আবদুল কাদির (যুদ্ধজাহাজ)

আবদুল কাদির ছিল একটি প্রাক-ড্রেডনট যুদ্ধ্বজাহাজ যাকে উসমানীয় নৌবাহিনীর অণুরোধে রাজকীয় কনস্ট্যান্টিপোল ডক ইয়ার্ড ১৮৯২ সালে বানানো শুরু করে। এটি ছিল তৎকালীন সময়ে উসমানীয় সাম্রাজ্যের সবচেয়ে উন্নত ও শক্তিশালী জাহাজ এবং দশ বছরের মধ্যে তৈরী প্রথম ক্যাপিটাল শিপ। এই জাহাজটির প্রধান অস্ত্র ছিল চারটি ১১ইঞ্চি কামান ও এর চারদিকে ৯.১ ইঞ্চি পুরু আর্মার বা বর্মছিল যা একে অত্যন্ত ধ্বংসাত্বক ক্ষমতা প্রদান করতে পারত। কিন্তু অর্থায়নের অভাবে এই জাহাজটি তৈরীর কাজ খুবই ধীর গতিতে চলছিল এবং ১৯০৬ সালে অর্থাৎ কাজ শুরুর ১৪ বছর পরে যখন এর কাজ বন্ধ ঘোষণা করা হয় তখন এটির শুধু মাত্র তলার কিছু অংশের কাজই সম্পন্ন হয়েছিল।

তৈরীর ইতিহাস সম্পাদনা

আবদুল কাদির ছিল মূলত ১৮৬০ ও ১৮৭০ এর দশকে উসমানীয় সাম্রাজ্যের তৈরী করা কিছু আয়রনক্ল্যাডের অভিজ্ঞতার ফসল। এটির হওয়ার কথা ছিল উসমানীয় সাম্রাজ্যের প্রথম প্রাক-ড্রেডনট ক্লাস ব্যাটলশিপ[১] যদিও তা সম্ভব হয়নি। এটির তৈরী শুরু হওয়া ও বন্ধ হয়ে যাওয়ার পেছনে রয়েছে এক বিশাল কাহিনী। ১৮৭৬ সালে তৎকালীন উসমানীয় সম্রাট পঞ্চন মুরাদকে দ্বিতীয় আবদুল হামিদ ক্ষমতাচ্যুত করেন। তার বিদ্রোহের সময় নেভির কিছু অফিসার তাকে সাহায্য করেন ফলে দ্বিতীয় আবদুল হামিদ নৌবাহিনীর সক্ষমতাকে কমিয়ে সেই কর্মকর্তাদের ক্ষমতা কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়। ফলে উসমানীয় নৌবাহিনী তার প্রতিদ্বন্দ্ব্বীদের তুলনায় দুর্বল হয়ে পড়ে[২]। তাদের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্ব্বী গ্রিক নৌবাহিনী ১৮৮৫ সালে যখন তিনটি হাইড্রা ক্লাস আয়রনক্ল্যাড তৈরীর সিদ্ধান্ত নেয়[৩] তখন তাদের অবস্থা ছিল খুবই শোচনীয় কারণ এদের প্রতিহত করার মতো কোন জাহাজ তাদের ছিলই না। ফলে সুলতানের সম্মতি না থাকার পরেও তারা এই আবদুল কাদির তৈরীর সিদ্ধান্ত নেয়।

সাধারণ বৈশিষ্ট্য ও অস্ত্রশস্ত্র সম্পাদনা

নকশা অনুযায়ী আবদুল কাদিরের হওয়ার কথা ছিল ১০৩.৬৩ মিটার লম্বা, ১৯.৮১ মিটার বিম ও ৭.১৬ মিটার ড্রাফট যুক্ত এবং ৮১০০ টন ওয়াটার ডিসপ্লেসমেন্ট যুক্ত। এতে দুটি ভার্টিকাল ত্রিপল এক্সপেনশন ইঞ্জিন থাকার কথা ছিল যাদের প্রত্যেকটি একটি করে ক্রু প্রপেলার ঘোরাবে। এই ইঞ্জিনগুলোর প্রত্যেকটি ছয়টি কয়লা চালিত বয়লার দ্বারা শক্তি উৎপাদন করত এবং সম্মিলিত ভাবে প্রায় ১২০০০ অশ্বশক্তি উৎপাদনে সক্ষম ছিল। এই ইঞ্জিনগুলোর সাহায্যে সাগরে এটি সর্বোচ্চ ১৮নট গতিতুলতে সক্ষম হতো। এতে জ্বালানী হিসেবে প্রায় ৬০০টন কয়লা রাখার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ছিল[১]

এতে যেসব অস্ত্র লাগানো হয়েছিল তার সবই ছিল জার্মানীর বিখ্যাত অস্ত্র নির্মাতা ক্রুপ এর তৈরী। এতে প্রধান অস্ত্র হিসেবে ছিল চারটি ১১ ইঞ্চি কামান যা দুইটি টারেটের মধ্যে থাকত যদিও পরবর্তীকালে ১৯০৪ সালে এদের বদলে চারটি ৮ইঞ্চি কামান একটি টারেটের মধ্যে স্থাপন করার চিন্তাভাবনা ছিল। এছাড়াও ক্লোজ রেঞ্জে টর্পেডো বোট থেকে সুরক্ষার জন্য এতে আটটি ৩.৫ ইঞ্চি ও ১.৫ ইঞ্চি কামান ছিল। অবশ্য পরে এদের সংখ্যা বাড়িয়ে ১০টিতে উন্নীত করে নতুন ডিজাইন করেছিল[১]। এছাড়াও এতে ছয়টি ৫৩৩ মি.মি. বা ২১ ইঞ্চি টর্পেডো টিউব ছিল।

নির্মাণ সম্পাদনা

১৮৯২ এর অক্টোবরে আবদুল কাদিরের নির্মাণ শুরু হয়। আগেই বলা হয়েছে এটি তৈরীতে সুলতান খুব একটা সম্মত ছিলেন না তাই এর জন্য অর্থও খুব কম বরাদ্দ করা হচ্ছিল। আর অর্থাভাবে ১৮৯৭ সালে প্রস্তুতকারকদের প্রকাশিত একটি জার্নালে তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেন যে হয়তো এটি কখনই প্রস্তুত করা সম্ভব হয় না। আর একই বছর গ্রিস ও উসমানীয়দের মধ্যে সংঘটিত যুদ্ধের ফলে এই প্রোগ্রামের কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়। যুদ্ধের পরে কাজ শুরু হলেও কখনই আর পুরোদমে শুরু হয়নি। পরে ১৯০৬ সালে এর তলার সাপোর্ট কলামগুলো সরে গেলে এর কিল প্রায় ধ্বংস হয়ে গেলে এর কাজ একদম বন্ধকরে দেয়া হয়। পরে এটির প্রস্তুতকৃত অংশও ভেঙে ফেলা হয়[২]

পাদটীকা সম্পাদনা

  1. Gardiner, p. 391
  2. Gardiner, pp. 388–391
  3. Gardiner, p. 382

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

 
জাহাজের নকশা
ইতিহাস
শ্রেণী এবং ধরন: প্রাক-ড্রেডনট ব্যাটলশিপ
নামকরণ: আবদুল কাদির
নির্মাণাদেশ: ১৮৯০
নির্মাতা: তারসান-ই আমির, কনস্ট্যান্টিপোল
নির্মাণের সময়: ১৮৯২
নিয়তি: ১৯০৯ সালে ভেঙ্গে ফেলা হয়
সাধারণ বৈশিষ্ট্য
ওজন: ৮,২৩০ টন
দৈর্ঘ্য: ১০৩.৬ মিটার (৩৪০ফুট)
প্রস্থ: ১৯.৮ মিটার (৬৫ ফুট)
ড্রাফট: ৭.১৬ মিটার (২৩ ফুট ৬ ইঞ্চি)
প্রচালনশক্তি: ২টি শ্যাফট, ১২,০০০ অশ্বশক্তি (আনুমানিক)
গতিবেগ: ১৮ নট (৩৩ কিমি/ঘ)
রণসজ্জা:
  • ২ x ২ ১১ ইঞ্চি (২৮৩মি.মি.) কামান
  • ৬ x ১ ৫.৯ ইঞ্চি (১৫০মি.মি.) কামান
  • ৮ x ১ ৩.৪ ইঞ্চি (৮৭মি.মি.) কামান
  • ৮ x ১ ১.৫ ইঞ্চি (৩৭মি.মি.) কামান
  • ৬ x ১ ১৪ ইঞ্চি (৩৫৬ মি.মি.) টর্পেডো টিউব
অস্ত্র:
  • Belt: ৯ ইঞ্চি (২২৯ মিমি)
  • Deck: ২.৫ ইঞ্চি (৬৪ মিমি)
  • Barbette: ৬ ইঞ্চি (১৫২ মিমি)
  • Bulkheads: ৪ ইঞ্চি (১০২ মিমি)