ইকুয়েডরে স্পেনের় পুনর্দখল চেষ্টা

ইকুয়েডরে স্পেনের় পুনর্দখল চেষ্টা একটি প্রকল্প প্রণয়নের মাধ্যমে বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছিল। ১৮৪৬ সালে প্রণীত এ প্রকল্পে ক্ষমতাচ্যুত ইকুয়েডরের রাষ্ট্রপতি হুয়ান হোস ফ্লোরেস ও স্পেনীয় রাণীমাতা মারিয়া ক্রিস্টিনা টু সিসিলিস সম্পৃক্ত ছিলেন। এতে তারা সাবেক উপনিবেশ কুইটোর রয়্যাল অডিয়েন্সকে পুণরুজ্জ্বীবিত করতে সচেষ্ট হন ও রাণীর সন্তানদের একজনকে রাজতন্ত্রের প্রতিনিধি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার প্রচেষ্টা চালান। এছাড়াও পরিকল্পনায় এ অঞ্চলের দক্ষিণাংশ সম্প্রসারণ, পেরুবলিভিয়ায় প্রজাতান্ত্রিক সরকারের অবসান ঘটিয়ে ইকুয়েডর, পেরু এবং বলিভিয়াকে নিয়ে সম্মিলিত যুক্তরাজ্য গঠন অন্তর্ভুক্ত ছিল।

কিন্তু অধিকাংশ কূটনৈতিক দলিলপত্রাদিতে ইকুয়েডরের রাজারূপে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে বোরবনের অগাস্টিন মানোজ টু সিসিলিসকে উল্লেখ করা হয়েছে। মানোজ ডিউক অব রিয়ান্সারেজের সাথে দ্বিতীয় বৈবাহিক সম্পর্কে সন্তানরূপে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। এ পরিকল্পনায় সদ্য বিবাহিত ফ্রান্সের রাজা প্রথম লুইস ফিলিপ জড়িত ছিলেন। তিনি মারিয়া ক্রিস্টিনার জন্য নিজ অর্থ ব্যয় করে অংশগ্রহণ করেন। দক্ষিণ আমেরিকার সিংহাসনে অ্যান্টোইন দ্য'অর্লিয়েন্সবোরবনের লুইসা ফার্নান্দা - উভয় সন্তানের যে কাউকে সিংহাসনে দেখতে চেয়েছিলেন।[১] কিন্তু ফরাসী সরকার যে-কোন ধরনের আলাপ-আলোচনা থেকে নিজেদের দূরে রাখে এবং ইকুয়েডরে স্পেনীয় পুনর্দখলের চেষ্টায় কোন সমর্থন ব্যক্ত করেনি।[২]

প্রেক্ষাপট সম্পাদনা

একটি নতুন ও অস্থিতিশীল ইকুয়েডর জাতির প্রধান হিসেবে প্রথম দশকে জেনারেল হুয়ান হোস ফ্লোরেস সরকার পরিচালনা করেন। কিন্তু, ১৪ বছর পর গুইয়াকুইলের জনগণ রাষ্ট্রপতির পদ থেকে তাকে উৎখাত করে। প্রজাতান্ত্রিক সরকারে অবস্থান করে অসাংবিধানিক পন্থায় দেশ পরিচালনার দায়ে অভিযুক্ত হন তিনি। নতুন শক্তির সাথে অনৈক্য সৃষ্টির প্রয়াস চালান। তিনি ভেবেছিলেন যে, কেবলমাত্র একনায়কতন্ত্রের মাধ্যমেই নিজ কর্তৃত্ব নিয়ন্ত্রণে রাখবেন বা বিশৃঙ্খল অবস্থা থেকে মুক্তি পেয়ে ইউরোপীয় রাজকুমারের সাথে তিনি বিদেশে আশ্রয় গ্রহণ করবেন। মার্কিন ইতিহাসবেত্তা ও ফ্লোরেসের জীবনীকার মার্ক ফন অ্যাকেনের মতে, তার এই বিবৃতি ঐতিহাসিক সূত্রেই বিদ্যমান যেমন: সরকারী দলিলপত্র, সরকারী কর্মকর্তা ও স্বাধীন পত্র-পত্রিকা, লিফলেট ও স্বতন্ত্র যোগাযোগ।[৩]

লা ভার্জিনিয়া চুক্তি সম্পাদনা

ইকুয়েডরের রাষ্ট্রপতি হিসেবে ফ্লোরেস অনেক ভেনেজুয়েলীয় পরামর্শক ও সেনা কর্মকর্তা দ্বারা পরিবেষ্টিত ছিলেন। জাতির নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া হিসেবে ইকুয়েডরের অভিজাত সম্প্রদায় গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় পদে দায়িত্ব পেতে উৎসাহী ছিলেন। এরফলে গৃহযুদ্ধ শুরু হয় ও চিহুয়াহুয়া যুদ্ধে এর প্রভাব পড়ে। পরবর্তীতে তৎকালীন লিমায় নির্বাসিত জনপ্রিয় লেখক ও কূটনীতিবিদ ভিসেন্তে রকাফুয়ের্তের নেতৃত্বে গুইয়াকুইল শহরে পুঞ্জীভূত মার্চ বিপ্লবে এর সম্পৃক্ততা ঘটে। অবশেষে ইকুয়েডরের প্রথম সাংবিধানিক রাষ্ট্রপতিকে ১৭ জুন, ১৮৪৫ তারিখে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়। ঐদিন তিনি লা ভার্জিনিয়া এস্টেট নামের নিজ সম্পত্তি থেকে বিতাড়িত হন।[৪]

লা ভার্জিনিয়া চুক্তিতে শান্তিপূর্ণভাবে স্বাক্ষরের পর ক্ষমতাচ্যুত ফ্লোরেস তার সামরিক মর্যাদা, তার সম্পত্তির সংরক্ষণ ও আজীবন ২০,০০০ পেসো আয়ের নিশ্চয়তা লাভ করেন। এর কয়েকদিন পর সাবেক রাষ্ট্রপতি ইউরোপে নির্বাসনে যাবার জন্য সম্মতি প্রকাশ করেন। ১০ আগস্ট, মার্কিন প্রতিনিধি ডেলাজন সুইথ জানান যে, ঘনিষ্ঠ আত্মীয়ের সাহায্যে ফ্লোরেস ৪০,০০০ মার্কিন ডলারের অধিক নগদ অর্থ, অলঙ্কার, হীরা এবং শতাধিক পাউন্ড বারের রূপা সীমান্তের দক্ষিণাংশ দিয়ে পাচার করেছেন। এর প্রতিক্রিয়া হিসেবে জাতীয় কুয়েঙ্কা কনভেনশন এ চুক্তি বাতিল করে, ফ্লোরেস ও তার সমর্থকদের অধিকারকে স্বীকৃতি দিতে প্রত্যাখ্যান করে।[৫]

ইকুয়েডরীয় রাজনীতিবিদ বেনিগণো মালো'র মতে, ঐ গঠনতন্ত্রে তার ফিরে আসার দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়।। কেবলমাত্র তাকে প্রলুব্ধ করার চরম ও অনৈতিক প্রকৃতিকে গ্রহণের কথা বলা হয়েছে। উপেক্ষিত ফ্লোরেস প্রতিশোধের স্পৃহায় মত্ত হয়ে তিনি নিজেকেই ঠকিয়েছেন, একটি অপরাধ অন্যটিকে স্পর্শ করতে পারে না।[৬]

রাজতন্ত্রী প্রকল্প সম্পাদনা

 
রাণী মারিয়া ক্রিস্টিনা
 
স্পেনীয় মন্ত্রী ইস্ত্রুইজ

নতুন ইকুয়েডর সরকার কর্তৃক লা ভার্জিনিয়া চুক্তির শর্ত ভঙ্গের সিদ্ধান্তের কথা শুনে সাবেক রাষ্ট্রপতি ফ্লোরেস অত্যন্ত ক্ষুদ্ধ হন ও ইউরোপে অবস্থান করে সর্বাপেক্ষা সাহসী পরিকল্পনা হিসেবে দেশের ক্ষমতা পুনর্দখলে লাতিনামেরিকান ওয়ালর্ডিজম প্রণয়ন করেন। তিনি তার বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ রক্ষাসহ স্বাধীনতা সংগ্রামের সহকর্মী ও ইংল্যান্ডে অবস্থানরত আইরিশ জেনারেল রিচার্ড রাইটের সাথে যোগাযোগ করেন। রাইট তাকে তার কার্যসিদ্ধির জন্য ১,২০০ লোক, পর্যাপ্ত অস্ত্রশস্ত্র এবং ইকুয়েডর দখলে তিনটি যুদ্ধ্বজাহাজ বরাদ্দ করেন।

ফ্লোরেস অতিদ্রুত ফ্রান্সে গমন করেন ও তার অভিযানে আরও সহযোগিতার জন্য প্রাণান্তকর চেষ্টা চালাতে থাকেন। সেলক্ষ্যে, নিজেকে রাজ প্রতিনিধি হিসেবে পরিচয় দিয়ে ইউরোপীয় রাজকুমারের সাথে দক্ষিণ আমেরিকার দেশটিকে রাজতন্ত্রে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে আলাপ-আলোচনার প্রস্তাব দেন।[৪]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Cervera, César (মে ১৯, ২০১৫)। "María Luisa Fernanda of Bourbon, the daughter of Fernando VII who wanted to reign in Ecuador and almost did in Spain" (spanish ভাষায়)। Madrid। ABC.es। সংগ্রহের তারিখ জুলাই ১১, ২০১৫ 
  2. Mark J. Van Aken (১৯৮৯)। King of the Night: Juan José Flores and Ecuador, 1824-1864। University of California Press। পৃষ্ঠা 180। 
  3. Paris Montesinos, Pedro। "Monarchists outbreaks in the 19th century"El Universal Newspaper। January 3, 1997। সংগ্রহের তারিখ এপ্রিল ১৭, ২০১৫ 
  4. Van Aken, Mark (১৯৮৯)। King of the night, Juan José Flores & Ecuador 1824-1864। United States: University of California Press। সংগ্রহের তারিখ এপ্রিল ১৭, ২০১৫ 
  5. Péres Pimentel, Rodolfo। "Juan José Flores y Aramburu"Ecuadorian biographical dictionary, vol X। Universidad Católica Santiago de Guayaquil। মার্চ ৪, ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ এপ্রিল ১৭, ২০১৫ 
  6. Orrego Penagos, Juan Luis। "The general Juan José Flores and Perú"Rumbo al Bicentenario। December 2003। অক্টোবর ১৫, ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ এপ্রিল ১৭, ২০১৫ 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা

আরও দেখুন সম্পাদনা