আডিডাস
আডিডাস লিমিটেড খেলাধুলার সামগ্রী প্রস্তুতকারী জার্মান প্রতিষ্ঠান। ১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এই কোম্পানির নামকরণ করা হয়েছে এর মালিক আডল্ফ ডাসলারের নামে। স্পোর্টস সু, খেলোয়াড়দের পোশাক এবং নানা ক্রীড়া সামগ্রী তৈরিতে বিশ্বের প্রথম বৃহত্তম কোম্পানী এখন এডিডাস। কোম্পানীটির পথচলা শুরু হয়েছিল ১৯৪৯ সালে এডলফ ডাসলারের হাত ধরে।
![]() | |
ধরন | Aktiengesellschaft |
---|---|
FWB: ADS, OTCQX: ADDYY | |
শিল্প | এপারেল, অন্যান্য |
পূর্বসূরী | Dassler Brothers Shoe Factory ![]() |
প্রতিষ্ঠাকাল | ১৯২৪-এ Gebrüder Dassler Schuhfabrik নামে (১৮ অগাস্ট, ১৯৪৯-এ নিবন্ধিত)[১] |
প্রতিষ্ঠাতা | আডল্ফ ডাসলার |
সদরদপ্তর | হের্ৎগেনাউরাখ, জার্মানি |
বাণিজ্য অঞ্চল | বিশ্বব্যাপী |
প্রধান ব্যক্তি | ইগর লান্দাউ (চেয়ারম্যান) হেরবার্ট হাইনার (সিইও) |
পণ্যসমূহ | জুতো, ক্রীড়াপোশাক, ক্রীড়াসামগ্রী |
আয় | ![]() |
![]() | |
![]() | |
মোট সম্পদ | ![]() |
মোট ইকুইটি | ![]() |
কর্মীসংখ্যা | ৫৩,৭৩১ (২০১৪)[২] |
অধীনস্থ প্রতিষ্ঠান | রিবক |
ওয়েবসাইট | www |
এডলফ ডাসলারসম্পাদনা
তার পুরো নাম এডলফ “এডি” ডাসলার, জন্ম ৩রা নভেম্বর ১৯০০। জন্ম ও বেড়ে ওঠা জার্মানীর হরজোজেনাউয়াচ শহরে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ থেকে ফিরে মায়ের রান্নাঘরে বসেই নিজের স্পোর্টস সু তৈরি করেন তিনি। বাবা ক্রিস্টফ একটি জুতা কারখানায় কাজ করতেন। অন্যদিকে জেহলিন ভাইয়েরা স্পোর্টস সু’র জন্য স্পাইক বানাতেন নিজেদের কামারশালায়। এরা সবাই এডলফ ডাসলারকে সাহায্য করেন জুতার ব্যবসা শুরু করতে। এডলফ ডাসলারের সাথে বড় ভাই রুডলফ ডাসলার যোগ দেন ১৯২৪ সালের ১লা জুলাই থেকে। তারা প্রতিষ্ঠানটির নাম দেন জিবারডার ডাসলার সুফ্যাব্রিক বা ডাসলার ব্রাদার্স সু ফ্যাক্টরি।
মৃত্যুসম্পাদনা
১৯৭৮ সালে নিজের ৭৮তম জন্মদিনের কয়েকদিন আগে মারা যান এডলফ ডাসলার যিনি একা হাতে এডিডাসের উদ্ভাবনী কর্মকাণ্ড এগিয়ে নিচ্ছিলেন। তার মৃত্যুর পর হাল ধরেন স্ত্রী কেথ এবং ছেলে হর্স্ট ডাসলার। মায়ের মৃত্যুর দু’বছরের মাথায় আকস্মিকভাবে মারা যান হর্স্ট ডাসলার
ব্যবসাসম্পাদনা
অলিম্পিকসম্পাদনা
১৯২৮ সালের অলিম্পিক। বহু এ্যাথলেট তাদের সরঞ্জাম ব্যবহার করেন এসময়। ডাসলার ভাইদের কোম্পানীটির আন্তর্জাতিক ভিত্তি তৈরি হয় এ সময় থেকেই।১৯৩৬ সালের গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকের আয়োজন করে বার্লিন। যুক্তরাষ্ট্রের এ্যাথলেট জেসি ওয়েন্সের জুতা সরবরাহ করে ডাসলার। এ জুতা পায়েই চারটি সোনা জেতেন জেসি ওয়েন্স।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন ব্যবসাসম্পাদনা
১৯৩০ এর দশকে নাৎসি পার্টির উত্থানের পর নাৎসি পার্টিতে যোগ দেন ডাসলার ভাইয়েরা। রুডলফ আমেরিকানদের হাতে ধরা পড়েন। সন্দেহ তৈরি হয় এডলফকে ঘিরে। একমাত্র তার পক্ষেই তথ্য দেয়া সম্ভব ছিল। এডলফ জার্মান সৈন্যদের জন্য বুট সরবরাহ অব্যাহত রাখেন। বলা যায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধই ডাসলার ভাতৃদ্বয় এবং তাদের স্ত্রীদের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটায়। সম্পর্কের অবনতির এ ধারা চলতে থাকে। ১৯৪৮ সালে যৌথ কোম্পানী ছেড়ে পুমা গঠন করেন রুডলফ। আর এডলফ প্রতিষ্ঠা করেন এডিডাস।
পুমা এডিডাসের তিক্ত লড়াইসম্পাদনা
ডাসলার ভাতৃদ্বয়ের ব্যবসা আলাদা হওয়ার পর পুমা এবং এডিডাসের মধ্যে তিক্ত প্রতিদ্বন্দ্ব্বিতা তৈরি হয়। হারজোজেনাউয়াচ শহরটি যেন দু’ভাগে ভাগ হয়ে যায়। বাইরের কেউ সেখানে গেলে লোকে আগে লক্ষ্য করতো পুমা না এডিডাস কার বুট রয়েছে আগন্তুকের পায়ে। শহরের ফুটবল ক্লাব দু’টিও যেন ভাগ হয়ে যায়। এএসভি হারজোজেনাউয়াচ ক্লাব এডিডাসকে সমর্থন করে আর এএফসি হারজোজেনাউয়াচ ক্লাব সমর্থন করে পুমাকে।
গৃহস্থলির নানা কাজে যখন কাউকে ডাকা হত তখন তারা ইচ্ছে করেই এডিডাসের বুট পরে রুডলফের বাড়িতে যেত। রুডলফ তাদের বেসমেন্টে পাঠিয়ে দিতেন এবং সেখান থেকে বিনে পয়সায় পুমার জুতা নিতে বলতেন।
ডাসলার ভাইদের বিরোধের নিষ্পত্তি কখনো হয় নি। যদিও একই কবরস্থানে সমাহিত করা হয় তাদের। তবে যতটা সম্ভব দূরে সমাহিত করা হয়।
১৯৫৪ সালের বিশ্বকাপ ফুটবলসম্পাদনা
১৯৫৪ সালের বিশ্বকাপের ফাইনালে শক্তিশালী হাঙ্গেরীকে হারায় জার্মান ফুটবল দল। এ বিজয় যেন ট্রফির চেয়েও বেশি কিছু ছিল জার্মানীর জন্য। জার্মান ব্র্যান্ড এডিডাস আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের নজর কাড়ে। জার্মান ফুটবলারদের পায়ে ছিল এডিডাসের তৈরি ফুটবল বুট। এসব বুট ছিল প্রচলিত ইংলিশ বুটের চেয়ে হালকা এবং আরামদায়ক। মাঠের পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নিতে অনেক বেশি সহায়ক ছিল এসব বুট। ফুটবল মাঠের অপরিহার্য অঙ্গে পরিণত হয় এডিডাস।
অন্যান্য ক্রীড়াসামগ্রীসম্পাদনা
১৯৬৭ সাল পর্যন্ত এডিডাস কেবল জুতাই বানিয়েছে। ১৯৬৭ সালে প্রথমবারের মত ট্র্যাকস্যুট বানায় তারা। এটি ছিল ফ্যানজ বিককেনবাউয়ের মডেলের ট্র্যাকস্যুট।
বিশ্বের সেরা এ্যাথলেটদের আস্থা অর্জন করেছিলেন এডলফ ডাসলার। এ্যাথলেটদের কাছ থেকে তিনি শুনতেন তাদের কি প্রয়োজন, কোথায় অসুবিধা। এসবের প্রতিফলন থাকতো তার পণ্যে।
খেলোয়াড় এবং এ্যাথলেটদের জন্য জুতা হল, পোশাক হল এবার কি? ১৯৭০ সালের বিশ্বকাপে অফিসিয়াল ফুটবল ‘টেলস্টার’ সরবরাহ করে এডিডাস। সাদা-কালো টিভিতে যাতে সহজে চোখে পড়ে সেভাবেই তৈরি হয়েছিল বলগুলো। পরের বিশ্বকাপগুলোতেও বল সরবরাহ করে এডিডাস।
ক্রীড়াঙ্গণের অনেকের পায়ে পৌঁছে যায় এডিডাসের থ্রি-স্ট্রাইপ জুতা। আর্জেন্টিনার জাতীয় ফুটবল দলের পায়ে ওঠে এডিডাসের জুতা। এডিডাসের বুট পায়ে পর্বতারোহণ করেন পর্বতারোহী রেইনহোল্ড মেসনার, জিমন্যাস্ট নাদিয়া ফমেনিসি নিখুঁতভাবে ১০ স্কোর করতে থাকেন এডিডাস পায়ে।
দেউলিয়াত্বের দ্বারপ্রান্ত থেকে ফিরে আসাসম্পাদনা
ডাসলার পরিবারের অণুপস্থিতিতে এডিডাসের কর্মকাণ্ডে বিশৃঙ্খলা দেয়। নেতৃত্বের অভাব এবং প্রশ্নবিদ্ধ নানা পদক্ষেপের ধারাবাহিকতায় দেউলিয়াত্বের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যায় এডিডাস। তবে সেখান থেকে ফিরে আসার চমৎকার একটি গল্প আছে এডিডাসের। রবার্ট লুইস ড্রিফাস প্রধান নির্বাহী হিসেবে দায়িত্ব নেন। কঠিন কাজটিকে একটি সহজ কাজে পরিণত করেন। তার সাথে সহকারী হিসেবে ছিলেন ক্রিস্চিয়ান ট্যুরেস। তারা বুঝতে পেরেছিলেন এডিডাসের জন্য নতুন করে কিছু উদ্ভাবনের প্রয়োজন নেই। তাদের চোখে এডিডাস ছিল ঘুমিয়ে থাকা দানব। আগে এডিডাস বিক্রয়ের ওপর জোর দিত। কিন্তু এবার জোর দিল বিপণন বা প্রচারের ওপর। অবশ্য এসময়ও যে এডিডাসের উদ্ভাবনী কার্যক্রম থেমে ছিল তা নয়। এ্যাথলেট এবং খেলোয়াড়দের প্রতিযোগিতায় এগিয়ে দিতে নানা পণ্য নিয় আসে তারা।
নিজেদের অবস্থান একটু মজবুত হওয়ার পর ১৯৯৭ সালে সালোমন গ্রুপ এবং এর ব্র্যান্ড টেইলর মেড, ম্যাভিক, বনফায়ার ইত্যাদি অধিগ্রহণ করে এডিডাস-সালোমন এজি নাম ধারণ করে।
২০০৬ সালে সালোমান গ্রুপ আলাদা হয়ে যায়, এডিডাস এজি নামে কাজ করতে থাকে ডাসলারের এডিডাস। এসময় এডিডাস রিবক এবং এর ব্র্যান্ড রকপোর্ট, রিবক সিসিএম হকি কিনে নেয়। ক্রীড়াসামগ্রী উৎপাদনের ক্ষেত্রে শীর্ষ দু’টি কোম্পানীর একটিতে পরিণত হয় এডিডাস। ২০১২ সালে কোম্পানীটির আয় ছিল ৩৪.৪৮ বিলিয়ন ইউরো।
তথ্যসূত্রসম্পাদনা
- ↑ "Adidas Group History"। adidas-group.com। ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ মে ২০১৪।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ "Annual Report 2012"। adidas। সংগ্রহের তারিখ ১০ মার্চ ২০১৩।