ইবন আল-সারি আল-জাজ্জাজ
আবু ইসহাক ইব্রাহিম ইবন মুহাম্মাদ ইবন আল-সারি আল-জাজ্জাজ ছিলেন বসরার একজন ব্যাকরণবিদ, ভাষাবিজ্ঞান ও ধর্মতত্ত্বে পণ্ডিত এবং আব্বাসি রাজদরবারের অন্যতম সদস্য। তার রচিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থসমূহ হল কিতাব মা ফাসারাহু মিন জামি আন-নুক্ত, কিতাব মানি আল-কুরআন ও কিতাব আল-ইশতিকাক। তিনি ৯২২ সালে[ক][১] বাগদাদে মৃত্যুবরণ করেন।[২][৩][৪]
ইবন আল-সারি আল-জাজ্জাজ | |
---|---|
জন্ম | আবু ইসহাক ইব্রাহিম ইবন মুহাম্মাদ ইবন আল-সারি আল-জাজ্জাজ আনু. ৮৪২ |
মৃত্যু | ১৩ অক্টোবর ৯২২ | (বয়স ৮০)
অন্যান্য নাম | ‘দ্য গ্লাসম্যান’ |
পেশা | ব্যাকরণবিদ, ভাষাবিদ, ধর্মতাত্ত্বিক |
কর্মজীবন | আল মুতাদি খিলাফত |
উচ্চশিক্ষায়তনিক কর্ম | |
যুগ | আব্বাসি |
বিদ্যালয় বা ঐতিহ্য | বসরা শাখা |
প্রধান আগ্রহ | ভাষাবিজ্ঞান, ধর্মতত্ত্ব, দর্শন, প্রাকৃতিক বিজ্ঞান |
উল্লেখযোগ্য কাজ | কিতাব মা ফাসারাহু মিন জামি আন-নুক্ত |
জীবনীসম্পাদনা
আবু ইসহাক ইব্রাহিম ইবন মুহাম্মাদ ইবন আল-সারি আল-জাজ্জাজ কাঁচ চূর্ণক হিসেবে কাজ করতেন। এরপর তিনি বসরা শাখার আল-মুবাররাদ এবং কুফা শাখার থা'লাবের অধীনে ভাষাতত্ত্ব নিয়ে পড়াশোনা করেন। তারা দুজনেই সে সময়ের অন্যতম সেরা ব্যাকরণবিদ ছিলেন। তার শ্রেণির সেরা শিক্ষার্থী ছিলেন এবং আল-মুবাররাদকে বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দিতেন। তিনি বসরার ব্যাকরণবিদ আবু ফাহদের সাথে সিবাওয়াইহের আল-কিতাব গ্রন্থ অধ্যয়ন করেন।[খ][৫]
আল-জাজ্জাজ উজির উবায়েদ আল্লাহ ইবন সুলায়মান ইবন ওয়াহাবের[গ] পুত্র আল-কাসিম ইবন উবায়েদ আল্লাহের শিক্ষক হিসেবে আব্বাসি রাজদরবারে প্রবেশ করেন।[ঘ] পরে তিনি খলিফা আল-মু'তাদিদের পুত্রদেরও শিক্ষকতা করেন।
খলিফা আল-মু'তাদিদ উজির আল-কাসিমকে মাহবারাহ্ আল-নাদিমের কম্পোডিয়াম অব স্পিচ-এর ব্যাখাকরণের নির্দেশ দেন।[ঙ] থা'লাব জ্ঞানের স্বল্পতা[৮] ও আল-মুবাররাদ বার্ধ্যকের কারণে এই প্রকল্পে কাজের জন্য অস্বীকৃতি জানান। আল-মুবাররাদ তার বন্ধ ও আত্মীয় আল-জাজ্জাজকে এই কাজটি করার প্রস্তাব দেন। জাজ্জাজ তার সক্ষমতা প্রদর্শনের জন্য পরীক্ষণমূলক দুটি অনুচ্ছেদের কাজ করার সুযোগ পান। গবেষণার কাজে তিনি থা'লাব, আল-সুক্কারি ও অন্যান্যদের ভাষা সম্পর্কিত বইয়ের সাহায্য নেন। তার শ্রুতিলেখক হিসেবে তাকে সাহায্য করেন ছোট আল-তিরমিদহি। দুটি অনুচ্ছেদের কাজ খলিফা আল-মু'তাদিদকে মুগ্ধ করে এবং তিনি আল-জাজ্জাজকে সম্পূর্ণ কাজের জন্য তিনশত স্বর্ণ দিনার প্রদান করেন। সম্পূর্ণ পাণ্ডুলিপি আল-মু'তাদিদের রাজগ্রন্থাগারে সংরক্ষিত হয় এবং অন্যান্য গ্রন্থাগারে কোন অনুলিপি রাখা নিষিদ্ধ করা হয়।[চ] খলিফার অনুগ্রহ লাভের পর তিনি তিনজন কর্মকর্তা তথা রাজ প্রতিনিধি, জুরি ও পণ্ডিতের কাজের জন্য রাজকীয় পেশসন হিসেবে তিনশত স্বর্ণমুদ্রা পান।[৯]
আল-জাজ্জাজের শিষ্যদের মধ্যে রয়েছেন ব্যাকরণবিদ আবু আলি আল-ফারিসি, জুমাল ফি ন-নাউহির লেখক আবু আল-কাসিম আব্দ আর-রহমান[ছ] ইবন আল-সাররাজ[১১] ও আলি আল-মারাগহি।[জ]
আল-জাজ্জাজ আল-খায়াতের সাথে যুক্তিতর্কে জড়ান।[১৩][১৪] আল-খায়াত ছিলেন সমরকন্দের একজন ব্যকরণবিদ, যার সাথে আল-জাজ্জাজের পরিচয় হয়েছিল বাগদাদে।[১৫]
আল-জাজ্জাজ ৯২২ খ্রিষ্টাব্দের ১৩ই অক্টোবর (১৮ বা ১৯ জমাদিউস সানি ৩১০ হিজরি), অন্যান্য সূত্র অনুসারে ৯২৪ বা ৯২৮ খ্রিষ্টাব্দ (৩১১ বা ৩১৬ হিজরি) আশি বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।
নির্বাচিত কর্মসম্পাদনা
- কিতাব মা ফাস্সারাহু মিন জামি আল-নুক্ত (كتاب ما فسّرة من جامع النطق)[ঝ] [২]
- কিতাব মা'নি আল-কুর'আন (كتاب معانى القرآن)[১৬]
- কিতাব আল-ইশতিকাক (كتاب الاشتقاق)[ঞ]
- কিতাব আল-কাওয়াফি (كتاب القوافى);[ট]
- কিতাব আল-আরুদ (كتاب العروض)
- কিতাব আল-ফার্কু (كتاب الفرق)[ঠ]
- কিতাব কুল্ক আল-ইনসান (كتاب خلق الانسان)
- কিতাব কুল্ক আল-ফারিস (كتال خلق الفرس)
- কিতাব মুখতাসির নুহও (كتاب مختصر نحو)
- কিতাব ফা'আলতু ওয়া-আফ'আলতু (كتاب فعلت وافعلت)
- কিতাব মা ইউনসারিফ ওয়া-মা লা ইউনসারিফ (كتاب ما ينصرف وما لا ينصرف)[ড]
- কিতাব সাহর আবিয়াত সিবাওয়াহ (كتاب شرح ابيات سيبويه)
- কিতাব আন-নাওয়াদির (كتاب النوادر); [১৭]
- বুক অব ডিক্টেটস;(امالي);[১৮][১৯][২]
- বুক অব অ্যানেকডোটস;
- ট্রিটিজ অন দ্য ইনফ্লুয়েন্স অব দ্য কনস্টেলেশন আপন দ্য ওয়েদার (ইংরেজি: Treatise on the influence of the constellation upon the weather[২০][ঢ]
টীকাসম্পাদনা
- ↑ আল-জুবায়েদির মতে তার মৃত্যু হয় হিজরি ৩১৬ বা ৯২৮ খ্রিষ্টাব্দে।
- ↑ আবু ফাহদ দি এক্সপোজিশন নামে একটি ব্যাকরণের বই লিখেছিলেন।
- ↑ উবায়েদ আল্লাহ ইবন সুলায়মান ইবন ওয়াহাব ছিলেন আল মু'তাদিদের উজির এবং একজন দক্ষ কুশলী, মৃত্যু ৯০১ খ্রিষ্টাব্দ (২৮৮ হিজরি)
- ↑ আল-কাসিম আল-মু'তাদিদ ও তার পরবর্তীতে আল-মুক্তাফির উজির ছিলেন। তিনি একজন দক্ষ রাজনীতিবিদ ছিলেন।[৬]
- ↑ মাহবারাহ্ ছিল মুহাম্মাদ ইবন ইয়াহিয়া ইবন আবি 'আববাদ, আবু জফর আল-নাদিমের ডাকনাম। তিনি আল-মু'তাদিদের রাজদরবারের সঙ্গী ছিলেন।[৭]
- ↑ এই গ্রন্থাগারটি সম্ভবত ৯৪৫/৪৬ সালে যখন আহমদা ইবন বুওয়াইহ বাগদাদ দখল করে এবং খলিফা আল-মু'তাদিদকে অন্ধ করে করে দেয় তখন ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। যাই হোক, মুহাম্মাদ ইবন ইসহাক আল-নাদিমের লিখিত বর্ণনা অনুসারে তিনি এবং তার পণ্ডিত সমাজ এই বইয়ের পাণ্ডুলিপি পেয়েছিলেন, তার মতে বইটি ধ্বংস হয়নি।
- ↑ আবু 'ই-কাসিম আবদ আর-রহমানকে আল-জাজ্জাজ নামে ডাকা হত, যা তার নামানুসারে রাখা হয়েছিল।[১০]
- ↑ আবু বকর মুহাম্মাদ ইবন 'আলি আল-মারাগহি ছিলেন ইরানের পূর্ব আজারবাইজানি প্রদেশের মারাগহেহ কাউন্টির রাজধানী মারাগহেহ শহরের ভাষাতত্ত্ব ও ধর্মতত্ত্বের পণ্ডিত। যদিও আল-মারাগহি মসুলে থাকতেন এবং তিনি আল-জাজ্জাজের শিষ্য ছিলেন। তিনি আব্রিজমেন্ট অব গ্রামার, এক্সপোজিশন অ্যান্ড ইন্টারপ্রিটেশন অব দি আর্গুমেন্টস অব সিবাওয়াহ লিখেছেন।[১২]
- ↑ সম্ভবত আল-জাজ্জাজের 'জামি আল-মুনতাক' (جامع المنطق) থেকে নেওয়া হয়েছে, হাজী খলিফার জীবনীমূলক অভিধান কাসফ আজ-জুনুন 'অ্যান 'আসামি 'ই-কুতুব ওয়া-ই'ফানুন-এ উল্লেখ করা হয়েছে
- ↑ ইবন খালিকান এর নাম প্রদান করেন ডিফারেন্ট ট্রিটিজ অন এটিমলজি ("Different treatises on etymology")।
- ↑ Listed by al-Nadīm but not Ibn Khallikān
- ↑ ইবন খালিকান এর নাম প্রদান করেন মুসলিম সেক্টস ("Muslim Sects")।
- ↑ ইবন খালিকান এর নাম প্রদান করেন অন নাউনস অব দ্য ফার্স্ট অর সেকেন্ড ডিক্লেনশন ("On Nouns of the First or Second Declension")।
- ↑ হাজী খলিফা মন্তব্য করেন যে এই বিষয়ে অসংখ্য কাজ হয়েছে।
তথ্যসূত্রসম্পাদনা
- ↑ আল-জুবায়েদি ১৯৮৪, পৃ. ১১২, §9 (#39)।
- ↑ ক খ গ ইবন খালিকান ১৮৪৩, পৃ. ২৮, I।
- ↑ আল-নাদিম ১৯৭০, পৃ. ৭৭, ১৩১-১৩৩, ১৩৫, ১৭৮, ১৮৫, ১৮৭, ১৯১।
- ↑ আল-জুবায়েদি ১৯৮৪, পৃ. ১১১-১১২, §9 (#39)।
- ↑ আল-নাদিম ১৯৭০, পৃ. ১৮৫।
- ↑ ইবন খালিকান ১৮৪৩, পৃ. ২৯, n. ৪।
- ↑ আল-মাস'উদি ১৮৭৪, পৃ. ২০৫, viii।
- ↑ আল-নাদিম ১৯৭০, পৃ. ১৩২।
- ↑ আল-নাদিম ১৯৭০, পৃ. ১৩৩।
- ↑ ইবন খালিকান ১৮৪৩, পৃ. ২৯, I।
- ↑ আল-নাদিম ১৯৭০, পৃ. ১৩৫।
- ↑ আল-নাদিম ১৯৭০, পৃ. ১৮৭।
- ↑ আল-সুয়ুতি ১৯০৯, পৃ. ১৯।
- ↑ আল-জুবায়েদি ১৯৮৪, পৃ. ১১১-১১২, §9 (#৩৮)।
- ↑ আল-নাদিম ১৯৭০, পৃ. ১৭৮।
- ↑ আল-নাদিম ১৯৭০, পৃ. ৭৬-৭৭।
- ↑ ফ্লুগেল ১৯০৭, পৃ. ৬৬১ (৬১)।
- ↑ ডি স্যাসি ১৮২৯, পৃ. ১৩৭।
- ↑ ফ্লুগেল ১৮৩৫, পৃ. ৪২৭, I।
- ↑ পোকোক ১৮০৬, পৃ. ১৬৮।