আবু আহসান মোহম্মদ সামসুল আরেফিন সিদ্দিক

বাংলাদেশী শিক্ষাবিদ

আবু আহসান মোঃ সামসুল আরেফিন সিদ্দিক (২৬ অক্টোবর ১৯৫৩ — ১৩ মার্চ ২০২৫) একজন বাংলাদেশী অধ্যাপক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য।[] ২০০৯ সালের ১৫ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও বাংলাদেশের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ অধ্যাপক সিদ্দিককে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৭তম উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেন। তিনি একই বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক। অধ্যাপক সিদ্দিক ঢাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০২০ সালের ১৫ই জুলাই তাকে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার পরিচালনা বোর্ডের চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। [] তিনি বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যানও।

আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক
জন্ম(১৯৫৩-১০-২৬)২৬ অক্টোবর ১৯৫৩ ঢাকা
মৃত্যু১৩ মার্চ ২০২৫(2025-03-13) (বয়স ৭১)
মৃত্যুর কারণমস্তিষ্কে স্ট্রোক ও রক্তক্ষরণ
পেশাঅধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
নিয়োগকারীঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
পরিচিতির কারণগণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য
উপাধিঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য
মেয়াদজানুয়ারি ১৫, ২০০৯ - ৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

জন্ম ও পরিবার

সম্পাদনা

প্রকৌশলী বাবা আবু বকর সিদ্দিক এবং গৃহিণী মা হোসনে আরা সিদ্দিক-এর ঘর আলো করে বিংশ শতাব্দীর পঞ্চাশের দশকে ১৯৫৩ সালের ২৬ অক্টোবর, হেমন্তের এক ঝলমলে দিনে জন্মগ্রহণ করেন আরেফিন সিদ্দিক। বাঙালির নগরপত্তনের শীতল ছায়া ঢাকাস্থ ধানমন্ডির গ্রিনরোডে পৈতৃক বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। সাত ভাই চার বোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। জন্মের পরই তৎকালীন সরকারি চাকুরে দাদা আতশ আলী সিদ্দিক তাদের পারিবারিক নাম সিদ্দিক-এর সঙ্গে যুক্ত করে তার নাম রাখেন সামসুল আরেফিন সিদ্দিক। এদিকে নানা চিকিৎসক তাজুল ইসলামের কাছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরের সলিমগঞ্জে তার বাবা আবু বকর সিদ্দিক ‘ব্লেসড উইথ অ্যা সান’ মর্মে টেলিগ্রাম পাঠান। পরদিন তিনিও নাতির আবু আহসান সিদ্দিক নাম রাখার মর্মে টেলিগ্রামের উত্তর দেন। তখন দাদা এবং নানা দুজনের ভালোবাসায় রাখা নামকে একত্রিত করতে তার বাবা মোহাম্মদ যুক্ত করে আকিকার মাধ্যমে নামকরণ করেন- আবু আহসান মোহাম্মদ সামসুল আরেফিন সিদ্দিক। বড় নামের বিড়ম্বনায় অবশ্য বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে তার হস্তক্ষেপে সর্বশেষ আমরা তাকে জানি আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক নামে। তার দাদাবাড়ি নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার বাঁশগাড়ী ইউনিয়নের বাঁশগাড়ী গ্রামে। আরেফিন সিদ্দিক ছোটবেলায় নির্দিষ্ট একটি সময় পর্যন্ত তার প্রায় অশীতিবর্ষছোঁয়া নানা এবং প্রায় নবতিবর্ষছোঁয়া দাদার অন্ধের যষ্ঠির মতো বার্ধক্যের চলার সঙ্গী ছিলেন। ভাইবোনদের সঙ্গে ছোটবেলায় বরাবরই তার সম্পর্ক ছিল ভালোবাসায়পূর্ণ মায়াভ্রমরের মতো। পৈতৃক নিবাস ছিল নরসিংদী জেলার রায়পুরা উপজেলার বাঁশগাড়ী ইউনিয়নে।

শিক্ষা ও কর্মজীবন

সম্পাদনা

আরেফিন সিদ্দিক বাবার ওয়াপদার চাকরির বদলির সুবাদে বিভিন্ন এলাকায় তার শৈশব-কৈশোর কাটিয়েছেন। তাঁর প্রথম স্কুল সিরাজগঞ্জে-বিএল স্কুল এবং পরে ভিক্টোরিয়া স্কুল। এরপর খুলনায় তার বাবা বদলি হওয়ার পর দৌলতপুর মুহসীন স্কুল থেকে ১৯৬৯ সালে বিজ্ঞান বিভাগে এসএসসি এবং ১৯৭২ সালে (১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত হওয়ায় পরীক্ষা হয় ১৯৭২ সালে) সরকারি বিএল কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। এরপর ১৯৭২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগে অনার্স শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে ক্লাস করতে থাকেন। কিন্তু বিজ্ঞানের ছাত্র হলেও স্কুল জীবন থেকেই তার ভালো লাগার কিংবা পড়াশোনার ইচ্ছার বিষয় ছিল সাংবাদিকতা। এই ইচ্ছার পেছনে তার মায়ের তৎকালীন সময়ে নিয়মিত দৈনিক ইত্তেফাকসহ অন্যান্য পত্রিকার পাঠাভ্যাসটি সম্ভবত তাকে প্রচ্ছন্নভাবে প্রভাবিত করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তখন সাংবাদিকতায় মাস্টার্স থাকলেও অনার্স না থাকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রেশন নিয়েই মাইগ্রেশনের মাধ্যমে ঢাকা কলেজে বিএসসি শ্রেণিতে ভর্তি হন এবং ১৯৭৪ সালে (১৯৭৪ সালে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়) বিজ্ঞানের স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। এরপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে এমএস শ্রেণিতে ভর্তি হন। ১৯৭৭ সালে (১৯৭৭ সালে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়) সাংবাদিকতায় মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৮০ সালে অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। তিনি ১৯৮২ সালে ভারত সরকারের বৃত্তি নিয়ে ভারতের মাইসোর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮৬ সালে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৮৭ সালে আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা কেন্দ্র ফিলিপিনস (যেটি ইউনিভার্সিটি অব ম্যানিলা বিশ্ববিদ্যালয়ের লস ভ্যানিউস শাখার অন্তর্গত) থেকে কৃষি সাংবাদিকতা বিষয়ে উচ্চতর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। একই বছর যুক্তরাষ্ট্রের কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যোগাযোগ বিষয়ে উচ্চতর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। পরবর্তী সময়ে ১৯৮৮-১৯৮৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের কার্বনডেলে অবস্থিত সাউদার্ন ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিজিটিং ফেলো হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকল্প মূল্যায়ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।

অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিক ১৯৯৩ সাল থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এই সময়ে তিনি পদাধিকারবলে বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটের ব্যবস্থাপনা পরিষদের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির যুগ্ম সম্পাদক, ১৯৯৪ ও ১৯৯৬ সালে সাধারণ সম্পাদক এবং ২০০৪ ও ২০০৫ সালে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৭ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়া স্পেনের রাজার পক্ষ থেকে ২০১১ থেকে ২০১২ সালে নারী উন্নয়ন, নারী শিক্ষা ও সামগ্রিক সামাজিক উন্নয়ন কার্যক্রমে নেতৃত্বের স্বীকৃতি হিসেবে বরেণ্য এই শিক্ষাবিদ ‘অর্ডার অব সিভিল মেরিট’-এ ভূষিত হন। সম্প্রতি তিনি বাংলা একাডেমির গবেষণা ফেলো হিসেবে নির্বাচিত হন। ২০০৯ সালের ১৫ জানুয়ারি প্রজ্ঞাপন জারির পর ১৭ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন আচার্য্য এবং রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ শিক্ষাবিদ অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিককে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৭ তম উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেন। তিনি এখন পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে দীর্ঘকালীন উপাচার্য। ২০১৭ সালের ৪ সেপ্টেম্বর তিনি উপাচার্যের দায়িত্ব পালন শেষ করে পুনরায় গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন। ২০২০ সালের জুন মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা থেকে অবসর গ্রহণ করেন। ২০২২ সাল থেকে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান এবং ২০২০ সাল থেকে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

মৃত্যু

সম্পাদনা

আরেফিন সিদ্দীক গত ৬ মার্চ দুপুরে ঢাকার রমনাতে অবস্থিত ঢাকা ক্লাব এর সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলার সময় হঠাৎ পড়ে যান। তাৎক্ষণিক তাকে হাসপাতালে আনা হয়। পরে ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালে মস্তিষ্কে স্ট্রোক ও রক্তক্ষরণজনিত কারণে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২০২৫ সালের ১৩ মার্চ রাতে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।[][]

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. দেখুন www.univdhaka.edu
  2. https://www.jagonews24.com/amp/597737
  3. "ঢাবির সাবেক ভিসি আরেফিন সিদ্দিক আর নেই"আরটিভি। ১৩ মার্চ ২০২৫। সংগ্রহের তারিখ ১৩ মার্চ ২০২৫ 
  4. "ঢাবির সাবেক ভিসি আরেফিন সিদ্দিক মা রা গেছেন"দৈনিক ইত্তেফাক। ১৩ মার্চ ২০২৫। সংগ্রহের তারিখ ১৩ মার্চ ২০২৫ 

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা