আয়গিস্থোস (//; প্রাচীন গ্রিকΑἴγισθος; রূপান্তরিত হয়েছে Aigisthos হিসেবে) গ্রিক পুরাণের এক চরিত্র। তিনি থিয়েস্তেস এবং তাঁর কন্যা পেলোপিয়ার পুত্র ছিলেন। তিনি ছিলেন অজাচার জাত সন্তান। মাইসিনির সিংহাসনের জন্য তাঁর পিতার সাথে হাউস অব আত্রেউসের যে শত্রুতা ছিল তা দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি আত্রেউসকে হত্যা করে নিজের পিতাকে সিংহাসনে বসান। পরে আত্রেউসের পুত্র আগামেমননের কাছে তিনি এই সিংহাসন হারান। 

ওরেস্তেস এবং  পাইলেদজের হাতে অগাস্থাস খুন হচ্ছে - লুভ্য 

আগামেমনন যখন ট্রোজান যুদ্ধে ছিলেন তখন অগাস্থাস তাঁর বিচ্ছেদপ্রাপ্ত স্ত্রী ক্লাইমেনেস্ত্রার সাথে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন।আগামেমনন যখন ট্রোজান যুদ্ধে গমন করেন তখন আয়গিস্থোস ক্লাইমেনেস্ত্রার সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলেন। আগামেমনন যখন ট্রোজান যুদ্ধ থেকে ফিরে আসেন তখন তারা তাঁকে খুন করে। এর পর ৭ বছরের জন্য আয়গিস্থোস মাইসিনির রাজা হন এবং ৭ বছর পরে আগামেমননের পুত্র ওরেস্তেসের হাতে নিহত হন।

প্রারম্ভিক জীবন সম্পাদনা

থিয়েস্তেসের মনে হয়েছিল তার ভাই আত্রেউস অন্যায়ভাবে তাকে সিংহাসন থেকে বঞ্চিত করছিল। এ কারণে তারা দু'জন কয়েকবার যুদ্ধ করেন। উপরন্তু  থিয়েস্তেসের সাথে আত্রেউসের স্ত্রী য়েরোপের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। প্রতিশোধ নিতে আত্রেউস থিয়েস্তেসের পুত্রদের হত্যা করেন এবং থিয়েস্তেসের অজান্তে তাদের খেতে দেন। নিজ পুত্রের লাশ খাওয়ার পর থিয়েস্তেস ঐশীবানীকে প্রশ্ন করেন কীভাবে সর্বশ্রেষ্ঠ প্রতিশোধ নেওয়া যায়। উত্তর ছিল তার ঔরসে তার মেয়ের গর্ভে জন্ম নেওয়া পুত্র হত্যা করবে আত্রেউসকে।

এরপর থিয়েস্তেস নিজ পরিচয় গোপন করে তার নিজ কন্যা পেলোপিয়াকে ধর্ষণ করে, যখন পেলোপিয়া উৎসর্গের মাধ্যমে প্রার্থনা করছিলেন। জন্মের পর আয়গিস্থোসের  লজ্জিত মা তাকে পরিত্যাগ করেন। তিনি ছাগলের দুধ পান করে মেষপালকদের কাছে বড় হন। আত্রেউস তার পরিচয় না জেনে তাকে দত্তক নেন এবং নিজের ছেলের মত লালন পালন করতে থাকেন। 

আত্রেউসের মৃত্যু  সম্পাদনা

যে রাতে পেলোপিয়া ধর্ষিত হয়েছিলেন তিনি তার বাবার কাছ থেকে একটি তলোয়ার পান যা তিনি পরবর্তীতে আয়গিস্থোসকে দেন। যখন তিনি বুঝতে পারেন তলোয়ারটি তার বাবার তিনি বুঝতে পারেন তার ছেলে অজাচার জাত সন্তান। এই কষ্ট সহ্য করতে না পেরে তিনি আত্মহত্যা করেন। আত্রেউস ভাইয়ের প্রতি শত্রুতা থেকে ক্রোধান্বিত হয়ে অগাস্থাসকে পাঠান থিয়েস্তেসকে হত্যা করার জন্য; কিন্তু তলোয়ার দেখে তারা পরস্পরের সম্পর্ক বুঝতে পারেন। পরবর্তীতে আয়গিস্থোস ফিরে আসে এবং সমুদ্র তীরে যখন আত্রেউস উৎসর্গ করছিলেন তখন তাঁকে হত্যা করেন। এরপর পিতা পুত্র তাদের ন্যায্য অধিকার আদায় করে শাসনক্ষমতা নিজ হাতে তুলে নেন যা থেকে আত্রেউস তাদের বঞ্চিত করে ছিল। 

মাইসিনিকে নিয়ে ক্ষমতার লড়াই  সম্পাদনা

আয়গিস্থোস এবং থিয়েস্তেস যৌথভাবে মাইসিনি শাসন করতে থাকেন। তারা আত্রেউসের পুত্র আগামেমনন এবং মেনেলাউসকে স্পার্টায় নির্বাসনে পাঠান, সেখানে রাজা তাইন্দারেউস নিজের দুই কন্যা ক্লাইমেনেস্ত্রা এবং হেলেনকে তাদের সাথে বিবাহ দেন। আগামেমনন এবং ক্লাইমেনেস্ত্রার চার সন্তান ছিল: এক পুত্র, ওরেস্তেস, এবং তিন কন্যা, ইফিজিনিয়া,ইলেক্ট্রা এবং ক্রাইসোথেমিস। 

তাইন্দারেউসের মৃত্যুর পর মেনেলাউস স্পার্টার রাজা হন। তিনি স্পার্টান সৈন্যদের ব্যবহার করেন অগাস্থাস এবং থিয়েস্তেসকে তাড়িয়ে আগামেমননকে মাইসিনির সিংহাসনে বসাতে। আগামেমনন বহু যুদ্ধে জয়লাভ করে মাইসিনির সীমানা বৃদ্ধি করেন এবং সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী রাজায় পরিণত হন। যখন তিনি ট্রয়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়লাভ করতে নিজ কন্যা ইফিজিনিয়াকে দেবতাদের কাছে উৎসর্গ করেন তখন ক্লাইমেনেস্ত্রা তার বিরুদ্ধাচরণ করেন। আগামেমনন যখন ট্রোজান যুদ্ধে গমন করেন তখন আয়গিস্থোস ক্লাইমেনেস্ত্রার সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলেন। আয়গিস্থোস ক্লাইমেনেস্ত্রাকে সাহায্য করেন যাতে তিনি আগামেমননকে মারতে পারেন। কিছু গল্পে, যেমন হোমারে বলা হয় আয়গিস্থোস আগামেমননকে হত্যা করেন। আবার পরবর্তীতে বলা হয় তিনি যখন স্নান করে নগ্ন অবস্থায় ছিলেন তখন ক্লাইমেনেস্ত্রা তাঁকে ছুরি বিদ্ধ করে হত্যা করেন।

এই ঘটনার পর আয়গিস্থোস প্রায় ৭ বছর মাইসিনিতে রাজত্ব করেন। তার এবং ক্লাইমেনেস্ত্রার তিন সন্তান ছিল: এক পুত্র আলেতেস এবং দুই কন্যা এরিজোন এবং হেলেন। আয়গিস্থোসের রাজত্বের অষ্টম বর্ষে আগামেমননের পুত্র ওরেস্তেস মাইসিনিয়ায় ফিরে আয়গিস্থোস এবং ক্লাইমেনেস্ত্রাকে হত্যা করে পিতৃহত্যার প্রতিশোধ নেয়। কিন্তু সে মাতৃহন্তক হওয়ায় তার প্রতি সকলের বিদ্বেষ বাড়তে থাকে এবং মাইসিনিয়া থেকে পালিয়ে যেতে হয়। এরপর আলেতেস রাজত্ব করে ততদিন পর্যন্ত যতদিন না ওরেস্তেস আবার ফিরে আসে এবং তাঁকে হত্যা করে। পরবর্তীতে ওরেস্তেস আয়গিস্থোসের কন্যা এরিজোনকে বিবাহ করে। 

সংস্কৃতিতে  সম্পাদনা

 
Pierre-Narcisse Guérin এর আয়গিস্থোস এবং ক্লাইমেনেস্ত্রা, যেখানে দেখা যায় আয়গিস্থোস ক্লাইমেনেস্ত্রাকে সামনে এগিয়ে দিচ্ছে।

হোমার আয়গিস্থোসের জীবন-সূচনার কোন কাহিনী বলেননি। হোমার থেকে আমরা জানতে পারি থিয়েস্তেসের মৃত্যুর পর আয়গিস্থোস মাইসিনিয়ার রাজা হন এবং তিনি ট্রোজান যুদ্ধে অংশ নেননি। আগামেমনন যখন ট্রোজান যুদ্ধে গমন করেন তখন আয়গিস্থোস ক্লাইমেনেস্ত্রার সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলেন। আগামেমনন যখন ট্রোজান যুদ্ধ থেকে ফিরে আসেন তখন আয়গিস্থোস তাঁকে নিমন্ত্রণ জানান এবং ষড়যন্ত্র করে তাঁকে হত্যা করেন। 

ইস্কিলুসেওরেস্তিয়ায় আয়গিস্থোস একটি ক্ষুদ্র চরিত্র।  প্রথম নাটক, আগামেমনন এ ক্লাইমেনেস্ত্রা আগামেমনন এবং কাসান্দ্রাকে খুন করার পর আয়গিস্থোস সিংহাসনের দাবি নিয়ে আসেন। দ্য লাইবেশন বিয়ারারস এ ওরেস্তেস তাড়াতাড়ি তাঁকে খুন করে ফেলে এবং মাতৃহত্যা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দে ভুগতে থাকে। আয়গিস্থোসকে "দুর্বল সিংহ" বলা হয়, কারণ তিনি হত্যার পরিকল্পনা করে নিজের প্রেমিকাকে দিয়ে হত্যা করিয়েছেন। জোহানা লিয়াহ ব্রাফের মতে আয়গিস্থোস "ঐতিহ্যগত মহিলার চরিত্র ধারণ করেছেন, যে সব কাজের পিছে চালিকাশক্তি হিসেবে থাকে কিন্তু সরাসরি কাজ করেন না।" ক্রিস্টোফার কোলারড তাঁকে পরিচয় দিয়েছেন ক্লাইমেনেস্ত্রার আবরণ হিসেবে, সংক্ষেপে তাঁকে বলা হয়েছে কাপুরুষ, ধূর্ত, দুর্বল এবং ফাঁকা বুলিতে ভর্তি এক ভঙ্গুর চরিত্র হিসেবে। 

ইস্কিলুসের আয়গিস্থোস দুর্বল এবং অনেকটা নারী চরিত্রের মত, যা পরবর্তীতে বহু লেখক, কবি এবং চিত্রশিল্পীদের উদ্বুদ্ধ করেছে তার পাশে ক্লাইমেনেস্ত্রাকে অধিক শক্তিশালী রূপে উপস্থাপন করতে। সেনেকার আগামেমনন এ দেখা যায় আয়গিস্থোস ক্লাইমেনেস্ত্রাকে আগামেমনন হত্যায় প্ররোচিত করছে।  [১]

মাইসিনির এক প্রাচীন সৌধকে এখন আয়গিস্থোসের সৌধ বলা হয়। এটি প্রায় ১৪৭০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে স্থাপিত।  [২]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Lawrence Kramer, Opera and Modern Culture: Wagner and Strauss, University of California Press, 2004, pp.207-8.
  2. William Bell Dinsmoor, The Architecture of Ancient Greece: An Account of Its Historic Development, Biblo & Tannen Publishers, 1950, p.29.