কম্পিউটিং ভিত্তিমঞ্চ

গণকযন্ত্র বা কম্পিউটার সংক্রান্ত আলোচনায় কম্পিউটিং ভিত্তিমঞ্চ (ইংরেজি: computing platform) বা ডিজিটাল ভিত্তিমঞ্চ (ইংরেজি: digital platform) বলতে কম্পিউটারের যন্ত্রাংশসামগ্রী (হার্ডওয়্যার) এবং সেগুলির পরিচালক ব্যবস্থা (অপারেটিং সিস্টেম) নিয়ে গঠিত একটি প্রাথমিক ভিত্তিকে বোঝায় যার উপরে অন্যান্য ব্যবহারোপযোগী নির্দেশনাসামগ্রী তথা অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার চালানো হয়। যেকোনও কম্পিউটারের কেন্দ্রীয় প্রক্রিয়াজাতকরণ অংশটিকে (সিপিউ) এমনভাবে নকশা করা হয় যাতে এটি কোনও সফটওয়্যারকে একটি বিশেষ ধরনের বাইনারি যান্ত্রিক সংকেত (মেশিন কোড) প্রক্রিয়াজাত করতে পারে। এমতাবস্থায় সেই কম্পিউটারে যদি কোনও অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার চালাতে হয়, তাহলে অবশ্যই সেই অ্যাপ্লিকেশনটিকে ঐ সিপিউ-র দ্বারা সমর্থিত বাইনারি যান্ত্রিক সংকেত দিয়ে তৈরি হতে হবে। ঐতিহাসিকভাবে হার্ডওয়্যার ও অপারেটিং সিস্টেম নিয়ে গঠিত একাধিক বিভিন্ন প্রকারের কম্পিউটিং ভিত্তিমঞ্চ সৃষ্টি হয়েছে। সাধারণত অপারেটিং সিস্টেমের নামেই ভিত্তিমঞ্চের নামকরণ করা হয়। যেমন ব্যক্তিগত কম্পিউটারের ক্ষেত্রে উইন্ডোজ ভিত্তিমঞ্চ, ম্যাকওস ভিত্তিমঞ্চ, সান ভিত্তিমঞ্চ, ইত্যাদি, কিংবা অধুনা বুদ্ধিমান মুঠোফোনের (মোবাইল স্মার্টফোন) ক্ষেত্রে আইওস ভিত্তিমঞ্চ, অ্যান্ড্রয়েড ভিত্তিমঞ্চ, ইত্যাদি। একটি কম্পিউটিং ভিত্তিমঞ্চের জন্য তৈরি করা অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার অন্য একটি কম্পিউটিং ভিত্তিমঞ্চে কাজ করবে না। উদাহরণস্বরূপ, যদি বলা হয় যে একটি অ্যাপ্লিকেশন “উইন্ডোজ ভিত্তিমঞ্চের উপরে চালানো যাবে”, তার অর্থ হল ঐ অ্যাপ্লিকেশনটিকে এমনভাবে নির্মাণ করা হয়েছে যাতে সেটি উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের অধীনে ও এক্স৮৬ শ্রেণীর স্থাপত্যের যান্ত্রিক সংকেতে সঙ্কলিত করে চালানো হবে। আবার যদি বলা হয় যে একটি অ্যাপ্লিকেশন অ্যান্ড্রয়েড ভিত্তিমঞ্চে চালানো যাবে, তার অর্থ হল ঐ অ্যাপ্লিকেশনটিকে এমনভাবে নির্মাণ করা হয়েছে যাতে সেটিকে অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমের অধীনে ও আর্ম (ARM) স্থাপত্যে নির্মিত সিপিউয়ের যান্ত্রিক সংকেতে সঙ্কলিত করে চালানো হবে।

ভিত্তিমঞ্চগুলি শুধু সফটওয়্যার চালনাই নয়, সফটওয়্যার নির্মাণের উপরেও প্রভাব বিস্তার করে। একটি ভিত্তিমঞ্চের জন্য কিছু আদর্শ বা মান স্থির করা থাকে, যেগুলি মেনে সফটওয়্যার নির্মাতারা ঐ ভিত্তিমঞ্চের জন্য সফটওয়্যার অ্যাপ্লিকেশন নির্মাণ করেন।

তবে কখনও কখনও একই সফটওয়্যার ভিন্ন ভিন্ন ভিত্তিমঞ্চের জন্য নির্মাণ করা হতে পারে। যেমন মাইক্রোসফট ওয়ার্ড নামক সফটওয়্যারটিকে উইন্ডোজ ভিত্তিমঞ্চ, অ্যাপল ভিত্তিমঞ্চ, অ্যান্ড্রয়েড ভিত্তিমঞ্চ, ইত্যাদি ভিন্ন ভিন্ন ভিত্তিমঞ্চের জন্য আলাদা আলাদা সংস্করণে নির্মাণ করা হয়েছে। এ ধরনের সফটওয়্যারকে “বহু-ভিত্তিমঞ্চ সফটওয়্যার” (Multi-platform software) বলা হয়। প্রতিটি ক্ষেত্রেই মাইক্রোসফট ওয়ার্ডের কার্যকারিতা ও কর্মদক্ষতা একই রকম হয় না, বরং এটির নিচে অবস্থিত ভিত্তিমঞ্চটির বেঁধে দেওয়া আদর্শগুলি দ্বারা সীমিত থাকে।

চিরায়তভাবে কম্পিউটিং ভিত্তিমঞ্চ বলতে সুপ্রতিষ্ঠিত হার্ডওয়্যার-অপারেটিং সিস্টেম যুগলগুলিকে বোঝানো হলেও বর্তমানে এর সংজ্ঞা আরও প্রসারিত হয়েছে। যেকোনও অ্যাপ্লিকেশনকেই কম্পিউটিং ভিত্তিমঞ্চ হিসেবে গণ্য করা যেতে পারে, যদি এটি দ্বিতীয় আরেকটি অ্যাপ্লিকেশন বা প্রোগ্রামের ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। এক্ষেত্রে ভিত্তিমঞ্চরূপী সফটওয়্যারটিতে একটি অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামিং ইন্টারফেসের ব্যবস্থা থাকে। অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামিক ইন্টারফেস (“অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামরচনা আন্তঃপৃষ্ঠ”) হল কিছু নিয়ম ও সৌজন্যবিধির সমষ্টি, যার মাধ্যমে দ্বিতীয় আরেকটি সফটওয়্যার সেটির সাথে আন্তঃক্রিয়া সম্পাদন করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, আধুনিক আন্তর্জাল পরিভ্রামক তথা ওয়েব ব্রাউজারগুলিকে বর্তমানে এমনভাবে নির্মাণ করা হয়, যাতে এগুলির ভেতরে তৃতীয়-পক্ষ দ্বারা নির্মিত প্লাগ-ইন জাতীয় ক্ষুদ্র মাপের সফটওয়্যার চালানো যায়। ফলে আধুনিক ওয়েব ব্রাউজারগুলিকেও এক ধরনের কম্পিউটিং ভিত্তিমঞ্চ হিসেবে গণ্য করা যায়।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যেমন ফেসবুক, টুইটার, ইত্যাদিও অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামিং ইন্টারফেসের ব্যবস্থা প্রদান করে থাকে। একারণে এগুলিকে সামাজিক মাধ্যম ভিত্তিমঞ্চ (Social Media Platform) হিসেবে গণ্য করা যেতে পারে।.[১][২]

ইন্টারনেটভিত্তিক কম্পিউটিং তথা ক্লাউড কম্পিউটিংয়ের ক্ষেত্রে বিভিন্ন কোম্পানি গ্রাহকদেরকে এক বিশেষ ধরনের ভিত্তিমঞ্চ সেবা (Platform as a Service) প্রদান করে থাকে, যে ভিত্তিমঞ্চটি ঐ কোম্পানির অধীনস্থ বহুসংখ্যক সেবক বা সার্ভার কম্পিউটার, এগুলিকে পরিচালনাকারী বিশেষ অপারেটিং সিস্টেম, এবং এগুলির সাথে ইন্টারনেটের মাধ্যমে আন্তঃক্রিয়া সম্পাদন করার জন্য বিশেষ অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামিং ইন্টারফেস নিয়ে গঠিত। একজন সফটওয়্যার নির্মাতা ঐ ভিত্তিমঞ্চের উপরে এমন সফটওয়্যার নির্মাণ করতে পারেন, যা কোনও ইন্টারনেটের সাথে সংযুক্ত ক্লায়েন্ট বা সেবাগ্রাহক কম্পিউটার থেকে চালানো সম্ভব।[৩]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Twitter Development Platform - Twitter Developers" 
  2. "Facebook Development Platform Launches..."। আগস্ট ১৫, ২০০৬। 
  3. "What Is PAAS?"Interoute। ২২ অক্টোবর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ নভেম্বর ২০২০