এমেলিন প্যাঙ্কহার্স্ট

ইংরেজ নারী ভোটাধিকার আন্দোলনকর্মী (১৮৫৮-১৯২৮)

এমেলিন প্যাঙ্কহার্স্ট (ইংরেজি: Emmeline Pankhurst) একজন ব্রিটিশ রাজনৈতিক কর্মী ছিলেন। তিনি যুক্তরাজ্যে নারীর ভোটাধিকার আন্দোলনের জনক হিসেবে স্মরণীয় হয়ে আছেন। ১৯৯৯ সালে মার্কিন সাময়িকী টাইম তাঁকে বিংশ শতাব্দীর সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ১০০ জন ব্যক্তির একজন হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। টাইম-এর ভাষ্যমতে, "তিনি আমাদের সময়ের নারীদেরকে একটি ভিন্ন ছাঁচে গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেন" এবং "সমাজকে একটি নতুন ধারায় এমনভাবে তিনি উন্নীত করতে সক্ষম হয়েছেন যে, আমাদের সেই অতীতের নারীবিদ্বেষী সমাজকাঠামোয় ফিরে যাওয়া সম্ভব নয়।"[] প্যাঙ্কহার্স্ট তাঁর সহিংস কলাকৌশলের জন্য ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছেন। তা সত্ত্বেও তাঁর অবদান যুক্তরাজ্যে নারীর ভোটাধিকার আদায়ে অপরিহার্য বিবেচিত হয়।[]

এমেলিন প্যাঙ্কহার্স্ট

প্যাঙ্কহার্স্ট ম্যানচেস্টার নগরীর মস সাইড ডিস্ট্রিক্ট এলাকায় একটি রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বিবাহিত এবং অবিবাহিত নারীদের ভোটাধিকার আদায়ের লক্ষ্যে গঠিত দল "উইমেনস ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে" যোগ দেন। এই সংগঠনটি ভেঙে পড়লে প্যাঙ্কহার্স্ট তার বন্ধু বামপন্থী কেইর হার্ডির সহযোগিতায় ইনডিপেন্ডেন্ট লেবার পার্টিতে যোগ দেবার চেষ্টা করেন, কিন্তু নারী হওয়ার কারণে তিনি সদস্যপদ লাভে ব্যর্থ হন। দরিদ্র আইন বোর্ডের সদস্য (পুওর ল গার্ডিয়ান) হওয়ার সময় তিনি ম্যানচেস্টারের বিভিন্ন কর্মশালায় কাজের মানহীন পরিবেশ দেখে স্তম্ভিত হয়ে যান।

১৯০৩ সালে প্যাঙ্কহার্স্ট নারীদের সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন (ডব্লিউএসপিইউ) প্রতিষ্ঠা করেন, যা "কথায় নয়, বরং কাজে বিশ্বাসী ছিল।"[] এই দলটি নিজেদের সকল প্রকার রাজনৈতিক সংগঠনের সাথে যোগাযোগ করা থেকে বিরত রেখেছিল। জানালা ভাঙা, পুলিশ অফিসারদের আক্রমণ করাসহ নানাবিধ সহিংস পন্থা অবলম্বনের জন্য এটি পরিচিতি লাভ করে। প্যাঙ্কহার্স্ট এবং তাঁর কন্যারা এজন্য প্রায়ই কারাদণ্ডে দণ্ডিত হতেন। কারাগারে গিয়ে নারীদের অধিকার আদায়ের জন্য তাঁরা অনশন করতেন। সেখানে অনেক সময় তাঁদেরকে জোর করে খাওয়ানো হত। প্যাঙ্কহার্স্টের জ্যেষ্ঠ কন্যা ক্রিস্টাবেল ডব্লিউএসপিইউ-এর নেতৃত্ব গ্রহণ করলে সরকার ও দলের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি হতে থাকে। পরবর্তীতে প্যাঙ্কহার্স্টের কন্যা সিলভিয়া ও অ্যাডেলা দল ছেড়ে চলে যান।

১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে এমেলিন এবং ক্রিস্টাবেল সব ধরনের সহিংসতায় ইতি টানার জন্য আহবান জানান।[] তাঁরা মহিলাদের শিল্পোৎপাদন এবং সক্রিয়ভাবে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে উদ্বুদ্ধ করেন। এভাবে তারা হোয়াইট ফেদার আন্দোলনের মুখপাত্র হিসাবে সুনাম অর্জন করেন।[] ১৯১৮ সালের জনপ্রতিনিধিত্ব আইনে ২১ বছরের ঊর্ধ্বে সকল পুরুষ এবং ৩০ বছরের ঊর্ধ্বে সকল নারীকে ভোটাধিকার দেওয়া হয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ব্যাপক প্রাণহানির ফলে পুরুষরা যাতে সংখ্যালঘু ভোটারে পরিণত না হয়, সেজন্যই এ ব্যবধান রাখা হয়। []

বলশেভিকবাদের প্রভাবে ভীত হয়ে প্যাঙ্কহার্স্ট কনজারভেটিভ পার্টিতে যোগ দেন। ১৯২৭ সালে হোয়াইট চ্যাপেল এবং সেন্ট জর্জেস আসনে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।[] ২ জুলাই ১৯২৮ সালে সরকার ২১ বছরের নারীদের ভোটাধিকার প্রদান করে। এর দুই সপ্তাহ আগে ১৪ জুলাই তিনি শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর স্মরণে পার্লামেন্ট সংলগ্ন ভিক্টোরিয়া হাউস গার্ডেনে একটি মূর্তি নির্মাণ করা হয়।

প্রারম্ভিক জীবন

সম্পাদনা

১৮৫৮ সালের ১৫ই জুলাই ম্যানচেস্টারের মস সাইড ডিস্ট্রিক্টের স্লোন স্ট্রিটে এমেলিয়ার জন্ম। কিন্তু এমেলিয়া তার জন্মতারিখ ১৪ই জুলাই বলে উল্লেখ করেন।[]তার মা সোফিয়ার পূর্বপুরুষ আইল অব ম্যান হতে আগত। সেখানে তারা সামাজিক বিশৃঙ্খলা ও মানহানির দায়ে অভিযুক্ত হন।[] প্রসঙ্গত আইল অব ম্যান ১৮৮১ সালে বিশ্বে সর্বপ্রথম নারীদের ভোটাধিকার প্রদান করে।[] তার পিতা রবার্ট গোল্ডেনও রাজনৈতিক পরিবার থেকে উঠে আসেন। রবার্টের মা অ্যান্টি কর্ন ল লিগের সদস্য ছিলেন এবং বাবা পিটারলুতে সরকারবিরোধী বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন।[]

প্যাঙ্কহার্স্ট ছোটবেলা থেকেই প্রচুর বই পড়তেন,কিন্তু তিনি ভাইদের মত প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়ার সুযোগ পাননি। তার বাবা-মা নারীর ভোটাধিকারে বিশ্বাস করলেও নারীরা পুরুষের সমকক্ষ হতে পারবে - এ কথা বিশ্বাস করতেন না। একদিন প্যাঙ্কহার্স্ট ঘুমের ভান করে বিছানায় পড়ে ছিলেন। তখন তিনি তার বাবাকে বলতে শুনেন, "আহা রে বেচারি ছেলে হয়ে জন্মাল না। "[]

রবার্টের পরিবার দাসপ্রথা তীব্রভাবে বিরোধিতা করতেন। এমেলিন ছোটবেলায় দাসদের মুক্ত করার জন্য অর্থ সংগ্রহের কথা আত্মজীবনীতে লিখেছেন। []

এমেলিনের মা "উইমেনস সাফ্রেজ জার্নালস" পড়তেন।এরই সুবাদে এমেলিন এর সম্পাদিকা লিডিয়া বেকারের প্রতি আকৃষ্ট হন। লিডিয়া বেকার একদা তার শহরে এলে তিনি তার বক্তব্য শুনতে ছুটে চলে যান। সে দিন থেকেই, এমেলিনের নিজের ভাষায় - "আমি ভোটাধিকার আন্দোলনে শরীক হয়ে গেলাম।"[]

১৮৭৮ সালের শরৎকাল। এমেলিনের বয়স তখন বিশ বছর। তখন তার সাথে ৪৪ বছর বয়স্ক রিচার্ড প্যাঙ্কহার্স্টের দেখা হয়। প্যাঙ্কহার্স্ট নারীর ভোটাধিকার, মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং শিক্ষা সংস্কারে বিশ্বাসী ছিলেন। পূর্বে চিরকুমার থাকার সংকল্প গ্রহণ করলেও এমেলিনকে দেখে তিনি মুগ্ধ হয়ে যান। এমেলিনের মা সোফিয়া তাদের সম্পর্ক মেনে নিতে পারেননি।[]

সোফিয়ার মৃত্যুর পর এমেলিয়া রিচার্ডের সাথে আনুষ্ঠানিক বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হতে অস্বীকৃতি জানান। রিচার্ড তখন তাকে বলেন, বিয়ে না করলে তিনি কখনোই নারীর ভোটাধিকার আন্দোলনের অংশ হতে পারবেন না। অগত্যা এমেলিন পেন্ডলটনের সেন্ট লেকস চার্চে ১৮৭৯ সালের ১৮ ডিসেম্বর রিচার্ডকে বিয়ে করেন। []

এমেলিন পাঁচ সন্তানের জন্ম দিলেও তিনি এবং রিচার্ড মনে প্রাণে বিশ্বাস করতেন যে, তাকে গৃহবধূ হয়ে ঘরের কাজ করা মানায় না। [] পরবর্তীতে রিচার্ড বামপন্থী মতবাদে দীক্ষিত হলে এমেলিনের বাবার সাথে তার দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়। তারপর তারা লন্ডন চলে যান। লন্ডনে প্যাঙ্কহার্স্ট বোন মেরি জেনকে সঙ্গে নিয়ে এমারসন ফেব্রিকস নামে একটি কাপড়ের দোকান খুলেন। [১০]

প্যাঙ্কহার্স্টের ছেলে ফ্রান্সিস অনুন্নত পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার কারণে মৃত্যুবরণ করলে তারা রাসেল স্কয়ারে চলে যান। তার বাড়িটি সমাজসংস্কারকদের একটি অন্যতম পীঠস্থান হয়ে উঠেছিল। দাদাভাই নওরোজি, লুই মিশেল, হার্বার্ট ব্যারোস ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম। []

উইমেনস ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ

সম্পাদনা

নারীদের ভোটাধিকার আদায়ের লক্ষ্যে গড়ে ওঠা প্রথম সংগঠন "জাতীয় নারী ভোটাধিকার সংঘ" ১৮৮৮ সালে বিভক্ত হয়ে পড়ে। সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সংগঠনকে স্বীকৃতি জানালে লিডিয়া বেকার এবং মিলিসেন্ট ফোসেট ক্ষুব্ধ হয়ে "ওল্ড রুলস গ্রুপ"নামে একটি নতুন উপদল প্রতিষ্ঠা করেন। প্যাঙ্কহার্স্ট অবশ্য দলের মূল ধারা, বা "নিউ রুলস গ্রুপ"এর সাথে নিজেকে সংশ্লিষ্ট করেন। তবে নিউ রুলস গ্রুপ বিবাহিত নারীদের ভোটাধিকার দানে দ্বিধা প্রকাশ করলে প্যাঙ্কহার্স্ট ঐ দল ছেড়ে বিবাহিত ও অবিবাহিত নারী উভয়েরই অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে উইমেনস ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ প্রতিষ্ঠা করেন ।

১৮৮৯ সালের ২৫শে জুলাই তার বাসভবনে সর্বপ্রথম এর সভা আয়োজিত হয়। ক্রমেই সংগঠনটি উগ্রবাদী রূপ ধারণ করলে অনেকেই ঐ দল ছেড়ে চলে যান। এক বছরের মধ্যেই সংগঠনটির অবলুপ্তি ঘটে। []

ইনডিপেন্ডেন্ট লেবার পার্টি

সম্পাদনা

নানারকম আর্থিক সমস্যার মুখে পতিত হয়ে প্যাঙ্কহার্স্ট পরিবার লন্ডন ছেড়ে ম্যানচেস্টার চলে যায়। [] ম্যানচেস্টার থাকাকালীন তিনি লিবারেল পার্টির নারী শাখা "উইমেনস লিবারেল ফাউন্ডেশন"-এ যোগ দেন। পরবর্তীতে বামপন্থী কেইর হার্ডির সাথে তার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠলে তিনি এই দল ছেড়ে ইন্ডিপেনডেন্ট লেবার পার্টি(আইএলপি)-তে যোগ দেবার জন্য আগ্রহ জানান। নারী হওয়ার কারণে এর স্থানীয় সদস্যপদ পেতে ব্যর্থ হলেও তিনি কেন্দ্রীয় সদস্যপদ পান। আইএলপি পুনঃসংগঠনে তার ভূমিকা ছিল অনস্বীকার্য। []

প্যাঙ্কহার্স্ট পরবর্তীতে পুওর ল গার্ডিয়ান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং চাকরির অংশ হিসেবে প্রায়ই তিনি বিভিন্ন কারখানা পরিদর্শনে যেতেন।সেখানে নারীদের দুর্দশা তাকে ব্যথিত করে।

বোগার্ট হল ক্লতে সভা-সমাবেশ আয়োজনে আইনি নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও প্যাঙ্কহার্স্ট সভা আয়োজন করায় তিনিসহ মোট তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। প্যাঙ্কহার্স্টের স্বামী রিচার্ড তাকে এই আইনি লড়াইয়ে সহায়তা করেন। বাকি দুইজন দণ্ডিত হলেও ম্যাজিস্ট্রেট প্যাঙ্কহার্স্টকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেন। []

রিচার্ডের মৃত্যু

সম্পাদনা
 
রিচার্ড প্যাঙ্কহার্স্ট

আইনি লড়াইয়ের সময় রিচার্ডের শরীর মারাত্মকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে। পেটে ব্যথা,গ্যাস্ট্রিক আলসারসহ নানা রোগে তিনি আক্রান্ত হন। ১৮৯৮ সালের জুনে এমেলিন বন্ধুর সাথে দেখা করতে সুইজারল্যান্ড যান। এসময় রিচার্ডের টেলিগ্রাম আসে - "প্রিয়া, আমার শরীরটা ভালো নেই। তুমি ইংল্যান্ড ফিরে এস। " ইংল্যান্ড ফেরার পথে ট্রেনে ৬ জুন তিনি খবরের কাগজে স্বামীর মৃত্যুসংবাদ পান।

নারীদের সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন(ডব্লিউএসপিইউ)

সম্পাদনা

১৯০৩ সালের দিকে প্যাঙ্কহার্স্ট বিশ্বাস করতে শুরু করেন,সংসদ সদস্যদের নারীদের ভোটাধিকার বিষয়ক বক্তৃতা ও ওয়াদা শুধু কিছু আওড়ে যাওয়া বুলি। ১৮৭০,১৮৮৬ ও ১৮৯৭ সালে নারীদের ভোটাধিকার বিষয়ক সংসদে উত্থাপিত বিলগুলো আইনে পরিণত হতে ব্যর্থ হয়। আইএলপি নারীদের ভোটাধিকারের ইস্যুকে গুরুত্ব দিতে ব্যর্থ হলে তিনি ঐ দলটি ছেড়ে ১৯০৩ সালের ১০ই অক্টোবর নারীদের সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন (ডব্লিউএসপিইউ) প্রতিষ্ঠা করেন। []

শুরুতে এর কার্যপদ্ধতি সহিংস ছিল না। এটি প্রতিষ্ঠালগ্নে শোভাযাত্রা আয়োজন করত এবং "নারীদের জন্য ভোট" নামক ক্রোড়পত্র প্রকাশ করত। ১১৯০৫ সালের ১২ মে নারীদের ভোটাধিকার নিশ্চিতকরণে সংসদে আনা বিল "ফিলিবাস্টার্ড"(কৌশলে বিল আটকে রাখা, যাতে সংসদের অধিবেশন শেষ হওয়ার আগে যাতে এ বিষয়ে ভোট না আয়োজিত হয়) হওয়ায় সংসদ ভবনের সামনে দলটি গণবিক্ষোভের আয়োজন করে। বিক্ষোভটি পুলিশ ছত্রভঙ্গ করে দেয়।[]

১৯০৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী হার্বার্ট হেনরি আসকুইথের কাছে প্রতিবাদনামা দিতে সংসদে প্রবেশ করতে গিয়ে তিনি প্রথমবারের মত গ্রেফতার হন।[] ১৯১৮ সালের পূর্বে এভাবে তিনি নয়বার গ্রেফতার হন।

প্যাঙ্কহার্স্টের দলটি সকল প্রকার রাজনৈতিক দলের সাথে সংস্রব থেকে নিজেদের বিরত রেখেছিল। লিবারেল পার্টি নারীর ভোটাধিকার আদায়ে আইন পাসে অস্বীকৃতি জানালে লিবারেল পার্টি এবং ডব্লিউএসপিইউয়ের মধ্যে সংঘাত অনিবার্য হয়ে দাঁড়ায়।[]

পার্টিনেতা বিলিংটন গ্রেইগ তৃণমূল ভোটাধিকারকর্মীদের অধিকতর ক্ষমতা দানের আহবান জানান। প্যাঙ্কহার্স্ট এর বিরোধিতা করলে বিলিংটন গ্রেইগ এবং শার্লট ডেসপার্ড ১৯১৪ সালে উইমেনস ফ্রিডম লিগ প্রতিষ্ঠা করে।[]

১৯০৮ সালের ২৬শে জুন হাইড পার্কে ৫,০০,০০০ মহিলা ভোটাধিকার আদায়ের লক্ষ্যে আন্দোলন করে। কিন্তু সংসদ সদস্যরা এই আন্দোলন উপেক্ষা করেন। ক্রোধান্বিত হয়ে দুইজন ডব্লিউএসপিইউ কর্মী দশ নং ডাউনিং স্ট্রিটে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে পাথর নিক্ষেপ করে।

১৯০৯ সালে সংগঠনের কর্মীরা অনশন শুরু করেন। এটি কার্যকর প্রমাণিত হলে জেলবন্দি কর্মীরাও অনশন শুরু করেন। জেলে তাদের জোর করে খাওয়ানো হতো।

সংবাদমাধ্যমগুলো এসকল পদক্ষেপের বিষয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখায়। কেউ কেউ প্যাঙ্কহার্স্টের বক্তৃতার প্রশংসা করলেও অনেকেই সহিংস পদক্ষেপের সমালোচনা করেন। ১৯০৬ সালে ডেইলি মেইল তাদের সাফ্রাজিস্ট হিসেবে আখ্যা দিলে এটি ডব্লিউএসপিইউয়ের কর্মীদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়।[]

বিংশ শতাব্দীর প্রথম দশক প্যাঙ্কহার্স্টের জন্য বিষাদ ,নিঃসঙ্গতা ও কর্মব্যস্ততার দশক ছিল। তিনি ১৯০৭ সালে ম্যানচেস্টারের বাড়ি বিক্রি করে অনেকটা যাযাবর জীবনযাপন করতে থাকেন। ১৯০৯ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে বক্তৃতা দিতে যান। এ সময় তার ছেলে হেনরির স্পাইনাল কর্ড বড় হয়ে যায়। ১৯১০ সালের ৫ই জানুয়ারি হেনরি মৃত্যুবরণ করে। পাঁচ দিন পর পাঁচ হাজার লোকের সামনে তিনি হেনরিকে দাফন করেন ও বক্তব্য রাখেন। লিবারেল পার্টির সদস্যরা তাকে বাধা দিতে এলেও তারা সম্পূর্ণ বক্তব্য স্তব্ধ হয়ে শ্রবণ করে।[]

১৯১০ সালের নির্বাচনে লিবারেল পার্টির হারের পর সাংবাদিক হেনরি ব্রেইলসফোর্ড একটি "মীমাংসা কমিশন"গঠন করেন। এর সদস্য ছিলেন ৫৪ জন সাংসদ। ঐ কমিশনের প্রস্তাবিত বিলে কিছু সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও সেটি আইনে পরিণত হলে অনেক নারীর ভোটাধিকার নিশ্চিত করত । পার্লামেন্ট একে আইনে পরিণত করতে অস্বীকৃতি জানালে তিনি ১৮ নভেম্বর পার্লামেন্ট চত্বরে ৩০০ নারীর একটি শোভাযাত্রায় নেতৃত্ব দেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিলের নির্দেশে কঠোরভাবে বিক্ষোভকারীদের দমন করা হয়। দিনটি "ব্ল্যাক ফ্রাইডে" নামে পরিচিতি লাভ করে। এমেলিনের বোন মেরি জেন এতে অংশগ্রহণ করেন এবং আটক হন। জেল থেকে মুক্তির দুই দিন পরে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।[১১]

পরবর্তীতে অনেকগুলো মীমাংসা বিল উত্থাপন করারা হয়, কিন্তু সবগুলোই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। ১৯১২ সালের মার্চে প্যাঙ্কহার্স্ট জানালা ভাঙার কর্মসূচিতে যোগ দেন। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হওয়ায় তিনি "সম্পত্তি নষ্টের চক্রান্ত করার" অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হন। তাঁর মেয়ে ক্রিস্টাবেলের বিরুদ্ধে মামলা হলেও তিনি ফ্রান্সে পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। হলোওয়ে জেলে বন্দি থাকার সময় তাকে জোর করে খাওয়ানো হত। জোর করে খাওয়ানোর নিষ্ঠুর এই প্রক্রিয়া ফোর্স ফিডিং নামে কুখ্যাত ছিল। এটি এমেলিনকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে। অতঃপর প্যাঙ্কহার্স্ট আত্মহত্যার হুমকি দিলে ফোর্স ফিডিংয়ের প্রচেষ্টায় ছেদ পড়ে। []

"ক্যাট এন্ড মাউস" আইন প্রয়োগ করে আসকুইথ সরকার প্যাঙ্কহার্স্টসহ অনেক সাফ্রাজিস্টকে মুক্তি দেয়। তা সত্ত্বেও তাকে প্রায়ই গ্রেফতার করা হত। হয়রানি এড়ানোর লক্ষ্যে তিনি প্রায়ই ছদ্মবেশ পরিধান করতেন। এমনকি একজন জুজুৎসু জানা মহিলা তার নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে কাজ করতেন।[]

১৯১২ সালে অগ্নিসংযোগকে প্রতিবাদের নতুন মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করে। আসকুইথ ডাবলিনে থিয়েটার রয়্যাল পরিদর্শনের পর সাফ্রাজিস্টরা বারুদ এবং বেনজিন ব্যবহার করে থিয়েটারটিকে বিস্ফোরিত করার ব্যর্থ চেষ্টা চালায়। পরবর্তীতে সাফ্রাজিস্টরা রিজেন্ট পার্কের প্রমোদশালা, কেউ গার্ডেনের অর্চিড পুষ্পোদ্যান এবং একটি রেলওয়ের বগিতে আগুন ধরিয়ে দেন। এমেলিন ও ক্রিস্টাবেল প্রত্যক্ষ সংশ্লিষ্টতা অস্বীকার করলেও তারা এ সকল পদক্ষেপকে স্বাগত জানান।[]

উইমেনস পার্টি

সম্পাদনা

১৯১৮ সালের নির্বাচনে সর্বপ্রথম নারীদের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার অনুমতি দেওয়া হয়। উক্ত নির্বাচনে স্ট্যাফোর্ডশায়ারের স্মেথউইক আসন থেকে ক্রিস্টাবেল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং লেবার পার্টির জন ডেভিডসনের কাছে ৭৭৫ ভোটের ব্যবধানে হেরে যান।[১২]

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ২৬ আগস্ট ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ আগস্ট ২০২০ 
  2. Bartley, Paula (২০০২)। Emmeline Pankhurst 
  3. Pankhurst, Emmeline। My Own Story 
  4. Purvis, June। Emmeline Purvis:A Biography 
  5. http://itech.fgcu.edu/&/issues/vol1/issue1/feather.htm
  6. https://web.archive.org/web/20160304113052/http://www.parliament.uk/about/living-heritage/transformingsociety/electionsvoting/womenvote/parliamentary-collectionsdelete/representation-of-the-people-act-1918
  7. "Lord Lexden reminds Conservatives that Mrs Pankhurst joined their Party in the 1920s"Lord Lexden OBE (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৮-২৪ 
  8. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ৪ নভেম্বর ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ আগস্ট ২০২০ 
  9. Pankhurst, E.S. (১৯৭০)। The Suffragette Movement 
  10. https://books.google.com/?id=a2EK9P7-ZMsC&pg=PA691&lpg=PA691&dq=Mary+Clarke+suffragette#v=onepage&q=Mary%20Clarke%20suffragette&f=false
  11. Crawford, Elizabeth (২০০৩-০৯-০২)। The Women's Suffrage Movement: A Reference Guide 1866-1928 (ইংরেজি ভাষায়)। Routledge। আইএসবিএন 978-1-135-43402-1 
  12. "Taking On The Men - The First Women Parliamentary Candidates 1918 - David J.A. Hallam"www.brewinbooks.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৮-২৪