আবু সালেহ
আবু সালেহ (জুলাই ২২, ১৯৪৮) বাংলাদেশী ছড়াকার, সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ। ১৯৬৭ সাল থেকে সাংবাদিকতা শুরু। ছড়া লেখা শুরু করেন ষাটের দশকের শুরু থেকে। প্রথম লেখা প্রকাশিত হয় রমনা মুকুল ফৌজের দেয়াল পত্রিকায়, ১৯৫৪ সালে। ১৯৬৫ তে ছড়াকে জনপ্রিয় করে তুলতে প্রচলিত আঙ্গিক ও উপস্থাপনা সমাজ সচেতনতা এবং তৎকালীন স্বৈরাচারী আইয়ূব বিরোধী আন্দোলনমুখী করে তোলেন। ছড়াকে বক্তব্য প্রধান করা হয়। সমাজ বদল ও সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে শক্তিশালী হাতিয়ার রূপে গড়ে তোলে। এই নবতর আঙ্গিকের ছড়াকে সকল শ্রেণী, পেশার মানুষের মধ্যে প্রভাব বিস্তারের লক্ষ্যে একটি ছড়াকার বন্ধু গোষ্ঠী গড়ে তোলার পিছনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।ছড়ায় সমাজতন্ত্র, স্বৈরাচার বিরোধিতা ইত্যাদি কারণে তৎকালীন পুলিশ ও সরকারি প্রশাসন যন্ত্রের শিকার হন। হুলিয়া প্রাপ্ত হন। ১৯৬২, ১৯৬৬, ৬৭, ৬৮, ৬৯,৭০ ও ৭১ এর অসহযোগ আন্দোলনে এবং মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ৬২, ৬৭, ৬৮, ৬৯,৭০ এর আন্দোলনে পুলিশের লাঠিচার্জ ও টিয়ার গ্যাসে আহত হন। বি এন আর এমং পাকিস্তান কাউন্সিল এবং ফিল্ম সেন্সর বোর্ডে বোমা নিক্ষেপের কর্মসূচীর সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। ষাটের দশকের শেষ ভাগে শ্রেণী সংগ্রামে সশস্ত্র অংশগ্রহণ করেন। সকল আন্দোলন, সংগ্রামে আবু সালেহর ছড়া প্রভাব বিস্তার করে।[১][২]
আবু সালেহ | |
---|---|
জন্ম | জুলাই ২২, ১৯৪৮ |
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
নাগরিকত্ব | বাংলাদেশী |
পেশা | লেখক, বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন,বাংলাদেশের সংস্কৃতি; জাতীয়তাবাদ |
পরিচিতির কারণ | ছড়ার মাধ্যমে সমাজ বিপ্লব, ছড়া, রাজনীতি, সমাজ |
পুরস্কার | বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার-২০০২, একুশে পদক , ২০০৫ |
সাংবাদিকতা
সম্পাদনাতিনি ১৯৬৭ সাল থেকে সাংবাদিকতার সাথে যুক্ত আছেন। ইত্তেহাদ, দৈনিক দেশ, হক কথা, দৈনিক খবর, জনতা, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থাসহ আরো অনেক সংবাদপত্রে তিনি কাজ করেছেন। তিনি ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক এবং সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। সাংবাদিকতার দায়িত্ব পালনকালে তিনি বহুবার পুলিশি এবং রাজনৈতিক হামলার শিকার হয়েছেন। ১৯৮৭ সালে এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে বাংলা মোটরে স্বৈরাচারী এরশাদের পেটোয়া বাহিনী তার হাতের কব্জি এবং পাঁজরের হাড় ভেঙ্গে দেয়। এছাড়া তার লেখা রিপোর্ট দেশে নানা সময়ে আলোড়ন তৈরি করে তার ভিতরে "দেশে কোন গাধা" নেই এই সংবাদে দেশের মানুষের ভিতরে প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছিল।[১]
রাজনীতি
সম্পাদনা
ধরা যাবে না ছোঁয়া যাবে না বলা যাবে না কথা
রক্ত দিয়ে পেলাম শালার এমন স্বাধীনতা!
> যার পিছনে জানটা দিলাম যার পিছনে রক্ত
সেই রক্তের বদল দেখো বাঁচাই কেমন শক্ত,
ধরা যাবে না ছোঁয়া যাবে না বলা যাবে না কথা
রক্ত দিয়ে পেলাম শালার মরার স্বাধীনতা!
বাঁচতে চেয়ে খুন হয়েছি বুলেট শুধু খেলাম
উঠতে এবং বসতে ঠুঁকি দাদার পায়ে সেলাম,
ধরা যাবে না ছোঁয়া যাবে না বলা যাবে না কথা
রক্ত দিয়ে পেলাম শালার আজব স্বাধীনতা!
— “পল্টনের ছড়া”, আবু সালেহ।[৩]
রাজনীতিতে আসা স্কুলে থাকা অবস্থায়। কুষ্টিয়া মুসলিম স্কুলে থাকা অবস্থাতে ঐ স্কুলের স্কুল ক্যাপ্টেন হিসাবে দায়িত্ব পালন করার সময় তিনি প্রগতিশীল রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়েন। কমরেড হক, কমরেড তোহার সান্নিধ্যে তিনি রাজনৈতিক হাতেখড়ি পান। এর পর তিনি বাংলাদেশের কম্যুনিস্ট আন্দোলনের সাথে যুক্ত হন। ১৯৬৬-৬৭ সালের দিকে তিনি মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর সান্নিধ্যে আসেন এবং ভাসানীর একান্ত রাজনৈতিক সহকারী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ভাসানীর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি তার সাথে ছিলেন। এছাড়া স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় উন্মেষ নামের একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন গড়ে তোলেন আরো কয়েকজনের সাথে। তার মধ্যে মহসিন শস্ত্রপানি ছাড়াও অনেক কবি এবং বুদ্ধিজীবী তাতে অংশগ্রহণ করেন। চীন পন্থী চিন্তাধারার রাজনৈতিক কর্মী হিসাবে তিনি এদেশের মানুষের অধিকার আদায়ে শ্রেনী সংগ্রামে অংশ নেন। মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করেন এবং এদেশীয় পাকিস্তানের চাটুকার বুদ্ধিজীবীদের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করেন। পাকিস্তানের পক্ষে অবস্থান নেয়াতে কবীর চৌধুরীসহ এইরকম আরও পাকিস্তানের মতলব হাসিল কারিদের বিরুদ্ধে এক ধরনের জনমত তৈরিতে তখন কাজ করেন। তিনি ন্যাপ ভাসানির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংস্কৃতিক সম্পাদক এবং ঢাকা মহানগরীর আহবায়ক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন।[১]
প্রকাশনা
সম্পাদনাআবু সালেহ বাংলা সাহিত্যে প্রতিষ্ঠিত ছড়াকার। ষাট দশক থেকে তার ছড়া বাংলাদেশের নানা আন্দোলন সংগ্রামে অবদান রাখে। তার প্রকাশিত গ্রন্থ সংখ্যা প্রায় একশত।[৪]
- পল্টনের ছড়া(১৯৭৪)
- তাড়িং মাড়িং(১৯৭৮)
- গ্রামের নাম চৌগাছি(১৯৭৮) (শিশু একাডেমী)
- চিরকালের খোকা
- এক বাংলার ছড়া
- সেই ছেলেটি ছুটলো (বাংলা একাডেমী)
- আমার কথা ছড়ার কথা ( বাংলা একাডেমী)
- খুকু যদি হাসে
- হাতির পায়ে নূপুর
- ধোলাই ছড়া
- ধুম ধারাক্কা ছড়া
- গোলাপ হাসে লাল
- হাজার ছড়া বৈরী ছড়া (শোভা প্রকাশ)
- ৭২-৭৪ ও অন্যান্য প্রসঙ্গের ছড়া
- সর্ষে ফুলে হলদি
- ইতি রীতির ছড়া
- আলোক লতা দোলক লতা
- সেই ছড়া
- প্রেমের হাজার লিমেরিক
- শিশু-কিশোর ছড়া সমগ্র-১(শোভা প্রকাশ)
- ষাটের দশকের ছড়া সমগ্র-১ (আগামী প্রকাশনা)
- সত্তর দশকের ছড়া সমগ্র-১
- আশির দশকের ছড়া সমগ্র-১
- নব্বই দশকের ছড়া সমগ্র-১
- হাজার লিমেরিক (আগামী প্রকাশনা)
- রাঙ্গা মাটির মেয়ে
- ফুল ফুটেছে ঝিংগে
- ধানের ক্ষেতে মৌ
- ছড়া ২০০০-২০০৫
- জিয়া স্মরণে ছড়া
- দেশের মাটি
- বহ্নি ছড়া
- কাচা হাতের প্রথম ছড়া
- আমার ছড়া তোমার ছড়া
- অন্যরকম লিমেরিক
- এই একুশের ছড়ামালা (২০১৭)
- পুরোভাগে জনতা
- আমার পতাকা ফেলানীর লাশ হয়
- ভুল ছড়া
- ধুম ধারাক্কা
পুরস্কার ও সম্মাননা
সম্পাদনা- বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার-২০০২
- একুশে পদক , ২০০৫
- অগ্রণী ব্যাঙ্ক সাহিত্য পুরস্কার
- কবিতালাপ সাহিত্য পুরস্কার
- লিমেরিক সোসাইটি পুরস্কার
- মধুসুধন সাহিত্য পুরস্কার
- জসিম উদ্দিন পদক
- ত্রয়ী সাহিত্য পুরস্কার
- জাতীয় প্রেস ক্লাব সম্মাননা
- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সম্মাননা
- জিয়া পদক
- কাজী কাদের নাওয়াজ সাহিত্য পুরস্কার
- পারাবার সাহিত্য পুরস্কার
- হাজী মহসিন পুরস্কার
- ইকো সাহিত্য পুরস্কার
- ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউট সম্মাননা
- ছড়া একাডেমী সম্মাননা
- গুনীজন সম্মাননা,মাগুরা জেলা পরিষদ-২০০৪
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ গ "আবু সালেহ"। www.shaptahik.com। ২০২০-০৪-১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৩-১৮।
- ↑ ছড়াকার ও সাংবাদিক আবু সালেহর জন্মদিন আজ
- ↑ "'ধরা যাবে না ছোঁয়া যাবে না বলা যাবে না কথা রক্ত দিয়ে পেলাম শালার আজব স্বাধীনতা'"। ৫ নভেম্বর ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৫ নভেম্বর ২০২১।
- ↑ "আবু সালেহ"। ২১ অক্টোবর ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৫ নভেম্বর ২০২১।