কমলপুর নেতাজি হাই স্কুল

ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মধ্যে বাঁকুড়া জেলার অন্তর্গত এই স্কুল। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর মত ও আদর্শকে পাথেয় করে এই বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা হয় নেতাজির জন্ম দিবস ২৩ জানুয়ারি, ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে।

প্রতিষ্ঠার ইতিহাস

সম্পাদনা

১৯৫৬ সালের ২৩ জানুয়ারি কমলপুর নেতাজি হাই স্কুলের পথ চলা শুরু। ছোট্ট চারাগাছ আজ মহীরূহে পরিণত। বিদ্যালয়ের অগণিত ছাত্র-ছাত্রী আজ দেশ বিদেশে স্বমহিমায় প্রতিষ্ঠিত। জন্মলগ্নে বিদ্যালয়ের সম্মুখে ছিল প্রভূত বাধা, নিদারুন অভাব ও নানাবিধ অসুবিধা।

১৯৪৭ সাল। ভারতবর্ষ স্বাধীন হল। স্বাধীনতার পরে ভরতবর্ষকে পরিচালনার ভার পড়ল ভারতবাসীদের উপর। তখন ভারতবর্ষ ছিল গরীবদেশ। গরীব দেশের জনগণকে দুঃখকষ্ট থেকে মুক্ত করতে প্রয়োজন ছিল শিক্ষার প্রসার। সেই লক্ষ্যে বিভিন্ন জায়গায় স্থানীয় মানুষের দানে ও উদ্যোগে গড়ে উঠতে লাগলো বিদ্যালয়। কমলপুর এলাকায় সেই সময় বিদ্যালয় ছিল না। বিদ্যালয় গড়ার লক্ষ্যে ১৯৫৫ সালের ২৫ ডিসেম্বর কমলপুর থেকে দেড়-দু কিমি দূরে চ্যামটাগড়ায় চৌধুরী বাগানে একটি সভার আয়োজন করা হয়েছিল। কমলপুর এবং পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলির জনগণকে সেই সভায় ডাকা হয়েছিল। সভায় উপস্থিত ছিলেন ছাতনার তৎকালীন বিধায়ক কমলাকান্ত হেমব্রম, ঝাঁটিপাহাড়ী নিবাসী ভবতারণ কুন্ডু, ভালাইডিহা নিবাসী মোক্তার বিশ্বনাথ কুন্ডু। এছাড়া স্থানীয় গ্রামগুলির মধ্যে কমলপুরের সুধীরকুমার রক্ষিত, মনতুমড়ার আশুতোষ দেঘুরিয়া, আমলাতোড়ার সীতানাথ পতি, ছাতাপাথরের কালিপদ কর, বৈদ্যনাথ কর, গৌউরচন্দ্র কর, শালচূড়ার রাধানাথ কর, শালডিহার জ্ঞানশংকর মুখার্জী, রামকুমার চক্রবর্তী, বনগ্রামের কিরীটি খাঁ, উপরডিহির ঈশানচন্দ্র দত্ত, কেশরার সুধীরচন্দ্র মন্ডল, সদ্য ম্যাট্রিক পাশ করা সাধনচন্দ্র মন্ডল এবং আরও অনেকে। সভায় চৌধুরী বাগানে বিদ্যালয় স্থাপন করা নিয়ে শুরু হল আলোচনা। ছাতাপাথর নিবাসী কালীপদ কর জানালেন এখানে বিদ্যালয় হলে তিনি ৬ বিঘা জমি দান করবেন। কমলপুরে আগে একটি বিদ্যালয় ছিল। তার ইট, কাঠ ইত্যাদি নিয়ে এসে চৌধুরী বাগানে বিদ্যালয় হবে বলে স্থির হয়। কিন্তু কোনো উদ্যোগী ব্যক্তি পাওয়া গেলনা যিনি দাঁড়িয়ে থেকে বাড়ী তৈরী করে দেবেন। মোক্তার বিশ্বনাথ কুন্ডু সেই সময় বলেন কমলপুরে কেউ কি নেই যিনি ঐ আগের জায়গায় বিদ্যালয় গৃহ নির্মাণ করতে পারবেন। সেই সময় ঈশানচন্দ্র দত্ত বলেন সুধীরকুমার রক্ষিত বিদ্যালয় গৃহ তৈরী করে দেবেন। সধীরকুমার রক্ষিত গ্রামে এসে বিদ্যালয় তৈরীর কথা সকলকে বললে সবাই উচ্ছ্বসিতভাবে বিদ্যালয় তৈরীকে সমর্থন জানালেন। কমলপুরের সমস্ত গ্রামবাসীদের সাহায্যে ১৯৫৬ সালের ২৩ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে ক্লাস শুরুর আগেই খড়ের ছাউনি দিয়ে তিনকক্ষ বিশিষ্ট বিদ্যালয় গৃহ নির্মিত হল। চৌধুরী বাগানের সভায় বিদ্যালয়ের জন্য প্রথম অর্থ সাহায্য করেছিলেন সভার পাশ দিয়ে ধান নিয়ে গরুর গাড়ি করে যাবার সময় হুড়া নিবাসী গোলোকবিহারী কুণ্ডু। চৌধুরী বাগানের সিদ্ধান্ত মত কমলপুর থেকে এক হাজার টাকা, শালচূড়া থেকে একহাজার টাকা, ছাতাপাথর থেকে পাঁচশ টাকা নিয়ে বিদ্যালয়ের উন্নয়ন শুরু হয়। ১৯৫৬ সালের ২৩ জানুয়ারি বিদ্যালয় আনুষ্ঠানিক ভাবে শুরু হলেও ওই বছরের ১ জানুয়ারি তেঁতুল গাছের নীচে ব্ল‍্যাকবোর্ড টাঙ্গিয়ে ১৫-২০ জন ছাত্র নিয়ে কেশরা গ্রামের সাধনচন্দ্র মন্ডল (প্রখ্যাত হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ মনোরঞ্জন মন্ডলের পিতা) প্রথম শিক্ষক হিসাবে বিদ্যালয়ের পথচলা শুরু করেছিলেন।

বিদ্যালয়ের ক্লাস শুরুর সময় তিনটি খড়ের ছাউনির ঘর নির্মিত হয় (বর্তমান দুর্গামন্দিরের লাগোয়া পূর্বমুখী)। রাজ্য সরকারের 'local area development scheme'এ স্কুলকে প্রথমে ৬০০০ টাকা এবং পরবর্তীক্ষেত্রে আরও ৪০০০ টাকা দেওয়া হয়। ৬০০০ টাকায় বর্তমান স্টাফ রুমের ২টি কক্ষ এবং ৪০০০ টাকায় ফুটবল মাঠের নিকট পশ্চিমমুখী ২টি কক্ষ নির্মিত হয়। এর কিছুপরে পুরানো পাতকূপের কাছে দুটি টিনের ছাউনি শ্রেণিকক্ষ নির্মিত হয়। তখন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পুরাতন বিল্ডিং এর ছোট কক্ষটি অফিসরুম হিসাবে ব্যবহৃত হত। পরে বর্তমান স্টাফরুম এবং কেমেস্ট্রি ল্যাবরেরী এর মাঝে দক্ষিমমুখী শ্রেণিকক্ষগুলি নির্মিত হয়। বিদ্যালয় যখন পরিকাঠামোগতভাবে নিজেকে সমৃদ্ধিশালী করছে তখনই আসে আঘাত। ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসে বড়দিনের ছুটির সময় বিদ্যালয়ের অফিসরুমটি আগুনে পুড়ে যায়। বিদ্যালয়ের সমস্ত নথি নষ্ট হয়ে যায়। এই জন্য ১৯৭১ সালের আগের কোনো তথ্য বিদ্যালয়ে নেই। তৎকালীন পরিচালন সমিতি এবং শিক্ষকমন্ডলী বিদ্যালয়ের পরিকাঠামো উন্নয়নে সর্বদা সচেষ্ট ছিলেন। কলকাতার সুবিখ্যাত যাত্রাপার্টী এনে বিদ্যালয় মাঠে যাত্রা করানো হয়। তার লভ্যাংশে বিদ্যালয় অফিসের পশ্চিম দিকে দক্ষিণমুখী শ্রেণিকক্ষগুলি নির্মিত হয়। ১৯৭৬ সালে এই বিদ্যালয় দ্বাদশ শ্রেণিযুক্ত উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় হিসেবে উন্নীত হয়।

শ্রেণি ও বিভাগ

সম্পাদনা

V

Vl

Vll

Vlll

IX

X

Xl

Xll

উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে একাদশ এবং দ্বাদশ শ্রেণিতে কলা, বিজ্ঞান ও বাণিজ্য বিভাগের বিভিন্ন বিষয় এই বিদ্যালয়ে পড়ানো হয়।