publishers। পৃষ্ঠা 12।