আম্মাচি পানাপিল্লাই আম্মা
আম্মাচি পানাপিল্লাই আম্মা হল ত্রিবাঙ্কুরের শাসক মহারাজের সহধর্মিণীর উপাধি, ত্রিবাঙ্কুর রাজপরিবারের অন্যান্য খেতাবধারী পুরুষ সদস্যদের এমন উপাধি থাকত।[১]
উপাধিটির আক্ষরিক অনুবাদ হল 'সঙ্গী', কারণ পূর্বে ত্রিবাঙ্কুরে মাতৃতান্ত্রিক ব্যবস্থা বিদ্যমান ছিল, সেই অনুসারে, মহারাজার বোনকে বলা হতো মহারানি, তাঁর স্ত্রীকে বলা হতো না। এইভাবে স্ত্রী, যিনি রাজকীয় বংশের ছিলেন না, তিনি আম্মাচি পানাপিল্লাই আম্মা উপাধি গ্রহণ করেন।[২]
আম্মাচিরা বেশিরভাগই ছিলেন অভিজাত নায়ার পরিবার থেকে। মহারাজারা এই নারীদের বিয়ে করেছিলেন সম্বন্ধম নিয়মের বিবাহের মাধ্যমে, এই নিয়মটি পাট্টুম পরিবত্তাভুম নামে পরিচিত।
উৎপত্তি সম্পাদনা
ত্রিবাঙ্কুরের (বর্তমান দক্ষিণ কেরালা) মহারাজারা খ্রিস্টীয় ১৪ শতকের দিকে দেশে প্রচলিত মাতৃ-তান্ত্রিক প্রথা এবং উত্তরাধিকার গ্রহণ করেছিলেন। তদনুসারে, একজন রাজা মারা গেলে, তার ভাগ্নে (বোনের ছেলে) পরবর্তী শাসক হবে।
আম্মাভিদুস সম্পাদনা
যে পরিবারের মহিলার সঙ্গে মহারাজাদের বিয়ে হত তারা আম্মাভিদু নামে পরিচিত ছিল। এটা বিশ্বাস করা হয় যে তৎকালীন ত্রিবাঙ্কুরের রাজা, মহারাজা শ্রী কার্তিকা থিরুনাল ধর্মরাজ যখন পদ্মনাভপুরম থেকে তিরুবনন্তপুরমে রাজধানী স্থানান্তরিত করেন, তখন তিনি তাঁর চার স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন। স্ত্রীরা ভাদাসেরি, নাগেরকোয়েল, অরুমানা এবং তিরুভাত্তার নামক স্থানের বাসিন্দা ছিলেন। আম্মাভিদু (আম্মাচিদের পৈতৃক বাড়ি) নামে পরিচিত নতুন বাড়িগুলি নতুন রাজধানীতে নির্মিত হয়েছিল এবং তাদের নাম দেওয়া হয়েছিল অরুমানা আম্মাভিদু, ভাদাসেরি আম্মাভিদু, নাগেরকোয়েল আম্মাভিদু, তিরুভাত্তার আম্মাভিদু। মহারাজা একটি নিয়মও চালু করেছিলেন যে সমস্ত রাজকীয় পুরুষ সদস্যদের শুধুমাত্র উপরে উল্লিখিত চারটি আম্মাভিদুর মধ্যে থেকে বিয়ে করতে হবে। এটি আম্মাচিদের পাশাপাশি তাদের ঘরবাড়িকে সামাজিক গুরুত্ব দিয়েছে।[১]
ত্রিবাঙ্কুরের রাজারা ঐতিহ্যগতভাবে আম্মাভিদু থেকে স্ত্রী গ্রহণ করতেন এবং স্ত্রীদের আম্মাচি বলা হত, তাঁরা অতিরিক্ত উপাধি পেতেন পানাপিল্লাই আম্মা। যদি আম্মাভিদুর বাইরের অন্য কোনও মহিলাকে রাজা বিয়ে করতেন, তবে তাঁকে প্রথমে আম্মাভিদুদের একজনের কাছে দত্তক দেওয়া হবে এবং তারপরে রাজার সাথে বিবাহ হবে। মহারাজা স্বাথি থিরুনাল, মহারাজা আয়িলিয়াম থিরুনাল এবং মহারাজা মুলাম থিরুনালের বিবাহের ক্ষেত্রে এই ঘটনা ঘটেছিল।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]</link>[ তথ্যসূত্র প্রয়োজন ]
সামাজিক মর্যাদা সম্পাদনা
যদিও আম্মাচি এবং তাঁর সন্তানদের উচ্চ সামাজিক সম্মানে রাখা হয়েছিল, কিন্তু তাঁদের কোন রাজকীয় উপাধি বা কোন রাজনৈতিক ক্ষমতা ছিল না। তাঁরা বহিরাগত ছিলেন এবং তাঁদের স্বামী ও তাঁর পরিবারের থেকে নিকৃষ্ট বলে বিবেচিত হতেন। অন্য রাজকীয় সদস্যদের সাথে তাঁদের কোন যোগাযোগ ছিল না। আম্মাচিদের তাঁদের রাজকীয় স্বামী বা স্ত্রীদের সাথে প্রকাশ্যে দেখা যাওয়ার নিয়ম ছিল না; তাঁরা একই গাড়িতে ভ্রমণ করতে পারতেন না। যদি কখনো তাঁরা মহারাজার সাথে ভ্রমণ করতেন তবে তাঁদের মহারাজার বিপরীতে বসতে হত, তাঁদের পাশে কখনই নয়। মহারাজারা তাঁদের সহধর্মিণীদের রান্না করা কোনো খাবার গ্রহণ করতেন না এবং রাজকীয় সদস্যদের সাথে তাঁদের সঙ্গীদের খাবার গ্রহণের অনুমতি ছিল না। সময় পরিবর্তনের সাথে সাথে বিধিনিষেধও হ্রাস পেয়েছে।
রেভারেণ্ড স্যামুয়েল মেটার ১৯ শতকে ত্রিবাঙ্কুরের আম্মাচিদের অবস্থান সম্পর্কে নিম্নলিখিতগুলি পর্যবেক্ষণ করেছিলেন:
“ | ..... শাসক রানিদের সাথে আম্মাচির কোন যোগাযোগ থাকতনা। তিনি রাজপরিবারের সদস্য নন, আদালতে তাঁর দাপ্তরিক বা সামাজিক অবস্থান নেই এবং এমনকি তিনি যে শাসকের সহযোগী তাঁর সাথে জনসমক্ষে দেখা যাবেনা। তার সন্তানের তাঁর মতো একই অবস্থান থাকবে, এবং মালাবারের আইন তাঁদের সর্বজনীন স্বীকৃতি দেয়না। বেশ কিছু চমৎকার কাপড় পাঠানো হয় এবং তাঁকে তাঁর স্বামীর প্রাসাদে আনা হয়। কিন্তু আম্মাচী একবার একজন রাজার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার পর, তাঁকে বাকি সারা জীবন একাকী থাকতে হয়, যা অন্যান্য শূদ্র বিবাহের মতো নয়; এবং তাঁকে তাঁর নিজের বাসভবনে বন্দীর মতোই থাকতে হয়। তাই সব বাবা-মা এই শর্তে তাঁদের মেয়ে দিতে ইচ্ছুক থাকেন না। একাকী স্ত্রী স্বামীর জীবদ্দশায় বৃত্তি পান এবং তাঁর মৃত্যুর পরে পেনশন দিয়ে তাঁকে স্বাচ্ছন্দ্য দেওয়া হয়। চীনের প্রথা ঠিক একই রকম, যেখানে একজন সম্রাটের মৃত্যু হলে তাঁর মহিলাদের প্রাসাদের একটি অংশে সরিয়ে দেওয়া হয়, যেখানে তাঁদের বাকি জীবনের জন্য বন্ধ করে রাখা হয়।
.... |
” |
এই সমস্ত সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও, ঐতিহাসিকরা উল্লেখ করেছেন যে আম্মাচিরা জমি এবং অন্যান্য সম্পত্তির কর ছাড়, আরামদায়ক জীবনযাপনের ব্যবস্থা এবং অন্যান্য সম্মানের মতো বস্তুগত সুবিধা দিয়ে ক্ষতিপূরণ পেতেন।
তথ্যসূত্র সম্পাদনা
- ভি. নাগাম আইয়া দ্বারা ত্রিবাঙ্কুর রাজ্য ম্যানুয়াল