কৃষি প্রকৌশল
কৃষি প্রকৌশল হচ্ছে কৃষি পণ্য উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরনের প্রকৌশল। কৃষি প্রকৌশল পুরকৌশল, যন্ত্রকৌশল, রাসায়নিক কৌশল, তড়িৎ কৌশল ও খাদ্যবিজ্ঞান ও কৃষি বিজ্ঞান এর মধ্যে সমন্বয় ঘটায়। কৃষি উৎপাদনে স্থায়িত্ব ও উপযুক্ত কার্য ক্ষমতা প্রদর্শন হচ্ছে এই বিষয়ের মূল লক্ষ্য।[১]
ইতিহাস
সম্পাদনাকৃষি প্রকৌশলের সূচনা হয় যখন থেকে কৃষিতে সেচ ব্যবস্থার ব্যবহারের শুরু হয়। সেচ ব্যবস্থা শিল্প বিপ্লবের আগ পর্যন্ত সম্প্রসারিত হয় নি।
ট্রাক্টর এবং অন্যান্য কৃষি যন্ত্রপাতির আবিষ্কার কৃষিতে নতুন বিপ্লবের সূচনা করে। পরে যান্ত্রিক কর্তনযন্ত্র ও বুননযন্ত্র ২০ শতকে হাতে কৃষিকাজের পরিমাণ বলতে গেলে কমিয়ে দেয়। পরে ২০ শতকে ক্রপডাস্টারের আবির্ভাবে ফসলে কীটনাশক ছিটানো সহজ হয়ে যায়। কৃষিক্ষেত্রে এই সব প্রকৌশল শাস্ত্রীয় কনসেপ্ট প্রয়োগের ফলে কৃষিক্ষেত্রে এক ধরনের বিপ্লব ঘটে যাকে ২য় কৃষি বিপ্লব বলে।
২০ শতকের শেষে Genetically Modified Foods (GMOs) তৈরি করা হয় যাতে করে ফসলের মোট উতপাদন বাড়ে ও কীটপতঙ্গ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।[২]
বিশেষায়ন
সম্পাদনাকৃষি প্রকৌশলীগণ নিম্নলিখিত বিভাগ গুলোতে বিশেষজ্ঞ হতে পারেনঃ-
- কৃষি যন্ত্রপাতি, কৃষি অবকাঠামো ও কৃষি উপকরন তৈরি ও নকশা করতে পারেন
- অন্তঃ তাপীয় ইণ্জিনকে কৃষি ক্ষেত্রে যন্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন।
- কৃষি সম্পদ ব্যবস্থাপনা ( ভূমি ব্যবহার ও পানি ব্যবহার সহ।)
- পানি সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা
- ভূমি জরিপ
- মাটি ব্যবস্থাপনা ও সংরক্ষণ
- বর্জ্য ব্যবস্থাপনা।
- জৈবসম্পদ প্রকৌশল
- শস্য ব্যবস্থাপনা ও গুদামজাতকরন
- শস্য ও প্রাণী উতপাদন এর সাথে সম্পর্কিত এক্সপেরিমেন্ট ডিজাইন
- খাদ্য প্রকৌশল ও কৃষি পন্য প্রক্রিয়াজাতকরন।
- সার্কিট বিশ্লেষণের মূল নীতি।
- কৃষি উতপাদনেে ব্যবহৃত বস্তু সমূহের ভৌতিক ও রাসায়নিক বৈশিস্ট্য।
কৃষি প্রকৌশলী
সম্পাদনাকৃষি প্রকৌশলীগণ হচ্ছেন সেই বিশেষজ্ঞ যারা কৃষি উপকারণ, কৃষি খামার কৃষি যন্ত্রপাতি নকশা, পরিকল্পনা সেচ ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ, দুগ্ধখামার নিয়ন্ত্রণ, পানি নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ইত্যাদি সহ পরিবেশগত প্রভাব বিবেচনার কাজ করেন। অনেক কৃষি প্রকৌশলী শিক্ষাজগতে কিংবা সরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। অনেক কৃষি প্রকৌশলী বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এ কাজ করেন। কেউ কেউ কনসালটেন্সি করে থাকেন। অনেকে উতপাদন, বিক্রয়, ব্যবস্থাপনা, গবেষণা ও উন্নয়ন বিষয়েেে ও কাজ করে থাকেন। যুক্তরাজ্যে যারা কৃষি যন্ত্রপাতি মেরামত করেন তাদেরকেও কৃষি প্রকৌশলী বলা হয়।
কর্মক্ষেত্রঃ
কৃষির অভাবনীয় উন্নয়নে কৃষি প্রকৌশলীদের ভূমিকা অনেক। দিন দিন কৃষি প্রকৌশলীদের চাকরির ক্ষেত্র বাড়ছে। কৃষি প্রযুক্তিকরণের লক্ষ্যে কৃষি প্রকৌশলীগণ বিভিন্ন সেক্টরে দক্ষতার পরিচয় দিয়ে আসছেন। বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিরি), বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি), বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমি, ডিপার্টমেন্ট অব এগ্রিকালচার এক্সটেনশন (ডিএই), বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি ও পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (আরডিএ) ছাড়াও জনতা ইঞ্জিনিয়ারিং, মাহবুব ইঞ্জিনিয়ারিং, এসিআই, সিনজেনটা, কাজী ফার্মসসহ সব কৃষি যন্ত্রপাতি উৎপাদক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরির সুযোগ থাকছে। অন্যদিকে সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকে চাকরি এবং ভালো রেজাল্টধারী শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার সুযোগ থাকছে। একটু ভালো সিজিপিএ থাকলে খুব সহজেই ইউরোপ, আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে স্কলারশিপসহ পড়াশোনা ও স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগও থাকছে।
আয়-রোজগার : বাংলাদেশে সাধারণত কৃষি সম্পর্কিত যে কোনো প্রতিষ্ঠানে একজন কৃষি প্রকৌশলীর বেতন সরকারি স্কেলেই ধার্য করা হবে। তা ছাড়া বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে প্রথম অবস্থায় উচ্চবেতন দিয়ে চাকরি শুরু হয়। দিন যত গড়াবে, বেতন তত বাড়তে থাকবে। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো অনেক উচ্চমানের বেতন
দিয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে শুরুতেই লাখ টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে।
শিক্ষা
সম্পাদনাবিশ্বের অনেক দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃষি প্রকৌশল বিষয়ক কোর্স চালু আছে। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর পড়ানো হয় যা ক্যারিয়ার এ এগিয়ে যেতে সাহায্য করে।
১৯০৫ কৃষি প্রকৌশলের প্রথম কারিকুলাম তৈরি করেন আইওয়া অঙ্গরাজ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের জে.বি ডেভিডসন।
অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক পর্যায়ে কৃষি প্রকৌশল এবং জৈব প্রকৌশলের উপর বিভিন্ন প্রোগ্রাম আছে। এসব প্রোগ্রাম এই ক্ষেত্রের উপর পড়াশোনার জন্যে জরুরী।[৩]
বাংলাদেশে চারটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় কৃষি প্রকৌশলে স্নাতক ডিগ্রি দিয়ে থাকে।
১.বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়,ময়মনসিংহ
২. হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ,দিনাজপুর
৩.সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়,সিলেট
৪.খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়,খুলনা
এ ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে উচ্চতর ডিগ্রি নেয়ার সুযোগ রয়েছে।
আরো পড়ুন
সম্পাদনা- Brown R,H (1988): CRC Handbook of Engineering in Agriculture. Boca Ration, FL. ISBN 0-8493-3860-3
- DeForest S,S, 2007): The vision that cut drugery from the farming forever. St Joseph, Mich.: ASAE.ISBN 1-892769-61-1
- Stewert, Robert E ( 1979). Seven decades that changed America: a history of the American Society of
Agricultural Engineers, 1907-1977. St. Joseph, Mich.: ASAE. OCLC 5947727
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "ASABE"। www.asabe.org (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৪-১৩।
- ↑ "ASABE 100 years of innovation" (পিডিএফ)। ASABE।
- ↑ Peterson's (২০১১-০৫-০১)। Graduate Programs in Engineering & Applied Sciences 2011 (Grad 5) (ইংরেজি ভাষায়)। Peterson's। আইএসবিএন 978-0-7689-3091-7।
- www.asabe.org : ASABE 100 years of innovation (PDF).
- ASABE website.
- Peterson's ISBN 978-0-7689-3091-7