উমেশচন্দ্র দত্ত

বাঙালি লেখক

উমেশচন্দ্র দত্ত ( জন্ম :- ১৬ ডিসেম্বর, ১৮৪০ - মৃত্যু :- ১৯ জুন, ১৯০৭ ) এক সমাজ সংস্কারক ও শিক্ষাবিদ। [১]

উমেশচন্দ্র দত্ত
Umesh Chandra Dutta.jpg
উমেশচন্দ্র দত্ত
জন্ম১৬ ডিসেম্বর, ১৮৪০
মৃত্যু১৯ জুন, ১৯০৭ (বয়স ৮০)
জাতীয়তাভারতীয়
পেশাসমাজ সংস্কারক ও শিক্ষাবিদ
পিতা-মাতাহরমোহন দত্ত (পিতা)

জন্ম ও প্রারম্ভিক জীবনসম্পাদনা

উমেশচন্দ্র দত্তের জন্ম পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলার মজিলপুরে । পিতার নাম হরমোহন দত্ত । ১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দে ভবানীপুর লণ্ডন মিশনারি সোসাইটি ইনস্টিটিউশন থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন। ওই বছরেই তিনি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর কেশবচন্দ্র সেনের সান্নিধ্যে এসে ব্রাহ্ম ধর্ম গ্রহণ করেন । পরে মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হন, কিন্তু অর্থাভাবে পড়াশোনা বন্ধ রাখেন । ১৮৬২ খ্রিস্টাব্দ থেকে রাজপুর,হরিনাভিসহ বিভিন্ন স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করেন । ১৮৬৭ খ্রিস্টাব্দে প্রাইভেটে বি.এ.পাশ করেন । এই বছরেই ব্রাহ্মমতে বিবাহ হয় এবং সপরিবারে কেশবচন্দ্র সেনের ' ভারত আশ্রম' ভুক্ত হন। সাথে সাথে শিক্ষা ও সংস্কৃতিবিষয়ক বিভিন্ন কাজে যোগদান করেন ।

কর্মজীবনসম্পাদনা

১৮৭৯ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় সিটি স্কুল প্রতিষ্ঠিত হলে উমেশচন্দ্র তার প্রধান শিক্ষক এবং ১৮৮১ খ্রিস্টাব্দে সিটি কলেজ প্রতিষ্ঠার সময় থেকে আমৃত্যু তার অধ্যক্ষ ছিলেন।

অন্যান্য অবদানসম্পাদনা

তিনি মজিলপুরে দক্ষিণ ২৪ পরগণার প্রথম এবং সম্ভবত পশ্চিমবঙ্গের তৃতীয় বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করেন। এই বিদ্যালয় স্থাপন করবার জন্য তাকে জমিদারের প্রবল অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছিল । ১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি তার তিন বন্ধু যামিনীনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, শ্রীনাথ সিংহ ও মোহিনীমোহন মজুমদারের সহায়তায় কলকাতার মানিকতলায় মূকবধির বিদ্যালয় স্থাপন করেন ও তার সম্পাদক নিযুক্ত হন ।

সাধারণ ব্রাহ্মসমাজসম্পাদনা

১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দে কেশববিরোধী সাধারণ ব্রাহ্ম সমাজ প্রতিষ্ঠায় উমেশচন্দ্রের অগ্রগণ্য ভূমিকা ছিল। শিবনাথ শাস্ত্রীর কথা অনুযায়ী সেসময় সাধারণ ব্রাহ্ম সমাজে যে তিনজন আদর্শবাদী মানুষ ছিলেন তারা হলেন আনন্দমোহন বসু,শিবচন্দ্র দেব ও উমেশচন্দ্র দত্ত । উমেশচন্দ্র সেসময় সাধারণ ব্রাহ্ম সমাজের সম্পাদক ও সভাপতি ছিলেন ।

নারীদের শিক্ষাবিস্তারে ভূমিকাসম্পাদনা

সেসময় বাংলায় নারীশিক্ষা খুবই অবহেলিত ছিল। উমেশচন্দ্র দত্ত ১৮৬৩ খ্রিষ্টাব্দে বাংলার নারীদের মধ্যে শিক্ষার আলো এবং সচেতনতা আনার জন্য এবং তাদের মনের কথা তুলে ধরার জন্য একটি মহিলা মাসিক পত্রিকা বামাবোধিনী প্রকাশ করেন । এই পত্রিকাটি তিনি আমৃত্যু চুয়াল্লিশ বছর ধরে সম্পাদনা করেন । এছাড়া ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দে দুটি গ্রন্থও প্রকাশ করেন -

  • 'বামারচনাবলী'
  • 'স্ত্রীলোকদিগের বিদ্যার আবশ্যকতা'

উমেশচন্দ্র কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেনেটের সদস্য ছিলেন । শিলাইদহে মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের সমাধিতে 'দাঁড়াও পথিকবর জন্ম তব ....' খোদিত ফলকটি তার উদ্যোগেই স্থাপিত হয়েছিল ।

কলকাতায় ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দে তারই নামাঙ্কিত স্নাতক কলেজ উমেশচন্দ্র কলেজ স্থাপিত হয় ।

তথ্যসূত্রসম্পাদনা

  1. সুবোধচন্দ্র সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, প্রথম খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, আগস্ট ২০১৬ পৃষ্ঠা ১০১, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-১৩৫-৬

পশ্চিমবঙ্গ - জেলা দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা সংখ্যা - পৃ ২৭২