আদম তমিজী হক

বাংলাদেশী ব্যবসায়ী

আদম তামিজী হক (জন্মঃ ২৯ ডিসেম্বর, ১৯৭৬) একজন বাংলাদেশি শিল্পপতি, ব্যবসায়ী, এবং সমাজসেবক। তিনি এ. টি. হক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, মানবিক বাংলাদেশ সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এবং একজন বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি

আদম তমিজী হক
জন্ম২৯ ডিসেম্বর, ১৯৭৬
ইস্কাটন, ঢাকা
জাতীয়তাবাংলাদেশী
শিক্ষাস্নাতক
মাতৃশিক্ষায়তনমিডলসেক্স বিশ্ববিদ্যালয়, লন্ডন, ইংল্যান্ড
পেশাশিল্পপতি, ব্যবসায়ী, সমাজসেবক
কর্মজীবন২০০২ - বর্তমান
প্রতিষ্ঠানএ. টি. হক লিমিটেড
উপাধিব্যবস্থাপনা পরিচালক
আন্দোলনমানবিক বাংলাদেশ সোসাইটি
দাম্পত্য সঙ্গীলিজা আদম হক, নুসরাত হক
সন্তান
পিতা-মাতাতমিজুল হক (ব্যারিস্টার এট-ল), ইয়াছমিন হক
ওয়েবসাইটadamtamizihaque.info

প্রথম জীবন সম্পাদনা

আদম তামিজী হক ১৯৭৬ সালের ২৯ ডিসেম্বর ঢাকার ইস্কাটন এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি পিতা এ.টি. হক লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার তমিজুল হক ও মাতা নাম ইয়াসমিন হকের একমাত্র ছেলে।[১] তমিজুল হক ভারতের আসামের বাসিন্দা হলেও দেশভাগের আগেই ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন।[২] ৯ বছর বয়সে তিনি পাড়ি জমান লন্ডনে।[২] তার স্কুল জীবনের বেশিরভাগ সময় ইংল্যান্ডের বোর্ডিং স্কুলে কেটেছে। ১৬ বছর বয়সে তিনি বোর্ডিং স্কুল ছেড়ে লন্ডনের একটি টিউটোরিয়াল কলেজে যান।[৩] পরবর্তীতে অল্প কিছুদিন তানজানিয়ার জানজিবারে থাকার পরে তিনি উত্তর ইংল্যান্ডের হাডারসফিল্ডে যান। সেখানে হাডারসফিল্ডের হিলটন হোটেলে কাজ করার আগে ক্যাটারিংয়ের একটি কোর্স করেন।[১] ১৮ বছর বয়সে পারিবারিক ব্যবসায় হাল ধরতে তিনি দেশে ফিরে আসেন।[৩] আদম তমিজী হক যুক্তরাজ্যের মিডলসেক্স বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছেন।[১]

ব্যবসায়িক জীবন সম্পাদনা

আদম তামিজী হকের পিতা ও হক গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক প্রয়াত ব্যারিস্টার তমিজুল হক ২০০২ সালে যখন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকাণ্ডে সক্রিয় অংশগ্রহন বন্ধ করে দেন তখন দেশের বিস্কুট, কনফেকশনারি, ওয়েফার, সাবান এবং ব্যাটারি প্রস্তুত এবং বিপনণকারী প্রতিষ্ঠানটি আর্থিকভাবে অচল হয়ে পড়ে। আদম তামিজীর কথায়, “বলা যায় প্রায় দুই বছরের বিক্রির সমান টাকার ঋণ ছিল আমাদের। এক কথায় বলা চলে ব্যবসা কার্যত বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল।”[৩] সে সময়ে ১৮ বছর বয়সে তিনি প্রতিষ্ঠানের হাল ধরেন। তখন তিনি শুধুমাত্র শুষ্ক কোষ এবং সাবানের ব্যবসায় যুক্ত ছিলেন। পরবর্তীতে ২০১০ সালে তিনি হক গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ২০১১ সালে ম্যানেজিং ডিরেক্টর হওয়ার পরে নিজেকে বিস্কুট ব্যবসার সাথে জড়িত করেছেন।[১]

২০১৯ সালে কুটির শিল্প শ্রেণীতে মেসার্স হক ড্রাইসেল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে বাংলাদেশের শিল্প মন্ত্রণালয় তাকে বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি নির্বাচন করেছে।[৪]

সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড সম্পাদনা

আদম তামিজী হক শিল্প উদ্যোগ ব্যবসা সম্প্রসারণের পাশাপাশি মানবিক বাংলাদেশ নামে একটি সংস্থা গঠন করেছেন। এই দাতব্য প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ রক্ষা এবং রাজধানী ঢাকাকে একটি বাসযোগ্য শহর হিসাবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের পড়াশোনা, চিকিৎসা সেবা প্রদান এবং শ্রমিকদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে কাজ করে।[১]

আদম তমিজী হক ২০১৭ সালে রাজনীতিতে সরাসরি অংশ নিয়েছেন।[১]

আদম তমিজী হক ঢাকা মহানগর উত্তর তাতী লীগের প্রধান উপদেষ্টা এবং ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য ছিলেন। পরে নিজ সরকার বিরোধী কার্যকলাপ এবং দলীয় শিষ্টাচার বহির্ভূত কাজ করার দায়ে আওয়ামী লীগ থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়।

উল্লেখ্য আদম তমিজী হক আওয়ামিলীগ সরকারের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল ও তার চাচার বিরুদ্ধে হক গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের কারখানা সহ একহাজার কোটি টাকা সম্পত্তি আত্মসাতের অভিযোগ আনেন।

বিতর্ক সম্পাদনা

২০১৭ সালের ডিসেম্বরে ঢাকায় প্রচুর পোস্টার লাগানোর দায়ে ঢাকা সিটি করপোরেশন আদম তামিজী হক ও ঢাকা লিট ফেস্ট-এর আয়োজক যান্ত্রিক ফাউন্ডেশনকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে। এ ব্যাপারে হক গ্রুপ আনুষ্ঠানিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করে।[৫]

২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ফেইসবুক লাইভে তার নিজের পাসপোর্ট পুড়িয়ে এবং তার নিজ দল আওয়ামি লীগের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়ে ব্যাপক আলোচনায় আসেন।

আওয়ামী লীগ থেকে তাকে বহিষ্কার করা হলে তিনি যুক্তরাজ্য প্রবেশের দশ বছরের মধ্যে সেদেশের প্রধানমন্ত্রী হবে বলে ঘোষণা দেন।

১৮ নভেম্বর ২০২৩ ইংরেজী তারিখে এক সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ান তথা র‍্যাবের কমান্ডার আল মুইন জানান, আদম তমিজি হকের বিরুদ্ধে হওয়া মামলায় তাকে গ্রেফতার করতে র‍্যাবের সদস্যরা তার বাসায় গিয়ে গ্রেফতার না করে ফিরে আসলেও সেখানে র‍্যাব এর প্রহরা বসানো হয়েছে। আদম তমিজী হকের বিরুদ্ধে দুটি মামলা হয়েছে।তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা করলে তিনি আত্মহত্যার হুমকি দেন বলে র‍্যাব জানিয়েছে । গত ১৩ নভেম্বর ঢাকায় আসার পর গুলশানের বাসায় তিনি অবস্থান করছেন। এর আগে তার মানসিক অবস্থা সম্পর্কে টাকার পত্রপত্রিকায় বিরূপ বক্তব্য পাওয়া যায়। এর পূর্বে তিনি অভিযোগ করেন সরকারের একজন প্রতিমন্ত্রী এবং তার চাচা তার গাজীপুর এ অবস্থিত ১ হাজার কোটি টাকার সম্পদ আত্মসাৎ করার চেষ্টা করছে।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, আদম তমিজী হক সিআইপি দারিদ্র্যমুক্ত সমাজ গঠনে সংগ্রামী, বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর, জুলাই ২২, ২০২০
  2. বঙ্গবন্ধুর আদর্শে জনসেবা করতে চাই : আদম তমিজি হক ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২১ জুন ২০২১ তারিখে, , দৈনিক ইত্তেফাক, ১৭ অক্টোবর, ২০১৭
  3. বিস্কিটের রাজাঃ অ্যাডাম হক[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ], ইত্তেফাক, ২২ জুন, ২০১৫
  4. 48 selected for industry sector CIP status, নিউ এজ, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৯
    48 entrepreneurs get CIP cards, ঢাকা ট্রিবিউন, ২১ নভেম্বর ২০১৯
    সিআইপি হওয়ায় তমিজী হককে কর্মীদের অভিনন্দন ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৭ নভেম্বর ২০১৯ তারিখে, বিডিনিউজ২৪, ২৪ নভেম্বর, ২০১৯
  5. "রাজধানীজুড়ে পোস্টার: হক গ্রুপের এমডি আদম তমিজিকে জরিমানা"বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। ৫ ডিসেম্বর ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ১৩ নভেম্বর ২০২০ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা