আভা ক্ষেত্রপাল,[১](জন্ম ১০ জুন ১৯৬৮), একজন ভারতীয় প্রতিবন্ধী অধিকার কর্মী এবং কাউন্সেলর, যিনি নয়াদিল্লি, ভারতে বসবাস করেন।[২] তিনি ক্রস দ্য হার্ডলস-এর প্রতিষ্ঠাতা - এটি একটি কাউন্সেলিং/শিক্ষামূলক রিসোর্স ওয়েবসাইট এবং মোবাইল অ্যাপ্লিকেরেন, যা প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে।

তিনি ২০১৬ সালে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ক্ষমতায়নের জন্য জাতীয় পুরস্কার: শ্রেষ্ঠ রোল মডেল পুরস্কার জিতেছেন। তিনি ২০১৯ সালে হেনরি ভিসকার্ডি অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ডস এবং ২০১৯ সালে মহিলা ও শিশু উন্নয়ন মন্ত্রক, ভারতের ১০০ মহিলা অর্জনকারী পুরস্কার পেয়েছেন।[৩]

আভা ছিলেন ডকুমেন্টারি "Accsex" এর চারজন প্রধান চরিত্রের একজন। তিনি "ডিসএবলড লাইভস ম্যাটার", "ওয়ারিয়র অন হুইলস" এবং আরও কয়েকটি বই ও গবেষণা প্রকাশনার লেখিকা।[৪]

ব্যক্তিগত জীবন

সম্পাদনা

আভা ক্ষেত্রপাল হরিয়ানার আম্বালায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তার বাবা-মা বার্মা থেকে আসেন। উভয়েই শিক্ষক ছিলেন। ক্ষেত্রপাল তিন বছর বয়সে পোলিওতে আক্রান্ত হন। যাতায়াতের জন্য তিনি সহায়ক প্রযুক্তি যেমন লেগ ব্রেস, স্পাইনাল ব্রেস, এবং হুইলচেয়ার ব্যবহার করে আসছেন। ক্ষেত্রপাল ,বিভিন্ন ধরণের থেরাপি, পুনর্গঠনমূলক অস্ত্রোপচার এবং পদ্ধতির মধ্য দিয়ে গেছেন, যার মধ্যে হিপ সংশোধন এবং স্কোলিওসিস উন্নত করার জন্য পদ্ধতি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। চার বছর সাধারণ স্কুলে পড়ার পর, তিনি যথাযথ ব্যবস্থা না পাওয়ার দরুন দূরশিক্ষার মাধ্যমে তার উচ্চতর পড়াশোনা চালিয়ে যান।[৫]

তিনি ১৮ বছর বয়সে হিন্দিতে কবিতা লেখা শুরু করেন।

শিক্ষা

সম্পাদনা

ক্ষেত্রপাল নবম শ্রেণি পর্যন্ত তার বাবা-মায়ের কাছে বাড়িতে পড়াশোনা করেছিলেন, যারা নিজেরা শিক্ষক ছিলেন। একটি সাধারণ স্কুলে ভর্তি হওয়ার পর, তার জন্য শ্রেণিকক্ষটি নিচের তলায় সরানোর ব্যবস্থা করা হয়েছিল যাতে তিনি ক্লাসে অংশ নিতে পারেন।

ক্যারিয়ার

সম্পাদনা

২০১০ সালে, ক্ষেত্রপাল "ক্রস দ্য হার্ডলস" নামে একটি অ-লাভজনক সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন, যা প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের পরামর্শ ও সম্পদ গঠনে কাজ করে। তার প্রতিবন্ধী অধিকার কাজের মধ্যে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য ভালো কর্মসংস্থান সুযোগ, যৌন স্বাস্থ্য, এবং আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধির জন্য পরামর্শ প্রদান অন্তর্ভুক্ত। তিনি ভারতের প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য সরকারি প্রকল্প ও নীতিগুলোর সমালোচনা করেন এবং উন্নয়ন লক্ষ্যের বাস্তবায়নে প্রতিবন্ধিতাকে মূলধারায় আনার চেষ্টা করেন।[৬] তিনি কোভিড-১৯ মহামারীর সময় বাড়িতে নার্স পাওয়ার সমস্যাসহ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অতিরিক্ত চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরেছেন।[১]

২০১৬ সালে, যখন সমাজ কল্যাণ ও ক্ষমতায়ন মন্ত্রণালয়ের অধীনে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ক্ষমতায়নের দপ্তরের নামকরণ করা হয়েছিল "দিব্যাঙ্গন," তখন ক্ষেত্রপাল এই শব্দের ব্যবহার প্রকাশ্যে সমালোচনা করেন, উল্লেখ করেন যে এটি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য অসম্মানজনক এবং তাদের আলাদা করে দেয়। তিনি সিনেমা ও মিডিয়াতে প্রতিবন্ধী নারীদের নেতিবাচক চিত্রায়নের বিষয়েও কথা বলেছেন, যা তাদের যৌনতা কে অস্বীকার করে। ক্ষেত্রপাল মিডিয়ায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রতিনিধিত্বের অভাব এবং ভুল উপস্থাপনা, এবং প্রতিবন্ধী নারীরা যে বিভিন্ন ধরনের সহিংসতার মুখোমুখি হন তা যথাযথভাবে তুলে না ধরার কথা উল্লেখ করেছেন।

ক্ষেত্রপাল একজন যৌনতা প্রশিক্ষকও। তিনি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য যৌনতা শিক্ষায় অভাব পূরণ করতে একটি স্ব-নির্দেশিত কোর্স তৈরি ও প্রদান করেছেন "ক্রস দ্য হার্ডলস"-এ। তিনি ঋতুস্রাব ব্যবস্থাপনা ও স্বাস্থ্যবিধি এবং ভারতের প্রতিবন্ধী নারীদের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য ও অধিকার নিয়ে বেশ কয়েকটি বই ও প্রকাশনা রচনা করেছেন।

ক্ষেত্রপাল প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের যৌনতা অস্বীকার এবং তাদের অত্যধিক সুরক্ষা প্রয়োজন এমন সমাজের ধারণার বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন। তিনি দিল্লির ৫০ জন প্রতিবন্ধী নারীর যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য অবহেলার বিষয়ে একটি চাহিদা মূল্যায়ন সমীক্ষা পরিচালনা করেছেন। যৌনতার বিষয়ে পরামর্শ দেওয়ার পাশাপাশি, ক্ষেত্রপাল প্রতিবন্ধী নারীদের যৌন ও প্রজনন অধিকারগুলির পক্ষেও প্রশ্ন তোলেন।

প্রকাশনা

সম্পাদনা

ক্ষেত্রপাল আমেরিকা টাইমস, ফেমিনিজম ইন ইন্ডিয়া-তে বেশ কয়েকটি প্রবন্ধ রচনা করেছেন।

  • ওয়ারিয়র অন হুইলস, ২০২২: ক্ষেত্রপাল এবং রচনা যোগার পাহাড়িওয়ালা দ্বারা জাতীয় গ্রন্থ ট্রাস্ট ইন্ডিয়ার জন্য সহ-লেখিত একটি বই। বইটি প্রতিবন্ধী অধিকার কর্মী ড. কানুভাই হান্সমুখভাই টেইলরের জীবনী নিয়ে।
  • প্রতিবন্ধী নারীদের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য ও অধিকার সম্পর্কিত ম্যানুয়াল, ২০২০: উইমেনস এশিয়া ফান্ড দ্বারা সমর্থিত একটি প্রকল্প।
  • ডিসেবল্ড লাইভস ম্যাটার, (বছর অজানা):ক্ষেত্রপালের  বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম এবং প্রকাশনায় লেখা প্রবন্ধের সংকলন, যার মধ্যে রয়েছে ফেমিনিজম ইন ইন্ডিয়া, ইয়ুথ কি আওয়াজ, মিডিয়াম, পয়েন্ট অফ ভিউ, এবং সেক্সডিস।
  • গোয়িং উইথ দ্য ফ্লো, ২০১৬: প্রতিবন্ধী নারীদের জন্য ঋতুস্রাব ব্যবস্থাপনা এবং স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কিত একটি হ্যান্ডবুক। বইটি হিন্দি এবং ইংরেজি দুই ভাষায় পাওয়া যায়।
  • কিপিং ইউ আব্রেস্ট: এ হ্যান্ডবুক অন ব্রেস্ট ক্যান্সার সেল্ফ এক্সামিনেশন ফর উইমেন উইথ ডিসেবিলিটিজ, ২০১৩।
  • ভারতে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য কর রেয়াত এবং ছাড়, ২০১২।

পুরস্কারসমূহ

সম্পাদনা
  • জাতীয় পুরস্কার (২০১৬): প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ক্ষমতায়নে সেরা রোল মডেল।
  • ১০০ নারী অর্জনকারী পুরস্কার (২০১৯): মহিলা ও শিশু উন্নয়ন মন্ত্রণালয় দ্বারা প্রদানকৃত।
  • হেনরি ভিসকার্ডি এচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ডস (২০১৯): এই আন্তর্জাতিক পুরস্কারগুলি প্রথম ২০১৩ সালে প্রদত্ত হয়েছিল, যা বিশ্বব্যাপী প্রতিবন্ধী সেক্টরের অসাধারণ নেতাদের স্বীকৃতি দেয় যারা প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জীবন পরিবর্তনে এবং তাদের অধিকার রক্ষায় গভীর প্রভাব ফেলেছে।
  • ডি-৩০ প্রতিবন্ধী প্রভাব তালিকা (২০২০): সম্মানিত।[৭]
  • ফেমিলিস্ট১০০ (২০২১): বৈদেশিক নীতি, শান্তি প্রতিষ্ঠা, আইন, সক্রিয়তা এবং উন্নয়নের ক্ষেত্রে কাজ করা গ্লোবাল সাউথের ১০০ জন নারীর একটি তালিকা।[৮]

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. "India's second COVID-19 wave has made healthcare, ableist even pre-pandemic, harder for disabled people to access"Firstpost (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২১-০৫-২১। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৬-০৫ 
  2. "Salian, Priti (2022-01-22). ""I am disabled, it doesn't mean I have no dignity"". The Lancet. 399" 
  3. [Abha Khetarpal Abha Khetarpal] |ইউআরএল= এর মান পরীক্ষা করুন (সাহায্য)  |url-status=https://www.viscardicenter.org/abha-khetarpal/ অবৈধ (সাহায্য); |শিরোনাম= অনুপস্থিত বা খালি (সাহায্য)
  4. Khetarpal, Abha; Singh, Satendra (২০১২-০৬-৩০)। "Infertility: Why can't we classify this inability as disability?"The Australasian Medical Journal5 (6): 334–339। আইএসএসএন 1836-1935ডিওআই:10.4066/AMJ.2012.1290পিএমআইডি 22848333পিএমসি 3395292  
  5. "Survivor's Story: Abha Khetarpal's Journey [Polio]"IndiaTimes (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১১-০৯-২৪। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৬-০৫ 
  6. Khetarpal, Abha (২০১৯-০১-২৫)। "India's preparedness of including disabled in SDGs; Gaps and strategies"The America Times (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৬-০৫ 
  7. "2020 D-30 Honorees"Diversability (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৬-০৫ 
  8. "FemiList100"। ১৯ অক্টোবর ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৫ জুন ২০২৪