উপক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়
উপক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড় বলতে এমন একটি আবহাওয়া ব্যবস্থাকে বোঝায় যার মধ্যে ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড় ও অ-ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড় উভয়েরই বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান।[১]
কমপক্ষে ১৯৫০-এর দশক থেকেই আবহাওয়াবিজ্ঞানীরা এ ধরনের ঘূর্ণিঝড়কে ক্রান্তীয় নাকি অ-ক্রান্তীয় হিসেবে চরিত্রায়িত করা উচিত, সে ব্যাপারে অনিশ্চিত ছিলেন। ১৯৭২ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় হারিকেন কেন্দ্র এগুলিকে আনুষ্ঠানিকভাবে উপক্রান্তীয় হিসেবে স্বীকৃতি দান করে। উত্তর আটলান্টিক অঞ্চলে ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড় তথা হারিকেনগুলির নামের যে আনুষ্ঠানিক তালিকা ব্যবহার করা হয়, ২০০২ সাল থেকে উপক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়গুলির নামও সেখান থেকে গ্রহণ করা হচ্ছে। এছাড়া দক্ষিণ-পশ্চিম ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চল ও দক্ষিণ আটলান্টিক অঞ্চলগুলিতেও উপক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়গুলি স্বীকৃতি লাভ করেছে।
অবস্থান অনুযায়ী বর্তমানে উপক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়ের দুইটি সংজ্ঞা ব্যবহৃত হয়। উত্তর আটলান্টিক ও দক্ষিণ-পশ্চিম ভারত মহাসাগরে সংজ্ঞানুযায়ী এগুলির উষ্ণায়মান কেন্দ্রকে ঘিরে একটি কেন্দ্রীয় পরিচলন থাকতে হয়, যা ট্রপোমণ্ডলের মধ্যস্তরে বিরাজ করে। তবে উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরের পূর্বার্ধের সংজ্ঞানুযায়ী এটি হল এক ধরনের মধ্য-ট্রপোমণ্ডলীয় ঘূর্ণিঝড় যেটি পশ্চিমা বায়ুর মূল বেষ্টনী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে ও যার পৃষ্ঠতলের বায়ুসঞ্চালন দুর্বল। উপক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়গুলি বায়ুপ্রবাহ ক্ষেত্র অপেক্ষাকৃত বেশি প্রশস্ত হয়ে থাকে এবং এগুলি সর্বোচ্চ অব্যাহত বায়ুপ্রবাহগুলি সাধারণ ক্রান্তিয় ঘূর্ণিঝড়গুলির তুলনায় কেন্দ্র থেকে অধিক দূরে অবস্থান করে। এছাড়া এগুলির কেন্দ্রের সাথে কোনও আবহাওয়া প্রাচীরের সংশ্লিষ্টতা থাকে না।[২]
উপক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়গুলি প্রাথমিকভাবে অ-ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড় থেকে উৎপত্তি লাভ করে, যেগুলির ঊর্ধ্বাংশের তাপমাত্রা ক্রান্তিবৃত্তের ঘূর্ণিঝড়গুলির তুলনায় শীতল হয়ে থাকে। তাই উপক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়গুলি গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় সমুদ্রতল তাপমাত্রার পরিমাণ ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়ের তাপমাত্রা-সীমার (২৭.৫° সেলসিয়াসের কাছাকাছি) তুলনায় প্রায় ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস কম হয়ে থাকে,[৩] অর্থাৎ প্রায় ২৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি থাকে। এ কারণে উপক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়গুলি উত্তর আটলান্টিক ঘূর্ণিঝড় মৌসুমের ঐতিহ্যগত সময়সীমার বাইরে ও উচ্চতর অক্ষাংশে গঠিত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এছাড়া দক্ষিণ আটলান্টিক অঞ্চলেও উপক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়গুলি প্রায় প্রতি মাসেই দেখতে পাওয়া যায়।[৪]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ Mark P. Guishard; Jenni L. Evans; Robert E. Hart (জুলাই ২০০৯)। "Atlantic Subtropical Storms. Part II: Climatology"। Journal of Climate। 22 (13): 3574–3594। এসটুসিআইডি 51435473। ডিওআই:10.1175/2008JCLI2346.1 । বিবকোড:2009JCli...22.3574G।
- ↑ Jenni L. Evans; Mark P. Guishard (জুলাই ২০০৯)। "Atlantic Subtropical Storms. Part I: Diagnostic Criteria and Composite Analysis"। Monthly Weather Review। 137 (7): 2065–2080। ডিওআই:10.1175/2009MWR2468.1 । বিবকোড:2009MWRv..137.2065E।
- ↑ Tory, K. J.; Dare, R. A. (২০১৫-১০-১৫)। "Sea Surface Temperature Thresholds for Tropical Cyclone Formation"। Journal of Climate (ইংরেজি ভাষায়)। 28 (20): 8171–8183। আইএসএসএন 0894-8755। এসটুসিআইডি 140543585। ডিওআই:10.1175/JCLI-D-14-00637.1 । বিবকোড:2015JCli...28.8171T।
- ↑ Jenni L. Evans; Aviva J. Braun (নভেম্বর ২০১২)। "A climatology of subtropical cyclones in the south Atlantic"। Journal of Climate। 25 (21): 7328–7340। ডিওআই:10.1175/JCLI-D-11-00212.1 । বিবকোড:2012JCli...25.7328E।