আর্ক দুর্গ

উজবেকিস্তানের বুখারায় অবস্থিত দুর্গ

আর্ক অব বুখারা খ্যাত বিশাল ঐতিহাসিক দূর্গ উজবেকিস্তানের বোখারা শহরে অবস্থিত। ৫ম শতাব্দিতে এর নির্মান এবং ব্যবহার করা হয়। একটি সামরিক দুর্গ হলেও একটি ছোটখাটো শহর হিসেবে টেকসই হবার জন্য যে যে সুবিধা দরকার তার সবই এখানে সন্নিবেশ করা হয়েছিলো যেমন। বিভিন্ন সময়ে যেসব শাসকরা বুখারার আশেপাশে শাসন করেছেন তাদের অনেকেই এখানে বসবাস করেছেন এবং ১৯২০ সালে রাশিয়ার অধীনে যাবার আগ পর্যন্ত তা অব্যাহত ছিলো। বর্তমানে আর্ক দুর্গটি একটি পর্যটক আকর্ষণ । এর ইতিহাস সমৃদ্ধ একটি ছোট জাদুঘরও রয়েছে।[১]

আর্ক দূর্গের প্রধান দৃশ্য

বর্ণনা সম্পাদনা

 
আর্ক দূর্গের দেয়াল।

আর্ক বেশ বড় আয়তনের মাটির দুর্গ যা সমসাময়িক বুখারা শহরের উত্তর অংশে অবস্থিত। বিশেষভাবে নির্মিত একটু পাহাড় সদৃশ উচু ভূমিতে নির্মিত হয়েছিল, চারদিকে উঁচু প্রাচীর দ্বারা বেষ্টিত ছিল এবং এর দুটি প্রবেশ পথ ছিল।এটা মোটামুটি আয়তাকার ধরনের তবে পূর্ব-পশ্চিম বরাবর কিছুটা লম্বা। বহিস্থ দেয়ালের পরিসীমা ৭৮৯.৬ মিটার (২,৫৯১ ফু), এবং মোট আয়তন ৩.৯৬ হেক্টর (৯.৮ একর). দেয়ালের উচ্চতা কমবেশি ১৬ থেকে ২০ মিটার (৫২ থেকে ৬৬ ফু).

দুর্গের সবচেয়ে বিখ্যাত প্রবেশপথ বুখারা তোরণ। প্রাচীন খিলান সমৃদ্ধ বাহ্যিক দেয়াল। তোরণের দুপাশে ১৮ শতাব্দির দুটো সুদৃশ্য মিনার দাড়িয়ে আছে। মিনারের উপরের অংশ গ্যালারী, কক্ষ এবং উম্মুক্ত বারান্দা সহযোগে পরস্পরের সাথে সংযুক্ত। একটি ঢালু র‌্যাম্প দিয়ে উচু ভিত্তিতে উঠতে হয়। ঠিক উপরের তলায় জুমা মসজিদের । এর ঠিক পরেই খুশবেগ বা প্রধান উজিরের মেহমানখানা। এর সংলগ্ন বাম পাশেই ছিলো বড় হল যেখানে বিভিন্ন বিদেশী মেহমানদের এখানে অভ্যর্থনা জানানো হতো। নিচতলায় ছাদঢাকা করিডোর চলে গেছে গুদাম এবং কারাকক্ষের দিকে। দুর্গের কেন্দ্রীয় অবস্থানে একটি বড় প্রাসাদ কমপ্লেক্স মোটামুটি সংরক্ষণ করা হয়েছে। রাজা ও রাজপুত্রদের, আধিকারিকদের ও সেনাপতিদের, রাজ্যগুলির অফিসগুলি এখানে ছিলো। আরো ছিলো সিংহাসন কক্ষ। এ কমপ্লেক্সের মসজিদটি বেশ ভালো অবস্থায় পাওয়া যায়।

আর্ক দুর্গ নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে কিছু গল্প প্রচলিত আছে। শাহনামা কাব্য গ্রেন্থে আছে পারস্য থেকে আগত ধন্যাঢ্য যুবক শিয়াভুষ প্রনয়ে জড়িয়ে পড়েন স্থানীয় শাসক আফ্রাসিয়াবের কন্যার সাথে। পিতা শর্ত দেন এ প্রনয় তিনি মেনে নেবেন তবে তার আগে যুবককে একটি সুদৃশ্য দুর্গ তৈরী করতে হবে। শিয়াভূষ অনেক কস্ট করে এই দুর্গম এলাকায় আর্ক দুর্গ তৈরী করেন। এছাড়া চল্লিশটি বালিকাকে নির্যাতন করে কটি কুপে সমাহিত করার একটি গল্প প্রচলিত আছে দুর্গকে ঘিরে।[২]

ইতিহাস সম্পাদনা

 
১৯০৭ সালের ছবিতে আর্ক দুর্গের প্রধান গেট।
 
দরবার হল

আর্ক দুর্গটি একটি পুরাতন কাঠামোর উপরে নির্মিত হয়েছিলো। বর্তমান স্তর থেকে প্রায় ২০ মিটার নিচে একটি ভিত্তি স্তর পাওয়া যায় যা থেকে ধারণা করা হয় এর পূর্বেও এখানে এ ধরনের একটি স্থাপনা বর্তমান ছিলো যা কালের বিবর্তনে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছিলো।

নরশাখীর (আবু বকর মোহাম্মদ ইবনে জাফর, ৮৯৯-৯৬০) ইতিহাস গ্রন্থ হিস্ট্রি অব বুখারা তে প্রথম আর্ক দুর্গের ইতিহাস পাওয়া যায়। আবুবকর লিখেছিলেন বুখারার শাসক বিন্দু এই দুর্গ নির্মান করেন। কিন্তু অচিরেই এটা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। একাধিক বার এটা পুননির্মান করা হয়েছিলো এবং প্রতিবারই আবার হারিয়ে যাচ্ছিল। সর্বশেষ শাসক নির্মান করার সময় বিদগ্ধ ব্যক্তিরা তাকে একটি বিশেষ কৌশল অবলম্বনের পরামর্শ দেন। সম্পূর্ণ দুর্গের পরিসীমা ধরে সপ্তর্ষিমন্ডলের অনুসরনে সাতটি বিন্দু নির্দিস্ট করে নিয়ে তারপর এক বিন্দু থেকে অপর বিন্দু পর্যন্ত দেয়াল করা হয় এবং সাতটি বিন্দুতে বিশেষভাবে শক্তিশালী করা হয়। এরপর থেকে দুর্গটি আর ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়নি।[৩]

চেঙিস খানের সৈন্যরা যখন বুখারা আক্রমণ করে তখন শহরবাসী এই দুর্গে আশ্রয় নেয় তবে সেনাপতির নির্দেশে সৈন্যরা দুর্গ ধ্বসিয়ে দেয় এবং পুরোপুরি দখল নিয়ে নেয়। মধ্যযুগে রুদাকি, ফেরদৌসি, ইবনে সিনা, আল ফারাবী প্রমুখদের কাজে দুর্গের বর্ণনা পাওয়া যায়। পরবর্তীতে ওমর খৈয়ামও এর উল্লেখ করেন। এখানে একটি বড় গ্রন্থাগারও ছিলো যেটা দেখে ইবনে সিনা বলেছিলেন:

সম্ভবত বুখারার কোন এক শাসকের হাতেই এই গ্রন্থাগারের ধ্বংস হয়। রাশিয়ার গৃহযুদ্ধ চলাকালীন লাল ফৌজের হাতে আর্ক দুর্গের বেশ ক্ষতি হয়। ১৯০২০ সালে বুখারার যুদ্ধে মিখাইল ফ্রাঞ্জির আদেশে বিমান থেকে ব্যাপক গোলবর্ষন করা হয়। দুর্গের একটা বড় অংশ ধুলিস্মাৎ হয়ে যায়। ভিন্ন একটা কথা প্রচলিত আছে যে বুখারার শেষ আমির আলিম খান আফগানিস্তানে পালিয়ে যাবার সময় নিজেই দুর্গকে ধ্বংস করার আদেশ দিয়ে যান।

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "The Ark". Lonely Planet. Lonely Planet. Retrieved 2 September 2016
  2. "Ark of Bukhara"MITLibraries। Massachusetts Institute of Technology। সংগ্রহের তারিখ ২ সেপ্টেম্বর ২০১৬ 
  3. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ২০১৭-১২-০১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-০৭-১৬