ইটের মাটি বলতে আগুনে পোড়ানে ইট তৈরিতে বা বা ক্ষুদ্র মৃৎশিল্পে ব্যবহার উপযোগী মাটিকে বুঝায়। সাধারণত ক্যালসিয়াম, লৌহ, ও অন্যান্য উপাদানের অশোধিত মাটিকেও ইটের মাটি বলা হয়। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ফসলী জমির মাটি ব্যবহার বন্ধের উদ্দেশ্যে ইটের মাটি বা ইটের ব্যবহারের বিকল্প হিসেবে ব্লক ব্যবহার উৎসাহিত করা হয়েছে বিভিন্ন দেশের আইনে। এ আইনে কৃষি কাজে প্রয়োজনীয় জমির উপরিভাগের উর্বর মাটি এবং ইট তৈরিতে পরিবেশ দূষণ কমবে বলে মনে করা হয়।[১]

উপাদান সম্পাদনা

ইটের মাটির মৌলিক রাসায়নিক উপাদানগুলো হচ্ছে অ্যালুমিনা, সিলিকা, লৌহ অক্সাইড, চুন, ম্যাগনেশিয়া, ও ক্ষার। এসব উপাদানে তারতম্য থাকলে ইট বা মৃৎশিল্প তৈরি বিষয়গুলো ওপর বড় ধরনের প্রভাব পড়ে। এছাড়া মাটিতে লৌহকণা, দ্রবণীয় লবণ, চুনাপাথর ও পাথরকণার মতো কিছু ক্ষতিকারক উপাদান থাকলে তৈরিকৃত ইট বা মৃৎশিল্পের ক্ষতি হয়। [২]

প্লাইসটোসিন ও হলোসিন নমুনার সার্বিক রাসায়নিক উপাদানসমূহ ভালো মানের ইট ও মৃৎশিল্প তৈরির জন্যে ভালো। তবে হলোসিন মাটি ৬০ দশমিক ৭২ থেকে ৬০ দশমিক ৪৯ ভাগ সিলিকা, ১ দশমি ১১ থেকে ১ দশকি ৪৯ ভাগ চুন ও ২ দশমিক ১৬ থেকে ২ দশমিক ৮৭ ভাগ ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে। প্লাইসটোসিনে ১৯ দশমিক ৯৫ থেকে ২১ দশমিক শূন্য ৭ ভাগ মধুপুর কর্দম অ্যালুমিনা ও ৮ দশমি ১২ থেকে ৯ দশমিক ৮২ ভাগ লৌহ অক্সাইডে রয়েছে। মধুপুর কর্দম অ্যালুমিনা সমৃদ্ধ হলেও প্রয়োজনীয় মাত্রার বেশ কম বিধায় ইট প্রস্ত্ততের জন্য খুব ভালো হয় না। কর্দমে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ লৌহকণা ছাড়াও দ্রবণীয় লবণ, যৌগ পদার্থ ও উদ্ভিজ্জ পদার্থের মতো ক্ষতিকর উপাদানও তুলনমূলক কম থাকে। [২]

বাংলাদেশের ঢাকা, নরসিংদি, নারায়ণগঞ্জ জেলার হলোসিন ইটের মাটি ও প্লাইসটোসিন মাটির রাসায়নিক, খনিজতাত্ত্বিক ও প্রকৌশলগত গুণাগুণ পরীক্ষ করে জানা গেলো হলোসিন নমুনার উপাদানগুলো হলো ইলাইট, কোয়ার্টজ, কেওলিনাইট ও ক্লোরাইট। প্লাইসটোসিন মাটির প্রধান উপাদান হলো ইলাইট, কোয়ার্টজ ও কেওলিনাইট। এস উপাদানে ছোট উপাদান হিসেবে প্লাজিওক্লেস ও পটাশ ফেল্ডস্পার থাকলেও কোনো নমুনার মধ্যেও মন্টমরিল্লো নাইট  কর্দম শনাক্ত করা যায়নি।

এ মাটির হলোসিন নমুনা সাধারণত পলি আকৃতির ৫৩ দশমিক ২৪ থেকে ৮৪ দশমিক ৩১ ভাগ কণা দ্বারা গঠিত। এছাড়া প্লাইসটোসিন নমুনায় ৪৩ দশমিক ৪৩ থেকে ৪৯ দশমি ৮৫ ভাগ কাদা জাতীয় কণা পলিকণার চেয়ে ৩৪ দশমিক ৭৫ থেকে ৪৩ দশমি ২৫ ভাগ বেশি।[২]

গুনাগুন সম্পাদনা

মাটির কর্মক্ষমতার দিক বিবেচনায় নিলে সব নমুনাই নিষ্ক্রীয় ও স্বাভাবিক ধরনের হলে ইট প্রস্ত্ততে বেশি উপযোগী। এছাড়া ভালো মানের ইট অথবা মৃৎশিল্প তৈরিতে ডুপি টিলা স্তরসমষ্টির মাটি বেশ উপযোগী বলে প্রমাণিত। নমনীয় সীমা, তরল সীমা ও নম্যতা সূচক মানদদণ্ডের বিবেচনায় মাটির হলোসিন নমুনা মধ্যম নমনীয়তা ও প্লাইসটোসিন নমুনা মধ্যম থেকে উচ্চ নমনীয়তার হয়। প্লাইসটোসিন মধুপুর কর্দমের প্রসারিত হওয়ার ক্ষমতা হলোসিন মাটির চেয়ে অল্প বেশি। নমুনাগুলোর রৈখিক সংকোচন অনুযায়ী হলোসিন ইটের মাটি ‘অপ্রান্তিক’ থেকে ‘প্রান্তিক’ ও প্লাইসটোসিন কর্দম প্রান্তিক হয়। সব ধরনের নমুনাই ঘনায়তন সংকোচন মান প্রচলিত ইট তৈরিতে অনুমোদিত মাত্রার মধ্যে আছে। ।[২]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "ইটের বিকল্প হিসেবে ব্লক কতটা কার্যকর হবে?"BBC News বাংলা। ২০১৯-০২-১১। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৪-১৬ 
  2. "ইটের মাটি"বাংলাপিডিয়া। সংগ্রহের তারিখ ১৬ এপ্রিল ২০২০