আলাপ:আবদুর রহিম (পণ্ডিত)

অপসারণের আপত্তি সম্পাদনা

মাওলানা মোহাম্মদ আবদুর রহিম (রহ্) বর্তমান শতকের এক অনন্যসাধারণ ইসলামী প্রতিভা। এ শতকে যে কজন খ্যাতনামা মনীষী ইসলামী জীবন ব্যবস্থা কায়েমের জিহাদে নেতৃত্ব দানের পাশাপাশি লেখনীর সাহায্যে ইসলামকে একটি কালজয়ী জীবন দর্শন রূপে তুলে ধরতে পেরেছেন, তিনি তাঁদের অন্যতম। এই ক্ষণজন্মা পুরুষ বাংলা ১৩২৫ সনের ৮ ফাল্গুন, (ইংরেজী ১৯১৮ সালের ২ মার্চ) সোমবার বর্তমান পিরোজপুর জিলার কাউখালি থানার অন্তর্গত শিয়ালকাঠি গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহন করেন। ১৯৩৮ সনে তিনি শর্ষিনা আলিয়া মাদ্রাসা থেকে আলিম এবং ১৯৪৪০ ও ১৯৪২ সনে কলিকাতা আলিয়া মাদ্রাসা থেকে যথাক্রমে ফাযিল ও কামিল ডিগ্রি লাভ করেন। ছাত্রজীবন থেকেই ইসলামের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে তাঁর জ্ঞানগর্ভ রচনাবলী পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হতে থাকে। ১৯৪৩ থেকে ১৯৪৫ সন পর্যন্ত তিনি কলিকাতা আলিয়া মাদ্রাসায় কুরআন ও হাদিস সম্পর্কে উচ্চতর গবেষণায় নিরত থাকেন। ১৯৪৬ সালে তিনি এই ভূখন্ডে ইসলামি জীবন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহন করেন এবং অত্যল্প কালের মধ্যেই একজন দক্ষ সংগঠক রুপে পরিচিত হয়ে ওঠেন।

বাংলা ভাষায় ইসলামী জ্ঞান চর্চার ক্ষেত্রে মওলানা মোহাম্মদ আবদুর রহিম (রহ্) শুধু পথিকৃতই ছিলেন না, ইসলামী জীবন দর্শনের বিভিন্ন দিক ও বিভাগ সম্পরকে এ পর্যন্ত তার ৬০ টিরও বেশি অতুলনীয় গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর ‘ইসলামি রাজনীতির ভূমিকা’,‘ইসলামের অর্থনীতি’, ‘মহাসত্যের সন্ধানে’, ‘বিবর্তনবাদ ও সৃষ্টিতত্ত্ব’, ‘আজকের চিন্তাধারা’, ‘পাশ্চাত্য সভ্যতার দার্শনিক ভিত্তি’, ‘কমিউনিজম ও ইসলাম’, ‘সুন্নাত ও বিদয়াত’, ‘নারী’, ‘ইসলামী অর্থনীতি বাস্তবায়ন’, ‘পরিবার ও পারিবারিক জীবন’, ‘আল-কুরআনের আলোকে উন্নত জীবনের আদর্শ’, ‘আল-কুরআনের আলোকে শিরক ও তওহীদ’, ‘আল-কুরআনে রাষ্ট্র ও সরকার’, ‘বিজ্ঞান ও জীবন বিধান’, ‘ইসলাম ও মানবাধিকার’, ‘ইকবালের রাজনৈতিক চিন্তাধারা’, ‘আল-কুরআনের আলোকে নবুয়্যাত ও রিসালাত’, ‘ইসলামী শরীয়াতের উৎস’, ‘অপরাধ প্রতিরোধে ইসলাম’ ইত্যাকার গ্রন্থ দেশের সুধীমহলে প্রচণ্ড আলোড়ন তুলেছে। এছাড়া অপ্রকাশিত রয়েছে তাঁর অনেক মূল্যবান পাণ্ডুলিপি।

মৌলিক ও গবেষণামূলক রচনার পাশাপাশি বিশ্বের খ্যাতনামা ইসলামী মনীষীদের রচনাবলী বাংলায় অনুবাদ করার ব্যাপারেও তাঁর কোন জুড়ি নেই। এসব অনুবাদের মধ্যে রয়েছে মওলানা মওদুদী (রহঃ)-এর বিখ্যাত তফসীর ‘তাফহীমুল কুরআন’, আল্লামা ইউসুফ আল-কারযাভী কৃত ‘ইসলামের যাকাত বিধান’ (দুই খন্ড) ও ‘ইসলামে হালাল-হারামের বিধান’, মুহাম্মদ কুতুবের ‘বিংশ শতাব্দীর জাহিলিয়াত’ এবং ইমাম আবু বকর আল-জাসসাসের ঐতিহাসিক তফসীর ‘আহ্কামুল কুরআন’। তাঁর অনূদিত গ্রন্থের সংখ্যাও ৬০টির ঊর্ধ্বে।

মওলানা মুহাম্মদ আবদুর রহীম (রহ) ১৯৭৭ সনে মক্কায় অনুষ্টিত প্রথম বিশ্ব ইসলামী শিক্ষা সম্মেলন ও রাবেতা আলমে ইসলামীর সম্মেলন, ১৯৭৮ সনে কুয়ালালামপুরে অনুষ্ঠিত প্রথম দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় ইসলামী দাওয়াত সম্মেলন, একই বছর করাচীতে অনুষ্ঠিত প্রথম এশীয় ইসলামী মহাসম্মেলন, ১৯৮০ সনে কলম্বোতে অনুষ্টিত আন্তঃপার্লামেন্টারী সম্মেলন এবং ১৯৮২ সনে তেহরানে অনুষ্ঠিত ইসলামী বিপ্লবের তৃতীয় বার্ষিকী উৎসবে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করে

এই যুগস্রষ্টা মনীষী বাংলা ১৩৯৪ সনের ১৪ আশ্বিন (ইংরেজী ১৯৮৭ সনের ১ অক্টেবর) বৃহস্পতিবার এই নশ্বর দুনিয়া ছেড়ে মহান আল্লাহর সান্নিধ্যে চলে গেছেন। ইন্না-লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।[১]

   http://www.icsbook.info/2022/shibir#
"আবদুর রহিম (পণ্ডিত)" পাতায় ফেরত যান।