কিভু হ্রদ (ইংরাজী: Lake Kivu) আফ্রিকার অন্যতম বৃহৎ হ্রদ।[২] হ্রদটি কঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র এবং রুয়ান্ডা-র সীমান্তে অবস্থিত। এটি পূর্ব আফ্রিকান রিফ্ট-এর পশ্চিম শাখায় আলবার্টিন রিফ্ট অংশে অবস্থান করছে। হ্রদটি দক্ষিণে টাঙ্গানিকা হ্রদ-এ প্রবাহিত হয়ে পরে রুজিজি নদীতে গিয়ে মিশেছে। [৩]

কিভু হ্রদ
কিভু হ্রদের উপগ্রহ চিত্র। (নাসার সৌজন্যে)
স্থানাঙ্ক২°০′ দক্ষিণ ২৯°০′ পূর্ব / ২.০০০° দক্ষিণ ২৯.০০০° পূর্ব / -2.000; 29.000
ধরনচ্যুতি উপত্যকা হ্রদ, মেরোমিকটিক, সীমিতভাবে সক্রিয় হ্রদ
প্রাথমিক বহিঃপ্রবাহরুজিজি নদী
অববাহিকা২,৭০০ কিমি (১,০০০ মা)
অববাহিকার দেশসমূহরুয়ান্ডা, কঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র
সর্বাধিক দৈর্ঘ্য৮৯ কিমি (৫৫ মা)[১]
সর্বাধিক প্রস্থ৪৮ কিমি (৩০ মা)[১]
পৃষ্ঠতল অঞ্চল২,৭০০ কিমি (১,০৪০ মা)[১]
গড় গভীরতা২৪০ মি (৭৮৭ ফু)
সর্বাধিক গভীরতা৪৮০ মি (১,৫৭৫ ফু)
পানির আয়তন৫০০ কিমি (১২০ মা)
পৃষ্ঠতলীয় উচ্চতা১,৪৬০ মি (৪,৭৯০ ফু)
দ্বীপপুঞ্জইদজয়ি
জনবসতিগোমা, কঙ্গো
বুকাভু, কঙ্গো
কিবুয়ে রুয়ান্ডা
সাইয়ানগুগু, রুয়ান্ডা
কঙ্গোর পটভূমিতে গোমা সহ কিভু হ্রদ
কিভু হ্রদের তীরে গিসেনি, রুয়ান্ডা।

ভূগোল সম্পাদনা

কিভু হ্রদটি প্রায় ৯০ কিমি (৫৬ মা) দীর্ঘ এবং ৫০ কিমি (৩১ মা) প্রশস্থ। [২] অনিয়মিত আকৃতির জন্য এর সুনির্দিষ্ট ক্ষেত্রফল পরিমাপ করা কঠিন। আনুমানিক আয়তন প্রায় ২,৭০০ কিমি (১,০৪০ মা) এবং এটি আফ্রিকার অষ্টম বৃহত্তম হ্রদ। [৩] হ্রদটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১,৪৬০ মিটার (৪,৭৯০ ফু) উপরে অবস্থিত। হ্রদটিতে প্রতি ১০০০ বছরে একটি লিমনিক উদ্গিরণ-এর সম্ভাবনা দেখা যায়। [২] হ্রদের সর্ব্বোচ্চ গভীরতা ৪৭৫ মি (১,৫৫৮ ফু) এবং গড় গভীরতা ২২০ মি (৭২২ ফু)। এই কারণে এই হ্রদটি বিশ্বে গভীরতম হ্রদের তালিকায় অষ্টাদশতম এবং গড় গভীরতায় নবম স্থান অধিকার করেছে।[২]

প্রায় ১,৩৭০ কিমি বা লেকের জলের ৫৮ শতাংশ ডিআরসি সীমান্তে অবস্থিত।[৩]

হ্রদের তল দেশটি একটি চ্যুতি উপত্যকার উপরে বসানো। এই অঞ্চলে আগ্নেয়গিরির ক্রিয়াকলাপ-এর পেছনে এই চ্যুতি উপত্যকার ধীরে ধীরে টানের কারণটির উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে।

বিরুঙ্গা জাতীয় উদ্যান-এর সীমানায় কিভু হ্রদে রয়েছে ইদজয়ি নামের বিশ্বের দশম বৃহত্তম হ্রদের দ্বীপটি। হ্রদের তীরে জনবসতি রয়েছে কঙ্গোর বুকাভু, কাবারে, কালেহে, সেকেগোমা এবং রোয়ান্ডার জিসেনি, কিবুয়, এবং সাইয়ানগুগু-তে।

রসায়ন সম্পাদনা

কিভু হ্রদ একটি মিষ্টি জল-এর হ্রদ। এর সঙ্গে ক্যামেরোনিয়ান নাইয়োস হ্রদ এবং মনউন হ্রদ দুটি মিলে মোট তিনটি হ্রদ লিমনিক উদ্গিরণ-এর জন্য পরিচিত। হ্রদের চারপাশে ভূতাত্ত্বিকগণ[৪] প্রায় প্রতি হাজার বছরে স্থানীয়ভাবে বিলুপ্তির প্রমাণ পেয়েছেন এবং সে সব সম্ভবতঃ আউটগ্যাসিংয়ের (গ্যাস নির্গমন) কারণে ঘটেছিল ব'লে অনুমান করা হয়। কিভুর ক্ষেত্রে হ্রদ উল্টে যাওয়ার কারণটি অবশ্য অজানা। তবে এ ক্ষেত্রে আগ্নেয়গিরির কার্যকলাপকে সন্দেহ করা হচ্ছে। উদ্গীর্ণ হ্রদের গ্যাসীয় রাসায়নিক সংমিশ্রণ প্রতিটি হ্রদে স্বতন্ত্র হয়। কিভুর ক্ষেত্রে আগ্নেয়গিরির সাথে জলের মিথস্ক্রিয়ার কারণে জলে মিথেন এবং কার্বন ডাই অক্সাইডের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

হ্রদে মিথেনের পরিমাণ অনুমান করা হচ্ছে ৬৫ ঘন কিলোমিটার। যদি এক বছরেরও বেশি সময় ধরে পোড়ানো হয় তবে এর থেকে পুরো সময়ের জন্য গড়ে প্রায় ১০০ গিগাওয়াট শক্তি পাওয়া যাবে। আনুমানিক ২৫৬ ঘন কিলোমিটার কার্বন ডাই অক্সাইডও রয়েছে। জলের তাপমাত্রা ২৪ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড এবং পিএইচ স্তর প্রায় ৮.৬।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] আগ্নেয় CO2 থেকে আনুবীক্ষণিক জীব মিথেন উৎপাদন করে বলে জানা গেছে। [৫] কিভু হ্রদের গভীর জলাশয় থেকে ভবিষ্যতে নির্গত গ্যাস মুক্তির ফলে বিপর্যয় দেখা দিতে পারে ব'লে সন্দেহ করা হয়। হ্রদ অববাহিকায় বসবাসকারী প্রায় দুই লক্ষ মানুষের জীবনে সেটা হবে এক গভীর সংকটের কারণ।

হ্রদের বুকাভু উপকূল অঞ্চলে দেখা যায় তার নীচের অংশে ডায়াটম-এর সাথে মিশ্রিত দুর্লভ খনিজ মনোহাইড্রোক্যালসাইট-এর একটি স্তর স্যাপ্রোপেলের উপর উচ্চ পাইরাইট উপাদান-সহ থিতিয়ে জমে রয়েছে। এগুলি তিনটি বিভিন্ন ব্যবধানে রয়েছে। বিশ্বাস করা হয় যে স্যাপ্রোপিলিক স্তরগুলি জলীয়তাপ (হাইড্রোথার্মাল) নিঃসরণের সঙ্গে এবং ডায়োটমগুলি যথেষ্ট পরিমাণে কার্বন ডাই অক্সাইডের মাত্রা কমিয়ে মনোহাইড্রোক্যালসাইট-এর অধক্ষেপণে ভূমিকা গ্রহণ করে। [৬]

বিজ্ঞানীদের অনুমান, হ্রদের তলদেশের জলের সাথে যথেষ্ট পরিমাণে আগ্নেয়গিরির ক্রিয়ায় উচ্চ ঘনত্বের গ্যাস জলকে উতপ্ত করে জল থেকে মিথেনকে মুক্ত করে মিথেনের বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে এবং সেই সাথে সাথে কার্বন ডাই অক্সাইডও মুক্ত করতে পারে। [৭][৮] হ্রদের তলদেশে নির্গত এই কার্বন ডাই অক্সাইড হ্রদ অববাহিকার বিশাল সংখ্যক মানুষের দমবন্ধের কারণ ঘটাতে পারে। গ্যাস বিস্ফোরণের সাথে সাথে হ্রদ সুনামির মতো ঘটনাও ঘটতে পারে। [৯][১০][১১]

নিয়োস হ্রদের আরও সাম্প্রতিক ঘটনা বিশ্লেষণের সময় কিভু হ্রদের ঝুঁকির দিকটি আরও অনুধাবন করতে পারা সম্ভব হয়ে ছিল। কিভুর মিথেনকে মূলত রফতানি এবং বিদ্যুত উৎপাদনের জন্য জ্বালানী হিসাবে একটি সস্তা প্রাকৃতিক সম্পদ বলে মনে করা হত। একবার যখন হ্রদটির উল্টে যাওয়ার কারণগুলি বোঝা শুরু হল, তখন এই হ্রদটি যে স্থানীয় জনগণের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ - সে সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি শুরু হয়।

গভীর জল থেকে গ্যাস অপসারণের জন্য ২০০১ সালে নিয়োস হ্রদে একটি পরীক্ষামূলক ভেন্ট পাইপ স্থাপন করা হয়েছিল। তবে বৃহত্তর কিভু হ্রদের জন্য এ জাতীয় সমাধান বেশ ব্যয়বহুল হবে। কিভু হ্রদের ঝুঁকি কমাতে তেমন কোনও পরিকল্পনা শুরু করা হয়নি।[সন্দেহপূর্ণ ] মানুষ প্রতিবছর যে পরিমাণ জীবাশ্ম জ্বালানী পোড়ায় তার ২ শতাংশেরও কম পরিমাণ হবে হ্রদের থেকে প্রাপ্ত প্রায় ৫০০ মিলিয়ন টন কার্বন ডাই অক্সাইড। সেই কারণে, এই পদ্ধতি অবলম্বন করলে তার নির্মাণ ও পরিচালনা ব্যবস্থার ব্যয় হয়ে পড়বে বিপুল।

সাফল্যের সাথে মিথেন ব্যবহারের এই সমস্যাটি হ'ল মাজুকুসোয়াহিলি ভাষায় এই শব্দটির মানে হ'ল "অশুভ বাতাস"। এমন বলার কারণ, মিথেন এবং কার্বন ডাই অক্সাইডের এই রকম নিষ্ক্রমণের জন্য মানুষ ও প্রাণীর মৃত্যু ঘটতে পারে। এমনকি তার ঘনত্বের পরিমাণ বাড়লে গাছপালা নষ্টও হয়ে যেতে পারে।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Kivu, lake, Congo and Rwanda ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০০৬-০১-০৯ তারিখে, Columbia Encyclopedia, Sixth Edition. 2001-05.
  2. Scheffel, Richard L.; Wernet, Susan J., সম্পাদকগণ (১৯৮০)। Natural Wonders of the World । United States of America: Reader's Digest Association, Inc। পৃষ্ঠা 206–207। আইএসবিএন 978-0-89577-087-5 
  3. https://www.worldatlas.com/articles/the-largest-lakes-in-africa.html
  4. "Geology.com"। ৭ অক্টোবর ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  5. Nayar, Anjali (২০০৯)। "A lakeful of trouble"। Nature460 (7253): 321–323। ডিওআই:10.1038/460321a পিএমআইডি 19606123 
  6. "Stoffers, P., and Fischbeck, R. (1974) Monohydrocalcite in the sediments of Lake Kivu (East Africa) Sedimentology, 21, 163-170.
  7. Archived Volcano Eruption News: Nyiragongo Volcano Situation Report, volcanolive.com, January 22–25, 2002
  8. Halbwachs; ও অন্যান্য (২০০২-০৩-০৯)। "Investigations in Lake Kivu (East Central Africa) after the Nyiragongo Eruption of January 2002: Specific study of the impact of the sub-water lava inflow on the lake stability" (পিডিএফ)। Solidarities। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-১২-২১  mirror
  9. "Rwanda and DRC Sign Agreement Over L. Kivu Methane Gas Exploration", News Ghana, 21 November 2015
  10. "Killer Lakes", BBC, 4 April 2002
  11. "In the Shadow of Doom" ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০০৭-০৯-২৮ তারিখে, The Walrus, May 2006