ইন্স‌ব্রুক (ব্যভারিয়ান ভাষায়: Innschbruck) অস্ট্রিয়ার টিরোল প্রদেশের রাজধানী এবং অস্ট্রিয়ার পঞ্চম বৃহত্তম শহর।

ইন্স‌ব্রুক
বিধিবদ্ধ শহর
ইন্স‌ব্রুক
ইন্স‌ব্রুক
ইন্স‌ব্রুকের প্রতীক
প্রতীক
স্থানাঙ্ক: ৪৭°১৬′ উত্তর ১১°২৩′ পূর্ব / ৪৭.২৬৭° উত্তর ১১.৩৮৩° পূর্ব / 47.267; 11.383
দেশ অস্ট্রিয়া
প্রদেশটিরোল
সরকার
 • মেয়রখ্রিস্টান Oppitz-Plörer
আয়তন
 • মোট১০৪.৯১ বর্গকিমি (৪০.৫১ বর্গমাইল)
উচ্চতা৫৭৪ মিটার (১,৮৮৩ ফুট)
জনসংখ্যা (০১.০১.২০১০)[]
 • মোট১,১৯,২৪৯
 • জনঘনত্ব১,১১৯/বর্গকিমি (২,৯০০/বর্গমাইল)
সময় অঞ্চলসিইটি (ইউটিসি+১)
 • গ্রীষ্মকালীন (দিসস)সিইএসটি (ইউটিসি+২)
Postcode৬০১০-৬০৮০
ডায়ালিং কোড০৫১২
ওয়েবসাইটwww.innsbruck.at

ভৌগোলিক উপাত্ত

সম্পাদনা

শহরটি ইন নদীর, উইপ্প উপত্যকার সাথে সংযোগস্থলে, যা দক্ষিণে ব্রেনার পাসের ৩০ কিলোমিটার (১৮.৬ মাইল) সংযোগ করে। এর জনসংখ্যা ২০১৮ সালে ১৩২,৪৯৩ ছিল।

উঁচু পর্বতমালার মধ্যবর্তী প্রশস্ত উপত্যকায়, কারভেনডেল আল্পস-এর উত্তরে তথাকথিত উত্তর চেইন (হাফেলেকারস্পিট, ২,৩৩৩ মিটার বা ৬৫৭৭ ফুট) এবং পাটসেকেরোফেল (২,২৬৬ মিটার বা ৩৬৯৯ ফুট) এবং সেরেলস (২,৭১৮ মিটার বা ৮,৯১৭ ফুট) দক্ষিণ, ইনস্রুক একটি আন্তর্জাতিক খ্যাতিযুক্ত শীতকালীন ক্রীড়া কেন্দ্র; এটি ১৯৬৪ এবং ১৯৬৬ সালের শীতকালীন অলিম্পিকের পাশাপাশি ১৯৮৪ এবং ১৯৮৮ সালের শীতকালীন প্যারালিম্পিকসের আয়োজন করেছিল। এটি ২০১২ সালে প্রথম শীতকালীন যুব অলিম্পিকেরও আয়োজন করেছিল। নামটির অর্থ "ব্রিজ ওভার দ্য ইন"।

ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর স্ত্রীর বাড়ি এই শহরে।[] তাদের বিয়ে হয়েছিল ইন্সব্রুকের অদূরে সাল্‌জবুর্গ শহরে।

ইতিহাস

সম্পাদনা

ইন্সব্রুক শহরে নব্য প্রস্তর যুগের (প্রস্তর যুগের শেষ সময়, আনুমানিক ৯৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে শুরু হয়েছিল) মানব বসতির প্রমাণ পাওয়া গেছে। তিনটি আবিষ্কার প্রমাণ করেছে যে গত ৩০০০ বছর ধরে এই শহরে মানুষ একটানা বাস করে চলেছে: বিভিন্ন স্থানের প্রাক-রোমান নাম, ভিল্টেন, আমরাস, হোটিং ও মুলাউ-এর সমাধিস্থল (যেখানে লাশ আগুনে পোড়ানো হত) এবং আডলফ-পিখলার-প্লাৎস এ পাওয়া লাটেনে (Latène) সংস্কৃতির (লৌহ যুগের ইউরোপীয় সংস্কৃতি) ব্যবহৃত জিনিসপত্র।

চতুর্থ শতকে রোমানরা অর্থনৈতিকভাবে খুব গুরুত্বপূর্ণ ফেরোনা-ব্রেনার-আউগ্সবুর্গ সড়ক রক্ষা করার জন্য ইনিপন্স-এ (ইন্সব্রুকের লাতিন নাম) ফেলডিডেনা নামে একটি সামরিক ঘাঁটি তৈরি করেছিল। বর্তমানে সামরিক ঘাঁটির সেই স্থানটির নাম ভিল্টেন, ইন্সব্রুক শহরের একটি ডিস্ট্রিক্ট। রোমান সম্রাজ্যের পতনের পর এই অঞ্চলে আধিপত্য বিস্তার করেন বাভারিয়ান ফ্রাংকীয় রাজা শার্লামাইন, আনুমানিক ৭৮৮ খ্রিষ্টাব্দ থেকে। এই অঞ্চল তখন বাভারিয়া ডুখি-র অন্তর্ভুক্ত ছিল। পরবর্তী কয়েক শত বছর ধরে এই সম্রাজ্য অব্যাহত থাকে এবং একসময় আন্ডেখ্স এর কাউন্ট পরিবারের অধীনে আসে। এরাই ১১৮০ খ্রিষ্টাব্দে ইন্সব্রুক নামে একটি শহর প্রতিষ্ঠা করেন। মূলত ইন নদীর দুই ধারে বাজার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এর সূত্রপাত হয়।

ইন্সব্রুক নামের প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় লাতিন লেখায়, ইনিপন্স (Oeni Pons) হিসেবে, ইন নদীকে লাতিন ভাষায় বলা হতো Oenus, আর Pons শব্দের অর্থ সেতু। সেভাবেই জার্মান ভাষায় শহরটির নাম হয় ইন্সব্রুক, যেখানে ব্রুক শব্দের অর্থ সেতু। এটি ইন নদীর দুই পাশকে সংযোগকারী একটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল ছিল। শহরের সিলমোহর এবং কোট অফ আর্মস এ আকাশ থেকে দেখা এই সেতুর ছবি আছে, ১২৬৭ সাল থেকেই এই প্রতীক ব্যবহৃত হয়ে আসছে। সে সময় থেকেই ব্রেনার পাস দিয়ে যাতায়াতের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ যাতায়াত ও যোগাযোগক্ষেত্র ছিল। আল্পসের মধ্য দিয়ে উত্তর এবং দক্ষিণকে যুক্ত করার জন্য এর চেয়ে সুবিধাজনক স্থান আর ছিল না। এই স্থানকে ট্রানজিট হিসেবে ব্যভহার করার জন্য সবাই যে রাজস্ব দিত তা দিয়েই শহরটি উন্নতি করেছিল অনেক।

ইন্সব্রুক টিরোল প্রদেশের রাজধানী হয় ১৪২৯ সালে। আর পঞ্চদশ শতকে এটি ইউরোপীয় সংস্কৃতি ও রাজনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে পরিণত হয়, কারণ সম্রাট মাক্সিমিলিয়ান ১ ১৪৯০-এর দশকে এখানে থাকা শুরু করেন। সম্রাটের উপস্থিতিতে শহরটিরও অনেক উপকার হয়েছিল যার একটি উৎকৃষ্ট প্রমাণ ইন্সব্রুকের হোফকির্খে বা প্রধান গির্জা। এই গির্জায় মাক্সিমিলিয়ান ১ এর একটি সমাধিসৌধ নির্মাণের পরিকল্পনা করেছিল তার অনুসারীরা। কিন্তু নির্মাণ কাজ সম্পূর্ণ হয়নি, অর্ধসমাপ্ত অবস্থাতেই সমাধিসৌধটি রয়ে যায়। হাবসবুর্গ পরিবারের রাজাদের পূর্বপুরুষ এবং আদিপুরুষদের বাস্তব এবং পৌরাণিক অনেক মূর্তি এই গির্জার শোভা বর্ধন করেছে, এটি ইন্সব্রুকের অন্যতম পর্যটন আকর্ষণ।

১৫৬৪ সালে অস্ট্রিয়ার আর্কডিউক ফের্ডিনান্ড ২ টিরোলের কর্তৃত্ব লাভ করেন।


তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. "www.innsbruck.at" (পিডিএফ)। ৩১ অক্টোবর ২০০৬ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ নভেম্বর ২০১৮ 
  2. ইউরোপের ডায়েরি - হিমাংসুশেখর চট্টোপাধ্যায়; আনন্দবাজার পত্রিকা, ১ জুন ২০১০

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা