আলাপ:পুঁজি

সাম্প্রতিক মন্তব্য: Kazi Tanvir Hosen কর্তৃক ৩ বছর পূর্বে "পুঁজি" অনুচ্ছেদে

পুঁজি সম্পাদনা

অপরিশোধিত শ্রম হল পুঁজি। সূর্যের আলো, সমুদ্র-বরফ ও বৃষ্টির পানি, বায়ু, খনিজ পদার্থ, ভূমি এবং বন-জঙ্গলের বৃক্ষের ব্যবহার উপযোগিতা থাকলেও তাদের নিজস্ব কোনো মূল্য নাই। কিন্তু মানুষ যখন ঐ সকল প্রাকৃতিক সম্পদ এর উপর শ্রম প্রয়োগ করে তখন তাতে মূল্য সৃষ্টি হয়। যেমন বায়ুর মধ্যেকার অক্সিজেন ব্যবহারের কোনো বিনিময় মূল্য প্রয়োজন নাই। কিন্তু, যখনই রোগীর বা অন্য কোনো কারণে তা ব্যবহারের জন্য সিলিন্ডারে পূর্ণ করা হয়, তখন তা বিনিময় মূল্যের বিনিময়ে ব্যবহার করতে হয়। কারণ, সিলিন্ডার নির্মাণে ব্যবহৃত লোহাসহ অপরাপর সামগ্রী উত্তোলন-সংগ্রহ ও প্রস্তুতকরণে যেমন শ্রম শক্তি ব্যবহৃত হয়েছে, তেমন বায়ু হতে অক্সিজেন গ্যাস সিলিন্ডারে ভরতেও শ্রম প্রয়োগ করতে হয়েছে। অর্থাৎ, প্রাকৃতিক বস্তুর মধ্যে মূল্যের স্রষ্টা শ্রম শক্তি নিজেকে যে পরিমাণে অঙ্গীভূত করেছে সে পরিমাণেই তাতে মূল্য সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু ঐ পরিমাণটা সামাজিক অবস্থা দ্বারা সীমাবদ্ধ। কাজেই, উক্ত সিলিন্ডার ভরতি গ্যাস বা অক্সিজেন নামীয় পণ্যটি উৎপন্নে যে পরিমাণ শ্রম শক্তি ব্যবহার হয়েছে তথা যে পরিমাণ শ্রম সময় লেগেছে সেই সময়ের পরিমাপেই অর্থাৎ পণ্যের ভিতর যে শ্রম বাস্তবায়িত থাকে তার অর্থ নাম হল দাম। শ্রম হচ্ছে মানুষের জৈবদেহের ক্রিয়া। এই ক্রিয়ায় মানুষের মস্তিস্ক, স্নায়ু, পেশী প্রভৃতির ব্যয় হয়। পুঁজিপতি কাজে লাগাবার জন্য শ্রম শক্তি ক্রয় করে, এবং শ্রম শক্তির ব্যবহারই শ্রম। শ্রম এমন একটি প্রক্রিয়া যাতে মানুষ এবং প্রকৃতি উভয়েই অংশ গ্রহণ করে এবং মানুষ নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী প্রকৃতি ও তার নিজের মধ্যে বৈষয়িক ঘাতপ্রতিঘাতগুলি সূচনা, পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ করে। শ্রম-প্রক্রিয়ায় প্রাথমিক উপাদানগুলি হলঃ মানুষের নিজস্ব ক্রিয়াকলাপ অর্থাৎ খোদ কাজ, সেই কাজের বিষয়বস্তু ও তার উপকরণাদি। শ্রম শক্তি বা শ্রম করার ক্ষমতা হচ্ছে একজন মানুষ যে সব মানসিক ও শারীরিক ক্ষমতার অধিকারী তারই সমগ্রতা। শ্রম শক্তির মূল্য হচ্ছে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ জীবনধারণের উপায়ের মূল্য। শ্রম শক্তির মূল্যের সর্ব নিম্ন সীমা নির্ধারিত হয় সেই সব পণ্যের মূল্য দিয়ে যেগুলির দৈনিক যোগান ছাড়া শ্রমিক তার কর্ম ক্ষমতা ফিরে পায় না। তবে পুঁজিবাদী উৎপাদনী প্রক্রিয়াকে সচল রাখতে নতুন নতুন শ্রমিকের যোগান স্বাভাবিক রাখার জন্যও পুঁজিপতি মূল্য দিয়ে থাকে। সকল পণ্যই দ্রব্য, তাই বলে সকল দ্রব্য পণ্য নয়। কেবলমাত্র যে দ্রব্য উৎপন্নকারী নিজের ভোগ-ব্যবহার নয়, কেবলই বিনিময়ের মাধ্যমে অপরের চাহিদা পূরণে উৎপন্ন করে, সে সকল দ্রব্যই কেবলমাত্র পণ্য। কাজেই, যে কোন দ্রব্য পণ্য হতে হলে তার যেমন ব্যবহার উপযোগিতা থাকতে হবে, তেমন তার বিনিময় মূল্য থাকতে হবে। কাজেই, বিনিময় মূল্যহীন সকল ব্যবহার উপযোগী বস্তুই দ্রব্য। দ্রব্য বা পণ্যের মূলত দুটি উপকরণ- একটি প্রাকৃতিক; অপরটি মানুষের শ্রম। তাই, শ্রমোৎপন্ন সামগ্রী হচ্ছে পণ্য। সুতরাং পণ্যের মূল্য হচ্ছে মনুষ্য শ্রমের বস্তুরূপ। কাজেই মূল্যরূপে সমস্ত পণ্যই হল ঘনীভূত শ্রম-সময়ের বিশেষ বিশেষ পরিমাপ মাত্র। সমস্ত শ্রমই সাধারণভাবে মনুষ্য শ্রম, তাই সর্ব প্রকার শ্রমই সমান এবং পরস্পরের প্রতিরূপ। সুতরাং, কোনো দ্রব্যের মূল্যের পরিমাণ নির্ধারিত হয় তাতে নিযুক্ত শ্রমের পরিমাণ, তথা সামাজিকভাবে প্রয়োজনীয় শ্রম-সময় দ্বারা। তাই, বিভিন্ন পণ্যের বিনিময় দ্বারা তাদের মূল্যের পরিমাণ নিয়ন্ত্রিত হয় না, বরং পণ্যগুলির মূল্যের পরিমাণ দ্বারাই তাদের বিনিময়ের অনুপাত নিয়ন্ত্রিত হয়। অতঃপর, বিনিময় মূল্য হচ্ছে একটি পদার্থের মধ্যে কী পরিমাণ শ্রম দেওয়া হয়েছে তা প্রকাশ করবার একটি পদ্ধতি। সুতরাং, মূল্য নির্ধারণে প্রকৃতির কোন ভূমিকা নাই। তাছাড়া, এক পণ্য অপরাপর পণ্যের মধ্যে নিজেরই একটি রূপায়িত আবির্ভাব দেখতে পায়। সুতরাং, পণ্য জন্মসূত্রেই সমতাবাদী এবং যেমন জন্মে তেমন ব্যবহারেও পণ্য সামাজিক। মূল্য উৎপন্নকারী শ্রমিক উৎপাদ হতে শ্রমের পরিমাণ মতো হিস্যা পেলে কেউ কাউকে শোষণ করার কথা উঠতো না। পণ্য উৎপাদনকারী পুঁজিবাদী সমাজের ভিত্তি ব্যক্তিমালিকানার সুবাদে পুঁজিপতি তা না দিয়ে মূল্যের যে অংশ নিজেই আত্মসাৎ করে তাহাই উদ্বৃত্ত-মূল্য। অন্যকথায় পণ্যের ভিতর যে শ্রম বাস্তবায়িত থাকে তা অর্থ নাম হল দাম। এখন পুঁজিপতি যদি শ্রমিককে তার শ্রমের দাম দিয়ে দেয় তবে পুঁজিপতির কোনো লাভ বা মুলাফা থাকার সুযোগ নাই। কাজেই শ্রমের দাম নয়, শ্রমিককে পুঁজিপতি যা দেয় তা হচ্ছে মজুরী। অতঃপর মজুরী পরিশোধের পর মূল্যের যে অংশ অদেয় থাকে পুঁজিপতির জন্য তাহাই উদ্বৃত্ত-মূল্য। অর্থাৎ পণ্যের অপরিশোধিত অংশ উদ্বৃত্ত-মূল্য। সুতরাং, পুঁজিপতি হচ্ছে উদ্বৃত্ত-মূল্য আত্মসাৎকারী তথা পুঁজির ব্যক্তিরূপ। পণ্য উৎপাদনের উপায় অর্থাৎ যন্ত্রপাতি, জ্বালানি, বিল্ডিং, কাঁচামাল ইত্যাদি ক্রয় বা ব্যবহারে পুঁজিপতি যে পুজি বিনিয়োগ করে তা হচ্ছে স্থির পুঁজি। এই স্থির পুঁজি হতে নতুন কোন মূল্য সৃষ্টি হয় না। তবে, ঐ সকল বিষয়গুলো হারাহারিভাবে নতুন পন্যে আবির্ভূত হয়। অন্যদিকে, পণ্য উৎপন্নের উপায়গুলিকে ব্যবহার করতে পুঁজিপতি শ্রম শক্তি খাতে যে পরিমাণ পুঁজি ব্যয় করে তা হচ্ছে অস্থায়ী পুঁজি। এই অস্থায়ী পুঁজিই বর্ধিত হওয়ার সুযোগ পায়। কারণ, ক-পণ্য উৎপন্নে যদি স্থায়ী পুঁজির পরিমাণ হয় ১০ টাকা, এবং অস্থায়ী পুঁজি হয় ৫ টাকা, তাতে মোট পুঁজির পরিমাণ-১৫ টাকা। কিন্তু ক-পণ্যটির বিনিময় মূল্য হচ্ছে ২০ টাকা। অতঃপর, উদ্বৃত্ত-মূল্য হচ্ছে ২০-১৫ টাকা= ৫ টাকা। কাজেই, ক-পন্যে বিনিয়োজিত অস্থায়ী পুঁজি ৫ টাকা হতেই অতিরিক্ত ৫ টাকা উৎপন্ন হয়েছে। অর্থাৎ, পুঁজিপতি ক-পণ্যের জন্য মজুরী বাবত ৫ টাকা ব্যয় করে ১০ টাকার মূল্য উৎপন্ন করেছে। কাজেই-শ্রমিক বিক্রিত শ্রম শক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ক-পন্যে ১০ টাকা পরিমাণ মূল্য উৎপন্ন করেও তাদের শ্রম শক্তির মজুরী বাবত মাত্র ৫ টাকা লাভ করেছে। অর্থাৎ, আলোচ্য ক্ষেত্রে কম দিবসের অর্ধেক সময়েই যে মূল্য উৎপন্ন করে শ্রমিক তা-ই তাদেরকে জীবন ধারণের জন্য পুঁজিপতি প্রদান করে বাকী অর্ধেক দিবসের শ্রম আত্মসাৎ করে পুঁজিপতি। কাজেই, শ্রমিককে দেয় মজুরির অতিরিক্ত বা উদ্বৃত্ত সময়ের শ্রম তথা উদ্বৃত্ত শ্রমের মূল্যই হচ্ছে উদ্বৃত্ত-মূল্য। Kazi Tanvir Hosen (আলাপ) ১৯:৩৩, ১৯ ডিসেম্বর ২০২০ (ইউটিসি)উত্তর দিন

Kazi Tanvir Hosen (আলাপ) ১৯:৩৫, ১৯ ডিসেম্বর ২০২০ (ইউটিসি)উত্তর দিন

"পুঁজি" পাতায় ফেরত যান।