গাধার চামড়ার জেলাটিন বা গাধার চামড়ার আঠা হল একধরনের জেলাটিন যা গাধার চামড়াকে সেদ্ধ ও ভেজানোর ফলে পাওয়া যায় । এটি চীনের ঐতিহ্যবাহী ঔষধের উপাদান হিসাবে ব্যবহৃত হয়,[১][২] যেখানে একে এজিও বলা হয় (সরলীকৃত চীনা: 阿胶; ঐতিহ্যবাহী চীনা: 阿膠; পিনয়িন: ই জিওও)

এক খণ্ড গাধার চামড়ার জেলাটিন

জিলটিন চীনের বেশ কয়েকটি উপকূলীয় প্রদেশে উৎপাদিত হয়: জিয়াংসু, ঝিজিয়াং, শানডং। শানডংয়ের দোং কাউন্টি থেকেই মূলত "ইজিও" নামটি এসেছিল।

গাধা

ফরাসী জেসুইটস ডোমিনিক পারেনিন এর একটি সিএ ১৭২৩ হিসাব অনুযায়ী দোং'এ একটি কূপ ছিল যা বন্ধ এবং সিল করে রাখা হত এবং এটি তখনই খোলা হত যখন সম্রাটের দরবারে ইজিও প্রস্তুত করার জন্য জল ব্যবহার করার প্রয়োজন হত।[৩]

উৎপাদন সম্পাদনা

পেরেনিনিনের মতে, পণ্যটি শরতের শেষের দিকে এবং শীতের সময় (ফসল কাটার পরে থেকে মার্চের শুরু পর্যন্ত) ঐতিহ্যগতভাবে প্রস্তুত করা হত। এটি সদ্য মৃত স্বাস্থ্যবান কালো গাধাটির ত্বক থেকে তৈরি হত বলে জানা যায়। যেহেতু এই উপাদানের সরবরাহ সীমাবদ্ধ ছিল, তাই ধারণা করা হয় যে প্রচুর পরিমাণে "জাল" ইজিও তৈরি করা হয়েছিল । খচ্চর, ঘোড়া, উট, শূকরের চামড়া এমনকি কখনও কখনও পুরানো জুতো থেকেও তৈরি করা হত । তবে ভোক্তাদের প্রতারিত করার জন্য এতে কিছুটা আসল উপাদানও যুক্ত করা হত ।

ইজিও হয় হয় শুষ্ক জেলাটিন হিসাবে প্রস্তুত হত কিংবা গুঁড়ো ঝিনুকের শেল বা পরাগ মিশ্রিত করে আঠালো বলের অবয়বে তৈরি করা হত। এটি মিষ্টি স্বাদযুক্ত ।

জেসুইটস উল্লেখ করেছেন যে আসল ইজিওর কটু স্বাদ বা গন্ধ না থাকলেও জাল পণ্যটি তার কটু গন্ধ এবং স্বাদ দ্বারা পৃথক করা যেত, এমনকি এটি শূকর চর্ম থেকেও তৈরি করা হলেও (যা সম্ভবত ধারণা করা হত যে, আসল জিনিসটির অনেকটাই কাছাকাছি মানের ) ।

একবিংশ শতাব্দীতে, ইজিও উত্পাদনকারীরা সত্যিকারের গাধার চামড়া সরবরাহে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়, কারণ আজকাল অনেক কম মানুষ এই প্রাণী লালন পালন করে। ক্রমহ্রাসমান সরবরাহ এবং সরবরাহের পাশাপাশি এজিওর ব্যাপক চাহিদার কারণে চীনে গাধার চামড়ার দাম অনেক বেড়ে গিয়েছে। তাছাড়া দেশের বাইরে থেকে পশুর চামড়া আমদানিতে নিষেধাজ্ঞার সম্মুখীন হতে হয়। কিন ইউফেং যিনি একটি বড় ইজিও প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান এবং শানডংয়ের প্রাদেশিক আইনসভার সদস্য গাধার খামার তৈরি করার জন্য সরকারের সহায়তার পক্ষে পরামর্শ দিয়েছেন।[৪][৫][৬]

গাধা চুরি এবং গাধার সংখ্যা হ্রাস সম্পাদনা

২০১০ এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে, বিশ্বের বহু জায়গায় গাধার দাম চীন ভেষজবাদের দাবির মধ্যে তীব্রভাবে বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। উগান্ডা, তানজানিয়া, বোতসোয়ানা, নাইজার, বুর্কিনা ফাসো, মালি এবং সেনেগাল চীনে গাধার রফতানি নিষিদ্ধ করে দিয়েছিল[৭]। নভেম্বরে 2017 সালে এক প্রত্যক্ষদর্শীর ভিডিও ফুটেজে দেখানো হয়েছিল যে শিশু গাধাগুলি স্লেজ হাতুড়ি দ্বারা হত্যা করা হচ্ছে বা তাদের জবাই করে হত্যা করা হচ্ছে যে ফুটেজটি পিপল ফর দি ইথিকাল ট্রিটমেন্ট অফ অ্যানিম্যালস এশিয়া থেকে মুক্ত করা হয়েছিল[৮]। 2019 সালে দ্য গার্ডিয়ান হতে প্রাপ্ত প্রতিবেদনে জানা যায় যে ইজিওর বিশ্বব্যাপী চাহিদা মেটাতে 4.8 মিলিয়ন গাধার চামড়া প্রয়োজন। [৯]

ব্যবহার সম্পাদনা

চীনারা বিভিন্ন ধরনের অসুস্থতা থেকে আরোগ্য লাভের উদ্দেশ্যে এটি ব্যবহার করে থাকে। 5 থেকে 10 গ্রাম পরিমাণ মতো গরম জল বা ওয়াইনে দ্রবীভূত করা হয় এবং ঐতিহ্যবাহী চীনা মেটেরিয়ায় মেডিকেতে অন্যান্য উপাদানের সাথে মিশ্রিত করা হয় বা এমনিই গ্রহণ করা হয়ে থাকে। এটি বিশ্বাস করা হয় যে গাধার চামড়ার জেলাটিন রক্তক্ষরণ, মাথা ঘোরা, অনিদ্রা এবং শুকনো কাশি ইত্যাদির মতো বিভিন্ন রোগ উপশম করতে সক্ষম।

ইজিওর ভোজ্য রূপটি প্রায়শই বাদাম এবং তিলের বীজের সাথে মিশ্রিত করা হয় এবং শানডংয়ের একটি বিখ্যাত জলখাবার হিসাবে পরিবেশন করা হয়। এটি খেজুরের ওপর একটি ভোজ্য প্রলেপ হিসাবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে, যা নাস্তায় এক ভিন্ন মাত্রা যোগ করে।

শানডং প্রদেশের বেশ কয়েকটি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান "গু ইউয়ান গাও" (固 元 膏) নামে একটি ইজিওও বার তৈরি করে। গু ইউয়ান গাও এজিও, বাদাম, তিল, চাইনিজ খেজুর এবং রান্নার ওয়াইন দিয়ে তৈরি একটি সুস্বাদু বার।

এটি ডি মো তেও ব্যবহৃত হয় যা একটি বিশেষ কাগজের মতো মিউজিকাল রিড মেমব্রেন, চীনা বাঁশি ডিজিতে লাগানোর জন্যও ব্যবহৃত হয় ।কারণ এটি দ্রুত শুকিয়ে যায়, বেশ দৃঢ়ভাবে ধরে থাকে এবং এটি জলে দ্রবণীয় হয়, যা পরে ডি মো প্রতিস্থাপনে সহায়তা করে।

রক্তাল্পতার চিকিত্সায় এটির আণবিক ভিত্তি কমপক্ষে একাধিক পদ্ধতির সংমিশ্রণে পেপটাইডিক উপাদানগুলি থেকে কিছু অংশ নিয়ে প্রদর্শিত হয়েছে। কোলা কোরি আসিনির হেমাটোপোয়েটিক প্রভাব রেডিওথেরাপি বা কেমোথেরাপির কারণে মেলোসাপ্রেশনে ভোগা ক্যান্সার রোগীদের উপকারে আসতে পারে।[১০]

আরও দেখুন সম্পাদনা


তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Jing-Nuan Wu (2005), An illustrated Chinese materia medica, Oxford University Press, pp. 284–285 ISBN 978-0-19-514017-0
  2. Xinrong Yang (2003), Encyclopedic Reference of Traditional Chinese Medicine, Springer, p. 168 ISBN 978-3-540-42846-6
  3. Gobien, Charles Le; Halde, Jean-Baptiste Du; Querbeuf, Yves Mathurin Marie Tréaudet de; Maréchal, Nicolas; Patouillet, Louis (1819),Lettres Édifiantes Et Curieuses, Écrites Des Missions Étrangères: Mémoires de la Chine Volume 10 of Lettres Édifiantes Et Curieuses, Écrites Des Missions Étrangères, Lettres Édifiantes Et Curieuses, Écrites Des Missions Étrangères (in French) (reprint ed.), J. Vernarel, pp. 479–481 (This is a reprint; the original text was published in the first half of the 18th century. E xian (for Dong'e) and Ejiao are transcribed Ngo-hien and Ngo-kiao, under the transcription system then in use).
  4. Chin, Josh (2015-02-06)It Behooves China to Subsidize Donkey Industry, Politician Says
  5. Zhao, Ruixue (2015-02-04)"Donkey industry calls for financial kick from govt",China Daily
  6. Li, Courtney (2016-12-16), 阿胶价格暴涨一斤5000元 中国“满世界找驴”[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  7. Leithead, Alastair (2017-10-07)"Why are donkeys facing their 'biggest ever crisis'?" BBC News.
  8. Williamson, Ben (December 12, 2017)."Donkeys Bludgeoned and Their Skin Taken for Traditional Chinese 'Medicine' (Video)". Alternet. ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ তারিখে Retrieved February 11, 2018.
  9. Murray, Jessica (2019-11-21)."World's donkeys being 'decimated' by demand for Chinese medicine". The Guardian.
  10. Wu, Hongzhong; Ren, Chunyan; Yang, Fang; Qin, Yufeng; Zhang, Yuanxing; Liu, Jianwen (April 2016). "Extraction and identification of collagen-derived peptides with hematopoietic activity from Colla Corii Asini". Journal of Ethnopharmacology. 182: 129–136.doi:10.1016/j.jep.2016.02.019.