ইয়েলো কোস্টার

কীটপতঙ্গের প্রজাতি

ইয়েলো কোস্টার(বৈজ্ঞানিক নাম: Acraea issoria (Hübner)) নিমফালিডি (Nymphalidae) গোত্র ও হেলিকনিনি (Heliconiinae) উপগোত্রের অন্তর্ভুক্ত প্রজাতি।

ইয়েলো কোস্টার
Yellow coster
ডানা বন্ধ অবস্থায়
ডানা খোলা অবস্থায়
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ: প্রাণীজগৎ
পর্ব: সন্ধিপদী
শ্রেণী: পতঙ্গ
বর্গ: লেপিডোপ্টেরা
পরিবার: Nymphalidae
গণ: Acraea
প্রজাতি: A. issoria
দ্বিপদী নাম
Acraea issoria
(Hübner, 1819)
প্রতিশব্দ

Pareba vesta

আকার সম্পাদনা

ইয়েলো কোস্টার এর প্রসারিত অবস্থায় ডানার আকার ৪৫-৮৫ মিলিমিটার দৈর্ঘ্যের হয়।[১]

বিস্তার সম্পাদনা

ভারত (হিমাচল প্রদেশ[২] থেকে পশ্চিমবঙ্গ, সিকিম হয়ে অন্ধ্রপ্রদেশ ও উত্তর-পূর্ব ভারত ) নেপাল , ভুটান, মায়ানমার ও পশ্চিম চীন ইত্যাদির বিভিন্ন অঞ্চলে এদের পাওয়া যায়।[৩]

বর্ণনা সম্পাদনা

প্রজাপতির দেহাংশের পরিচয় বিষদ জানার জন্য প্রজাপতির দেহ এবং ডানার অংশের নির্দেশিকা দেখুন:-

পুরুষ সম্পাদনা

ডানার উপরিতল : ডানার উপরিতলের বর্ণ হলদে-বাদামি। সামনের ডানার শীর্ষভাগ গোলাকৃতি । সেল-এর বহিঃপ্রান্তে কালো, পুরু ও ছোট দাগ দেখা যায় কোস্টার ঠিক নিচে। কোস্টাল প্রান্তরেখা ও সেল-এর উপরিভাগ কালচে বাদামি। শীর্ষভাগ (apex) ও টারমেন্ চওড়াভাবে কালচে বাদামি এবং সাব-টার্মিনাল হলুদ ছোপের সারিযুক্ত। টরনাস সরুভাবে কালচে বাদামি। শিরাগুলি শুরুতে হলদেটে এবং মধ্য ও শেষভাগে কালো। পিছনের ডানায় কোস্টা সরু কালো এবং টারমেন্ গোলাকৃতি ও সরুভাবে কালচে-বাদামি। সাব-টার্মিনাল হলুদ ছোপের সারিটি টার্মিনাল প্রান্তরেখা বরাবর বক্রভাবে বিস্তৃত এবং ছোপসারির ভিতরের কিনারা নিয়মিত ও অবিচ্ছিন্নভাবে সরু কালো করাতদাঁতি রেখা দ্বারা পরিবেষ্টিত। শিরাগুলি উপরের ডানারই অনুরূপ।

ডানার নিম্নতল : ডানার নিম্নতল ফ্যাকাশে হলুদ বা সাদাটে হলুদ ও কালো শিরা দ্বারা সুস্পষ্টভাবে চিত্রিত। পিছনের ডানায় সাব-টার্মিনাল অংশে শীর্ষভাগ থেকে ১বি শিরা পর্যন্ত বিস্তৃত বক্র ,আঁকাবাঁকা ও উভয়প্বার্শে কালো রেখা দ্বারা সীমায়িত (bordered) একটি অবিচ্ছিন্ন হলুদ পটি বা বন্ধনী বর্তমান। বন্ধনীর মধ্যভাগ থেকে শেষভাগ পর্যন্ত কালো সীমারেখা অপেক্ষাকৃত পুরু। উক্ত বন্ধনীর বহিঃকিনারা প্রতিটি শিরায় করাতদাঁতি আকৃতিবিশিষ্ট।

স্ত্রী সম্পাদনা

স্ত্রী-প্রকার উপরিতলে পুরুষ অপেক্ষা অধিকতর গাঢ় হলুদ ও কালচে শিরায় চিত্রিত। সামনের ডানা অতিরিক্ত কালচে-বাদামি দাগ-ছোপযুক্ত। কোস্টা, এপেক্স, টার্মেন ও সাব-টার্মিনাল ছোপগুলি পুরুষেরই অনুরূপ, তবে শীর্ষভাগ থেকে টার্মেন জোড়া কালচে-বাদামি পটিটি পুরুষ অপেক্ষা চওড়া (প্রায় পোস্ট-ডিসকাল অংশ পর্যন্ত বিস্তৃত)। কিছু স্ত্রী নমুনাতে সামনের ডানা প্রায় গোটাটাই কালচে বাদামি। পিছনের ডানাও পুরুষের অনুরূপ, তবে সাব-টার্মিনাল ছোপগুলির ভিতরের কিনারা জুড়ে অবস্থিত করাতদাঁতি দাগটি অনেক বেশি চওড়া ও স্পষ্ট।

ডানার নিম্নতল পুরুষ প্রকারের সহিত সামঞ্জস্যপূর্ণ। শুঙ্গ কালো; মাথা ও বক্ষদেশ (thorux) উপরিতলে কালো ও নিম্নতলে ঈষদ হলদে সাদা। মাথায় দুপাশে দুটি ক্ষুদ্র লাল বিন্দু বিদ্যমান। উদরের উপরিভাগ কালো ও প্রতিটি দেহখন্ডে উভয়পাশে একটি করে হলুদ বা হলদে সাদা বিন্দুযুক্ত। উদরের নিম্নভাগ সাদা ও সরু কালো প্বার্শরেখা যুক্ত।[১][৩]

আচরণ সম্পাদনা

এই প্রজাতির উড়ান ধীর ও ডানা ঝাপটে ঝাপটে ওড়ে (fluttering flight)। এদের উড়ান ডানাইড (Danaids) প্রজাতির থেকেও ধীর এবং বিরক্ত হলে বা ভয় পেলেও এদের উড়ানের গতিবেগের কোনো তারতম্য ঘটে না। প্রায়শই এদের ফুল ও পাতায় অবস্থান করতে দেখা যায়। এই প্রজাতির স্বভাব স্থানিক (territorial); সাধারণত এক-একটা বিশেষ এলাকায় এদের প্রচুর সংখ্যায় দেখা যায়, কারণ এরা এদের আহার্য গাছের আশেপাশেই ঘোরাফেরা করে, দূরে যায় না। এরা মাটির কাছাকাছি নিচ দিয়ে ওড়ে এবং জঙ্গলের কিনারে মুক্ত ও ঝোপঝাড়পূর্ণ পরিবেশে বসবাস করতে পছন্দ করে; তবে জঙ্গলে কখনোই বাস করে না। পাহাড়ি অঞ্চলে ৭০০ থেকে ২৪০০ মি, উচ্চতা পর্যন্ত এদের বিচরণ চোখে পরে। সাধরনত মার্চ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত এদের দর্শন মেলে; তবে জুনের শেষ সপ্তাহ থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এদের প্রচুর সংখ্যায় দেখা যায়। ইয়েলো কোস্টারের আরেকটি লক্ষণীয় বিষয় হলো, স্ত্রী প্রকারের উদরের শেষে স্পষ্ট কাটার মতো একটি গোঁজ দেখা যায় । প্রথমবার যৌন মিলনের পরে স্ত্রী-দেহে এটি চোখে পরে এবং ইহার কারণে একবার যৌন মিলনের পরে স্ত্রী-প্রকার আর অন্য কোনো পুরুষের সাথে মিলিত হতে পারে না ।[৪]

বৈশিষ্ট্য সম্পাদনা

ডিম সম্পাদনা

ডিম কমলা বর্ণের ও পাতার নিচে একসাথে অনেকগুলো ডিম পাড়ে। জুন জুলাই মাসে প্রচুর ডিম চোখে পরে। প্রায় ২০ দিন পর ডিম ফুটে শুককীট (larva) বের হয়।[৩]

শূককীট এবং মূককীট সম্পাদনা

শুককীট ও মুককীট আকৃতিতে হরিনছড়া এর সদৃশ। শুককীট কালো, সারা গায়ে রোঁয়াযুক্ত কালো কাঁটায় (spine) ভরা, মাথা লালচে বর্ণের। শুককীটগুলি একত্রে উন্মুক্তভাবে ঘোরাফেরা করে এবং নিজেদের লুকিয়ে রাখার কোনো প্রচেষ্টাই করে না কারণ এদের অনভিপ্রেত গন্ধ ও স্বাদই খাদকের হাত থেকে এদের রক্ষা কবচ যদিও মাঝে মধ্যে প্যারাসাইটেড ওয়াষ্পের (wasp) আক্রমণ এড়াতে পারে না। মুককীট সাদা ও লম্বালম্বিভাবে কালো ডোরাযুক্ত। কালো দাগের উপরে প্রতিটি দেহখন্ডে একটি হলুদ (এলা মাটির রঙের ) বিন্দু যুক্ত ( হরিনছড়া এর ক্ষেত্রে যেগুলি লাল)। মুককীটগুলি গাছের সরু ডাল, পাতা থেকে মাথা নিচের দিকে অবস্থায় ঝুলে থাকে। মুককীট থেকে পূর্ণাঙ্গ প্রজাপতি হতে ১৫ দিন বা তার বেশি সময় লাগে।[৫]

চিত্রশালা সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Isaac, Kehimkar (২০১৬)। BHNS Field Guides Butterflies of India। Mumbai: Bombay Natural History Society। পৃষ্ঠা 396–397। আইএসবিএন 9789384678012 
  2. Garlani, Lovish (২০২৪)। Butterflies of Himachal Pradesh Annotated checklist। Chandigarh: Printing on Demand Printing press। পৃষ্ঠা 31। আইএসবিএন 9789334028683 
  3. Wynter-Blyth, M.A. (1957) Butterflies of the Indian Region, pg 234.
  4. Isaac, Kehimkar (২০০৮)। The book of Indian Butterflies (ইংরেজি ভাষায়) (1st সংস্করণ)। নতুন দিল্লি: অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস। পৃষ্ঠা ৩৫৬। আইএসবিএন 978 019569620 2 
  5. দাশগুপ্ত, যুধাজিৎ (২০০৬)। পশ্চিমবঙ্গের প্রজাপ্রতি (১ম সংস্করণ সংস্করণ)। কলকাতা: আনন্দ। পৃষ্ঠা ৮০। আইএসবিএন 81-7756-558-3