কুষ্মাণ্ডা

হিন্দু দেবী পাবর্তীর অবতার

নবদুর্গার চতুর্থ রূপ কুষ্মাণ্ডা। নবরাত্রি উৎসবের চতুর্থ দিনে তার পূজা করা হয়। দেবীর এইরকম অদ্ভুত নাম কেন? ‘কু’ শব্দের অর্থ কুৎসিত এবং ‘উষ্মা’ শব্দের অর্থ ‘তাপ’; ‘কুষ্মা’ শব্দের অর্থ তাই ত্রিতাপ বা দুঃখ–দেবী জগতের দুঃখ গ্রাস করে নিজের উদরে ধারণ করেন, তাই তার নাম ‘কুষ্মাণ্ডা’।[১] স্বামী অচ্যুতানন্দের ভাষায়, “যেমন মহাদেব সমুদ্রমন্থনের সময় সমস্ত হলাহল পান করে নীলকণ্ঠ হয়েছেন, তেমনি জগজ্জননী দুর্গা আদ্যাশক্তি জগতের সর্বপ্রকার জ্বালা-যন্ত্রণার হাত থেকে সন্তানদের সর্বদা রক্ষা করতে করুণায় দ্রবীভূত হয়ে স্বেচ্ছায় সব তাপ নিজের শরীরে গ্রহণ করেন। দূরিতবারিণী–‘ত্রিতাপহারিণী’ মায়ের নাম তাই কুষ্মাণ্ডা।” দেবী কুষ্মাণ্ডা ত্রিনেত্রা অষ্টভুজা –তাঁর ডান দিকের চার হাতে থাকে যথাক্রমে পদ্ম, বাণ, ধনুক ও কমণ্ডলু; এবং বাঁদিকের চার হাতে থাকে যথাক্রমে চক্র, গদা, অমৃতপূর্ণ রুধিরাপ্লুত ঘট ও জপমালা। তাঁর বাহন সিংহ (কাশীতে বাঘ)। দেবীর বিস্তৃত ধ্যানমন্ত্র-

বন্দে বাঞ্ছিতকামার্থাং চন্দ্রার্ধকৃতশেখরাম্।
সিংহস্থাং অষ্টভুজাঞ্চ কুষ্মাণ্ডাং যশস্বিনীম্।।
ভাস্বৎভানুনিভাং অনাহতস্থাং ত্রিনেত্রাম্।
চতুর্থদুর্গাং কমণ্ডলুচাপবাণং তথাপরম্।।
পদ্মং সুধাঘটচক্রগদাং জপবটীধরাম্।
পট্টাম্বরপরিধানাং কমনীয়াং সুমন্দস্মিতাম্।।হারমঞ্জীরকেয়ূরকিঙ্কিণীরত্নকুণ্ডলমণ্ডিতাম্।
প্রফুল্লবদনাং চারুচিবুকাং কান্তকপোলাং তুঙ্গকুচাম্।।
কোমলাঙ্গীং শ্রীকন্ঠীং নিম্ননাভিং নিতম্বিনীম্।।

কুষ্মাণ্ডা
কুৎসিত সন্তাপত্রয়ের ভক্ষয়িত্রী
চতুর্থ দুর্গা দেবী কুষ্মাণ্ডা
অন্তর্ভুক্তিপার্বতীর অবতার
আবাসঅনাহত চক্র
গ্রহসূর্য
মন্ত্রসুরাসম্পূর্ণকলসং রুধিরাপ্লুতমেব চ। দধানা করপদ্মাভ্যাং কুষ্মাণ্ডা শুভদাস্তু মে॥
অস্ত্রপদ্ম, চক্র, কমণ্ডলু, তীর, ধনুক, গদা, অক্ষমালা, সুধা ও রুধিরপূর্ণ ঘট
বাহনসিংহ
সঙ্গীশিব

নবরাত্রির চতুর্থ দিনে সাধক তাঁর মনকে অনাহত চক্রে রেখে দেবী কুষ্মাণ্ডার পূজা করেন। দেবীর পূজায় রোগশোক দূরীভূত হয়; ভক্ত আয়ু, যশ, বল ও আরোগ্য লাভ করেন। মনে করা হয়, দেবী কুষ্মাণ্ডা অল্প পূজাতেই সন্তুষ্ট হন। তাঁর পূজায় কুষ্মাণ্ড (কুমড়ো) বলি দেওয়ার রীতি আছে। কাশীতে দেবী কুষ্মাণ্ডার মন্দির বিখ্যাত। কাশীতে তিনি দুর্গা নামেই সমধিক পরিচিতা। তিনি কাশীর দক্ষিণ দিকের রক্ষয়িত্রী। কাশীখণ্ড-এ রয়েছে, অসি নদীর সঙ্গমস্থলে কুষ্মাণ্ডার অধিষ্ঠান। দেবীর মন্দিরটি বেশ বড়ো ও বহুচূড়াবিশিষ্ট। লাল পাথরের তৈরি সুদৃশ্য এই মন্দিরের কাছেই কাশীর বিখ্যাত তীর্থ দুর্গাকুণ্ড। এই মন্দিরে হিন্দুধর্মে অবিশ্বাসীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ। মূল মন্দিরের গর্ভগৃহে দেবী কুষ্মাণ্ডার পশ্চিমমুখী দুই হাত উঁচু বিগ্রহটি অবস্থিত। কাশীতে একমাত্র এই মন্দিরেই নিয়মিত বলিদান হয় (এছাড়া কালরাত্রি মন্দিরে বছরে একবার বলি হয়)। শারদীয়া ও বাসন্তী নবরাত্রির চতুর্থীর দিন এই মন্দিরে প্রচুর ভক্তসমাগম হয়।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Worship Maa Kushmanda on the fourth day of Navaratri"www.ganeshaspeaks.com। ২০১৫-১২-২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-১০-০৬