ইউ. কে. চিং

বীর বিক্রম খেতাবপ্রাপ্ত বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের মুক্তিযোদ্ধা
(ইউ কে চিং থেকে পুনর্নির্দেশিত)

উক্য চিং বা ইউ. কে. চিং মারমা (১৯৩৩ - ২৫ জুলাই ২০১৪) ছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একমাত্র উপজাতি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বীর বিক্রম খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা।[২] স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর বিক্রম খেতাব প্রদান করে।[৩]

ইউ. কে. চিং মারমা
জন্ম
উক্য চিং

মৃত্যু২৫ জুলাই ২০১৪
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল[১]
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ববাংলাদেশ
পরিচিতির কারণবীর বিক্রম
দাম্পত্য সঙ্গীতুইকানু মারমা
সঙ্গীবাবা:বাইসাউ মারমা, ম্রাংসানু মারমা
সন্তানবাবলু মারমা

পরিচিতি সম্পাদনা

ইউ. কে. চিং ব্রিটিশ ভারতের পার্বত্য চট্টগ্রামের বান্দরবান মহকুমার উজানী পাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন।[৪] তার পিতার নাম বাইশাউ মারমা।[৫] যিনি ছিলেন একজন কাঠমিস্ত্রি। তার মাতা ছিলেন একজন গৃহিনী।

মুক্তিযুদ্ধে অবদান সম্পাদনা

ইপিআরের একজন সদস্য হিসাবে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ৬ নং সেক্টরে যুদ্ধ করেন। উক্য চিং ১৯৫২ সালে ইষ্ট পাকিস্তান রাইফেলস্‌ (ইপিআর)-এ যোগ দেন[৬] এবং ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ নায়েক হিসেবে রংপুর জেলার হাতিবান্ধা বিওপিতে কর্মরত ছিলেন। তিনি সেই বিওপিতে কর্মরত ১ বিহারি কর্মকর্তা ও ২ পাঞ্জাবি সৈন্যকে হত্যা করে ফাঁড়ির অবশিষ্ট ৯ বাঙালি ইপিআর সৈনিককে নিয়ে যুদ্ধে যোগ দেন।[৭]

মুক্তিযুদ্ধের সময়ে কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীসংলগ্ন চৌধুরীহাটের যুদ্ধের ঘটনাটি ছিল খুব ভয়াবহ সেখানে মুক্তিবাহিনীর লেফটেন্যান্ট সামাদসহ আশফাকুস সামাদ, বীর উত্তম তার আরও কয়েকজন সহযোদ্ধা শহীদ হন। তিনিও মারা যেতে বা আহত হতে পারতেন। কিন্তু ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেছেন।[৮]

কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার রায়গঞ্জের অন্তর্গত চৌধুরীহাট। সীমান্তবর্তী এলাকা। নভেম্বরের মাঝামাঝি একদল মুক্তিযোদ্ধা রায়গঞ্জে অবস্থান নেন। তারা কয়েকটি দলে বিভক্ত ছিলেন। একটি দলে ছিলেন ইউ কে চিং। সেখানে ছিল পাকিস্তানি সেনাদের একটি শক্ত অবস্থান। রাতে তারা পাকিস্তানিদের অবস্থানে আক্রমণ করেন। সারা রাত যুদ্ধ চলে। ভোররাতে পাকিস্তানিদের দিক থেকে গোলাগুলি বন্ধ হয়ে যায়। রায়গঞ্জের পূর্ব দিকে দুধকুমার নদ। ইউ কে চিংরা ছিলেন এর উত্তর পাড়ে। লে. সামাদও সেদিকে ছিলেন। তারা সেদিক দিয়ে রায়গঞ্জের দিকে অগ্রসর হওয়ার সময় পাকিস্তানি সেনাদের অ্যামবুশে পড়েন। সেখানে একটি সেতুর নিচে বা বাংকারে ছিল পাকিস্তানিদের এলএমজি পজিশন। তা ক্যামোফ্লেজ করা ছিল। ফলে মুক্তিযোদ্ধা যাঁরা রেকি করেছেন, তারা পাকিস্তানিদের ওই সুরক্ষিত অবস্থান টের পাননি। পাকিস্তানি সেনারা মুক্তিযোদ্ধাদের উপস্থিতি টের পাওয়ামাত্র সেখান থেকে বৃষ্টির মতো গুলি করতে থাকে। এরপর মুক্তিবাহিনীর মূল দল আসে। তাদের প্রচণ্ড আক্রমণে পাকিস্তানিরা সেখান থেকে পিছু হটে নাগেশ্বরীতে অবস্থান নেয়।[৯]

স্বীকৃতি ও পুরস্কার সম্পাদনা

মুক্তিযুদ্ধে সাহস ও বীরত্বের জন্য উক্য চিংকে বীর বিক্রম খেতাবে ভূষিত করা হয়। তিনিই এদেশের একমাত্র খেতাবপ্রাপ্ত উপজাতী ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর মুক্তিযোদ্ধা।[১০]

৮ ডিসেম্বর, ২০১৭ তারিখে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এই স্টেডিয়ামের নাম বান্দরবানের বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত ইউ. কে. চিং বীর বিক্রম-এর নামে নামকরণ করার প্রস্তাব দেন।[১১][১২] প্রস্তাবটি বাস্তবায়নাধীন রয়েছে।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "ইউ কে চিং বীরবিক্রম আর নেই"রাইজিংবিডি.কম। ২৫ জুলাই ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ 
  2. "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না"। ৫ নভেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ আগস্ট ২০১৬ 
  3. "আমাদের প্রত্যাশা"প্রথম আলো। ৯ আগস্ট ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ১৮ আগস্ট ২০১৬ 
  4. প্রতিবেদক, নিজস্ব। "খেতাবপ্রাপ্ত একমাত্র আদিবাসী মুক্তিযোদ্ধা উক্যচিং মারমার মৃত্যু"Prothomalo। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১১-০৩ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  5. বিজয়ের মাস এলেই বীর বিক্রম ইউকে চিংয়ের কদর বেড়ে যায়[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ], প্রকাশিত হয়েছে ৮ই ডিসেম্বর, ২০১২।"স্বপ্ন '৭১ (মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক পত্রিকা)"। মুক্ত আসর। ডিসেম্বর ২০১৩। পৃষ্ঠা 26। 
  6. "Banglakhabar24.com" [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  7. একাত্তরের বীরযোদ্ধাদের অবিস্মরণীয় জীবনগাঁথা, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা স্মারকগ্রহন্থ। জনতা ব্যাংক লিমিটেড। এপ্রিল ২০১২। পৃষ্ঠা ৭৯। আইএসবিএন 9789843338884 
  8. "স্বপ্ন '৭১ (মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক পত্রিকা)"। মুক্ত আসর। ডিসেম্বর ২০১৩। পৃষ্ঠা 26। 
  9. "শত প্রতিকূলতায়ও মাথা নত করেননি আদিবাসী মুক্তিযোদ্ধা ইউ কে চিং বীরবিক্রম"। ২০১৬-০৩-০৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ আগস্ট ২০১৬ 
  10. "একমাত্র আদিবাসী বীর বিক্রমের চিকিৎসা হচ্ছে না"প্রথম আলো। ৬ নভেম্বর ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ১৮ আগস্ট ২০১৬ 
  11. "বান্দরবান জেলা স্টেডিয়ামের নামকরণ হচ্ছে ইউ.কে.চিং বীর বিক্রমের নামে"ipnewsbd.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৫-২৯ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  12. "ইউকেচিং বীর বিক্রমের নামে বান্দরবান স্টেডিয়ামের নাম করণ করা হবে-বীর বাহাদুর এমপি"chtnews24.com/। ২০১৯-০৫-২৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৫-২৯ 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা