কালামাটি

নিমফ্যালিডি পরিবারের প্রজাপতি

কালামাটি[২] (বৈজ্ঞানিক নাম: Orsotriaena medus (Fabricius)) প্রজাতি দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় প্রাপ্ত নিমফ্যালিডি (Nymphalidae) গোত্র ও 'স্যাটিরিনি' (Satyrinae) উপ-গোত্রের অন্তর্ভুক্ত প্রজাপতি।[৩]

কালামাটি
Medus brown Or Nigger
ডানা বন্ধ অবস্থায়
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ: প্রাণীজগৎ
পর্ব: সন্ধিপদী
শ্রেণী: পতঙ্গ
বর্গ: লেপিডোপ্টেরা
পরিবার: Nymphalidae
গণ: Orsotriaena
Wallengren, 1858
প্রজাতি: O. medus
দ্বিপদী নাম
Orsotriaena medus
(Fabricius, 1775)
প্রতিশব্দ

Mycalesis mandata Moore, 1857[১]

আকার সম্পাদনা

কালামাটি এর প্রসারিত অবস্থায় ডানার আকার ৪৫-৫৫ মিলিমিটার দৈর্ঘ্যের হয়।[২]

উপপ্রজাতি সম্পাদনা

ভারতে প্রাপ্ত কালামাটি এর উপপ্রজাতি হল-[৪]

  • Orsotriaena medus medus Fabricius, 1775 – Oriental Medus Brown
  • Orsotriaena medus mandata Moore, 1857 – Sahyadri Medus Brown
  • Orsotriaena medus nicobarica Evans, 1932 – Nicobar Medus Brown

ইতিহাস সম্পাদনা

১৯৩২ সাল পর্যন্ত এই প্রজাতির একটি জনপ্রিয় ইংরেজি নাম নিগার (Nigger) ভারতবর্ষে প্রচলিত ছিল। নিগার শব্দটি জাতিগতভাবে খুবই আপত্তিজনক এবং আফ্রিকান বংশোদ্ভূত কালো চামড়ার মানুষদের (Blacks) প্রতি অসম্মানসূচক। সেই কারণে, এই আপত্তিকর ইংরেজি নামটি বর্তমানে সমাজগ্রাহ্য নয়। সাম্প্রতিককালে এই প্রজাতির ৩ টি বিকল্প ইংরেজি নাম প্রচলিত রয়েছে- জঙ্গলব্রাউন (Junglebrown ,স্মিথ,1989); ডাস্কি বুশ-ব্রাউন (Dusky bush-brown, Braby,1997) ও স্মুথ-আইড বুশ-ব্রাউন (Smooth eyed bush-brown,Braby,2010)। অস্ট্রেলিয়া সরকার-এর পরিবেশ ও জল-সম্পদ দপ্তর কর্তৃক প্রকাশিত Australian Funal Directory অনুসারে এই প্রজাতির নতুন নামকরণ হয়-ভারতে স্মুথ-আইড বুশ-ব্রাউন (Smooth eyed bush-brown) ও মিডাস ব্রাউন (Medus brown) এবং দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় ডার্ক গ্রাস ব্রাউন (Dark Grass brown)। এই প্রজাতির বিজ্ঞানসম্মত নাম "Orsotrianea Medus" অনুসারে Medus brown ইংরেজি নামটিই বর্তমানে ভারতে অধিক প্রচলিত।[৫][৬]

বিস্তার সম্পাদনা

ভারতে দক্ষিণ ভারত থেকে গোয়া, পাঞ্জাব, উত্তর প্রদেশ, মধ্য প্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ, সিকিম থেকে অরুণাচল প্রদেশ ও উত্তর পূর্ব ভারত, আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ; বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, মায়ানমার, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপিন্স, অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে এদের দেখা যায়।[৭]

বর্ণনা সম্পাদনা

প্রজাপতির দেহাংশের পরিচয় বিশদ জানার জন্য প্রজাপতির দেহ এবং ডানার অংশের নির্দেশিকা দেখুন:-

স্ত্রী ও পুরুষ উভয় প্রকারেরই ডানার উপরিতল কালচে বাদামি এবং উভয় ডানাতেই টার্মিনাল ও সাব-টার্মিনাল দুটি সরু, সাদা ও সমান্তরালভাবে বিন্যস্ত রেখা যুক্ত। উভয় ডানারই উপরিতল দাগ-ছোপ মুক্ত; শুধুমাত্র ডানার নিম্নতলের সাদা ডিসকাল বন্ধনী স্বচ্ছতার কারণে অস্পষ্টভাবে দৃশ্যমান। উপরিতলে কোনো চক্ষুবিন্দু বা ওসিলি (Ocilli) নেই।

স্ত্রী ও পুরুষ উভয় প্রকারেরই ডানার নিম্নতলে সামনের ও পিছনের দুই ডানা জুড়ে ঋজু (straight) ও সাদা ডিসকাল বন্ধনী বর্তমান। উক্ত ডিসকাল বন্ধনী Orsotriaena medus medus (Fabricius) উপ-প্রজাতির ক্ষেত্রে সরু এবং Orsotriaena medus mandata (Moore) উপ-প্রজাতির ক্ষেত্রে চওড়া। পোস্ট-ডিসকাল অংশে সামনের ডানায় ২ টি ও পিছনের ডানায় ৩ টি চক্ষুবিন্দু বা ওসিলি (Ocilli) বিদ্যমান। সামনের ডানার চক্ষুবিন্দু দুটির উপরেরটি ছোট ও নিচেরটি বৃহদাকার। পিছনের ডানার শীর্ষভাগে (apical region) অবস্থিত চক্ষুবিন্দু দুটির উপরেরটি অতি ক্ষুদ্রাকার ও নিচেরটি বৃহদাকার এবং টরনাসের সামান্য উপরে অবস্থিত তৃতীয় চক্ষুবিন্দুটি দ্বিতীয়টির সমান আকৃতির। কেন্দ্রে সাদা বিন্দুযুক্ত কালো চক্ষুবিন্দুগুলি একটি হলুদ ও একটি অস্পষ্ট সাদা রিং দ্বারা আবৃত। শুঙ্গ, মাথা, বক্ষদেশ (thorux) ও উদর উভয়তলেই কালচে বাদামি।[৮]

আচরণ সম্পাদনা

এই প্রজাতির উড়ান দুর্বল ও ধীরগামী এবং ভূমির খুব নিচ দিয়ে ওড়ে। পাতায় ও ফুলে বসে রস ও মধু পান করতে এদের লক্ষ্য করা যায়। এই প্রজাতিকে কখনো সখনো রোদ পোহাতে (busking) দেখা যায় এবং রোদ পোহানোর সময় প্রায়শই এরা সূর্যরশ্মির সাথে সমান্তরাল অবস্থান করে। নিচু ছায়াচ্ছন্ন ঝোপঝাড়ে থাকতেই এরা বেশি পছন্দ করে। বিরক্ত করলে বা ভয় পেলে এরা সামান্য দূরত্ব উড়ে গিয়ে পুনরায় পছন্দসই কোনো জায়গায় বসে। নিচু উচ্ছতাবিশিষ্ট (১৬০০ মি.পর্যন্ত) মুক্ত বনভূমি, ঝোপঝাড় পূর্ণ জঙ্গল-পথে ও ঘাসজমিতে এদের প্রভূত দর্শন মেলে। নিচু উচ্চতাসম্পন্ন ঘাসজমি (meadow) এই প্রজাতির সবচেয়ে প্রিয় বাসভূমি।[৯]

বৈশিষ্ট্য সম্পাদনা

ডিম সম্পাদনা

কালামাটি প্রজাতির ডিম বর্তুলাকার ও ঈষৎ হলদে বর্ণের। এরা পাতার কিনারে ও ঘাসের কান্ডে সাধারণত ডিম পাড়ে।

শূককীট সম্পাদনা

এই প্রজাতির শুককীট বা লার্ভা সুতা কাটার টাকুর (spindle) ন্যায় আকৃতিবিশিষ্ট ও দেহত্বক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গুটিযুক্ত হওয়ায় খসখসে। মাথার সামনের দিকে দুটি লম্বা বাদামি কাঁটার মতো ও পায়ুর কাছে একজোড়া ঈষৎ গোলাপি দাঁড়ার মতো অংশ দেখা যায়। শূককীটের দেহের উপরিতল লালচে গোলাপি বর্ণের নীল পৃষ্ঠদেশীয় রেখা ও সাদা প্বার্শরেখা যুক্ত। দেহের নিম্নভাগ সবুজ হয়।[৮]

আহার্য উদ্ভিদ সম্পাদনা

মূককীট সম্পাদনা

মুককীট বা পিউপা লম্বভাবে ঝুলে থাকে এবং দেখতে সরু ও নিয়মিত। মাথার অংশের খোলটি লম্বা ঠোঁট বা চঞ্চুর ন্যায়। মুককীটের রঙ সাদাটে বাদামি থেকে পরিবর্তিত হয়ে হলুদ বর্ণের হয়ে যায়। এদের দেখতে কতকটা বড় বার্লির দানা বা ছোট কলার মতো।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Moore, Frederic (১৮৯০)। Lepidoptera Indica. Vol. I। London: Lovell Reeve and Co.। পৃষ্ঠা 168–172। 
  2. A Pictorial Guide Butterflies of Gorumara National Park (2013 সংস্করণ)। Department of Forests Government of West Bengal। পৃষ্ঠা ১৯৩। 
  3. R.K., Varshney; Smetacek, Peter (২০১৫)। A Synoptic Catalogue of the Butterflies of India। New Delhi: Butterfly Research Centre, Bhimtal & Indinov Publishing, New Delhi। পৃষ্ঠা 175–176। আইএসবিএন 978-81-929826-4-9ডিওআই:10.13140/RG.2.1.3966.2164 
  4. "Orsotriaena medus Fabricius, 1775 – Medus Brown"। ১৩ জানুয়ারি ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ ডিসেম্বর ২০১৮ 
  5. Evans, W.H. (১৯৩২)। The Identification of Indian Butterflies (2nd সংস্করণ)। Mumbai,India: Bombay Natural History Society। পৃষ্ঠা 123–124, ser no D16.1। 
  6. Kunte, Krushnamegh (২০০০)। Butterflies of Peninsular India। India, A Lifescape। Hyderabad, India: Universities Press। পৃষ্ঠা 115। আইএসবিএন 978-8173713545 
  7. Isaac, Kehimkar (২০০৮)। The book of Indian Butterflies (ইংরেজি ভাষায়) (1st সংস্করণ)। নতুন দিল্লি: অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস। পৃষ্ঠা ৩৪৫। আইএসবিএন 978 019569620 2 
  8. Haribal, Meena (১৯৯২)। The Butterflies of Sikkim Himalaya and Their Natural History। Gangtok, Sikkim, India: Sikkim Nature Conservation Foundation। পৃষ্ঠা 144–145, ser 352। 
  9. Kunte, Krushnamegh (২০১৩)। Butterflies of The Garo Hills। Dehradun: Samrakshan Trust, Titli Trust and Indian Foundation of Butterflies। পৃষ্ঠা ১৩৩।