সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশান

সার্চ ইঞ্জিনে ওয়েবপেজকে প্রথম তালিকায় রাখার পদ্ধতি
(এসইও থেকে পুনর্নির্দেশিত)

সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশান বা সংক্ষেপে এসইও (SEO) হলো একটি পদ্ধতি যার মাধ্যমে একটি ওয়েবসাইট বা ওয়েবপৃষ্ঠাকে অনুসন্ধান বা সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহারকারীদের অনুসন্ধান ফলাফলের তালিকায় প্রথম দিকে দেখানোর চেষ্টা করা বা সর্বোচ্চকরণ করা। এসইও করা হয় যেনো কোনো ওয়েবসাইট বা এর আর্টিকেল অনুসন্ধান করলে ফলাফলের প্রথম পৃষ্ঠায় দেখা যায়। এসইও কোনো একক কাজ নয়, বরং বহুক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের কাজের সাথে সম্পৃক্ত একটি পদ্ধতি, বলা যায় সমন্বিত পদ্ধতি।

সাধারণত একটি সার্চ ইঞ্জিনের ওয়েব ক্রলার বা সার্চ রোবট বা সার্চ স্পাইডার প্রায় সবসময় ওয়েবে থাকা একটি ওয়েবপৃষ্ঠা অন্য ওয়েবপৃষ্ঠায় ও একই ভাবে এক ওয়েবসাইট থেকে অন্য ওয়েবসাইটে ঘুরে বেড়ায়। এই রোবট বা স্পাইডার বা ক্রলারসমূহ বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে নির্দিষ্ট শ্রেণীতে সজ্জিত করে এবং সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহারকারীর খোঁজকৃত শব্দ বা শব্দগুচ্ছ অনুসারে সার্চ ইঞ্জিনের ফলাফল পাতায় প্রদর্শন করে। এই ক্রলার বিভিন্ন বিষয়ের উপর গুরুত্ব প্রদান করে। বিষয়সমূহকে তিন ভাগে শ্রেণীবদ্ধ করা যায়।[][] পৃষ্ঠার মধ্যে, প্রযুক্তিগত এবং পৃষ্ঠার বাইরে।

পৃষ্ঠার মধ্যে বা ওয়েবসাইটের ভিতরকার এসইওর বিষয়গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য

সম্পাদনা
  • ওয়েবসাইটের শিরোনাম বা নাম
  • ওয়েবসাইটের মেটা বিবরণ
  • ওয়েবসাইটের মেটা কিওয়ার্ড ট্যাগ
  • ওয়েবসাইটে ব্যবহৃত ছবিগুলোর শিরোনাম বা নাম
  • ওয়েবসাইটে ব্যবহৃত ছবিগুলোর অল্ট ট্যাগ
  • ওয়েবসাইটে ব্যবহৃত ছবিগুলোর ক্যাপশন
  • ওয়েবসাইটের বিভিন্ন পৃষ্ঠার মধ্যে অন্তঃসংযোগ
  • ওয়েবসাইটের সাথে অন্য ওয়েবসাইটের বহিঃসংযোগ
  • সংযোগকৃত শব্দ ইত্যাদি

প্রযুক্তিগত এসইওর বিষয়গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য

সম্পাদনা
  • সাইটের গতি
  • মোবাইল-বান্ধব
  • ইনডেক্সিং
  • ক্রাউলাবিলিটি
  • সাইট আর্কিটেকচার
  • কাঠামোবদ্ধ উপাত্ত
  • নিরাপত্তা

পৃষ্ঠার বাইরে বা ওয়েবসাইটের বাইরের এসইওর বিষয়সমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য

সম্পাদনা
  • সোশ্যাল শেয়ার বা সামাজিক সাইটগুলোতে আলোচনা
  • ব্যাকলিংক বা অন্য ওয়েবসাইটের সাথে সংযোগের সংখ্যা ইত্যাদি

এই বিষয়গুলো নিশ্চিত করে ওয়েবসাইটকে অনুসন্ধান ইঞ্জিনের কাছে দৃষ্টিগোচর করার কাজটিই এসইও'র মূল কাজ হিসেবে পরিগণিত হয়। এছাড়া, ওয়েবসাইটকে বিভিন্ন অনুসন্ধান ইঞ্জিনের কাছে সমর্পণ, বিভিন্ন সম্ভাবনাময় ওয়েবসাইটে বিজ্ঞাপন স্থাপন বা আদান-প্রদান ইত্যাদির মাধ্যমেও এসইও কাজ করে থাকে। সম্প্রতি অনুসন্ধান ইঞ্জিনগুলো যেকোন ওয়েবপৃষ্ঠা বা ওয়েবসাইটের সামাজিক প্ল্যাটফর্মের ওপর গুরুত্ব দিয়ে র‍্যাঙ্ক প্রদান করছে। এক্ষেত্রে যে ওয়েবপৃষ্ঠা বা সাইটের সামাজিক প্ল্যাটফর্ম যত উন্নত সে সাইটটি অনুসন্ধান ইঞ্জিনের প্রথম দিকে থাকার সম্ভবনা তত বেশি।

ইতিহাস

সম্পাদনা

ইন্টারনেট সৃষ্টি এবং ব্যবহার যখন বাড়তে থাকে ঠিক তখন থেকেই মূলত এসইও (SEO)-এর যাত্রা শুরু হয়। যদিও তখন এসইও (SEO)-এর ব্যবহার বা এসইও এলগরিদম বর্তমান অবস্থার মত ছিলো না। যখন ইন্টারনেটের জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে এবং এর ব্যবহারও বাড়তে থাকে তখন সকল ওয়েবসাইটকে সংগঠিত করা বা একত্রিত করে ওয়েবসাইটগুলোতে শ্রেণিবিন্যাস করা খুব জরুরি হয়ে পড়ে। ঠিক তখনই অনুসন্ধান ইঞ্জিনের উন্নয়ন শুরু হয়ে যায় আর এটি করেন ওয়েবমাস্টারগণ। তারা মূলত অনুসন্ধান ইঞ্জিন ফলাফলের উপর প্রচুর পরিমাণে গবেষণা শুরু করেন এবং এভাবেই অনুসন্ধান ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন এর যাত্রা শুরু হয়।

১৯৯৫–১৯৯৬

এরপর ১৯৯৫ সালে এসইও প্রথম প্রাতিষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে। ইয়াহু ডেভেলপারগণ সর্বপ্রথম এ্যালফ্যাবেটিক অপটিমাইজেশন হিসেবে যাত্রা শুরু করেন খুব বেশি সময় নয়, মাত্র ১ বছরেই অর্থাৎ ১৯৯৬ সালে এসইও এর ব্যাপকতা শুরু হয়। তখন কী-ওয়ার্ড ডেনসিটি এর উপর ভিত্তি করে অনুসন্ধান ইঞ্জিন এলগরিদম করা হতো।

১৯৯৮–২০০৭

এরপর ১৯৯৭ সালের কোনো একসময় ইয়াহু ওয়েবমাস্টার ওয়েবসাইট জমাদান করে। এরপর ১৯৯৮ থেকে ১৯৯৯ সালের কোনো একসময়ই গুগলের জন্ম হয়। তখন গুগল সাম্প রুল শুরু করে এবং এর জন্য গুগলকে নতুনভাবে এলগরিদম করতে হয়। তবে গুগলের এই সাম্প রুল ভালোভাবে যাত্রা শুরু করতে আরও প্রায় ২-৩ বছর সময় লেগে যায়। এ সকল সাম্প ট্যাকটিকস নিয়ে ২০০০ থেকে ২০০৭ সালের দিকে গুগলের এসইও বিশেষজ্ঞরা র‍্যাংক ভিত্তিক ওয়েবসাইটগুলো ক্যাটাগরি অনুযায়ী শ্রেণিবিন্যাস করা শুরু করে। কিন্তু এ সময় কিছু সমস্যা ছিল তখন এসইও এর পুরাতন নিয়ম অনুযায়ী এসইও বিশেষজ্ঞরা তাদের ওয়েবসাইটি অনুসন্ধান ইঞ্জিনে জমা করতেন এবং ডিরেকটরি টাইপের কিছু লিংক বিল্ডিং করতেন। কিন্তু সমস্যা হল এ নিয়ম অনুযায়ী অনেক লুকানো পৃষ্ঠা সৃষ্টি করা হতো এবং কী-ওয়ার্ড স্টাফই এর মধ্যে ছিলো। এ সকল সমস্যার সমাধান করতে অনুসন্ধান ইঞ্জিন গুগল নতুনভাবে নিয়ে এলো গুগল ক্রলার। অনুসন্ধান ইঞ্জিনের সাথে ক্রলার সিস্টেম যুক্ত হওয়ার পর এসইওতে কী-ওয়ার্ড স্টাফিংও কমে আসলো। এভাবে মূলত আধুনিক এসইও এর যাত্রা শুরু হয়।

পদ্ধতি

সম্পাদনা

সূচিবদ্ধ হওয়া

সম্পাদনা

গুগল, বিং এবং ইয়াহুর এর মতো নেতৃস্থানীয় অনুসন্ধান ইঞ্জিন, তাদের অ্যালগরিদমিক অনুসন্ধানের ফলাফলের জন্য পৃষ্ঠা খুঁজতে ক্রলার ব্যবহার করে। অন্যান্য অনুসন্ধান ইঞ্জিন কর্তৃক ইন্ডেক্সকৃত পৃষ্ঠা থেকে লিঙ্ক করা পৃষ্ঠা জমা দেওয়ার প্রয়োজন নেই কারণ তারা স্বয়ংক্রিয়ভাবে পাওয়া যায়। ইয়াহু নির্দেশিকা এবং DMOZ, দুটি প্রধান ডিরেক্টরি যা ২০১৪ এবং ২০১৭ সালে বন্ধ হয়ে যায়, উভয়ের জন্যেই প্রয়োজনীয় ম্যানুয়াল জমা এবং মানব সম্পাদকীয় পর্যালোচনা প্রয়োজন হতো। গুগল অনুসন্ধান কনসোল প্রদান করে, যার জন্য একটি এক্সএমএল সাইটম্যাপ ফিড তৈরি করা যায় এবং সবগুলো পৃষ্ঠা পাওয়া যায়, বিশেষ করে এমন পৃষ্ঠা যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে লিঙ্কগুলি অনুসরণ করে আবিষ্কারযোগ্য নয় তাদের ইউআরএল জমা কনসোল ছাড়াও। ইয়াহু পূর্বে একটি প্রদেয় পরিষেবা প্রদান করে যা প্রতি ক্লিকের জন্য মূল্য প্রদানের নিশ্চয়তা প্রদান করে; যাইহোক, এই অনুশীলনটি ২০০৯ সালে বাতিল করা হয়।

হোয়াইট হেট ও ব্ল্যাক হেট পদ্ধতি

সম্পাদনা

হোয়াইট হ্যাট এসইও হচ্ছে, যে পদ্ধতিতে গুগল এর সকল নীতিমালা মেনে সম্পূর্ণ বৈধভাবে একটি সাইটকে প্রথম পৃষ্ঠায় নিয়ে আসার চেষ্টা করা হয়। এসইও বলতে হোয়াইট হ্যাট এসইও-কেই বোঝানো হয়। হোয়াইট হ্যাট এসইও অনেক কষ্টকর। কিন্তু, এটি ঝুঁকিমুক্ত। এর ঠিক বিপরীত হল ব্ল্যাক হ্যাট এসইও। যেহেতু অনুসন্ধান ইঞ্জিন মানুষ নয়, তাই এর সাথে বিভিন্নভাবে প্রতারণা করার সুযোগ রয়েছে। এই প্রতারণা পদ্ধতিগুলোর মধ্যে খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি হচ্ছে স্প্যামিং। স্প্যামিং করে খুব সহজেই একটি সাইটকে গুগল এর প্রথম পৃষ্ঠায় নিয়ে আসা যায়। কিন্তু, যদি একবার সেই কৌশল গুগল এর কাছে ধরা পরে, তবে গুগল তাকে কালো তালিকায় ফেলে দেয়। ওই সাইটকে গুগল তার ইনডেক্স থেকে মুছে ফেলে।

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. "Types of SEO"alexa। ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৯ 
  2. "অন পেজ এসইও"। ৬ সেপ্টেম্বর ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৯