ইস্তিগফার

ইসলামি ইবাদতের কাজ

ইস্তিগফার (আরবি: استغفار istiġfār) হলো আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনার একটি প্রক্রিয়া। সাধারণত, এটি আস্তাগফিরুল্লাহ (أَسْتَغْفِرُ ٱللَّٰهَ) অর্থাৎ "আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই" এই বাক্যটি বলার মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। এছাড়াও, আস্তাগফিরুল্লাহ রাব্বি ওয়া আতুবু ইলাইহি (أَسْتَغْفِرُ ٱللَّٰهَ رَبِّي وَأَتُوبُ إِلَيْهِ) অর্থাৎ "আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই, যিনি আমার প্রতিপালক, এবং আমি তার দিকেই প্রত্যাবর্তন করি (অনুতপ্ত হই)" এই বাক্যটিও ক্ষমা প্রার্থনার জন্য ব্যবহৃত হয়।[] ইসলামে এটিকে ইবাদতের একটি অপরিহার্য অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

শব্দতত্ত্ব

সম্পাদনা

ইসতিগফার শব্দটি গফর 'গইন-ফা-র' (غ-ف-ر) ধাতুমূল হতে উৎসরিত, যার অর্থ কোন কিছুকে ঢেকে রাখার পর্দা যা তাকে ধুলোময়লা থেকে রক্ষা করে।

"ইস্তিগফার" অর্থ হলো আল্লাহর কাছে এই প্রার্থনা করা যে তিনি যেন প্রার্থনাকারীকে ইহকাল ও পরকালে জাগতিক আকাঙ্ক্ষা থেকে রক্ষা করেন। "আস্তাগফিরুল্লাহ"-এর আক্ষরিক অর্থ হলো "আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই"।[] সাধারণত, একজন মুসলিম এটি জিকিরের অংশ হিসেবে পাঠ করে থাকে, যার অর্থ হলো আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ অথবা সকল কল্যাণ আল্লাহর পক্ষ থেকেই আসে।

কোনো ভুল বা লজ্জাজনক কিছু দেখলে জনপ্রিয় সংস্কৃতিতেও এই বাক্যটি ব্যবহার করা হতে পারে।

উদ্দেশ্য

সম্পাদনা

ইসলামে বিশ্বাস করা হয় যে আল্লাহ মানবজাতিকে সৃষ্টি করেন নিজস্ব কর্ম নির্বাচনের ক্ষমতা দিয়ে। এই ক্ষমতার মাধ্যমে মানুষ হয় সৎ কাজ করে আল্লাহর আনুগত্য করতে পারে অথবা মন্দ কাজ করে তার অবাধ্য হতে পারে।[কুরআন ৭৬:৩] তবে মানবীয় ভুলের কারণে কেউ যদি পাপে লিপ্ত হয় বা নিজের প্রবৃত্তির কাছে পরাজিত হয়ে বিবেকের নির্দেশনা উপেক্ষা করে, তবে আল্লাহ তাদের জন্য ইস্তিগফার (ক্ষমা প্রার্থনা) করার সুযোগ দেন। সুতরাং, মুসলমানরা ইস্তিগফার ব্যবহার করে কারণ তারা বিশ্বাস করে যে এটি শয়তানের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে, যে তাদেরকে পাপের দিকে প্ররোচিত করে জাহান্নামের দিকে নিয়ে যেতে চায়।

ইস্তিগফার এবং একই মূল থেকে উদ্ভূত অন্যান্য কিছু শব্দ যেমন গফির, আল-গফুর, গাফফার কুরআনে সত্তরবারেরও বেশি উল্লেখ করা হয়েছে।[]

সাইয়িদুল ইসতিগফার বা শ্রেষ্ঠ ক্ষমা প্রার্থনা

সম্পাদনা

নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি সুদৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে সকালে সায়্যিদুল ইস্তিগফার পাঠ করবে, সে যদি সন্ধ্যা হওয়ার আগে মারা যায় তবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যে ব্যক্তি সুদৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে সন্ধ্যায় সায়্যিদুল ইস্তিগফার পড়ে সে যদি সকাল হওয়ার আগে মারা যায়, তবে জান্নাতে প্রবেশ করবে। -সহিহ বোখারি: ৬৩০৬

اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُكَ وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ وَأَبُوءُ لَكَ بِذَنْبِي فَاغْفِرْ لِي فَإِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা আনতা রাব্বি। লা ইলাহা ইল্লা আনতা। খালাকতানি ওয়া আনা আবদুকা। ওয়া আনা আলা আহদিকা। ওয়া ওয়া’দিকা মাসতাতা’তু। আউজু বিকা মিন শাররি মা-সানা’তু। আবুয়ু লাকা বিনি’মাতিকা আলাইয়্যা। ওয়া আবুয়ু লাকা বি জাম্বি। ফাগফিরলী। ফা ইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজ জুনবা ইল্লা আনতা।

অর্থ : হে আল্লাহ! একমাত্র আপনিই আমাদের প্রতিপালক। আপনি ব্যতীত আর কোনো উপাস্য নেই। আপনিই আমার স্রষ্টা এবং আমি আপনার দাস। আমি আপনার সঙ্গে কৃত ওয়াদা ও অঙ্গীকারের ওপর সাধ্যানুযায়ী অটল ও অবিচল আছি। আমি আমার কৃতকর্মের সব অনিষ্ট হতে আপানার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আমার উপর আপনার দানকৃত সব নেয়ামত স্বীকার করছি। আমি আমার সব গুনাহ স্বীকার করছি। অতএব, আপনি আমাকে ক্ষমা করুন। কেননা, আপনি ছাড়া আর কেউ গুনাহ ক্ষমা করতে পারবে না।[]


আরও দেখুন

সম্পাদনা

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. "হজরত আলি (আ.)-এর প্রার্থনাসমূহ"www.salmanspiritual.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৬-২১ 
  2. জাহেদ (২০১৭-০৪-০১)। "ইস্তিগফারের শক্তি – 'আস্তাগফিরুল্লাহ' (আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি)"দ্য সিয়াসাত ডেইলি (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৬-২১ 
  3. "ইসলামে ক্ষমা ও তওবা"IslamiCity (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ১২ মার্চ ২০১৮ 
  4. Muhammad Ali (২০০৮)। The religion of Islam। Indiana University।