আমান্ডা পুরস্কার

চলচ্চিত্র বিষয়ক পুরস্কার

নরওয়েজীয় চলচ্চিত্রের উন্নতি ও বিকাশের এর লক্ষে প্রতিবছর নরওয়ের, হৌগেসুন্দে নরওয়েজীয় ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভাল 'আমান্ডা পুরস্কার প্রদান করে থাকে। ১৯৮৫ থেকে শুরু করে ২০০৫ পর্যন্ত তা ছিল শুধুমাত্র চলচ্চিত্র পুরস্কার (টিভি নয়)। বিজয়ীদের হাতে তুলে দেওয়া হয় একটি ভাস্কর্য যা তৈরি করেন নরওয়েজীয় ভাস্কর ক্রিস্টিয়ান কাভাকল্যাণ্ড, ভাস্কর্যের নাম; এবং আখ্যান; সংগ্রহ করা হয় ১৯২০ দশকের একজন স্থানীয় কাল্পনিক নারী চরিত্র হতে । পুরস্কার অনুষ্ঠানটি প্রতিবছর একটি বৃহৎ অনুষ্ঠান হিসাবে পালিত হয়।

আমান্ডা পুরস্কার
বিবরণনরওয়েজীয় চলচ্চিত্রে উৎকর্ষতার জন্য .
দেশনরওয়ে
পুরস্কারদাতানরওয়েজীয় ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভাল
প্রথম পুরস্কৃত১৯৮৫
ওয়েবসাইটOfficial Website (English version)

ইতিহাস

সম্পাদনা

নরওয়েজীয় আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব-এর অংশ হিসাবে আমান্ডা পুরস্কারের যাত্রা শুরু হয় নরওয়েজীয় চলচ্চিত্রের মান বৃদ্ধি এবং এর প্রতি মানুষের আগ্রহ তৈরি করতে[] ১৯৯৩ কে ধরা হয় একটি ব্যতিক্রম বছর , কারণ বহুল প্রচলিত নরডিক আমান্ডায় সংযজন করা হয় সকল নর্ডীক দেশের অবদান। [][] যে সব বিভাগে পুরাস্কার প্রদান করা হতো তা হতে ২০০৫ থেকে টিভি নাটক বাদ দেওয়া হয়। টেলিভিশনের জন্য বিশেষায়িত পুরস্কার গুলরিটেন সেই স্থানটি পূরণ করেছে।[] একই সাথে আরেকটি পরিবর্তন এসেছে, শুরু থেকে পুরস্কার অনুষ্ঠানটি নির্মাণ করা হতো নওরিয়ান ষ্টেট ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশন (এনআরকে) এর সহযোগিতায়। যদিও ২০০৬ সালে এনআরকে অংশদারিত্ব ত্যাগ করে এবং সেই থেকে অনুষ্ঠানটির দায়িত্ব বেসরকারি প্রতিষ্ঠানটির উপর রয়েছে TV 2.[][]। ২০০৭ সালে প্রথমবারের মতো যুক্ত করা হয় পিপলস আমান্ডা('ফল্কেটেস আমান্ডা') ,যেখানে সর্ব সাধারনের ভোটে বিজয়ী নির্বাচিত হন।[] এই পুরস্কারের প্রথম বিজয়ী রোয়ার উথাগ পরিচালিত ভৌতিক চলচ্চিত্র ফ্রিট ভিল্ট[]

ভাস্কর্য

সম্পাদনা

আমান্ডা নামটি এসেছে 'হৌগেসুন্দ আমান্ডা' নামক একটি গান সমুদ্রের নাবিকদের গান থেকে।[] ধারণা করা হয় গানটি ১৯২০ শতকের একজন রমণীকে উদ্দেশ্য করে লেখা , একজন নিঃসঙ্গ মা যিনিঅবরুদ্ধ কালে নাবিকদের কাছে মদ বেঁচতেন। .[] বিজয়ীদের হাতে যে মূর্তিটি তুলে দেওয়া হয় তা একটি প্রতিযোগিতার মাধ্যমে নির্ধারণ করা হয়েছে ।একটি স্থানীয় পত্রিকা হৌগেসুন্দ আভিস ১৯৮৫ সালে সেই প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। তাতে জয়ী হন নেসডেন আকারসুসের ক্রিস্টিয়ান কাভাকল্যান্ড। পত্রিকা অফিসের বাইরে পূর্ণ-আকৃতির একটি মূর্তি রাখা আছে, আর আমান্ডা পুরস্কারের জন্য একটি ছোট প্রতিমূর্তি তৈরি করা হয়েছে। মূর্তিটি লম্বায় ৩০ সেমি (১১.৮১ ইঞ্ছি) , সেই সাথে মূর্তির গায়ের জামার ব্যাস ১৪ সেমি (৫.১১ ইঞ্ছি)।বর্তমানে মূর্তির ভিতরটা ফাঁপা এবং এর ওজন ২.৫ কেজি (৫.৫১ পাউন্ড)। প্রথম কিছু বছর মূর্তিটি তৈরি করা হতো বেশ ভারী করে যার ওজন ছিল ৪.৫ কেজি(৯.৯২পাউন্ড), যা তুলতে অনেক বিজয়ীকেই বেশ বেগ পেতে হয়েছে।[] আঞ্জা ব্রেইএন ১৯৮৬ সালে নরওয়েজীয় চলচ্চিত্রে বাজেট হ্রাসের প্রতিবাদে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে তার অর্জিত বেশকিছু পুরস্কার বিক্রি করতে চেয়েছিলেন , যার মধ্যে আমান্ডা পুরস্কারও ছিল। সুইডিশ ফিল্ম ইন্সিটিউট, যারা একই সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল এই ঘটনায় সহমর্মিতা প্রকাশ করে এবং প্রতিকৃতিটি কিনে নেয়। ২০০৫ সালে ব্রেইএনকে সম্মান সূচক পদক প্রদান করা হয় এবং সেই সাথে সাবেক সংস্কৃতি মন্ত্রী ও সুইডিশ ফিল্ম ইন্সিটিউটের পরিচালক আঁশে ক্লেভল্যান্ড তার হাতে তুলে দেন সেই আদি মূর্তিটি।[১০]

অনুষ্ঠান

সম্পাদনা

চলচ্চিত্র উৎসবের প্রধান আকর্ষণ হয়ে উঠেছে পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানটি। সেই সাথে সমগ্র নরওয়ের জন্য এটি একটি প্রধান টেলিভিশন আকর্ষণ। প্রথমদিকে আন্তর্জাতিক তারকাদের আমন্ত্রণ করা হতো অনুষ্ঠানের মর্যাদা বাড়াবার জন্য। উদাহরণ হিসাবে বলা যায় রজার মুরের কথা , যিনি ১৯৮৫ সালের প্রথম অনুস্থানে উপস্থিত ছিলেন একজন বিশেষ অতিথি হিসেবে।[] এবং ১৯৮৭ সালে ডানিয়া রস,যিনি পরবর্তীতে নরওয়েজীয় উদ্যোক্তা আরনি নেস, জুনিওরের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।[১১] অন্যান্য আন্তজাতিক তারকাদের মধ্যে যারা অনুষ্ঠান উপস্থানা করেছিলেন নেড বেটি,লাউরেন বাকাল্ল,জন ভঁইট,ব্রাইন কক্স,জেরেমি আয়রনস,বেন কিংসলে এবং পিয়ারস ব্রস্নান

সাম্প্রতিক কালে সম্ভাবনাময় নরওয়েজীয় কৌতুক অভিনেতারা অনুষ্ঠানটি উপস্থানা করছেন। টিভি-অনুষ্ঠান নিট পা নিট হতে আগত জন এলমাস ২০০০ সাল হতে বেশ কয়েক বছর অনুষ্ঠানটি উপস্থানা করেছেন ।[১২] স্ট্যান্ড-আপ কমেডিয়ান টমাস গিআর্টসেন সাম্প্রতিক অনুষ্ঠানগুলি উপস্থানা করেছেন।[] ২০০৫ সালের একটি ঘটনা মিডিয়ার নজর কারে যখন উপস্থাপক মারট এস্লেন এবং ক্রিশ্চিয়ান রক্ষণশীল দলের সংস্কৃতি ও চার্চ মন্ত্রী,ভেলগার্ড ভারসতেদ হাগল্যান্ড মঞ্চে হাস্যছলে একে অপরকে চুমু খান।[১৩]

পুরস্কার এবং বিজয়ী

সম্পাদনা

পিয়রন সান্ডকুইস্ত একমাত্র অভিনেতা যিনি চারবার আমান্ডা পদক লাভ করেন।তিনি এই পুরস্কারগুলো অর্জন করেন ওভার গ্রেনসেন(১৯৮৭),ডি আদার সাইড ওফ সানডে(১৯৯৬) এবং সিজার- সে ডেগ ইক্কা তিলবেক (২০০০),এবং ২০০০ সালে সম্মান সূচক পুরস্কার ।এন ডেল ট্রপ বিভিন্ন চরিত্রের জন্য তিনবার পুরস্কার অর্জন করেন।সভারটা পেনগার-এইছভাইট লনার (২০০৪) এবং জিমনাস্লার পেডারসেন(২০০৬) এর জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার পান। তিনি লন্স(২০০৮) চলচ্চিত্রে তার ভুমিকার জন্য পার্শ্ব চরিত্রে পুরস্কার লাভ করেন।পার্শ্ব চরিত্রের জন্য এই বছর থেকেই পুরস্কার প্রদন শুরু হয়। সভার আঙ্কার অউসডাল ক্রেডিটরিন(১৯৯০) ও ব্লসদেন্ড(১৯৯৮) চলচ্চিত্রর জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসাবে দুইবার মনোনীত হন, এবং ২০০৯ সালে সম্মান সূচক পদক লাভ করেন।নিলস ওলে অফটিব্র,এস্পেন স্কিওনবারগ,এবং আনিকি ভন ডার লিপ্প সকলেই দুইবার করে সম্মান সূচক পুরস্কার লাভ করেন, অফটিব্র এবং স্কিওনবারগ একবার করে প্রধান চরিত্রে এবং একবার করে পার্শ্ব চরিত্রে। পরিচালকদের ভিতর ওলা সলুম,নিলস গাউপ,বেরিট নেশাম এবং বেন্ট হেমার প্রত্যেকেই দুটি করে পদক পান।[১৪] এরিক গুস্তাভেনের তিনটি বিভাগে পদক অর্জনের খ্যাতি রয়েছে। শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র , শ্রেষ্ঠ তথ্যচিত্র এবং সেই সাথে ১৯৯৩ সালে বিশেষ নরডিক আমান্ডা । একই অর্জনের আরেকজন দাবিদার কজেরস্তি হলমেন,যিনি ২০০০ সালে জয় করেন শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী, ১৯৯৩ সালে পার্শ্ব চরিত্রে এবং ২০০৯ সালে লাভ করেন সম্মাননা পদক। তিনটি প্রধান পদক ;শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র,শ্রেষ্ঠ অভিনেতা এবং অভিনেত্রী, জয়ী একমাত্র চলচ্চিত্র ১৯৯৭ সালের বাজব্রিঞ্জেন[১৫]

 
অভিনেত্রী লিভ উলমেন নরওয়েজীয় আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের সম্মানিত প্রেসিডেন্ট,১৯৯২ সালে সম্মান সূচক পদক গ্রহণ করেন।[১৬]

২০১০ হতে পুরস্কৃত বিভাগসমূহ :

  • থিয়েটারে মুক্তিপ্রাপ্ত শ্রেষ্ঠ নরওয়েজীয় চলচ্চিত্র
  • শ্রেষ্ঠ চিত্র পরিচালক (থিয়েটারে মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র)
  • পিপলস আমান্ডা (দর্শকদের ভোট)
  • শ্রেষ্ঠ অভিনেতা
  • শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী
  • পার্শ্ব চরিত্রে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা
  • পার্শ্ব চরিত্রে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী
  • শ্রেষ্ঠ শিশু এবং তরুণদের চলচ্চিত্র
  • শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্য
  • শ্রেষ্ঠ চিত্রগ্রহণ
  • শ্রেষ্ঠ শব্দগ্রহণ
  • শ্রেষ্ঠ সংগীত
  • শ্রেষ্ঠ সম্পাদনা
  • শ্রেষ্ঠ প্রযোজনা / স্কিনওগ্রাফি
  • শ্রেষ্ঠ ভিসুয়াল ইফেক্ট
  • শ্রেষ্ঠ শর্ট ফিল্ম
  • শ্রেষ্ঠ তথ্যচিত্র
  • থিয়েটারে মুক্তিপ্রাপ্ত বিদেশী চলচ্চিত্র
  • আমান্ডা কমিটি প্রদত্ত গোল্ডেন ক্লেপ্পার (প্রযুক্তি বিসয়ক পুরস্কার)
  • আমান্ডা কমিটি প্রদত্ত সম্মানজনক পুরস্কার

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. "আমান্ডা পুরস্কার"নরওয়েজীয় ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভাল। ২০০৮-০১-০৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০১-১৬ 
  2. "The history of Amanda"। The Norwegian International Film Festival। ২০০৮-০১-০৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০১-১৬ 
  3. "Amanda Awards, Norway: 1993"IMDb। ২০০৪-১২-১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০১-১৬ 
  4. Ellinor Hansen (২০০৫-০৬-২৩)। "Amanda blir ren filmpris" (নরওয়েজীয় ভাষায়)। Aftenposten। ২০০৯-০৮-০৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০১-১৬ 
  5. Leif Gjerstad (২০০৫-০৮-২৬)। "NRK bryter med Amanda" (নরওয়েজীয় ভাষায়)। Norwegian Broadcasting Corporation। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০১-১৬ 
  6. Bjarne Laastad (২০০৭-০৮-০৯)। "Amandaklar Giertsen" (নরওয়েজীয় ভাষায়)। টিভি ২ (Norway)। ২০১৩-০২-২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০১-১৬ 
  7. "Her er Amanda-nominasjonene" (নরওয়েজীয় ভাষায়)। TV 2 (Norway)। ২০০৭-০৬-২৬। ২০১১-০৭-১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০১-১৬ 
  8. Ralf Lofstad (২০০৭-০৮-১৭)। "Tre priser til "Reprise"" (নরওয়েজীয় ভাষায়)। Dagbladet। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০১-১৬ 
  9. Lars Raknes। "Amanda fra Haugesund (lyrics)" (নরওয়েজীয় ভাষায়)। Haugesund municipality। ২০০৭-০২-১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০১-১৬ 
  10. John Rasmussen (২০০৫-১২-১৫)। "Fikk Amandaen tilbake etter 16 år" (নরওয়েজীয় ভাষায়)। Dagbladet। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০১-১৬ 
  11. Tom Stalsberg (১৯৯৯-০৯-২৩)। "Diana Ross (55) arrestert etter puppekrangel på Heathrow flyplass" (নরওয়েজীয় ভাষায়)। Dagbladet। ২০১১-০৬-০৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০১-১৬ 
  12. "Mye norsk under årets Haugesund-festival" (নরওয়েজীয় ভাষায়)। Norwegian Film Institute। ২০০৩-০৮-১১। ২০০৪-০৩-২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০১-১৬ 
  13. "Valgerd fikk Amanda-kysset" (নরওয়েজীয় ভাষায়)। Dagbladet। ২০০৫-০৮-২৬। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০১-১৬ 
  14. সলুম তার দ্বিতীয় পুরস্কার পান শ্রেষ্ঠ পরিচালক হিসাবে ২০০৯ সালে। নেশাম জিতেন শ্রেষ্ঠ শিশু চলচ্চিত্র সেই সাথে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রের জন্য।
  15. "AMANDA-VINNERE 1985-2006" (পিডিএফ)। Filmweb.no। ২০০৮-০৯-২০ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৩-০২ 
  16. "About the Festival"। The Norwegian International Film Festival। ২০০৮-০৩-০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৩-০২ 

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা